নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চোখ বন্ধ করলে একটা গল্প শুরু হয়।বন্ধ চোখের গল্পে আমি তিথি আর জীবনানন্দ সাত নাম্বার বাসে করে সবুজ পাহাড় আর শাদা মেঘ কেটে সাজেক ভ্যালী যাই।
নানা পদের বই পড়তে পড়তে বড় হলেও পড়ার বই পড়া আগ্রহ খুব একটা পাই নি জীবনানন্দের জন্য।
জীবনানন্দ দাশ পড়ি প্রায় দশ বছর ধরে।প্রথম দিকে জীবনানন্দ পড়তাম জীবনানন্দ না পড়া বন্ধুদের কাছে ভাব জমানোর জন্য।কয়েক লাইন পড়ে মুখস্থ করে রাখতাম বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডদের কাছে কবিতা প্রেম প্রকাশ করার জন্য।তারপর প্রকৃতই জীবনানন্দে অভ্যস্ত গেয়েছি।খুব কম মানুষ ই এই অভ্যস্ততা কে মূল্য দিয়েছে।
যে অল্প কয়েক জন আমার কবিতা প্রেম কে শুধুমাত্র মেয়েদের কাছে বাহবা পাওয়ার স্ট্যান্ট হিসেবে দেখে নি,তারচেয়ে বেশি কিছু বলে চিন্তা করেছে তিথি তাদের একজন।২০১৩ সালের মাঝামাঝি তিথির সাথে পরিচয় হয়।দ্বিতীয়বার তিথির সাথে দেখার হওয়ার পর প্রথম বারের মত একটি মেয়েগল্প লেখতে শুরু করি।কারণ তিথি যেকোন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হওয়ার যোগ্যতা রাখে।কনফিডেন্ট,এক্সট্রভারট আর কিছুটা ঝগড়াটে।
আজিজ মার্কেটের হাতা কাটা কুর্তি পড়ে তিথি আমার সাথে জীবনানন্দের গল্প নিয়ে গল্প করতো।হয়তো সে জীবনানন্দ অথবা আমাকে পছন্দ করত। বেশীর ভাগ সময় শাহবাগ চায়ের টংগুলো তে বসতাম।আবার কখন আমার বন্ধুর খালি বাসাতে শুতাম।আমি এই এক্ষেত্রে ও জীবনানন্দ দাশের কাছে কৃতজ্ঞ।তিনি আমাদের এক বিছানায় জলদি নিতে সাহায্য করেছেন।না হলে আমি কোন দিনই তিথির শরীর দেখার,ছোঁয়ার ইচ্ছে থাকলে ও বলার কনফিডেন্স ছিল না।যাই হোক জীবনানন্দ কে পাশ কাটিয়ে কুঁচকানো বেড সীটে তিথির ঘাম জড়িয়ে তিনটি বছর পার করে দিয়েছিলাম।তিথি কে লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখার ভয় ছিল না।কারণ মন কে আমি সব সময় শরীরের অংশ আর প্রেম কে শরীরের অভ্যাস মনে করেছি।
আমি আর তিথি ইন্টেল্যাকচুয়াল ঘরানার রিলেশনশীপে ছিল।কোন প্রকার কমিটমেন্ট ছিল না।হ্যা তবে দুই জনের মধ্যেই একটা মানসিকতা ছিল যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।ভালো কিছু করতে হবে।নিজেদের কে ভালো একটা অবস্থানে নিতে পারলে সারা জীবন একসাথে থাকার চেষ্টা করা যেতে পারে।বিয়ে করা যেতে পারে।আমরা দুই জন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ আমরা ঠিক করেছিলাম আমরা এক সাথে সাজেক ভ্যালী যাব।আর তাছাড়া আমারা এক জন আরেক জন্য কে উপভোগ করা শিখে গিয়েছিলাম।আমরা শিউর ছিলাম আরো পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা ঠিক এক ই রকম উপভোগ্য থাকবো।
কালো তিথির অন্যতম প্রিয় রং ছিল।যদিও ওর বেশীর ভাগ জামাগুলো ছিল গেরুয়া রংয়ের।আমি ওর জন্মদিন উপলক্ষ্যে কালো শাড়ী দিয়েছিলাম।জন্মদিনে তিথি আমার দেয়া শাড়ী পড়ে এসেছিল।
শাড়ীতে অনভ্যস্ত আনমনা তিথি ছোট ছোট পা ফেলে রাস্তা পার হচ্ছিল। হয়তো একটু বেশীই আনমনা ছিল।কারণ ওর বাম পাশ থেকে আসা সাত নম্বর বাসের ড্রাইভার হর্ন দিয়েছিল,ও শুনতে পায় নি আমার শত চিৎকার ও।
ড্রাইভার হর্ন দিয়ে যাচ্ছিল তিথি কে চাপা দেয়ার আগ পর্যন্ত।ড্রাইভার হর্ন দিয়ে যাচ্ছিল পাশের জানালা দিয়ে পালাবার আগ পর্যন্ত।সাত নাম্বার বাসের হর্ন আমার কানে বাজচ্ছিল হর্ন বাজানো বন্ধ করার পর ও।সাত নাম্বার বাসের হর্ন আমার কানে বাজচ্ছিল তিথির থেতলে যাওয়া শরীর ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে পড়ে থাকার সময়ও।
চোখ বন্ধ করলে একটা গল্প শুরু হয়।বন্ধ চোখের গল্পে আমি তিথি আর জীবনানন্দ সাত নাম্বার বাসে করে সবুজ পাহাড় আর শাদা মেঘ কেটে সাজেক ভ্যালী যাই।
©somewhere in net ltd.