মার্কিন অভিযান কি ব্যর্থ? ইরান কি পরমাণু বোমা বানিয়েই ফেলবে?

২৩ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৬

আমেরিকার হামলা কি তাহলে মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়নি? ইরান কি এখনও পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম?

ছবি দুটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। এটি ইরানের সবচেয়ে বড় ও প্রসিদ্ধ পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিগুলো অনেক কথা বলছে।

১ম ছবিতে দেখুন, সবুজ বৃত্ত দিয়ে আমেরিকার বোমা হামলার পর ফোর্দো এটমিক ফিল্ডের পাহাড়ের গায়ে ক্ষত দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এই ছিদ্রগুলো দিয়েই আমেরিকার বোমারু বিমান বি২ থেকে নির্গত জিবি বোমাগুলো পাহাড় ও মাটি ভেদ করে নিচের পারমাণবিক স্থাপনার বাঙ্কারের ভেতর পৌঁছে তারপর বিস্ফোরিত হয়েছে।

২য় ছবিতে দেখুন, গত ১৯-২০ জুন তারিখে উক্ত ফোর্দো এটমিক ফিল্ডের পাশেই রাস্তায় প্রায় ১৮ টা বড় বড় ট্রাক দাঁড়ানো, যা দেখতে সাধারণ পরিবহণের মতই। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো এই ট্রাকগুলোকে কি কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই বলুন না কেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু জোর গলায় বলেননি ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকেই প্রশ্ন জাগে, তবে কি ইরানের দাবিটাই সঠিক? ট্রাম্পের কথার ফুলঝুরির মাধ্যমে আমেরিকা যখন ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, বিমানগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যে জড়ো করছিলো, তখন ট্রাম্পের কথায় সারা বিশ্বের মতো ইরানও সতর্ক হয়ে গেছে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি অ্যাকশান নিতে বেশি দেরী করে ফেলেছেন? এই সুযোগে ইরান কি ঐ ট্রাকগুলিতে করে ফোর্দো এটমিক ফিল্ডের মজুদ করে রাখা ৬০% শুদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্য গোপন কোনো স্থানে সরিয়ে নিয়েছে?

হতেই পারে। অসম্ভব কিছু না। ইরানকে দুর্বল ভাবা ঠিক না। পশ্চিমাদের এত এত নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও তারা যেভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রক্সিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, নিজের দেশ সামলাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের তথা সারা বিশ্বের মুসলিমদের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে প্রায়, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়া থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে যেহেতু তারা, সুতরাং ট্রাম্পের অ্যাকশানের আগেই প্রায় ৪০০ কেজি ৬০% পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটা ইরানের পক্ষে কঠিন কোনো কাজ না।

আমার মনে হচ্ছে, যদি সত্যিই ইরান এ কাজে সফল হয়ে থাকে, যদি সত্যিই মার্কিন হামলা ব্যর্থ হয়ে থাকে, তবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার নাটক করতে করতে ইরান এদিক দিয়ে শীঘ্রই (২-৩ সপ্তাহের মাঝে) পারমাণবিক বোমার সফল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশ্বের নতুন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতেই পারে। এ কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য আছে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া। তারা ইতিমধ্যে হয়তো ৬০% কে ৯০% পরিশুদ্ধ করার উপায় ইরানকে জানিয়েও দিয়েছে।

এমনটা যদি হয়েই যায়, তবে সেটা এশিয়ারই শক্তি বাড়াবে। ভারতের উপকার হবে, কারণ ট্রাম্পকে নোবেলের জন্য মনোনয়ন দিয়ে ইরানে হামলার এক দিন আগেই পাকিস্তান ইরানের সামনে নিজেদের আসল রূপ তুলে ধরেছে, তারা যে সুন্নি আর ইরান যে শিয়া-- তা বুঝিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন এয়ার বেইজ করতে দিয়েছে যাতে সেখান থেকে সহজেই ইরানে হামলা চালানো যায়। অনেকের মতে ইরানের কোথায় কী আছে সেই ইনটেলও পাকিস্তানের রাডার থেকে পায় আমেরিকা! তাই ইরানের হাতে যদি পারমাণবিক বোমা এসেই যায়, তবে ভারতের অখুশি হওয়ার কারণ কম, চিরশত্রু পাকিস্তানের শত্রু মানেই বলা যায় ভারতের বন্ধু! তাছাড়া আমরা তো জানিই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভারত অনেক কম মূল্যে ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল কেনে!!

তবে আমেরিকাও চুপ করে থাকবে না। এই অভিযান যদি আসলেই ব্যর্থ হিসেবে ট্রাম্পের কানে যায়, তিনি আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। কারণ তিনি রিপাবলিক, আমেরিকাকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় তোলার ও আবারও 'গ্রেট' করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। যে করেই হোক ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়া ঠেকাতে ইসরায়েলের সাথে মিলে এই মাসেই আরও হামলা চালাবেন-- তা ধরে নেয়াই যায়।

কিন্তু কথা হচ্ছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা থেকে ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নিলো আর তা মার্কিন স্যাটেলাইট দেখলো না-- এটা কীভাবে সম্ভব? নাকি উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মার্কিন স্যাটেলাইটকে ধোকা দেয়া হয়েছিলো? সিআইএ-মোসাদকে ধোঁকা দেওয়া কি এতই সহজ?
দেব দুলাল গুহ -- দেবু ফরিদী

৪ টি +০/-০