![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
--- স্যার আমার ভুল অইয়্যা গেছে, মাফ কইরা দেন।
--- কিসের মাফ ছোট লোকের বাচ্চা, কান ধরে উঠবস কর।
--- স্যার আপ্নের ভাড়া দেওন লাগব না।
--- তোর সাহস কত আবার কথার উপর কথা বলিস!
--- স্যার আমি ঢাহা-শহরে নতুন রিকসা চালাই, পথ-ঘাট অত ভালো করে চিনি না, তাই ভুল অইয়্যা গেছে।
--- নতুন চালাস তাতে কি, তোদের মত ছোট লোকের বাচ্চাদের শিক্ষা হওয়া উচিৎ, না হয় একি ভুল বারবার করবি।
একজন রিকসাওয়ালা এবং একজন ভদ্রলোকের ঝগড়া শুনে আশপাশের লোকজন ভিড় জমাতে লাগল। রিকসাওয়ালা লোকটি মোটামুটি বৃদ্ধ বয়সের। ঢাকা শহরে নতুন রিকসা চালাতে এসেছে তাই শহরের অলি-গলি এত ভালভাবে চিনে না। তার অপরাধ সে ভদ্রলোকটিকে ভুল পথে নিয়ে আসছে। উপস্থিত লোকজনদে মধ্য কয়েকজন ভদ্র লোকটিকেই সাপোর্ট দিল, আর কয়েকজন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো। রিকসাওয়াল লোকটি নির্যাতিত হয়ে চোখের পানি মুচতে মুচতে চলে গেল। ভদ্র লোক এবং তাকে সাপোর্টার লোকজন মোটামুটি এক ধরনের আত্মতৃপ্তি অনুভব করল।
,
নিজের বিবেককে একটি বারের জন্য প্রশ্ন করে দেখুন তো এই লোকগুলোর কি লাভ হলো বাবার বয়সী একজন অসহায় বৃদ্ধ লোকটিকে অপমান করে। সেও তো আপনার আমার মতো কোন না কোন সন্তানের বাবা। তার সন্তান ও হয়তো কোন নামি-দামী কলেজ কিংবা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আপনার কিসের এত অহংকার? কোন ক্ষমতাবলে আপনি ঐ বৃদ্ধ অসহায় বাবার বয়সী লোকটির সাথে দূর্ব্যবহার করবেন। সে রিকসা চালায় এই কারনে? আর আপনি অনেক টাকার মালিক সে কারণে?
একটি বার ভেবে দেখুন তো আপনার পজিশনের লোকগুলোর কাছে আপনার সম্মান কতটুকু? আরে ভাই এদের মত ছোটলোকগুলো আছে বলেই তো দিনে একশত বার স্যার স্যার শোনার সৌভাগ্য আপনার হয়। আপনার পজিশনের কেউ আপনাকে স্যার স্যার বলে ডাকবে না। আপনার নাম ধরেই ডাকবে। আর টাকার কথা বলছেন? তো রিকসায় কেন, যান কোন প্রাইভেট কারে করে যান। আপনার টাকা আছে তো সামান্য মুচির কাছে কেন? যান নিজের জুতা নিজে পরিষ্কার করুন। আপনার গাঁয়ে অনেক শক্তি তাই না? তাহলে কুলির সাথে কথা কাটাকাটি করে অযথা সময় নষ্ট করছেন কেন? নিজের বোঝা নিজের মাথায় করে নিন না। তারপর দেখুন আপনার মতো ক্ষমতাশালী লোকের আত্মসম্মানে কতটুকু বাঁধে।
নিজেকে খুব ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয় কোন সমাজে বসবাস করছি আমরা? এ কেমন সমাজ যেখানে সামান্য প্রতিপত্তির প্রভাবে মানুষকে ছোট করে দেখা হয়? এখানে কেন ভাবা হয় না, প্রতিটি মানুষই সৃষ্টির সেরা জীব। সে রিকসাওয়ালা, মুচি, কামার-কুমোর যে শ্রেণীরই হোক না কেন। সামান্য পেশার কারনে কেন তাদেরকে অন্য চোখে, আলাদা পাত্রে রাখা হয়। সে তো আপনার আমার মতোই মানুষ। আজ আপনি কোন কোটিপতি বাবার ঘরে জন্ম নিয়েছেন, সেটা কি আপনার ইচ্ছায় নাকি পরম সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়? একবার ভেবে দেখুন তো আপনার মত কোটিপতি ঘরের সন্তান, একটি সামান্য রিকসাওয়ালা কিংবা কোন মুচির ঘরে জন্ম নেয়া কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। মোটেই না, এজন্য আপনার উচিৎ প্রতিটি অসহায় মানুষকে দেখে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সৃষ্টিকর্তার শোকরিয়া আদায় করা, একটি বারের জন্য হলেও ভাবা দরকার এদের মত হওয়া আমার কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না।
,
আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের সন্তানেরা একটি আদর্শ ও সভ্য সন্তান হিসেবে গড়ে উঠুক। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যস্থার মাধ্যমে তা কি আদৌ কখনো প্রত্যাশা সম্ভব। কি শিখবে আমাদের সন্তান তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের এ সমাজ ব্যবস্থা থেকে। আমাদের প্রতিবিম্বই তো হবে আমাদের আগামী প্রজন্ম। আসুন না উচু-নিচু, ধনী গরিবের ভেদাবেদটুকু ভুলে গিয়ে মানুষকে শুধু মানুষের পরিচয়েই ভালবাসতে শিখি। মানুষকে ভালবাসাটাই হোক আমাদের প্রকৃত ভালবাসার ফসল। একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা তখনি গড়ে তোলা সম্ভব হবে যখন সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের প্রতি থাকবে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, কোন পেশায় উপমায় কাউকে ছোট করে দেখা হবে না। সবার পরিচয় হবে এক আমরা মানুষ। তাছাড়া কি পাবেন কোন অসহায় মানুষটির সাথে দূর্ব্যবহার করে, তাকে হেয় পতিপন্ন করে। আপনি যদি শিক্ষিত হয়ে থাকেন, তাহলে তো আপনি শিক্ষার পরিচয়টুকুকে কলুসিত করছেন। আপনি নামে মাত্র শিক্ষিত, স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত আপনি নন। শিক্ষা কখনোই মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতে শিখায় না। আসুন না সবকিছু বাদ দিয়ে আজ থেকেই মানুষকে ভালবাসতে শিখি
,
,
লেখাঃ- নিস্তব্ধ অনুভূতি (Mohaimeens)
২| ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:০৯
সুমন কর বলেছেন: রিকসাওয়ালাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। তাঁরা খেটে খাওয়া মানুষ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩০
প্রন্তিক বাঙ্গালী বলেছেন: টাকা হইলেই মানুষ চিনাযায়। এরা হলো মুখোশ ধারী ভদ্র লোক/স্যার।