নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I believe in Magic

I believe in Magic

নিক নূরুল

I believe in Magic

নিক নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইনকর্পোরেটেড পহেলা বৈশাখ

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪৭

আমার ছোটবেলার কাহিনী। বৈশাখ মাসে যখন ধান কাটার ধুম পড়তো গ্রামাঞ্চলে তখন সর্বত্রই একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। সেটা মানুষের চলাফেরায়, ভাব-ভঙ্গিতে এমনকি খানাপিনায়। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে সেটা আমাদের ও ছুঁয়ে যেতো। আর এরই ধারাবাহিকতায় ধান কাটার মৌসুমে প্রায়ই আমরা চলে যেতাম ধান কাটা দেখতে, ধান মাড়াইয়ের সময় কামলাদের মজার উৎসবে শরীক হতে। সেকি আনন্দ। ধান মাড়াইয়ের ফাঁকে ধানের মুঠো দিয়ে কেনা মিষ্টি খাওয়া। কে কত বেশী মিষ্টি খেতে পারে তারও একটা ছোট-খাটো কম্পিটিশন হয়ে যেতো । তখন ফেরিওয়ালারা বাজার থেকে মিষ্টি মাঠে নিয়ে বিক্রি করতো। কার ক্ষেতের ধান দিয়ে কে মিষ্টি খেলো সেটা বিবেচনার বিষয় ছিলনা। অন্তত মিষ্টি খাওয়ার জন্য সবার ধান ছিল ফ্রি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় এই ধানের মুঠো দিয়ে অনেকেই গরম(ঠাণ্ডা রাখার কোন ব্যবস্থা ছিলনা) কোকা-কোলা, পেপসি, মিরিন্ডা কিনে খেতো। আমি মনে মনে ভাবতাম মানুষের কত সখ দেখো, এই গরম ড্রিঙ্কস খেয়ে কি মজা পায় মানুষ। লোভে লোভে আমি ও এক চুমুক মুখে দিয়েছিলাম এবং সাথে সাথে ফেলে দিয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল পৃথিবীর বিস্বাদতম ড্রিঙ্ক হচ্ছে গরম (কোল্ড) ড্রিঙ্ক। আমার অনুমান পৃথিবীর সুস্বাদুতম খাবার হচ্ছে প্রচণ্ড রোদ আর গরমে সরাসরি ক্ষেত থেকে পেড়ে খাওয়া তরমুজ। পৃথিবীর সুস্বাদুতম খাবার কাছে থাকার পর ও কেন মানুষ পৃথিবীর বিস্বাদতম খাবার ধানের বিনিময়ে কিনে খায় আমার মাথায় ঢুকতো না। ঐ সময় না ঢুকলে ও আজ আমার মাথায় ঢুকে এবং এখন আমি ভালভাবেই বুঝি কেন মানুষ এইটা করে। সাধারণত আমরা গ্রামের মধ্যবিত্ত অথবা শহুরে মধ্যবিত্ত ছাপোষা পরিবারের মানুষদের একটা অভ্যাস, আমরা সবসময় উচ্চবিত্তদের অথবা শহুরেদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি অথবা এরা যা করে তা আমাদের নাগালের মধ্যে আনতে চাই। যদি ও তা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। কোন একজন মনিষী বলেছিলেন, ‘মধ্যবিত্তের স্বভাব হচ্ছে এরা সবসময় উচ্চবিত্তের মতো উপড়ে উঠার চেষ্টা করে এবং তা করতে না পেড়ে ক্রমশ আরো নীচের দিকে ধাবিত হয়’। কি কঠিন সত্যটা অবলীলায় বলে দিলেন ভদ্রলোক। বৈশাখের ধান মাড়াইয়ের সময় ঠাণ্ডা সুস্বাদু তরমুজ ফেলে গরম এবং বিস্বাদ কোক-পেপসি খাওয়ার মধ্যে গ্রামের মানুষের শহুরে হওয়ার লোভটা কাজ করতো।



আমরা বন্ধুরা মিলে বর্ষাকালে প্রায়ই খোলা নৌকা নিয়ে হাওরে বেরুতাম। সঙ্গে থাকতো বাদাম জাতীয় খাবার। নৌকার আগায় একটা লাউড স্পিকার ফিট করা থাকতো। অনবরত বাজতে থাকতো গান। এরমধ্যে আমদের পছন্দের গান ছিল ফিডব্যাকের ‘মেলায় যাইরে’। গ্রামে ও তখন ব্যান্ড অনেক জনপ্রিয়। আজকে বাউল আব্দুল করিমের যে গান সারা দেশে খুব জনপ্রিয় তার প্রায় সবকটাই আমরা জানতাম কিন্তু নিজে শুনতাম খুব কম। এখানে ও নিজেদের শহুরে ভাবতে আমরা খুব পছন্দ করতাম। পহেলা বৈশাখে বাড়িতে ভাল রান্না-বান্না হতো। পোলাও-কোরমা, মাংস ইত্যাদি। গ্রামের সকল ফ্যামিলিই তাদের সাধ্যমত ভাল খাবারের আয়োজন করতো। একটা সংস্কার ছিল এদিন যা যা হবে, বছরের বাকি পুরো সময়টাই তা তা হবে। এজন্যে সবার যার যার বাড়িঘর খুব সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখত। পহেলা বৈশাখে আমরা কখনোই পান্তা ভাত খাইনি এবং অন্য কোন পরিবারের কাউকে খেতে দেখিনি। যারা রেগুলার পান্তা খায় এরাও এই দিনে এই খাবারটা এড়িয়ে যেতো । ঢাকা শহরে আমার প্রথম পহেলা বৈশাখে ‘মেলায় যাইরে’ গান শুনে ভাল লাগলেও পান্তা-ইলিশ দেখে অবাক হয়েছিলাম এটা কোত্থেকে ঢাকা শহরে আসলো। আর আজকের দিনে তো এটা রীতিমতো একটা ভয়ঙ্কর রোগে পরিণত হয়েছে। গরম ভাতের উপর পানি ঢেলে পান্তা, ভাবা যায়!!! আমরা দারিদ্র্যকে উপহাস করছিনা তো? পুঁজিবাদের কল্যাণে আমরা যেমন কোকের ক্যানের টুং টাং শব্দটা ও এনজয় করি, তেমনি এনজয় করি গরম পান্তা’র তাজা ধোঁয়া। এনজয় করি লাল-সাদা শাড়ির ভেতর লুকায়িত ভাজ আর কর্পোরেটেড দেশপ্রেমের ধামাকা।



সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:০২

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:

আপনার স্মৃতিচারণ ভাল লাগলো।


গরম ভাতের উপর পানি ঢেলে পান্তা, ভাবা যায়!!! আমরা দারিদ্র্যকে উপহাস করছিনা তো? পুঁজিবাদের কল্যাণে আমরা যেমন কোকের ক্যানের টুং টাং শব্দটা ও এনজয় করি, তেমনি এনজয় করি গরম পান্তা’র তাজা ধোঁয়া। এনজয় করি লাল-সাদা শাড়ির ভেতর লুকায়িত ভাজ আর কর্পোরেটেড দেশপ্রেমের ধামাকা।
কথাটা চিন্তার খোরাক যোগায়।

নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা!!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০৬

নিক নূরুল বলেছেন: ধন্যবাদ স্নিগ্ধ শোভন।

আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৭:১৪

মামুন রশিদ বলেছেন: স্মৃতিময় পহেলা বৈশাখ! ভালো লাগলো নস্টালজিক স্মৃতিচারণ । সব কিছুই আজ ইনকর্পোরেটেড ।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩

নিক নূরুল বলেছেন: ভাললাগার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২৪

সোহানী বলেছেন: সবইতো ভাই কর্পোরেটেড দেশপ্রেম........ ব্যবসা, ব্যবসা আর ব্যবসা। ঈদ, পূজা, ১লা বৈশাখ সবইতো এখন কর্পোরেট ব্যবসার উপলক্ষ্য মাত্র..........

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

নিক নূরুল বলেছেন: " ঈদ, পূজা, ১লা বৈশাখ সবইতো এখন কর্পোরেট ব্যবসার উপলক্ষ্য মাত্র........."
খুব ভাল বলেছেন সোহানী আপু । পড়ার জন্য কৃতজ্ঞ।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:




পুরো জীবনটাই এখন যেখানে একটা কর্পোরেট জীবন সেখানে একটা উৎসব !
স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো !

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০০

নিক নূরুল বলেছেন: হুম আমিনুর রহমান ভাই। কি আর করা। দেখেন না সামনে আরও কতকিছু হয়।

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩

মুদ্‌দাকির বলেছেন: শেষ কথা গুলো মন ছুয়েগেল, ভালোলাগল !!

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৬

নিক নূরুল বলেছেন: ধন্যবাদ মুদ্‌দাকির ভাই।

আপনার মন ছুঁতে পেড়ে আমি গর্বিত।

৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণা। ধন্যবাদ, ভাই নিক নূরুল।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৮

নিক নূরুল বলেছেন: ধন্যবাদ ছোট লেখাটা পড়ার জন্য।

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

তাসজিদ বলেছেন: প্রতিবার পহেলা বৈশাখে আমরা পরবি পেতাম। ১০ টাকা!!!!!!!!!!!
এভাবে প্রায় ৪০-৫০ টাকা জমা হত। এত টাকা! কি করব এতো টাকা দিয়ে?

মেলায় যেতাম, মেলায়। ইমাম বাড়ির মেলায়।

বন্ধুরা সব মিলে যেতাম। ছোট ছিলাম, তাই আনন্দ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
সবাই মিলে ঘোরাফেরা। লাল অস্বাস্থ্যকর জিলাপি খাওয়া! আহ কি স্বাদ!!! ভোলা যায়? না।

সে অনুভূতি ফিরে আসতে চায়। মন চায় সে দিনে ফিরে যেতে।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩২

নিক নূরুল বলেছেন: আসলে আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি এবং এখন শহরে বাস করছি, এই মিশ্র অভজ্ঞতাই আমাদের সবকিছুকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে সাহায্য করে।

ধন্যবাদ আপনার অদ্ভুত সুন্দর অনুভুতি শেয়ারিং এর জন্য।

৮| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫০

তাসজিদ বলেছেন: আর এই পান্তা কালচার যে কোথা থেকে এলো তা আমার মাথায় ধরে না। আমি গ্রামেই বড় হয়েছি। আমি কখনো কাওকে পান্তা খেতে দেখিনি কিংবা শুনিনি। ]

বাংলা নববর্ষে সবাই ভাল মন্দ খায়। পোলাও মাংসই সবাই খেতে চায়। কারণ তারা বিশ্বাস করে যে এ দিন ভাল খেলে সারা বছর ভাল খাওয়া যায়।

আচ্ছা, পান্তার সাথে ইলিশের স্বাদ কেমন হবে? আমি কখনো খাই নি। তবে জঘন্য হবে যে তাতে কোন সন্দেহ নেই

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

নিক নূরুল বলেছেন: একদিন খেয়ে দেখবেন। এটাও একটা অভিজ্ঞতা। আমাকেও সাথে রাখবেন।

৯| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

নিক নূরুল বলেছেন: আপনাকেও। অশেষ ধন্যবাদ।

১০| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমি কখনও পান্তা খাই নাই। লেখাটা ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৭

নিক নূরুল বলেছেন: হা হা হা। আমাকে সাথে নিয়ে খাইয়েন যখনই খান। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.