নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্ন দেখি সুন্দর একটি পৃথিবী, যেখানে থাকবে না মানুষের মধ্যে হানাহানি। অনুভব করি বৈষম্যহীন পৃথিবীর যেথায় এক চাঁদে হয় জগত আলো। মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমি এই আলয়ের ক্ষণস্থায়ী অতিথী মাত্র এবং এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর বুকে ছোট্ট একটি পদক্ষেপ রেখে যেতে চায়
পশ্চিমবঙ্গে ধেঁয়ে আসছে গেরুয়া ঝড়!
১.
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা খুব গর্বভরে একটা উক্তি ধারণ করে যে, "বাঙালিরা যা আজ ভাবে,পুরো ভারতবর্ষ তা আগামীকাল ভাবে"। …[1]
বাঙালিদের এই মনোভাবের প্রেক্ষিতে ভারতবর্ষের অন্য প্রদেশের লোকেরা বলে থাকে, " বাঙালিরা আজ ভাবে এবং আমরা পরেরদিন ভাবি, কথাটা সঠিক।কিন্তু আমরা পরশু দিন সেই কাজটি করতে পারলেও বাঙালিরা তা সারাজীবনে ও করতে পারে না!"
ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়,দু'টি উক্তিই সঠিক।এই ধরুন,ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিন্তার উত্থান তো হলো তো এই বাংলা থেকেই।বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য আর শ্যামাপ্রসাদের "হিন্দু মহাসভা" এবং "ভারতীয় জনসংঘ"-ই তো আজকের বিজেপির মূল আতুড়ঘর। …[2]
বঙ্কিমচন্দ্র আজ থেকে ২০০ বছর আগে যে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতের কল্পনা করেছিলেন আজকের বিজেপি তো তারই ফসল।তো ২০০ বছর আগে বাঙালির মাথায় যে ভাবনা এসেছিলো তখন কিন্তু ভারতবর্ষের অন্য কোথাও এই চিন্তা ধারণের তেমন কেউ ছিলো না।
কিন্তু অনেক বছর পরে হলেও ভারতবর্ষের অন্যান্য জায়গায় সংঘটিত হয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি,ভারতবর্ষের কেন্দ্রসহ অধিকাংশ জায়গায় গদিতে এখন ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি। অথচ এই শক্তির মূল উৎস ও প্রেরণাদানকারী পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির বিকাশ ঘটে নি।অর্থাৎ দেরিতে হলেও পুরো ভারত যা করতে পেরেছে,বাংলা এখনো তা করতে পারেনি।
(অবশ্য এই ঘটনায় বাংলার ব্যর্থতা কিন্তু সফলতাই!কারণ পশ্চিমবঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির বিকাশ হলে কিন্তু তা পুরো ভারতবর্ষকেই অস্থিতিশীল করে তুলবে,বিশেষ করে বাংলাদেশকে।)
২.
দ্বি-জাতি তত্ত্ব কে প্রাধান্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে জন্ম হয় ভারতবর্ষে দুইটি দেশের।ভারতবর্ষের এই রাজনৈতিক মেরুকরণের সময় অন্যান্য প্রদেশ মোটামুটি অখণ্ড থাকলেও দু'টি প্রদেশকে হতে হয় বিভক্ত।
বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করে দু'দিকে দিয়ে দেওয়া হয়।বিভক্ত হওয়ার আগে পূর্ব পাঞ্জাবে ( বর্তমানে ভারতীয় পাঞ্জাব,হিমাচল এবং হরিয়ানা রাজ্য) মুসলিম জনসংখ্যা ৩০% এর উপরে থাকলেও বিভক্ত হওয়ার পর তা নেমে আসে ৩% এ।পশ্চিম পাঞ্জাবে( বর্তমানে পাকিস্তানি পাঞ্জাব রাজ্য) বিভক্ত হওয়ার পূর্বে হিন্দু ও শিখ জনসংখ্যা ৪০% এর কাছাকাছি হলেও বিভক্ত হওয়ার পরে তা নেমে আসে ২% এ।অর্থাৎ পাঞ্জাব প্রদেশ ভাগ হওয়ার পর প্রদেশটির জনসংখ্যা ব্যাপকহারে ইন্টারচেঞ্জ হয়। …[3]
বিভক্ত হওয়া আরেক প্রদেশ বাংলা'তে ও কি একইরূপে জনমিতির পরিবর্তন হয়?
শহুরে এলিট ও চাকরিজীবী হিন্দু ও মুসলিম বাঙালি সম্প্রদায় ১৯৪৭ সালে তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করলেও নিম্নবর্গের ও গরিব সম্প্রদায়ের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ও পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা সে হারে নিজেদের আবাসস্থলের পরিবর্তন ঘটায় নি।
১৯৪৭ এর পূর্বে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৫% এর ঘরে ছিলো।আর বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা ২৮%।অপরদিকে পূর্ববঙ্গে হিন্দু জনসংখ্যা দেশভাগের পূর্বে ছিলো ২৫% আর বর্তমানে তা ৮% এর ঘরে। …[4]
পাঞ্জাবের দুই অংশে জনমিতি মেরুকরণ পর্যায়ে চলে আসলেও বাংলার দুই অংশে এমনটা হয়নি।আর একটাই কারণ- তা হলো বাঙালির হাজার বছরের সহাবস্থানের মানসিকতা!
যশবন্ত সিং সহ অন্যান্য লেখকের দেশভাগের ইতিহাস বিষয়ক বইগুলো পড়লে দেখা যায়,সে সময়ে এক পাঞ্জাব হতে আরেক পাঞ্জাবে লাশভর্তি ট্রেন যেতো এবং ফিরে আসতো।বিপরীতে বাংলা প্রদেশে হালকা সংঘর্ষ,দেশ পরিবর্তন, শো ডাউন হলেও এইরকম গণহত্যার ঘটনা ঘটেনি।
৩.
দুই বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।বিভক্ত এবং অবিভক্ত উভয় প্রেক্ষাপটের বাংলাতেই ক্ষমতার শীর্ষ আসনে ছিলেন এই কিংবদন্তি নেতা।একাধারে মুসলিম এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন তিনি। …[5]
মুসলমানদের জন্য আলাদা বাসস্থান হওয়ার দাবি সংবলিত দ্বি জাতি তত্ত্বের উপস্থাপক ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক।
আবার দেশভাগের পরে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পশ্চিমবঙ্গে সফরে গিয়ে এক আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে বসেন শেরে বাংলা। মানচিত্র আমাদের আলাদা করলেও আদতে আমরা বাঙালিরা এক জাতিই এমন বক্তব্য দিয়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের রোষানলে পড়েন বাংলার এই বাঘ।
তিনি এমন নেতা ছিলেন যিনি সকালে বৈঠক করতেন তো মুসলিম জাতীয়তাবাদী মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ'র সাথে আবার বিকালে নাস্তা করতেন হিন্দু জাতীয়তাবাদী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি'র সাথে।
বাঙালির আরেক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব হলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।তার আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়েছিলে হিন্দু মুসলিম সবাইকে নিয়ে সশস্ত্র পন্থায় দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে। নেতাজির প্রাইভেট সেক্রেটারি সহ আশপাশের অনেক সহযোদ্ধাই ছিলেম মুসলিম। অর্থাৎ বুঝা যায়,তার রাজনৈতিক দর্শন ছিলো উদার জাতীয়তাবাদ।
আবার সাহসীকতার জন্য সেই সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিজেদের আইকন মনে করে বিজেপিসহ সমস্ত ডান ব্লক।এ বছর বেশ ঘটা করেই নেতাজীর জন্মদিন পালন করলো বিজেপি।
যে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে বিবেচনা করা হয় বিজেপির রাজনীতির স্বপ্নদ্রষ্টা,তার গুণগ্রাহী ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ভারতবর্ষ ভাগের ঠিক আগে কবি নজরুল যখন অসুস্থ, তখন কোনো প্রথিতযশা মুসলিম নেতা তার সাহায্যে এগিয়ে না আসেন নি।কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নজরুলের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসেন এবং কবিকে নিজ ঘরে থাকার সুবিধা ও করে দেন। …[6]
কাজী নজরুল ইসলাম ১৭ জুলাই, ১৯৪২-এ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে একটা চিঠি লেখেন। …[7]
শ্রী চরণেষু,
" …এই হক-শ্যামা মন্ত্রীসভার(অবিভক্ত বাংলার বিধানসভায় শেরে বাংলা এবং শ্যামাপ্রসাদের মিলিত সরকার) একমাত্র আপনাকে আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি, আর কাউকে নয়। আমি জানি আমরাই এই ভারতবর্ষকে পূর্ণ স্বাধীন করব। সেদিন বাঙালীর আপনাকে ও সুভাষবাবুকেই সকলের আগে মনে পড়বে-আপনারাই হবেন এদেশের পতাকার নায়ক। …"
-কাজী নজরুল ইসলাম।
অর্থাৎ ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়,ভারতবর্ষের ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী উভয় ধারার রাজনীতিই একসাথে ধারণ করতে পারেন বাঙালি নেতারা।আর এই ধারণের মধ্যে ব্যালেন্স থাকাতে বাঙলাতে বিভাগ পরবর্তী সময়েও ধর্মীয় জনসংখ্যার মেরুকরণ হয় নি।পাশাপাশি উভয় বাংলাতেই ধর্মীয় সংগঠন গুলো রাজনীতির মূল শক্তি হতে পারে নি।
৪.
পশ্চিমবঙ্গে ১৯৪৭ সালের পর থেকে তিন দশক চলেছিলো কংগ্রেস শাসন।এরপর ১৯৭৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিম বাঙলায় ছিলো বামপন্থী শাসন।এরপর ২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত "নবান্ন"-র মসনদে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা ব্যানার্জী।অর্থাৎ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গে একদিনের জন্য ও ধর্মীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটেনি। তাই বলা যায়,দীর্ঘ ৭০ বছরে ভাগীরথী নদীর পানিপ্রবাহ অনেক পরিবর্তন হলেও পরিবর্তিত হয়নি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশ।
২০১৪ সালের কেন্দ্রীয় নির্বাচনে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে গেরুয়া বিজেপি শক্তির উত্থান ঘটলেও পশ্চিমবঙ্গে এর ছোঁয়া পড়েনি।পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভার আসনের মধ্যে বিজেপি পায় মাত্র ২ টি।
এমনকি ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতে মাত্র ৩ টি'তে।
ভারত জুড়ে গেরুয়া বিপ্লবের এমন সোনালী যুগেও টানা ২ বার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি হোঁচট খাওয়ায় অনেকে ভেবেছিলেন নেতাজী-শেরে বাংলার বাংলায় হয়তো বিজেপি ভিত্তি গড়তে পারবে না।কিন্তু সব হিসেব নিকেষ পাল্টে যায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আবারো ভারতের ক্ষমতায় আসে।এটা বিজেপি শিবির কে যতটা না স্বস্তি দিয়েছে তার চেয়েও বিজেপি ব্লক বেশি স্বস্তি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে তাদের ভূমিধস উত্থানের জন্য। ২০১৯ সালেের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮ টি'ই জিতে নেয় বিজেপি। অর্থাৎ আগের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় নয় গুণ আসন বেশি পায় দলটি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থান, ভারতজুড়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার,পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম তোষণের অভিযোগ, মোদি ম্যাজিকসহ সমস্ত প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এখন প্রায় বিশ্লেষকেরই মত হলো ২০২১ সালের এপ্রিল - মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি বিপুল সংখ্যক আসনে জিতলেও সহজে গেরুয়া ঝড় থামছেনা। বরং বিজেপি এখম বিভাজনের রাজনীতিটা ভালভাবে করতে সক্ষম হবে।
( রেফারেন্স কমেন্ট বক্সে)
চলবে....
১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩৯
নরকের কীট বলেছেন: তাতেই বা কি আসে যায় ব্রাদার? বাঙালি তো। আর রাজনীতি নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা করি। ধন্যবাদ।
২| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:১৫
জগতারন বলেছেন:
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি পশ্চিম বঙ্গের মানুষ?
হ্যাঁ, আমার মনে হয় এই নরকের কীট ব্লগার পশ্চিম বঙ্গের মানুষ।
৩| ১৩ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:৫৪
কামাল১৮ বলেছেন: ভারত ভাগ হওয়াই ছিল একটা ভুল সিধান্ত।ভাগ হলে অনেক ভাগ হওয়া দরকার ছিল,অনেকগুলো জাতিয় রাষ্ট্র হলে জনগনের ভোগান্তি কম হতো, জাতিয় বিকাশ হতো দ্রুত।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি পশ্চিম বঙ্গের মানুষ?