![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[Briefly translated from the article "The Real Beauty of the Garos: Their Culture and Tradition" written in 2007 by me. To read the whole article in English, please click here.
ধান ভানতে শীবের গীত
২০০৭ সালে ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অব স্ট্যাট এর স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়াশুনা করি, তখন আমার অনেকগুলো পঠিত বিষয়ের মধ্যে পাবলিক স্পীকিং এবং আমেরিকান লাইফ এন্ড কালচার এই দুটি বিষয় পড়তে গিয়ে আমার দু'টি দিক সামান্য জ্ঞান হয়েছেঃ এক) বিশ্বের জাঁদরেল জাঁদরেল শিক্ষা-রাজনৈতিক- সামাজিক - ধর্মীয় - মানবাধিকার নেতৃবৃন্দের ভাষণ, বক্তৃতা দেখার, শোনার, পড়ার এবং তাঁদের চিন্তা-চেতনার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে; দুই) আমেরিকান লাইফ এন্ড কালচার পড়তে গিয়ে গারো সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটা তুলনামূলক পড়াশুনার করার সময় ও সুযোগ ঘটেছে। বিভিন্ন দেশের ৩৩ জন বাছাই করা, তুখোড়, মেধাবী আমার সহপাঠী, ১৫ জনের মত বিশ্বসেরা অধ্যাপকদের সাথে পড়াশুনা এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ মিলেছে।
ইংল্যান্ডের মহামান্য প্রিন্স ও প্রিন্সেস চার্লস এর সাথে সাক্ষাৎ, তাদের সাথে আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা বলা, সহপাঠী ও অধ্যাপকদের আমার সংস্কৃতি নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন এবং এঁদের কৌতূহল মেটাতে গিয়ে দেখলাম আসলে আমি কোনদিন এই সব নিয়ে ভাবিও নি! মাঝে মাঝে তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মাথা নত হয়ে গেছে লজ্জায়, নিজের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতার কথা ভাবতে গিয়ে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে কখনো সখনো। আমার একজন আমেরিকান মেয়ে সহপাঠী একদিন আমাকে ক্লাশেই প্রশ্ন করে বসল, "What is the beauty of your culture?' তৎক্ষণাৎ আমি জবাব দিতে পারিনি! বললাম, "Very difficult to mention it right now. Give me five minutes please!" আর সবাই হো হো করে হেসে উঠল। লজ্জায়ই পড়ে গেলাম। সামলে নিয়ে বললাম, "The beauty of the Garo Culture is, we place the women in the highest position. None but the clan is the owner of the land properties here! Women are the Presidents and daughters are the princess. But we, the sons, are the Prime Ministers. They (women) apparently have the properties, but we, the men, enjoy the magistracy power!" ব্যাখ্যা করতে করতে ক্লাশ শেষ। অধ্যাপক টবি হোপম্যান বললেন, 'মিঃ নকরেক, ইট সীমস রিয়্যালি ডিফরেন্ট, বিউটিফুল! ইটস রিয়্যালি এমেইজিং! প্লিজ বি প্রিপেয়ারড ফর টুমোরো, উই অয়ান্ট টু নৌ মোর এবাউট দ্য গারোজ!"
Prof. Tobbie Hoffman & me, Drexel University, USA, 2007
সব মিলিয়ে ভাবলাম, এখন তো প্রায়ই এই বিষয়ে লেকচার দেওয়া লাগছে! গুছিয়ে লিখে নিয়ে বিষয়গুলো উপস্থাপন করলে কেমন হয়? তাই ইন্টারন্যাশনাল হলে গিয়ে একটা আর্টিকেল লিখলাম। তাঁর সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ দিলাম। কেউ চাইলে ইংরেজিটাও পড়তে পারেন। গুগুলে গিয়ে The Real Beauty of the Garos: Their Culture and Tradition লিখে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন দীর্ঘ একটা আরটিক্যাল। লেখাটি অনেক দীর্ঘ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মিস বিবালী রিছিল বার বার গারো সংস্কৃতির উপর ছোট লেখার জন্য অনুরোধ করেছে বলেই সংক্ষিপ্ত আকারে পুনরায় লিখলাম।
প্রাক কথন
জীবনের প্রায় ৩০ টি বছর পার করে আমার জীবনের সব থেকে মধুর স্মৃতিগুলো রোমন্থন করলাম। আমার নিজের গারো জাতি, তাঁদের ইতিহাস, নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে ভাবলাম! যদিও দেরী করে ফেলেছি, কিন্তু 'লেইট ইজ বেটার দ্যান নেভার।' কাজটি করতে গিয়ে আমি দেখলাম, আমার নিজের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নমাত্রা, অমূল্য কিছু বিষয়ের অবতারনা, ধারণা করা যায় না এমন কিছু সৌন্দর্য্য, কিছু অপ্রকাশিত সত্য, যা আমার ধারণার বাইরে! আর এই অপ্রকাশিত বিষয়টিই গারো সংস্কৃতির সৌন্দর্য! আসুন আমরা এই সুন্দর সংস্কৃতির মূলের সাথে পরিচিত হই। আমরা যারা গারো সমাজের, আমরাও একটু ভেতরে প্রবেশ করি! বোধ করি, আমার মত আরও অনেক আছেন, যারা এ নিয়ে ভাবেন নি কোনদিন!
Dr. Joshua, Professor, American Life & Culture, Drexel University, USA, 2007
গারোরা বাংলাদেশ, ভারত এবং ভূটানের অসংখ্য জাতিস্বত্বার মধ্যে একটি আদিবাসী জাতি। তাঁদের নিজের আলাদা ভাষা ও অসম্ভব সুন্দর সংস্কৃতি রয়েছে। এই কঠিন, নির্দয়, মেকী এবং জটিল পৃথিবীতে তাঁদের সরলতা, সততা অবশ্যই একটি আলাদা সৌন্দর্য। কিন্তু এর থেকেও আরও স্বতন্ত্র সৌন্দর্য বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। তাঁরা তাঁদের মা-বোনদের তাঁদের সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে থাকেন। মহিলারা তাঁদের সমাজে রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রপতির মত, মেয়েরা রাজকন্যার মত। আর পুরুষেরা? প্রাইম মিনিস্টারের মত! ভরণ - পোষণ, শাসন, বিচার কাজ সব তারাই করেন। ছেলেরা? তাঁরা যেন এক একজন মন্ত্রী (চ্রা)! তাঁরা পৃথিবীর অন্যান্য সমাজের চেয়ে এমন কি তাঁদের প্রত্যাশার চেয়েও অধিক বেশী দায়িত্ব এবং অধিকার ভোগ করেন! বলতে পারেন এইটাও তাঁদের সংস্কৃতির সৌন্দর্য! কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আসল সৌন্দর্য অন্য কোথাও, অন্যকোন খানে!
আমি আমার লেখার শুরুতেই সেই 'আসল সৌন্দর্য প্রকাশ করে দিতে চাই না। আসুন পুরো গল্পটা শুনি এবং সে অসাধারণ হেলেনিক সৌন্দর্য টা আবিস্কার করি! কী সে টা আসলে? আসতে! ধৈর্য ধরুন, বলছি ...
আমাদের যা জানতে হবেঃ
গারোরা নিজেদের মান্দি বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। 'মান্দি' শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'মানুষ'। তাঁরা নিজেদের 'আচিক' বলে পরিচিয় দিতেও পছন্দ বোধ করেন। 'আচিক' শব্দের অর্থ 'পাহাড়ি মানুষ'। 'উপজাতি' বললে তাঁরা অপমানিত বোধ করেন। বাংলাদেশে প্রায় ২ লক্ষ গারো আদিবাসী বাস করেন। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, গাজীপুর, সিলেট, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সুনামগঞ্জ, মৌলুভী বাজার এবং ঢাকা জেলায় এঁদের বাস। ভারতের আসাম, গোয়ালপাড়া, ত্রিপুরা রাজ্য এবং গারো হিলসের মেঘালয় রাজ্যে আরো প্রায় ৬ লাখ গারো বাস করেন। কোচবিহার, দার্জিলিং এবং ওয়েস্ট বেংগাল এর দিনাজপুরে এবং ভূটানেও কিছু গারো আদিবাসী বাস করেন।
তাঁদের ধর্ম
গারোদের আদি ধর্ম সাংসারেক। উনবিংশ শতাব্দিতে আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট এবং ক্যাথলিক মিশনারিগণ বাংলাদেশ এবং ভারতে গারোদের জন্য স্কুল, হাসপাতাল নির্মাণ এবং সেবা দিতে শুরু করেন। সেই থেকে গারোরা খ্রিষ্ট ধর্মে দিক্ষিত হতে শুরু করেন। আজ প্রায় ৯৯ ভাগ গারো খ্রিষ্টান। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরে কিছু গারো গুরু সত্য (হিন্দু ধর্ম) এবং মুসলিম ধর্ম পালন করেন। এঁদের সংখ্যা ১ শতাংশেরও নীচে।
গারোদের ভাষা
গারো ভাষা সিনো-টিবেটান বডো ভাষার অন্তর্গত। যেহেতু তাঁদের নিজেদের স্বীকৃত, সার্বজনীন কোন লিখিত রূপ নেই, তাঁরা বংশানুক্রমে তাঁদের সন্তানদের কাছে মুখে মুখে তাঁদের সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জীবন, বীরত্বগাথা এবং তাঁদের বোধ - বিশ্বাস সম্পর্কে তাঁদের প্রজম্মকে মুখে মুখে বলে থাকেন। কথিত আছে, তিব্বেত থেকে গারো হিলস আসার পথে গারোরা তাঁদের লিখিত বর্ণমালা হারিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে একাধিক গল্প প্রচলিত আছে। তবে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক গারো ছাত্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশেই বর্তমানে ৮ রকমের গারো বর্ণমালা বিদ্যমান রয়েছে। এর সম্ভাব্য কারণ, গারোরা ঐ ৮ গবেষকের কারোর আবিষ্কৃত বর্ণমালায়ই আমলে নেননি! গবেষণায় এও দেখা গেছে ঐ ৮ জনের আবিষ্কৃত বর্ণমালাগুলোর সাথে একে অপরের আবিষ্কৃত বর্ণমালার উল্লেখ করার মত সাদৃশ্য দেখা যায় না।
গারোদের অনেক উপ-ভাষাও রয়েছে। তাঁর মধ্যে আবেং, আত্তং, মেগাম, মাচ্ছি, দোয়াল, চিবক, চিসাক, গারা-গাঞ্চিং উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরাদের কক বরক ভাষার সাথে গারো ভাষার বেশ কিছু মিল পাওয়া যায়। গারো এবং ত্রিপুরা দুই সহোদর বোনের বংশধর বলে লোককাহিনী গারো সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
গারোদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
গারো আদিবাসীরা খ্রিষ্ট পূর্ব ৪০০ বছর আগে চীনের তিব্বেত থেকে প্রথমে মেঘালয় রাজ্যে জাপ্পা জাল্লিম ফা, সুখ ফা ও বঙ্গি ফার নেতৃত্বে ব্রম্মপুত্র নদী পার হয়ে এসে অস্থায়ীভাবে নদী-উপতক্যায় বসবাস করেন। মোঘল এবং ব্রিটিশ সেনাদলের সাথে তাঁদের যুদ্ধের ইতিহাসে তাঁদের অস্তিত্বের রেকর্ড মেলে।
১৮০০ সালের পূর্বের লেখনিতে গারোদের উল্লেখ এমন, "The Garos were looked upon as blood thirsty savages, who inhabited a tract of hills covered with almost impenetrable jungle, the climate of which was considered so deadly as to make it impossible for a white man to live there" (Major Playfair 1909: 76-77). তাঁদের কে কেউ কেউ 'হেড হান্টার' বলেও অভিহিত করতেন।
১৮৭২ সালে, ব্রিটিশ সরকার গারো হিলসে গারোদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য সৈন্য প্রেরণ করে। তাঁরা দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম দিক থেকে একযোগে আক্রমন করে। গারোরা তাঁদের মিল্লাম, স্ফী নিয়ে রংরেংগিরি নামক স্থানে ব্রিটিশ সেনাদের বীরত্বের সাথে মোকাবেলা করেন। তাঁদের গোলাবারুদ, মরটার, কামান ছিলো না বলে তাঁরা যুদ্ধে পরাস্ত হন ঠিকই। কিন্তু তাঁরা কখনো দাসত্ব স্বীকার করেন নি। অনেকে মনে করেন এজন্যই তাঁদের নামাকরণ 'ঘারোয়া' থেকে ঘাওরা বা গারো হয়ে থাকতে পারে!
যুদ্ধের বীর সেনাপতি ছিলেন গারো যুবক পা টংগান এন সাংমা (নেংমিঞ্জা)। গারোরা সম্মানিত কোন গারো নেতা বা বয়োজ্যেষ্ঠ কারোর নামের আগে 'পা' শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। পা টংগান এন সাংমা ব্রিটিশ সৈন্যদের অসম সাহসীকতার সাথে মোকাবেলা করে যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন ১৮৭২ সালে। তিনিই গারোদের প্রথম শহীদ যিনি গারোদের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে শহীদ হন।
পরবর্তীতে, গারো রাজনীতিবিদ, দেশ প্রেমিক নেতা পা সোনারাম আর সাংমার নেতৃত্বেও গারোরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পা সোনারাম সাংমা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরী করতেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের গারোদের উপর অন্যায় অত্যাচার, শোষণের প্রতিবাদে তিনি চাকুরী ইস্তফা দেন। ব্রিটিশ সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে পা সোনারাম এবং অন্যান্য গারো নেতৃবৃন্দের উপর হামলা, মামলা অব্যাহত রাখেন। তিনি ১৯১৬ সালে পরলোক গমন করেন।
গারো সংস্কৃতির আসল সৌন্দর্য্য
পৃথিবীতে মাতৃ-তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এখন অনেকটাই বিরল। গারোরা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী নয় বলে সকলে মিলে মাতৃ - তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রূপান্তর করেন। তবে ঠিক কবে তা করে তাঁর সঠিক ইতিহাস আমার অজানা। তবে কথিত আছে, 'বনেফানি নকপান্থে' তে সকল গারো নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়ে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
কেউ কেউ অবশ্য গারো সমাজ ব্যবস্থাকে 'মাতৃ -সূত্রীয় সমাজ ব্যবস্থা' বলে মনে করেন। কেননা, গারো সমাজে কথায় কথায় 'মা শাসিত' শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান বললেও বাস্তবে 'চ্রা'রাই' (মায়ের ভাইয়েরাই) সমাজকে শাসন করেন! গারো সমাজে ছেলে - মেয়েরা মাতার বংশ পরিচয় অনুযায়ী পরিচিত হয়ে থাকেন। তাঁরা মায়ের উপাধী, টাইটেল বা মাচং গ্রহণ করেন। যেমন বাবা রুগা কিন্তু মা নকরেক হলে তাঁদের ছেলে - মেয়েরা নামের পেছনে নকরেক লিখবেন।
মাতৃ - তান্ত্রিকতা নিজেই একটি স্বতন্ত্র্য সামাজিক ব্যবস্থা। এই সমাজ ব্যবস্থায় পুত্র-কন্যাগণ সামাজিক ভাবেই মায়ের অধীন, তাঁরা মায়ের টাইটেল লিখবেন, 'মাচং' এর বলেই তাঁরা সবাই ঐ মাচং এর সকল স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ ও সম্পত্তির অধিকারী। এই সমাজ ব্যবস্থায় প্রতি টা মানুষ তাঁর মাচং বা বংশের অধীন, তাঁর মায়ের বংশের অধীন। পিতৃ - তান্ত্রিক সমাজে বিষয় টি উল্টো!
গারো সমাজ ব্যবস্থা কি মাতৃ - তান্ত্রিক?
আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করেন, আমি এক কথায় বলব, "না"। গারোদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃ-তান্ত্রিক(Matriarchal) নয় বরং মাতৃ - সূত্রীয়(Matrilineal)। এই দুই এর মধ্যে বেশ তফাৎ আছে।
মাতৃ - তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার প্রধান থাকেন মা, কিন্তু গারোদের পরিবার প্রধান থাকেন বাবা-ই। বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী ড রবিন বারলিং, ড মিল্টন এস সাংমা, ড জুলিয়াস এল আর মারাক গারো সমাজ ব্যবস্থাকে মাতৃ - সূত্রীয়(Matrilineal) বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তাঁরা গারো সমাজে পুরুষকেই পরিবার প্রধান (Head of the family) বলেও উল্লেখ করেন। বাস্তবেও গারো সমাজে পুরুষ পরিবারের প্রধান হিসেবে সকলকে শাসন ও দেখাশুনা করেন। পুরুষ তাঁর ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীকে শাসন করতে পারেন কিন্তু নারী তাঁর স্বামীকে শাসন করতে পারেন না। এর জন্য তাঁকে 'চ্রা' দের উপর নির্ভর করতে হয়।
গারো সমাজে নকনা
গারো সমাজে সাধারনতঃ সব চেয়ে ছোট মেয়েটি (ব্যতিক্রমও হয়), নকনা বা নক-মেচিক হন। তিনি মায়ের উত্তরাধিকারী হন। এই নিয়ে গারো সমাজেও ব্যাপক ভুল বুঝাবুঝি, ভুল ব্যাখ্যা বিদ্যমান! সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে গারোরাও অনেকেই স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। নতুন প্রজম্মের ছেলে - মেয়েদের সিংহভাগ তাঁদের নিজেদের শেখর, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে দুঃখ জনক হলেও অজ্ঞ। ফলে তরুণ প্রজম্মের মধ্যে সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা দেখা দেয়। তরুণ প্রজম্মের বেশীরভাগের প্রকৃত পক্ষেই সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যথেষ্টতো দূরের কথা, নূন্যতম ধারণাও নেই।
বিষয় টা কি?
বিষয় টি খুব সহজ। মাতৃ - তান্ত্রিক সমাজে একক ব্যক্তি কখনো সম্পত্তির মালিক হতে পারেন না! বরং মাচং, গোষ্ঠী হয়ে থাকেন সকল স্থাবর - অস্থাবর সম্পত্তির মালিক। কাজেই, নকনা বা নকমেচিক অথবা যে কোন মেয়ে যে সম্পত্তি পেয়ে থাকেন, তিনি তাঁর প্রকৃত অর্থে মালিক নন। বরং তিনি সে সম্পত্তির ব্যবস্থাপক, রক্ষক, তথবাবধায়ক মাত্র। তিনি যদি কোন কারণে সে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হন, মাচং সে সম্পত্তি পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কারোর উপর ন্যাস্ত করতে পারেন। এই সহজ বিষয়টি না বুঝার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঝগড়া - বিবাদের সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
ছেলেরা সাধারণতঃ মেয়েদের পিতা -মাতার ঘরে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাধারণত কথাটির মানে এই যে, মেয়েরাও ছেলের ঘরে বউ এসে ঘর সংসার করে থাকেন। মেয়েরা যদি ছেলেদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করতে পারেন, ছেলেরাও তাঁদের বাড়িতে যেতে পারেন। কারণ, গারো সমাজে ছেলে এবং মেয়ের মর্যাদা নির্ণয় ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তির মাচং হিসেবে।তাই, একজন রিছিল অপমানিত হলে, গোটা রিছিল অপমানিত হন বলেই মনে করেন! একজন নকরেক ভাল কাজ করলে, গোটা ন ক রেক তার জন্য গর্ব অনুভব করেন! আবার কোন চাম্বুগং যদি কোন অন্যায় করেন, অপরাধ সংগঠিত করেন, গোটা মাচং তাঁর দায়ভার নিয়ে ক্ষতিপুরণ দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ, বিয়ের ক্ষেত্রে গারো - ছেলে - মেয়েরা অন্যান্য সমাজের ছেলে মেয়েদের থেকে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকেন।
বিয়ের ছয় মাস বা এক বছর পরেই গারো ছেলে - মেয়েরা পরিবার থেকে আলাদা ঘর বাড়ি করে পরিবার গঠন করে থাকেন। এই সময়টি বাবার অথবা শ্বশুর বাড়িতে ছেলে-মেয়ের প্রশিক্ষণকালীন সময় বলে ধরে নেয়া হয়! প্রকৃতপক্ষেই গারো সমাজ ব্যবস্থা মাতৃ - সূত্রীয়। গারোদের সম্পত্তি সাধারণত, আপাত দৃষ্টিতে গারো মেয়েরা সম্পত্তির মালিক হন। প্রকৃতপক্ষে ছেলেরা সমাজকে শাসন করেন, পরিবারের বেশিরভাগ বিষয়, সম্পত্তি যুগপতভাবে ব্যবস্থাপনা ও দেখাশুনা করেন। সমাজের বিচার- সালিস, ক্ষমতা প্রয়োগ তাঁরাই করে থাকেন। বলতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেসী পাওয়ার টা ছেলেদের একচ্ছত্র অধিকার! মেয়েরা কিংবা মাচং নামমাত্র মালিক এখানে; ছেলেরাই সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী! আর এই বিষয় টি গারো মেয়েদের সর্বময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এই বিষয়গুলোই গারো সমাজের, গারো সংস্কৃতির সৌন্দর্য!
References:
1. Internet
2. Wikipedia
3. The Daily Star
4. Official Homepage of Meghalaya State of India
5. Gan-Chaudhuri, Jagadis. Tripura: The Land and its People.
7. Culture section in the official Garo Hills area
8. The Strong Women of Madhupur: Dr Rubbin Burlings, Professor of Antropology & Linguistics, University of Michigan
9. Rengsangri: Dr Rubbin Burlings, Professor, University of Michigan
10. Garo Customary Laws and Practices: Dr. Julius L. R. Marak
11. History and Culture of the Garos: Dr. Milton S. Sangma
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫০
বাবুল ডি নকরেক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। উৎসাহিত বোধ করছি
২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৫
বিজন রয় বলেছেন: দারুন!!
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫১
বাবুল ডি নকরেক বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। আরো আরো এমন তথ্য বহুল পোষ্ট লিখুন, সবাই জানুক।