নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে কোনো ভূমিকায় সমানে লড়ে যাই, আপনি যেমন চান আমি ঠিক তাই।

নান্দনিক নন্দিনী

লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।

নান্দনিক নন্দিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণমাধ্যমের সালিশ…

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৪৮



অপু’র সংসারে আসামী (স্বামী)শাকিব খান! গত কয়েকদিন ধরে অপু বিশ্বাস এবং শাকিব খান উঠে এসেছেন আলোচনার শীর্ষে। উঠে এসেছেন না বলে, বলা ভালো তুলে আনা হয়েছে আলোচনার শীর্ষে। বিষয়টির সাথে TRP বাড়ার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন বাংলাদেশি চ্যানেল তাদের লাইভ অনুষ্ঠানে অডিয়েন্সের সামনে তুলে আনেন অপু-শাকিবের ব্যক্তিগত দাম্পত্য কলহকে। যেখানে নালিশ আর সালিশের এক অপূর্ব সম্মিলন চোখে পড়ার মতো। এই বিষয়টাতে একই সাথে বিনোদন ছিল, ছিল অপু-শাকিবের ব্যক্তিগত জীবনের খবর। যাকে আমরা বলতে পারি “ইনফোটেইনমেন্ট” আড়ালে সামাজিক ভর্তুকি।

ঘটনার ক্লাইমেক্স ঘটনাকে টং এই দোকান থেকে আমাদের শোবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। ঘটনা উপস্থাপনে অভিযোগের জন মনোযোগ এবং আলোচনা বলে দেয়, ঘটনাটিকে অডিয়েন্স গুরুত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেটার রুবেল এবং হ্যাপির ব্যক্তিগত সমস্যা উঠে আসে গণমাধ্যমে। উঠে এসেছিল শমী কায়সার- রিংগোর কথা। তিন্নি-হিল্লোল। কেননা ‘সেনসেশন’ আছে। আমরা তো 'ক্লাসিফায়েড ফিসিফাস কালচার' এ বড় হয়েছি। এই ঘটনায় বাস্তবতা কতটা প্রতিফলিত হয়েছে খুব জানতে ইচ্ছে করে।

প্রথম ব্রেকটা দেয় নিউজ২৪ যেখানে অপু বিশ্বাস একপর্যায়ে কাঠ গড়ায় দাঁড় করান নাম্বার ওয়ান শাকিব খানকে। না অভিযোগ নয়, অপু বিশ্বাস আসলে স্বীকৃতি চেয়ে বসেন। স্ত্রীর মর্যাদা আর সন্তানের মায়ের স্বীকৃ্তি। কথা বলতে “অপু বিশ্বাস এক্সক্লুসিভ” অনুষ্ঠানে এসে এক সময় কথা ফুরিয়ে যায় অপু বিশ্বাসের। তিনি বাসায় যেতে চাইলে উপস্থাপিকা আরো কিছুক্ষন একরকম জোর করেই বসিয়ে রাখেন অপু বিশ্বাসকে। দ্বিতীয় দফায় ৭১টিভিতে ফোনো লাইভে শাকিব খান আর দূরবর্তী স্টুডিওতে অপু বিশ্বাস। মিথিলা ফারজানার প্রশ্ন, তাহলে আপনারা সংসার করছেন না কেন? শাকিবের উত্তর ওকেই জিজ্ঞেস করুন। নাইমুল ইসলাম খানের সম্পূরক প্রশ্নে শাকিবের উত্তর বিব্রত হন নাইমুল ইসিলাম খান। নাইমুল ইসলাম খান তো শাকিবকে 'পাওয়ার ফুল' হিসেবে রায় দিয়ে দেন। অনুরোধ করেন সমঝোতায় আসার জন্য। বার বার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে বলেন। যদিও বলেননি তবুও, শাকিবের প্রতি অপুকে দয়া করার একটা বিনীত অনুরোধ যেন পুরো অনুষ্ঠানে এক অব্যক্ত অনুরোধ। নাহ! কোনো মীমাংসা ছাড়াই শেষ হয় দ্বিতীয় দফা। তৃতীয় দফায় ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ‘আজকের বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে শাকিব খানের হিরোইক এন্ট্রি, তাকে দেয়া স্পেস বা প্রিভিলেজ বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলো ‘ম্যাস মিডিয়া’ নয় দর্শক বসে আছেন ‘মেল মিডিয়া’র সামনে। যেখানে জামাই আদরে শাকিব খানকে নিজের প্রমোশনাল এক্টিভিটিজ প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছিল।

বাচ্চার নাম রাখাতে শাকিবের অংশগ্রহন অপুর নয় মাসের অবর্নণীয় কষ্টের সব থেকে বড় উপহার। শাকিব বেষ্ট ডাক্তার ঠিক করে দিয়েছেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন ‘আজকের বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি না দেখলে আমার অজানাই থেকে যেত। শাকিব খানের ইচ্ছে ছিল বাচ্চা হোক লন্ডনে। টাকা পয়সা তো খান সাহেবের কাছে তাজপাতা! আচ্ছা মুড আসলেই কী লন্ডনে গিয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়া যায়? বিষয়টা আমার জানা নেই। শাকিব জানেন তিনি সুপার স্টার, তিনি প্রচার করেন তিনি সুপারস্টার! এবং তিনি জানিয়ে গেলেন সুপারস্টারদেরকেও স্ত্রীর কথা মতো না চললে আসামী হতে হয়। ফ্রিডরিখ নিটশের ব্যাখ্যায় গণমাধ্যম যে অনুষ্ঠান অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরে এক সময় তা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মানে চাইলে নারীকে অস্বীকার করা যায়। ছুঁড়ে ফেলা যায়। কেননা তিনি নারী, তিনি দুর্বল! বাংলাদেশের গণমাধ্যম মূলত বাজার-অভিমুখীন, ধনীক-অভিমুখীন, শহর অভিমুখীন, এলিট-অভিমুখীন এবং পুরুষ-অভিমুখীন।

অপু বিশ্বাস কেন স্ত্রীর অধিকার চাইছিলেন? তিনি তো স্ত্রীর অধিকার পাবার জন্য আইন দ্বারা স্বীকৃত। তারও আগে তাকে তার বিয়ের কথা জানাতে হয়েছে। বলতে হয়েছে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তিনি তার অবর্ননীয় কষ্ট ভোগের কথা যতবার কেঁদে কেঁদে বলেছেন ততবার অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। এই অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাসের ‘বিক্রীত’ ইমেজ প্রতিফলিত হয়েছে। এর কারন পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজকাঠামো, যেখানে মিডিয়ার মানিকানা নারীর হাতে নেই। দিনের পর দিন নারী তারকাদের পরাজিত, অধস্তন আর দুর্বল ইমেজ উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদন চলছে। নারীকে দুর্বল ভাবে উপস্থাপনের এই সনাতন প্রথা থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে।

অপু-শাকিবের ঘটনায় মিডিয়াকে নিরেপক্ষ লাগেনি। অপু বিশ্বাসের ‘মারলেও স্বামী, কাটলেও স্বামী”। অপু চেয়েছিলেন তার স্বামী শাকিব খান তার প্রতি জুনিয়র আর্টিষ্টের অপমানের জবাব দিবে। সেটা না পেয়েই তার মিডিয়ার কাছে ছুটে আসা। ওমনি TRP’র লোভে ‘ম্যাস মিডিয়া’ হয়ে গেল ‘ক্লাস মিডিয়া’। পুরুষ ক্ষমতাশীল, পুরুষের আধিপত্যশীল, পুরুষ দয়া করে নারীকে স্বীকৃ্তি কিংবা মর্যাদা দেন। নাম্বার ওয়ান শাকিব খান তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই তার দোর্দন্ড ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রয়াসী হয়ে ওঠেন। তাকে মাফ করে দিতে বলা, ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করা হয়। গণমাধ্যম বলে দেন আপনি ক্ষমতাধর আর শাকিব খান সে ক্ষমতার সদ্বব্যবহার করেন! গণমধ্যমের প্রহসন আর কাকে বলে!

আইন আদালত বড় ঝক্কি ঝামেলার বিষয়, তার থেকে গণমাধ্যম এত্তোগুলা কিউট! সবাই মিলিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে মিল-মহব্বত করিয়ে দেয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৫০

সোহানী বলেছেন: পাগল আর ছাগল আমরা... যা মিডিয়া খাওয়াবে তাই খাবো। মিডিয়া খাওয়াচ্ছে অপু-শাকিব... আমরাও গোগ্রাসে গিলছি যেন জাতির দরবারে এখন একটাই সমস্যা অপু-শাকিবের সংসার জোড়া লাগানো। বাহ্ বাহ্.... তালিয়া হয়ে যাক, ডুগডুগি বাজছে নাচা শুরু...... গুড জব।

আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অপু এর চেয়ে বেশী কি আশা করতে পারে তার উপর স্বঘোষিত সুপাস্টার!!!!!!!!!!!!!!!!

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৪১

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: গণমাধ্যমে আফিম বিতরন করা হয়। খাবার-পোশাক আর গ্যাজেট! ব্যস জীবনে আর কী চাই।
তাই তো সুপারস্টার বলে কথা!

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

আমি ইহতিব বলেছেন: অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর উপর এমন রাগ হচ্ছিলো ওদের নিউজের ধরন দেখে, যেন পৃথিবীতে আর কোন খবর নেই এই এক শাকিব আর অপু ছাড়া।
আপনার বিশ্লেষনধর্মী লেখাটি ওদের চোখে পড়লে খুব ভালো হত। কিছুটা বোধদয় যদি হত তাতেও।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২৮

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: গণমাধ্যম কি আর নিজেদের সমালোচনা সহ্য করতে পারবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.