নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun (DEV DULAL GUHO)

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসকন ও ভারতকে ফাঁসাতে নিজের সাজানো নাটকে নিজেই ধরা মুফতি মুহিবুল্লাহ?

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:১৩


সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তাঁর সাথে অন্যায় হলে দোষীরা শাস্তি পাক। মিথ্যা হলে তার শাস্তি হোক। কেননা এই ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায় ঝুঁকিতে পড়েছে। এই রিপোর্টটা সামনে এলো, তাই শেয়ার করলাম। (লিংক কমেন্টে)

মুফতি মুহিব্বুল্লাহ কি সত্যিই অপহৃত হয়েছিলেন?
গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী। তাকে টঙ্গী থেকে অপহরণ করে পঞ্চগড় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে।

অপহরণের অভিযোগ এনে তোলপাড় করা গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ৬০ বছর বয়সী মুফতি মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী নিজেই এখন তদন্তের মুখে।

তিনি অপহরণের যে বর্ণনা দিয়েছেন, যে এলাকা থেকে যখন তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেই সময়ের সেই এলাকার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। এজাহারের বর্ণনার কোনো কিছুই এসব ফুটেজে নেই।

মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী সামাজিক মাধ্যমে মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানী নামে বেশি পরিচিত।

তিনি দাবি করেছেন, তাকে গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে থেকে অপহরণ করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। পরদিন পঞ্চগড়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধারের কথা নিজেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন।

মসজিদে খুতবার সময় মুফতি মুহিব্বুল্লাহ।
গোটা একটি দিন নির্যাতন, কথিত অপহরণের আগে একের পর এক উড়ো চিঠি পাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি, তবে তার এই বয়ান এবং বর্তমান অবস্থারও মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন।

পঞ্চগড় থেকে গাজীপুর ফিরেই মুহিব্বুল্লাহ তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।

এলাকাটির আশপাশে যে সাতটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছে দেশকাল নিউজ ডটকম, তাতে মুহিব্বুল্লাহকে দ্রুত বেগে হেঁটে যেতে দেখা গেছে, কিন্তু কেউ তাকে তুলে নিয়েছেন, এমন দৃশ্য দেখা যায়নি।

এই খতিব দাবি করেছেন, তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেওয়া হয়। তবে তিনি যে সময়ের কথা বলেছেন, তার ১০ মিনিট পরেও কোনো অ্যাম্বুলেন্সের দেখা মেলেনি।

দেশকাল নিউজ ডটকমের অনুসন্ধান আর পুলিশের তদন্তও প্রায় একই রকম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন মুহিব্বুল্লাহই তদন্তের মুখে আছেন।

জানতে চাইলে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “এটি খুবই স্পর্শকাতর ঘটনা। সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত চলছে। শেষ করে বিস্তারিত আমরা সংবাদ সম্মেলন করেই জানাব।”

অভিযোগ আর সিসিটিভি ফুটেজ ও বক্তব্যে ধারাবাহিকতার অভাবের বিষয়টি সামনে আসার পর মুহিব্বুল্লাহকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। এরপর তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যে কারণে তার বক্তব্য চেষ্টা করেও পায়নি দেশকাল নিউজ ডটকম। টঙ্গীতে তার বাসায় গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কারও সাড়া মেলেনি।

যেভাবে অপহরণের দাবি

মুহিব্বুল্লাহর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদর থানার আউলিয়াপুর গ্রামে। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন টঙ্গীর মরকুন টিঅ্যান্ডটি কলোনির মসজিদের কোয়ার্টারে।

তার দাবি, গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীতে তার বাসার অদূরে শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কের ওপর একটি অ্যাম্বুলেন্স তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয়।

পরদিন পঞ্চগড় থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে জানিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে তার অপহরণের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য আসার পর দেশে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

২৩ অক্টোবর পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী ভর্তির পর শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে দেখতে যান ।
মুহিব্বুল্লাহকে খুঁজে পাওয়ার তৃতীয় দিন রবিবার টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি, সেখানে তার বাসস্থান, মসজিদ এলাকা, মামলায় উল্লেখ করা তার ‘অপহরণের’ স্থান, ঘটনার আগে তার ভাষ্য অনুযায়ী পাঠানো দুটি চিঠি এবং ঘটনাস্থল ছাড়াও তার বাড়ি এবং মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে অনুসন্ধান চালায় দেশকাল নিউজ ডটকম। সেখান থেকেই তার বয়ান এবং প্রকৃত ঘটনার মধ্যে ফারাকের বিষয়টি উঠে এসেছে।

পঞ্চগড়ে যা বললেন মুহিব্বুল্লাহ

পঞ্চগড়ের সাংবাদিকদেরকে মুহিব্বুল্লাহ জানান, ২৩ অক্টোবর সকালে জেলার সদর থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকার রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে হাত-পা শিকলে বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

উদ্ধারের পর তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গণমাধ্যমকর্মীকে বলেন, “বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে হাঁটতে বের হই। কিছুক্ষণ পর একটি অ্যাম্বুলেন্স সামনে এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকে চার-পাঁচজন নেমে আমার মুখে কী যেন ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে। এরপর কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলে।”

যারা তুলে নিয়েছে তাদেরকে বাংলাদেশি নাগরিক মনে হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “তারা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছিল।”

গত ১১ মাস ধরে বেনামি চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করেন মুহিব্বুল্লাহ। দাবি করেন, এসব চিঠিতে অখণ্ড ভারত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংগঠন ইসকনের পক্ষে কথা বলতে বলা হয়। সেই সঙ্গে দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো ও বিএনপি-এনসিপির বিরুদ্ধে কথা বলতে বলা হয়।

সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবরের চিঠিতে কোরআন, ইসলাম, আল্লাহ শব্দ বলতে নিষেধ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

এজাহারে কী লেখা

গত ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় উপস্থিত হয়ে অপহরণের মামলা করেন মুহিব্বুল্লাহ। এতে তিনি লেখেন, খতিবের দায়িত্ব পালনকালে নিয়মিতভাবে বেনামি চিঠির মাধ্যমে হুমকি পেয়ে আসছেন। বেনামি বললেও চিঠির প্রেরক হিসেবে ‘ইসকন সন্ত্রাসী’ শব্দ ব্যবহার করেছেন তিনি।

এজাহারের ভাষ্য, “চিঠিতে উল্লেখ আছে— আমি যেন অখণ্ড ভারত মাতার পক্ষে কথা বলি, ইসকনের কারাবন্দি নেতা চিন্ময় দাসের মুক্তির ব্যাপারে কৌশলে কথা বলি, এনসিপি, বিএনপিসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে খুতবায় কথা বলি, হিন্দু ছেলেদের সঙ্গে মুসলিম মেয়ের প্রেমে বাধা নেই বলে ফতোয়া দিই।”

মুহিব্বুল্লাহ আরও লেখেন, তাকে চিঠিতে বলা হয়েছে, “মসজিদে কোরআন পড়া যাবে না, মসজিদে ইসলাম, আল্লাহ ও মুহাম্মদ (স.) নিয়ে কথা বলা যাবে না।”

তাদের কথামতো না চললে তাকে, মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ও কোষাধ্যক্ষকে হত্যা এবং তাদের স্ত্রী, কন্যাদের ধর্ষণ করাসহ নানা ধরনের ক্ষতি করার হুমকিও চিঠিতে দেওয়ার অভিযোগ আনেন এই খতিব।

এরই ধারাবাহিকতায় ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার সময় প্রাতঃভ্রমণে বের হলে বাসার অদূরে শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কের ওপর একটি অ্যাম্বুলেন্স তার পথরোধ করে দাঁড়ায় বলেও এজাহারে লেখেন মুহিব্বুল্লাহ।

মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী দাবি করেছেন, তাকে এই শেকলে বাঁধা হয়েছিল।
“এবং আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করতে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ব্যক্তি জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সে তোলে এবং সঙ্গে সঙ্গে কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন করতে থাকে এবং গাড়ি বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে।”

থেমে থেমে শারীরিক নির্যাতন এবং টানা প্রায় একদিন একরাত গাড়ি চলার পর গাড়ি থামিয়ে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে কাচের বোতল দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মকভাবে আঘাত করে দাড়ি কেটে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করা হয় এজাহারে।

“একপর্যায়ে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন আমাকে বিবস্ত্র করে। দিনের আলো ফুটতে থাকলে মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে শিকল দিয়ে বাম পা রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে চলে যায় এবং আমার সঙ্গে থাকা একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।

“পরবর্তীতে রাস্তায় চলাচল করা কিছু লোক এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং পরবর্তীতে জানতে পারি যে, এটি পঞ্চগড়। স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন করলে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের সহায়তায় আমি পঞ্চগড় থেকে বর্তমান ঠিকানার বাসায় আসি।”

টঙ্গীতে ফিরে এসে এলাকাবাসীকে যা বললেন

গত শুক্রবার টঙ্গী ফিরেই সেখানকার জনসাধারণ ও মুসলমানদের সামনে বক্তব্য রাখেন মুহিব্বুল্লাহ। অন্যদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিজের অপহরণ হওয়া এবং অপহরণের পর কী ধরনের নির্যাতন করা হয় সেই বর্ণনাও দেন। সেখানে উপস্থিত মুসল্লি ও জনসাধারণের অনেকেই তার বক্তব্য শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, “আমি অনেক ক্লান্ত, পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন আমাকে অনেকগুলো পেইনকিলার দিয়েছে। কী বলতেছি ঠিক নাই, আপনারা বুঝে নেন। খতিব সাহেবদের বলতে চাই, সর্বস্তরের দ্বীনের খিদমতে যারা আছেন, তারা সবাই সতর্ক থাকবেন। কখন কী হয়ে যায়, জোয়ারের কাছে থেকে কৃষক যে রকম সতর্ক থাকে সেরকম সতর্ক থাকতে হবে।”

কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলাম নিয়ে যে যতটুকু খিদমত করে তাকে আমি ভালোবাসি। সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, ব্যভিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। আমাকে অত্যাচার করা হলেও আমার এই কণ্ঠ, মুহিব্বুল্লাহ কণ্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না।”

পঞ্চগড় থেকে টঙ্গীতে ফিরে মুসল্লিদের উদ্দেশে মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী বক্তব্য রাখেন। তার আবেগঘন বক্তব্য শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক মুসল্লি।
এজাহারে উল্লেখ করা চিঠিতে কী লেখা, তাও সাধারণের কাছে তুলে ধরেন মুহিব্বুল্লাহ। তিনি বলেন, “এক নম্বরের আদেশ হলো—অখণ্ড ভারত মাতার পক্ষে কথা বলতে হবে। পূর্ববঙ্গে, বাংলাদেশ বলে স্বীকারই করে নাই, পূর্ববঙ্গে ভারত ছাড়া আপন কেউ নেই।

“দুই নম্বরে, ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ মহাপ্রভুর জামিনের ব্যাপারে কৌশলে কথা বলবি। বলবি, তাকে আটকে রাখা ঠিক হবে না। কৌশলে এদের পক্ষে কথা বলবি, তাকে আটকে রাখা ঠিক হচ্ছে না।

“তিন নম্বরে বলবি, বাংলাদেশের সকল ধর্মভিত্তিক দল, বিএনপি, এনসিপি এদের বিরুদ্ধে কথা বলবি। এনসিপি পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে বড় শত্রু।

“চার নম্বরে, মুসলিম মেয়েরা হিন্দু ছেলের সঙ্গে প্রেম করতে কোনো বাঁধা নেই। এটা মিম্বারে তুই মাসলা দিবি। এর পরে লিখছে, ‘তোদের বাতুল মোকাব্বরামকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’ ”

তাদের কথামতো চললে সেক্রেটারি, ক্যাশিয়ার প্রত্যেককে এক কোটি রুপি দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন মুহিব্বুল্লাহ।

চিঠির এই ভাষা কী ইঙ্গিত বহন করে— সেই প্রশ্ন শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিয়ে মুহিব্বুল্লাহ বলেন, “ভাষা দেখেন, আধিকারিক—কোন দেশের ভাষা বুঝে নেন। আমাদের দেশে কর্মকর্তা এসব ভাষা লেখে? ওসব দেশে লেখে আধিকারিক।”

দুটি চিঠিতে কী লেখা

মুহিব্বুল্লাহ যেসব চিঠির কথা বলেছেন, তার দুটি পেয়েছে দেশকাল নিউজ ডটকম। এরমধ্যে শেষটি গত ২১ অক্টোবর দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. সাইফুল্লাহ। যদিও সেই চিঠিতে কোনো তারিখ লেখা নেই।

চিঠিতে লেখা, “পূর্ব বঙ্গ, গাজীপুর, টংগী বিটিসিএল মসজিদের আধিকারিক সহিদ, রশিদ তোদের খতিব যে দেবতার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। তাই না? সে এতগুলো চরম পত্রের মূল্য না দিয়ে, নিজের মৃত্যু ডেকে আনলো। তবে জেনে রাখ তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আমাদের মোটেই হাত কাঁপবে না। কারণ, আমাদের হাত পাকা হয়ে গেছে। তবে, বুঝা উচিত ছিল, যে আমাদের কান্ট্রি সব মোল্লা এবং মৌলবাদীদেরকে কোটি রুপী সাহায্য করেনা। মসজিদের লোকসমাগম প্রসিদ্ধি খতিবের নেতৃত্বের গুণাবলি বয়সের কারণে অন্য মোল্লা মান্য করার সম্ভাবনা এরকম ২০ টি ক্রাইটেরিয়া সুচকে যে মোল্লারা এগিয়ে থাকে তাদেরকে আমরা সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে কোটি রূপী সাহায্য করে থাকি তাদের বাধ্যক্য জীবন একটু শান্তি দেয়ার জন্য।

“কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, বহু মোল্লা এ মূল্যবান অফার গ্রহণ করে স্বচ্ছল হলেও তোদের খতিব মেহেবুলার (মোহেববুল্লাহ) মতো শারমেয়রাই কেবল এ অফারে সাড়া দেয়না, অবশ্য জীবন দিয়ে যে তারে এর মূল্যও চুকাতে হবে।”

‘তোদের খতিব শেষ’ উল্লেখ করে এতে আরও লেখা, “ওর উপর শনি দেবতার রোষানল পরেছে। তোরা তোদের খতিবকে আগের আদেশের সাথে নিচের আদেশগুলো পালন করতে বল-

“৫। মসজিদে করান (কোরআন) পাঠ বন্ধ করতে বল।

৬। মসজিদে আল্লা (আল্লাহ), মুহম্মদ এবং ইসলাম শব্দগুলো উচ্চারণ বন্ধ করতে বল।

৭। বাংলাদেশ নামক জারজ রাষ্ট্রের নাম কোনো বাঙ্গালি যেন মুখে না নেয়। পূর্ব বঙ্গ বলতে হবে।”

(১ থেকে ৪ পর্যন্ত আরও চারটি আদেশের কথা বলা আছে আগের একটি চিঠিতে।)

খতিবকে এক কোটি রূপি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেটি না নিয়ে নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।

চিঠির শেষে একটি তরবারির ছবি আঁকা ছিল।

মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী দাবি করেছেন, তাকে হুমকি দিয়ে ১০টিরও বেশি চিঠি পাঠানো হয়। এর একটি এটি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখ লেখা অপর চিঠিতে লেখা হয়, খতিবকে ১০ টি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো মূল্য দেননি।

তাকে ভাবতে ২০ মাস সময় দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এতে লেখা হয়, “এটা ফাইনাল চরমপত্র। এবার তোদের খতিবকে বলে দে যে-

“১। সে যেন শুক্রবারে মসজিদে অখন্ড ভারত মাতার পক্ষে কৌশলে কথা বলে। কারণ, ভারতবর্ষ ছাড়া পূর্ব বঙ্গের আপনকেউ নাই।

“২। সে যেন ইশকনের কার্যক্রম এবং চিন্ময়কৃষ্ণ মহাপ্রভুর জামিনের পক্ষে কৌশলে কথা বলে। বলে যে, তাকে আটক রাখা ঠিক হচ্ছেনা।

“৩। সে যেন প্রোটেক্ট আওয়ার সিস্টার্স বিডি এর বিপক্ষে কৌশলে কথা বলে এবং বলে মুসলিম মেয়েরা হিন্দু ছেলেদের সাথে প্রেমে বাধা নেই।

“৪। সে যেন পূর্ব বঙ্গের সব ধর্মভিত্তিক দল এনসিপি এবং বিএনপির বিরুদ্ধে কৌশলে জনমত গঠন করে। বিশেষ করে এনসিপি পূর্ব বঙ্গের প্রধান শত্রু।”

সবাইকে হাজার কিলোমিটার দুর থেকে মনিটরিং করার কথা জানিয়ে লেখা হয়, খতিবকে ধীরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। শেষ অবধি তাকে সম্পূর্ণ একা বানিয়ে রাস্তার পাগল বানানো হবে।

“আজ হোক কাল হোক পূর্ব বঙ্গকে ইসলামী মৌলবাদী মুক্ত করা হবে”, লেখা হয় চিঠিতে।

এই চিঠির শেষে হাতে আঁকা একটি ছবি আঁকা ছিল। যেখানে মাথায় চাঁদ তারা চিহ্নিত টুপি ও মুখে দাড়ি সাদৃশ্য একটি লোকের গলায় তরবারি ধরা।

(চিঠির বানান হুবহু রাখা হয়েছে এবং সংবেদনশীলতার কারণে চিঠির কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়নি)

দুই চিঠিই প্রথমে মুয়াজ্জিনের হাতে পড়ে

রবিবার বিকেলে টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদে গিয়ে দেখা হয় মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. সাইফুল্লাহর সঙ্গে।

দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি যতটুকু জানি, আজ থেকে এক মাস আগে একটা চিঠি আসে। ওই দিন বৃহস্পতিবার ছিল। তবে চিঠির গায়ে ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখ লেখা ছিল।”

মুহিব্বুল্লাহ ফজরের নামাজে যাবেন, কিন্তু তার ঘর ও সীমানা প্রাচীরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় জানিয়ে সাইফুল্লাহ বলেন, “জিআই তার দিয়ে দরজা লক করে গেছে। পরে হুজুর আমাকে ডাকলে আমি এসে দরজা খুলে বাইরের টিনের দরজার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় একটি চিঠি পাই। পরে হুজুরকে চিঠিটা দেই।”

এই ঘটনার পর মুহিব্বুল্লাহ বাসার সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসান।

তার এক মাস পরে, গত ২১ অক্টোবর এশার নামাজের সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মসজিদের মধ্যে একটা চিঠি পাওয়া যায় জানিয়ে সাইফুল্লাহ বলেন, “চিঠিটা দ্বিতীয় কাতারের পাশে যে জানালা খোলা ছিল, ওই জানালা দিয়ে ফেলে রেখে যায়। এই চিঠিতে তারিখ লেখা নাই। অনেক কিছু লেখা আছে চিঠিতে।”

টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন মো. সাইফুল্লাহ। মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীকে হুমকি দিয়ে পাঠানো শেষ দুটি চিঠি তিনিই দেখতে পান।
তার ভাষ্য, মসজিদের সামনের দিকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। তবে চিঠি সেখান দিয়ে না দিয়ে পেছনের জানালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২ নম্বর চিঠি পাওয়ার কথা মুহিব্বুল্লাহর কাছ থেকে জানিয়ে সাইফুল্লাহ বলেন, “প্রথম যে চিঠিটা আমি পেয়েছিলাম হুজুরের বাসার গেইটে, ওইটাতে ইসকনের কথা উল্লেখ আছে। দুই চিঠিতেই একই রকম হাতের লেখা।”

এর আগে যে ১০টা চিঠি দেওয়ার বিষয় ১১ নম্বর চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ওই চিঠিগুলো কোথায়—জবাবে তিনি বলেন, “হুজুর বলেছেন, ছয়টা না কয়টা যেন তিনি পেয়েছেন। তবে ওই চিঠিগুলো আমরা দেখি নাই। গত মাসের চিঠি (১১ নম্বর চিঠি) পাওয়ার পর মসজিদ কমিটির লোক থেকে শুরু করে এলাকার লোকজন জানাজানি হইছে। আগের চিঠিগুলোর বিষয়ে কেউ জানতো না।”

চিঠির বাহক কে?

২১ অক্টোবর এশার নামাজের সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মসজিদের মধ্যে একটা চিঠি পাওয়া যায়। চিঠিটা দ্বিতীয় কাতারের পাশে যে জানালা খোলা ছিল, সেই ফাঁকা অংশ দিয়ে চিঠি ফেলে রেখে গেছে বলে জানান মুয়াজ্জিন মো. সাইফুল্লাহ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, ওই জানালার পাশে গিয়ে সোজা তাকালে মসজিদের পেছন দিয়ে বুক সমান সীমানা প্রাচীর দেখা যায়। প্রাচীর পার করলে একটা জনবহুল সড়ক। এর বিপরীত পাশেই ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানি। ওই দোকানের ডান পাশেই লাগোয়া আরেকটি অফিস আছে।

মসজিদের যে অংশে চিঠি পড়েছিল বলে দাবি করেছেন মুয়াজ্জিন, ওই অংশে দাঁড়িয়ে সোজা তাকালেই ইলেকট্রিক পণ্যের দোকান দেখা যায়। দোকানের সামনে দাঁড়িয়েও মসজিদের ওই অংশ স্পষ্ট দেখা যায়।

দোকানি আনোয়ার হোসেন বিকেল ৫টায় দোকানে আসেন, রাত ১২টা পর্যন্ত থাকেন। তবে সেদিন তিনি ৫টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে ওই দেয়াল টপকে মসজিদে কিছু রাখতে দেখেননি।

যে জানলা দিয়ে চিঠি ফেলে দেওয়ার কথা বলা হয়, তার ওপরে মসজিদের এসির বাইরের অংশ আছে। সেদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুইজন কর্মী এসি মেরামত করেছেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, “মোয়াজ্জিন সাব আমাকে বলছিলেন, ২১ তারিখ বিকেল ৫টায় এখান দিয়ে কাউকে যেতে দেখছি কি না। আমি বলেছি, ‘না, কাউকে দেখি নাই।’

“তবে দুইটা মানুষকে মসজিদের এসির কাজ করতে দেখেছি। আমার দোকানের পাশের সিসিটিভি ক্যামেরা দেখাতে আমি মুয়াজ্জিন সাবকে বলেছিলাম। এখানে আরও কিছু ক্যামেরা ছিল, সেইগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।”

জানালাটা তো দোকানের সামনেই। “আপনি কি কাউকে দেয়াল টপকে মসজিদের পেছনের জানালা দিয়ে কিছু ভেতরে ফেলতে দেখেছেন?”—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি কাউকে দেয়াল টপকে মসজিদের পেছনের জানালায় যেতে দেখি নাই।”

সিসিটিভি ফুটেজে কী দেখা যায়

এই ঘটনার বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ দেশকাল নিউজ ডটকমের হাতে এসেছে। তার মধ্যে মুহিব্বুল্লাহর বাসার ভেতরের উঠান ও বাইরের রাস্তা এবং মসজিদের সামনের মোট তিনটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল ৬টা ৫২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তিনি ঘর থেকে বের হন।

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বাম হাতে দরজা খুলে বের হন, পেছন ফিরে তাকাননি এবং টিনের দরজাটি নিজে বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল ৬টা ৫৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে তিনি মসজিদ ছাড়েন এবং প্রায় ৬টা ৫৪ মিনিটে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কে কালীগঞ্জের দিকে রওনা হন। পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, মাথায় কালো রঙের পাগড়ি।

রাস্তা দুই পাশেই নানা ধরনের কারখানা, ভারী যানবাহনের চলাচল রয়েছে। বাস, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ছড়িয়ে থাকে। দুই পাশে ফুটপাত না থাকায় এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

মুহিব্বুল্লাহর বাসার অদূরে শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভারশন সেন্টারের চারটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও এজাহারে উল্লেখিত অপহরণের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেওয়া চারটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মুহিব্বুল্লাহ পাম্পের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। এই সময় উজ্জ্বল রোদের ঝলক এবং রাস্তায় অসংখ্য যানবাহন ছুটছে।

টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে থেকে অপহরণের দাবি করেছেন মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেলে তিনি নিজেই হেঁটে গেছেন এই পথ দিয়ে।
ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স পথরোধ করে তাকে অপহরণের যে দাবিটি করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে এরকম কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। বরং তাকে একাই দ্রুত গতিতে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।

সামনের সেতুর উপরে পুলিশের স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার যতদূর ফুটেজ পাওয়া যায়, ততদূর দেখা যায় মুহিব্বুল্লাহ একাই হাঁটছেন। অথচ এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ফিলিং স্টেশনের সামনে তাকে অপহরণ করা হয়।

৬টা ৫৪ মিনিটে এলাকা থেকে রওনা হয়ে তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে। অর্থাৎ দুই কিলোমিটার পথ তিনি ২৪ মিনিটে পাড়ি দিয়েছেন।

সেই হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজের ওই ১০ মিনিটে তিনি আরও প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটেছেন, যা ব্রিজের উপরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে।

মুয়াজ্জিন সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, মুহিব্বুল্লাহ তাকে বলেছেন, সেতুর পরে ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “পুলিশ এসেও আমাদের সিসিটিভি থেকে তথ্য নিয়েছে। তিনবার বিভিন্ন পুলিশ এসেছিল। আমাদের ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে হুজুরকে অপহরণ করা হয়নি। তিনি একাই হেঁটে যাচ্ছিলেন, ভিডিওতে দেখেছি।”

প্রাতঃভ্রমণ মুহিববুল্লাহর নিয়মিত অভ্যাস না

সকালে হাঁটার সময় অপহরণের যে অভিযোগ মুহিব্বুল্লাহ এনেছেন, সেই প্রাতঃভ্রমণ তার নিয়মিত অভ্যাস ছিল, এমন কোনো বয়ান পাওয়া যায়নি।

মুয়াজ্জিন মো. সাইফুল্লাহ বলেন, “হুজুরকে কখনও সকালে হাঁটতে যেতে দেখি নাই বললেই চলে। হুজুরের সঙ্গে আমার যতদিনের পরিচয়, সব মিলিয়ে দুই-তিন দিন আমি তাকে সকালে হেঁটে আসতে দেখেছি।”

মুহিব্বুল্লাহর সঙ্গে কত বছরের পরিচয় আপনার?—সাইফুল্লাহ বলেন, “এই ধরেন, হুজুর এখানে ১৭ বছরের মতো আসছেন। আমি এক বছর পরে আসছি।”

প্রাতঃভ্রমণ মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীর নিয়মিত অভ্যাস না। তবে গত ২১ অক্টোবর তিনি সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়ে তার মসজিদের সামনে দিয়ে এগিয়ে যান।
অপহরণের বিষয়ে মুয়াজ্জিন বলেন, “হুজুর আমাদের কাছে বলেছেন, নিমতলী ব্রিজ পার হওয়ার পরে ডান পাশে ময়লা ফেলা, বাম পাশে ট্রাকস্ট্যান্ড আছে। ওইখান থেকেই হুজুরকে অপহরণ করা হয়েছে।”

ঘটনার দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুহিব্বুল্লাহর ফোন খোলা ছিল বলেও জানান মুয়াজ্জিন সাইফুল্লাহ।

পঞ্চগড় থেকে টঙ্গী পৌঁছে ওই দিনই মসজিদে মুহিব্বুল্লাহ জুমার নামাজের খুতবায় বয়ান করেন বলেও জানান তিনি।

রবিবার সকালে খতিব অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে এলাকার একটি হাসপাতালে, পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আসামি হবেন মুহিব্বুল্লাহ নিজেই?

ঘটনাটির তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত গাজীপুর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে দেশকাল নিউজ ডটকমের।

দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “মুহিব্বুল্লাহ নিজেই নিজের পায়ের সঙ্গে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন। সেসব কিছু নিজে করেছে। তাকে পঞ্চগড় কেউ নেয় নাই। সে নিজের মামলায় নিজেই আসামি হবে। মুহিব্বুল্লাহ নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন।”

যে ধারায় তিনি মামলা করেছেন, এই ধারায় তার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমাদের কাছে তার সব ভিডিও আছে। তার নিজের বলা ভিডিও আছে। সে বলেছে, তারা শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলেছে। ইন্ডিয়ান মনে হয়েছে। তাকে চোখ বাঁধছে, বোতলে পানি ভরে পিটাইছে।”

মুহিব্বুবুল্লাহ যে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে শরীরে দাগ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “কিন্তু তার শরীরে কোনো দাগ নাই। তিনি দেখিয়েছেন, তার কেনি থেকে একটু দাঁড়ি কেটেছে। আপনার যদি কারো ওপর রাগ হয় বা আপনি কাউকে যদি অপহরণ করেন তাহলে তার সবটুকু দাঁড়ি কেটে ফেলবেন।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “শুরুতে তিনি (মুহিব্বুল্লাহ) যেখান থেকে অপহরণ হওয়ার কথা বলেছেন, তিনি সেখান থেকে অপহরণ হন নাই। তাকে দীর্ঘ পথে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। এবং দীর্ঘ পথ হেঁটে সিসিটিভি ক্যামেরার আড়াল হয়ে নিজেই যানবাহনে উঠে চলে গেছেন।

“তিনি কোন যানবাহনে প্রথমে উঠে গেছেন সেটা দেখা যায় নাই। ব্রিজের উপরের সিসিটিভি ক্যামেরায় যতদূর দেখা যায় তাকে, তিনি হেঁটতেই আছেন। তাকে কেউ অ্যাম্বুলেন্সে তোলেনি।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুহিব্বুল্লাহর মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে জানতে পেরেছে, তিনি প্রথমে সিরাজগঞ্জ ও পরে সেখান থেকে পঞ্চগড় যান।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সাদা পোশাকে মুহিবুল্লাহকে নজরদারিতে রেখেছেন। তিনি যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন বলেও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মারধরের চিহ্ন নেই গায়ে

মুহিব্বুল্লাহ তাকে মারধরের যে অভিযোগ এনেছেন, সেই দাবিরও সত্যতা পাওয়া কঠিন।

পঞ্চগড়ে তাকে খুঁজে পাওয়ার পর জেলার সিভিল সার্জন মো. মিজানুর রহমান তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। দেশকাল নিউজ ডটকমকে তিনি বলেন, “আপনি যদি জানতে চান, শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উনাকে মারধর করা হয়েছে? না, তেমন কিছু আমরা পাইনি।

“তিনি তখন একটি অভিযোগও করেন, উনার ভাষায়, কেউ নাকি কাচের বোতলে পানি ভরে সেই বোতল দিয়ে উনার ডান হাতের উপর আঘাত করেছে।তাছাড়া ডান কানের পেছনে ব্রেনের একটা অপারেশন হয়েছিল সেখানে, ডান হাতে ও উরুতেও আঘাত করা হয়েছে এবং সেই জায়গাগুলোতে ব্যথা অনুভব করছেন। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে সেখানে কোনো কাটা বা দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবুও উনি ব্যথার অভিযোগ করছিলেন, তাই আমরা চিকিৎসা দিয়েছি।”

মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীর দাবি, তাকে টানা নির্যাতন করা হয়েছে। তবে পঞ্চগড় হাসপাতালে তাকে পরীক্ষা করে নির্যাতনের চিহ্ন পাননি জেলার সিভিল সার্জন।
ব্যথার কথা বলার কারণে মুহিব্বুল্লাহকে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, “তিনি প্রায় ১২ ঘণ্টা আমাদের কাছে ছিলেন, এরপর ভালো অবস্থায় চলে যান।”

“অবশ্য কেউ আঘাত করলেও সবসময় দাগ দেখা যায় না, এটাও সত্য”, বলেন পঞ্চগড় চিকিৎসা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্তা।

কাউকে পাওয়া যায়নি মুহিব্বুল্লাহর বাসায়

পূর্বমুখী রাস্তা দিয়ে পশ্চিম দিকে টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে ঢুকতেই প্রথমে হাতের ডানে পড়ে কলোনির মসজিদটি, যেই মসজিদের খতিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

মসজিদ ধরে ভাঙাচোরা ইটের রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে এগোতে গিয়ে মসজিদের লাগোয়া কয়েকটি একরুমের কক্ষ দেখা যায়। শেষ বাসায় বাস করেন মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. সাইফুল্লাহ।

সাইফুল্লাহর বাসার পরেই লাগোয়া মুফতি মুহিব্বুল্লাহর টিনের জরাজীর্ণ দোতলা ঘর। ঘরের সামনে ছোট উঠানে কয়েকটি গাছপালা। উঠানের সামনে টিনের বেড়া দেওয়া। বেড়ার পূর্ব পাশে এক টিনের দরজা। দরজার পূর্ব পাশে একটি স্ট্যান্ডে ছোট একটি বিলবোর্ডে লেখা ‘খত্বীব মানযিল’।

একই সঙ্গে বিলবোর্ডে নিজের ও বড় ছেলের মোবাইল নম্বর লেখা আছে। এই বিলবোর্ড লাগোয়া টিনের বেড়ার সামনে বিদ্যুতের পিলারে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামেরাটি এক মাস আগে বসানো হয়েছিল।

রবিবার বিকেলে সাইফুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে বাসার সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করেও বাসার কারও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই সময় এক বৃদ্ধ নারীকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে মুয়াজ্জিন সাইফুল্লাহ জানান, রবিবার সকালে মুহিব্বুল্লাহ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:১৩

...নিপুণ কথন... বলেছেন: Click This Link

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: বিষয়টি ষড়যন্ত্র হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:০০

আমি নই বলেছেন: এই পত্রিকা কি আপনার?

ইসকন সহ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা উচিৎ।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৮

নতুন বলেছেন: এই মোল্যা সম্ভবত বর্তমানে অনেক জায়গায় সিসিটিভি আছে সেটা জানতো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.