নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ, ছোট গল্পকার, গীতিকার এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

বাবুল ডি নকরেক

বাবুল ডি নকরেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক অসম সাহসী বীর শহীদ গারো যোদ্ধার গল্প

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬


এক


আজ থেকে ২৪০০ বছর পূর্বে, গারো আদিবাসীরা (খ্রিষ্ট পূর্ব ৪০০) বছর আগে চীনের তিব্বেত থেকে প্রথমে মেঘালয় রাজ্যে জাপ্পা জাল্লিম ফা, সুখ ফা ও বঙ্গি ফার নেতৃত্বে ব্রম্মপুত্র নদী পার হয়ে এসে অস্থায়ীভাবে নদী-উপতক্যায় বসবাস করেন। মোঘল এবং ব্রিটিশ সেনাদলের সাথে তাঁদের যুদ্ধের ইতিহাসে তাঁদের অস্তিত্বের রেকর্ড মেলে

=> লেখাটি ভালোলাগলে শেয়ার দিন

দুই

১৮০০ সালের পূর্বের লেখনিতে গারোদের উল্লেখ এমন, "The Garos were looked upon as blood thirsty savages, who inhabited a tract of hills covered with almost impenetrable jungle, the climate of which was considered so deadly as to make it impossible for a white man to live there" (Major Playfair 1909: 76-77).

তাঁদের কে কেউ কেউ 'হেড হান্টার' বলেও অভিহিত করতেন




তিন

১৮৭২ সালে, ব্রিটিশ সরকার গারো হিলসে স্বাধীনচেতা গারোদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য সৈন্য প্রেরণ করে। তাঁরা দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম দিক থেকে একযোগে ৩ জন ক্যাপ্টেন এর নেতৃত্বে গারোদের উপর আক্রমন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। গারোরা তাঁদের মিল্লাম, স্ফী নিয়ে রংরেংগিরি নামক স্থানে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধক্যাম্পে আক্রমণ করেন। কিন্তু ব্রিটিশদের মত গারোদের গোলাবারুদ, মরটার, কামান ছিলো না বলে তাঁরা যুদ্ধে পরাস্ত হন। কিন্তু তাঁরা কখনো দাসত্ব স্বীকার করেন নি।




অনেকে মনে করেন এজন্যই তাঁদের নামাকরণ 'ঘারোয়া' থেকে ঘাওরা বা গারো হয়ে থাকতে পারে! তবে অনেকে মনে করেন গারোদের নিজেদের তৈরী পোশাক 'গারা-গানচিং' থেকেও তাঁদের এই নাম হয়ে থাকতে পারে।



ঐ যুদ্ধের বীর সেনাপতি ছিলেন গারো যুবক পা টংগান এন সাংমা (নেংমিঞ্জা) এবং গিলসেং দালবত। যুবক টগান যে কোন মানুষের চেয়ে সুঠাম এবং বিশালদেহী ছিলেন বলে সবাই তাঁকে বাইবেলে উল্লেখিত গলিয়াৎ এর সাথে তুলনা করতেন। আর তিনি ঐ সময়ে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং কৌশলী যোদ্ধা ছিলেন। গারোরা সম্মানিত কোন গারো নেতা বা বয়োজ্যেষ্ঠ কারোর নামের আগে 'পা' শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। পা টংগান এন সাংমা ব্রিটিশ সৈন্যদের অসম সাহসীকতার সাথে মোকাবেলা করে যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন ১৮৭২ সালে। তিনিই গারোদের প্রথম শহীদ যিনি গারোদের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে শহীদ হন।


ড মিল্টন এস সাংমা তাঁর "History and Culture of The Garos" এ উল্লেখ করেন, "Mr. Daly, who arrived at Rongrengiri a few days before Captain William, was attacked by a large force of independent Garos..."

গারো অনেক যোদ্ধা নিহত এবং আহত হওয়ার খবরে অনেক নেতা এবং যোদ্ধা পিছু হটেন, কিন্তু পা টগান নেংমিঞ্জা এবং গিলসেং দালবত তাতে দমে যাননি! তাঁরা সবাইকে উজ্জীবিত করে পুনরায় আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। সে মুহূর্তের বর্ণনায় ড মিল্টন লিখেন, "The Gaors retired leaving several men killed and wounded. 102 Father Pianazzi has an interesting story about the incident that took place in this last battle with the British at Rongrenggiri in 1872. One of the last portions of the interior to submit was Rongrenggiri. Rumour had reached those independent chiefs that government
soldiers had hollow spears that spat fire at a great distance, and Gwal, the bravest of them, who acted as a sort of Commander-in-Chief, was impressed by the news. He determined to counter-act and so, while
the other chiefs and warriors were down-hearted at the unwelcome news, he busied himself in heating up his spear and thrusting it, red hot, into a banana stem. To his great joy, their iron cooled down at once."



চার

পরবর্তীতে, গারো রাজনীতিবিদ, দেশ প্রেমিক নেতা পা সোনারাম আর সাংমার নেতৃত্বেও গারোরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পা সোনারাম সাংমা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরী করতেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের গারোদের উপর অন্যায় অত্যাচার, শোষণের প্রতিবাদে তিনি চাকুরী ইস্তফা দেন। ব্রিটিশ সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে পা সোনারাম এবং অন্যান্য গারো নেতৃবৃন্দের উপর হামলা, মামলা অব্যাহত রাখেন। তিনি ১৯১৬ সালে পরলোক গমন করেন।


পা টগান নেংমিঞ্জা ছিলেন একজন অসম সাহসী বীর যোদ্ধা। তাঁকে গারোদের মধ্যে প্রথম বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে সম্মান জানানো হয়। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, "Pa Togan Nengminja was a brave warrior who is considered to be the first Garo freedom fighter." তিনি মেঘালয় গারো হিলস এর উইলিয়াম নগরের কাছে সমন্দা (Samanda) গ্রামে জম্ম গ্রহন করেন।



পাঁচ

১৮৭২ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর সামরিক সৈন্য সামন্ত তুরা থেকে বর্তমান ইস্ট গারো হিলস এলাকা ঘিরে ফেলেন। তাঁরা গারো নেতাদের আত্ম সমর্পণ করার জন্য আহবান জানালে গারো নেতা পা টগান নেংমিঞ্জা তা প্রত্যাখান করেন। ফলে ব্রিটিশ বাহিনী এবং গারোদের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ সৈন্যদল মাৎচু রংখ্রেক "Matchu Rong•krek" নামক গ্রামে তাঁদের যুদ্ধক্যাম্প স্থাপন করলে গারোদের মধ্যে ভিতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অসম সাহসী পা টগান সবাইকে সংগঠিত করেন এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নিতে নির্দেশ দেন। গারোদের তিনি উজ্জীবিত করে তুলেন। তিনি তাঁদের বুঝাতে সক্ষম হন দাসত্ব মেনে নেওয়া থেকে যুদ্ধ করে প্রাণ দেওয়া সম্মানজনক। তাঁরা দেশের প্রয়োজনে জীবন দিবেন, কিন্তু পরাধীনতা মেনে নিবেন না কখনই। গারোদের যুদ্ধ কৌশল পা টগান সাংমা নিজে শেখানোর দায়িত্ব নেন। পা টগান গারো জাতিকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন |


ছয়
পা টগান সাংমার নেতৃত্বে, গারো যোদ্ধাগণ ব্রিটিশ যুদ্ধক্যাম্পে অতর্কিতে আক্রমণ চালান। গারো যোদ্ধাদের সাথে তাঁদের তুমুল যুদ্ধ বাঁধে। প্রথম দফায় গারোরা যুদ্ধে এগিয়ে গেলেও, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যুদ্ধে ফিরে আসেন। জানা যায়, শেষের দিকে যুদ্ধ অনেকটাই এক তরফা হয়ে যায়। কারণ গারো যোদ্ধাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল তাঁদের নিজস্ব তৈরী মিল্লাম এবং স্ফি। অন্যদিকে ব্রিটিশ সেনাদল ছিলেন আধুনিক গোলাবারুদ, বন্দুক, কামানে সমৃদ্ধ।

তুমুল যুদ্ধে গারো সেনাপতি বীর পা টগান গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পা টগান সাংমা নিজের দেশ এবং গারো জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় ব্রিটিশ বেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে প্রথম শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। জানা যায়, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী গারোদের যুদ্ধে পরাস্ত করলেও গারো যুদ্ধাগণ পরাজয় বরণ করে তাঁদের বশ্যতা স্বীকার করেন নি।


পা টগান নেংমিঞ্জা [Togan Nengminja]



সাত
পা টগান সাংমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর গারো জাতি মেঘালয়ার গারো হিলসে তাঁর ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে সম্মান জানান। সরকারী ভাবেও কুচকাওয়াজ করে চৌকস পুলিশ দল 'ওপেন ফায়ার' করে থাকে। চীপ মিনিস্টার ফুল দিতে যান।

১২ ডিসেম্বরকে মেঘালয় রাজ্য সরকার "Togan Nengminja’s Day" হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আজও পর্যন্ত স্মরণ করে। সে রাজ্যের সর্ব স্তরের মানুষ পা টগান নেংমিঞ্জাকে মেঘালয় রাজ্যের স্বাধীনতার অগ্রদূত, দেশ মাতৃকার বীর শহীদ সন্তান বলে সম্মান জানায়।

পা টগান নেংমিঞ্জার [পা টগান নেংমিঞ্জা [Togan Nengminja] 'স্ট্যাচু'


পা টগান নেংমিঞ্জার এই বীরত্বপূর্ণ অবদানকে সম্মান জানিয়ে, তাঁকে অমর করে রাখার জন্য 'রংরেংগিরি'তে তাঁর 'স্ট্যাচু' তৈরী করা হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর তাঁর সম্মানে আয়োজন হয় শুভযাত্রা, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, কুচকাওয়াজ।

গারো সংস্কৃতিতে সম্মানিত গারো পুরুষদের নামের আগে 'পা' প্রত্যয় যোগ করার রীতি রয়েছে। 'পা' এর আক্ষরিক
অর্থ 'পিতা'!

জানা যায়, ঠিক যেখানে ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন গারো যোদ্ধাগণ সে স্থানের নাম 'রংরেংগিরি'। রংরেংগিরি তাই গারোদের জন্য এক ঐতিহাসিক নাম, একটি যুদ্ধদলিল।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে তুলনা করলে, বীর গারো মুক্তিসেনানীদের শক্তি ও ক্ষমতা অতি তুচ্ছ। যেখানে বড় বড় দেশ ব্রিটিশদের ভয়ে বশ্যতা স্বীকার করে নিত, সেখানে গারোদের ব্রিটিশ ব্যারাকে আক্রমণের অসীম সাহস, আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর পরেও অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, লড়াই, সংগ্রাম করতে শুধু গারোদের নয়, প্রেরণার উৎস হয়ে আছে পুরো পৃথিবীর জন্যেই।

আজকের এই দিনে, "পা টগান নেংমিঞ্জা দিবস" উপলক্ষে সবাইকে জানাই সংগ্রামী শুভেচ্ছা। আমাদের আগামী প্রজম্ম হোক একেজন পা টগান নেংমিঞ্জার মত সাহসী বীর যা পৃথিবীতে ঘুষ, দুর্নীতি, শোষণ, বঞ্চনা, নারী নির্যাতন, শিশু বলাকার, ধর্মান্ধ কিছু তথাকথিত হুজুরদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে। তাঁদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের আওয়াজ মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে।

পৃথিবী হোক সবার জন্য অভয়ারণ্য, নিরাপদ, আনন্দময়।


পুনশ্চঃ এই লেখা থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া যাবে। তবে কেউ জাস্ট কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিবেন না। উদ্ধৃতি দিলে লেখকের নাম উল্লেখ করুন।

তথ্য সূত্রঃ
১. ইন্টারনেট
২। ওয়িকিপিডিয়া
৩। বাবুল ডি' নকরেক - আচ্চু আম্বিরাংনি আগানা
৪। বাবুল ডি' নকরেক - গারো সমাজের আসল সৌন্দর্যঃ তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
৫। ড মিল্টন এস সাংমা - হিস্টরি এন্ড কালচার অব দ্য গারোজ


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:১৫

অনল চৌধুরী বলেছেন: ২৪০০ বছর পূর্বে, (খ্রিষ্ট পূর্ব ৪০০) বছর আগে চীনের তিব্বত থেকে ভারত আর বাংলায় এসে গারোরা আদিবাসী হয়ে গেলো !!
তাদেরও ৫৫০০ বছর আগে থেকে এসব অঞ্চলে যারা বাস করে আসছিলো, তাদের কি তাহলে সন্ত্রাসী সন্ত’র শান্তিবাহিনীর মতো বহিরাগত বলতে হবে !!!
!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.