নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নুর-এ-আলম

More a collection of impulsive thoughts than deliberate reflection.

নুর-এ-আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুপ্রবেশকারী, ঘুণপোকা ও বুলডোজার

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৩:১৭

আমি আল জাজিরা ইংলিশের প্রতিবেদনটা দেখলাম, ভারতে বাঙালি মুসলমানদের উপর যেভাবে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে, সেটা নিয়ে। আপনি যদি এখনও না দেখে থাকেন, দেখুন, বাকি পৃথিবী এখন যা জানছে, আমরা সেটা অনেক আগেই বুঝেছি। কিন্তু এবার বিষয়টা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে, সেটা আর কোনো হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট বা ফেসবুক স্ট্যাটাস না, এইবার লাইভ নিউজ, সরাসরি ক্যামেরায়।

সব কিছু শুরু হয়েছিল NRC দিয়ে, নাগরিকত্বের নামে একটা প্রশাসনিক তালিকা ঠিক করার কাজ, যার আসল লক্ষ্যই ছিল বিশেষ জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করা। আসামে শুরু, কিন্তু এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যত্র। লক্ষ লক্ষ বাঙালি মুসলমান, যারা অনেকেই ভারতেই জন্মেছেন, ভোট দিয়েছেন, কর দিয়েছেন, তাদেরই হঠাৎ করে বলা হচ্ছে ‘অনুপ্রবেশকারী’। যাদের ধরা হচ্ছে, শুধু গ্রেফতার না, ঘরবাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, একেবারে বুলডোজারে। নাগরিকত্ব আজ অস্ত্র, আর মুসলিম পরিচয়ই অপরাধ।

এই টার্গেটিং কোনো এলোমেলো সিদ্ধান্ত না, এটা স্ক্রিপ্টেড। অমিত শাহ যখন ২০১৮ সালে ‘ঘুণপোকা’ শব্দটা বলেন, সেটার প্রতিবাদ হয়নি। বরং টিভি চ্যানেলগুলো সেটা তুলে নেয়, আর ‘অনুপ্রবেশকারী’ শব্দটাকে সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। গত কয়েক বছর ধরে একটা কল্পিত হুমকি দেখিয়ে যাচ্ছে এই মিডিয়া যেন মুসলিমদের জন্মহারেই হিন্দুদের অস্তিত্ব সংকটে। অথচ ৮০% মানুষ তো হিন্দুই! কিন্তু ভয় কাজ করে এবং সেটা থেকেই ঘৃণা জন্মায়।

এই ঘৃণার রূপরেখাটা আমি বহু বছর আগেই বুঝেছিলাম। ২০১০ সালে আমি কাজে ভারতে কয়েকবার গিয়েছিলাম গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে। আমি ছিলাম বাইরের দেশের একজন “বস”, আর ভারতে জানেন তো, বাইরে থেকে কেউ এলে সবাই তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। যখন জানল আমি বাংলাদেশি, একদিন ডিনারের টেবিলে এক সিনিয়র ম্যানেজার হঠাৎ বললেন "গুরুগ্রাম তো এখন বাংলাদেশিদের ভরে গেছে।" আমি তখন থেমে গিয়ে বললাম "সিরিয়াসলি? কেন তারা এখানে আসবে?" তারা বলল, "ওরা সব হাউসকিপিং, রাস্তা ঝাড়ুর কাজ করে।" আমি তখন বুঝতেই পারছিলাম না, এটা কোনো বাস্তব তথ্য, নাকি সাজানো কল্পনা। আমি বললাম, "তাদের তো ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা বা কলকাতার স্থানীয় শ্রমিকদের মতোই দেখায়।" সঙ্গে সঙ্গে তারা বলল "না না, ওরা মুসলমান। বাংলাদেশি।"

সেই মুহূর্তে আমি বুঝেছিলাম, ভেতরটা ঠিক কীভাবে কাজ করে। ওরা যুক্তি খোঁজে না, ওরা বিশ্বাসে চলে।

এভাবেই এই ঘৃণা সমাজের ভিতরেই ঢুকে গেছে। এবং যখন সরকার, মিডিয়া, প্রশাসন একসঙ্গে সেই ঘৃণাকে লিগ্যাল কাঠামোতে রূপ দেয় তখনই তৈরি হয় এই ‘বুলডোজার জাস্টিস’।

এটাই মোদির ভারতের প্রতীক হয়ে উঠেছে বিচার নয়, বুলডোজার; যুক্তি নয়, ভয়; আইন নয়, ক্ষমতা। আর এটা শুধু ভারতের নয়, এটা এক বৈশ্বিক নিপীড়নের রোডম্যাপ।

প্রথমে মানুষকে অমানবিক বানাও। তারপর প্রতিবাদকে অপরাধ বানাও। মিডিয়াকে কিনে ফেলো, বা ভয় দেখাও। তারপর যাকে দরকার, তাকেই দমন করো।

ভারতে এখন সেই নিশানায় বাঙালি মুসলমানরা। উদ্দেশ্য স্পষ্ট নীরবতা, উৎখাত, ধ্বংস।

আপনি কাউকে যদি ‘ঘুণপোকা’ বলেন, তাহলে আপনি তাকে মেরে ফেলার লাইসেন্স দিয়ে দিলেন। আপনি যখন বলেন ‘অনুপ্রবেশকারী’, আপনি নিজেই তাকে দেশ থেকে তাড়ানোর অধিকার দাবি করছেন। আপনি যখন বলেন সাংবাদিকতা ‘ফেক নিউজ’, তখন আপনি সত্য বলার শেষ আশ্রয়স্থলটাকেও ধ্বংস করছেন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:৪২

ঊণকৌটী বলেছেন: কে ভারতীয় আর কে বিদেশী তা আধার card স্ক্যান করলেই টের পাওয়া যায় | যেমন একজন md নূর স্ক্যান করে দেখা গেলো প্রদীপ সাহা তো সেই ক্ষেত্রে কী হবে? সোজা ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হচ্ছে |

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:০৮

নুর-এ-আলম বলেছেন: card স্ক্যান কইরা first name : ঊণকৌটী last name : ভারতীয় পাইছে। তারপরে কোর্ট, আইন সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখাইয়া ঝাড়খণ্ডে পাঠাইছে। এইটা ভাল কিছুর ইঙ্গিত না। বিচার ব্যবস্থা যদি দলীয় বা ধর্মীয় লাইন ধরেই চলতে থাকে, তাহলে সেটা বিচার না, প্রহসন। রাষ্ট্র যদি নিজের নাগরিককে ‘স্ক্যান’ কইরা অপমান করে, তখন সে রাষ্ট্রও স্ক্যান হইব।

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:০০

রাজীব নুর বলেছেন: অত্যন্ত দুঃখজনক।

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষের মাঝে এমন আচরণ ভেরি স্যাড।

৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:২৮

মেঘনা বলেছেন: বিএসএফ যাদের pushback কইরা বাংলাদেশে পাঠাইছে তারা তো সকলেই বলতেছে তারা বাংলাদেশী, মিডিয়ার সামনে নিজেদের জেলা গ্রামের নাম বলতেছে নিজেদের বাংলাদেশী বলে দাবি করতেছে এবং বাংলাদেশের মিডিয়াও সেইটা দেখাচ্ছে। তাহলে সমস্যাটা কি?


০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:০৯

নুর-এ-আলম বলেছেন: বলেছে রোহিঙ্গা, বলেছে ভারতীয়।

৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:৩০

ঊণকৌটী বলেছেন: ভারত তো আর ধর্মশালা নয় যে খুশী আসবে টাকা দিয়ে নকল আধার card বানিয়ে রয়ে যাবে | আধার card স্ক্যান করলে ব্লাড গ্রুপ ,রেটিনা ,কোথায় জন্ম সব কিছুর তথ্য থাকে তাই কে ভারতীয় আর কে বিদেশী তা সহজেই বোঝা যায় |

০৩ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:১১

নুর-এ-আলম বলেছেন: আদালত, তদন্ত, মানবাধিকার সবকিছুই বাতিল করে দিলাম! আধার দিয়ে রেটিনা স্ক্যান করেই যদি মানুষ বিচার পায়, তাহলে RSS যে কার্ড স্ক্যান করে কারে প্রদীপ সাহা বানায়, তার বিচার কে করবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.