নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর পথে

আলোর সন্ধান চলেছি

নওরীন ইশা

আল্লাহ পাক উনার হাবিব হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার প্রতি অফুরন্ত দরুদ ও সালাম

নওরীন ইশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র আশুরা শরীফ উনার আমল সমুহ।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ করেন, তোমরা (হাদীছ শরীফ উনাতে বর্ণিত আশূরার আমলগুলো করে) আশূরা মিনাল মুহররম উনাকে সম্মান করো।

প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে-আশূরা উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা, রোযাদারকে ইফতারি করানো, আশূরা উনার দিন আশূরার সম্মানার্থে গোসল করা, চোখে সুরমা দেয়া, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো, ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্তকে পানাহার করানো আশূরার অন্যতম ফযীলতপূর্ণ আমল। এর উসীলায় বান্দা-বান্দি ও উম্মত ইহকালে সর্বপ্রকার মুছিবত থেকে নাজাত লাভ করবে এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ করে জান্নাত লাভ করবে। তাই প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হলো- উল্লিখিত আমলগুলো করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিলের কোশেশ করা।

১) আশূরা শরীফ উনার একটি অন্যতম আমল হচ্ছে আশূরা শরীফ উনার রোযা, অর্থাৎ ১০ই মুহররম উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ এদিন ইহুদীরাও রোযা রেখে থাকে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনান মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা আশূরা শরীফ উপলক্ষে রোযা রাখো তবে ইহুদীদের খিলাফ করো। তোমরা আশূরার শরীফ উনার দিন এবং এর পূর্বে অথবা পরে আরেকটি রোযা রাখো।” অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ রোযা রাখো।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন, রমাদ্বান শরীফ উনার পর সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ রোযা হচ্ছে- মুহররম তথা আশূরা শরীফ উনার রোযা।

হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আশূরার শরীফ উনার রোযার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটা বিগত এক বৎসরের গুনাহর কাফফারাস্বরূপ।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার রোযা রাখবে, আল্লাহ পাক তিনি এর বিনিময়ে তার আমলনামায় ষাট বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ফযীলত লিখে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!

২) পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন, “যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাদ্য খাওয়াবে ও পরাবে আল্লাহ পাক সারা বছর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (‘তাবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী, মাসাবা বিস্‌ সুন্নাহ, মু’মিনকে মাহ ওয়া সাল ও আ’মালী’)

পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন ভালো খাদ্য খাওয়া, খাওয়ানো, পরিধান করা ও পরিধান করানো সুন্নত-মুস্তাহাব। দিনে যেহেতু রোযা রাখতে হবে, তাই ভালো খাদ্য খাওয়ানোর ব্যবস্থা সন্ধ্যা রাতে ও সাহরীতে ব্যবস্থা করতে হবে। আল্লাহ পাক সকলকে তা নছীব করুন।

৩) আশূরা শরীফ উনার দিনে বেশকিছু আমলের কথা হাদীছ শরীফ উনাতে বর্ণিত হয়েছে- তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করা, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিন (আশূরার নিয়তে) গোসল করবে, মহান আল্লাহ পাক উনি তাকে ১ বৎসরের জন্য রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কঠিন কোনো রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখ কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

৪) আশূরা শরীফ উনার আরেকটি আমল হচ্ছে- চোখে সুরমা লাগানো। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আশূর শরীফ উনার দিন চোখে মেশক মিশ্রিত ইছমিদ সুরমা লাগাবে তার চোখে ওই দিন থেকে ১ বৎসরের জন্য কোন কঠিন রোগ হবে না। সুবহানাল্লাহ!

এখন কারো কাছে যদি মেশক মিশ্রিত অর্থাৎ ‘ইছমিদ’ সুরমা না থাকে তবে যে সুরমা পাবে সেটাই লাগাবে। এবং এর ফযীলতের জন্য আরজু করবে। আশা করা যায়, মহান আল্লাহ পাক উনি এর মধ্যেই সেই বরকত দিবেন।

৫) আশূরা শরীফ উনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো এবং ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্তদেরকে পানি পান করানো। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনান মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিন কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াবে এবং পিপাসার্তকে পানি পান করাবে, মহান আল্লাহ পাক উনি তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং জান্নাতের ‘সালসাবীল’ নামক ঝরনা থেকে পানি পান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!

৬) ‘মু’মিন কে মাহ ওয়া সাল’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, “আশূরা শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি আহলে বাইতের গরিব-মিসকীনগণকে পেট ভরে খাদ্য খাওয়াবে সে ব্যক্তি বিদ্যুৎ বেগে পুলছিরাত পার হবে।” সুবহানাল্লাহ!

৭)হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, “আশূরা শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেনো সমস্ত উম্মতে হাবীবীকে ইফতার করালো।” সুবহানাল্লাহ!

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, ইফতারি করানোর উক্ত ফযীলত লাভ করার জন্য সকলেই চাইবে ইফতারি করাতে তাহলে কে ইফতারি করাবে আর কে ইফতারি করবে? এর সহজ এবং সুন্দর ফায়ছালা হলো- যে প্রথমে দাওয়াত দিবে তার দাওয়াতই কবুল করতে হবে। আর যে দাওয়াত খেতে যাবে সে তার সাধ্য অনুযায়ী কিছু ইফতারি সাথে নিয়ে যাবে এবং দাওয়াত প্রদানকারীর ইফতারির সাথে মিশিয়ে একত্রিত করে সকলে মিলে ইফতারি করবে। তাহলে সকলেই ইফতারি করানোর ফযীলত পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।” সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব, মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন উনার দেয়া এই রিযিক যারা হালাল পন্থায় দান করেন, এ দ্বারা অপরকে তৃপ্ত করেন, এমন ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তায়ালা খুবই ভালোবাসেন।

হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, “ওই সমস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক ভালোবাসেন, যারা মানুষদেরকে খাওয়ায় এবং পরিচিতি-অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়।”

পবিত্র আশূরা শরীফ উনার একটি বিশেষ আমল ‘পবিত্র আহলে বাইত’ শরীফ উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক আলোচনা এবং উনাদের খিদমত মুবারক করা

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার নিকটজন তথা পবিত্র আহলে বাইত শরীফ উনাদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী ৮ম জিলদ, ৩২০ পৃষ্ঠায়’ বর্ণিত হয়েছে, “আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না, তবে তোমরা আমার নিকটত্মীয় পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও পবিত্র বংশধরগণ উনাদের (যথাযথ সম্মান, আলোচনা ও খিদমত প্রদর্শনপূর্বক) হক্ব আদায় করবে। কেননা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন শেষ নবী। উনার পরে কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম নেই।”

মূলত, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা পবিত্র আহাল-ইয়াল, উনার রক্ত মুবারক যাঁদের শরীর মুবারক-এ প্রবাহিত হয়েছে এবং যাঁরা হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম- উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, সম্মানের শেষ নেই। যাঁরা উনাদের আলোচনা, ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবে, খিদমত মুবারক করবে তাদের জন্য রয়েছে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি মুবারক।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উদ্দেশ্যে দোয়া করেছেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাদের হযরত হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম (এবং উনাদের আওলাদগণ) উনাদেরকে ভালোবাসি। আপনিও উনাদেরকে ভালোবাসুন এবং যে ব্যক্তি উনাদেরকে ভালোবাসবে তাকেও আপনি ভালোবাসুন, মুহব্বত করুন।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.