|  |  | 
| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
 নূর আলম হিরণ
নূর আলম হিরণ
	ভাগ্যক্রমে আমি এই সুন্দর গ্রহের এক বাসিন্দা! তবে মাঝেমধ্যে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। তবে বুদ্ধিমান এলিয়েন না, কোন আজব গ্রহের বোকা এলিয়েন!

আমাদের গ্রামটি  এমন একটি গ্রাম যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য সকল জায়গা থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। দুই এক বাড়ি পরপর মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা দেখতে পাওয়া যায়। মানুষও দুই হাতে দান-খয়রাত করে এসব প্রতিষ্ঠানে। আজ থেকে ৪ বছর আগে আমাদের এলাকার অন্যতম দানবীর মানুষ জনাব ওদুদ সাহেবের বাসায় যাই। উনি আমাদের এলাকার এক মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে উনার সাথে দেখা করতে বলেন। মাদ্রাসার সভাপতি, প্রিন্সিপাল ও এলাকার আরো দুই-একজন সহ আমরা উনার সাথে দেখা করতে যাই। বাড়ি যাওয়ার পর দেখি উনি ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের সাথে করমর্দন করে উনার রুমে নিয়ে আসলেন। ঘরে উনি একাই থাকেন। আমরা আসবো হয়তো এই জন্য একজন লোক ডেকে এনে কিছু নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করেছেন।
উনার রুমে নিয়ে গিয়েই উনি উনার কথা শুরু করলেন। সব কথাই মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দিকে তাকিয়ে বলছেন। উনি বলতে লাগলেন, দেখুন রহুল আমিন সাহেব(প্রিন্সিপাল) জীবনে অনেক সম্পদ করেছি। ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করেছি, সবাই দেশের বাহিরে থাকে। তাদের যে ইনকাম, আমার টাকা তাদের আর প্রয়োজন নেই। আমিও শেষ সময়ে এসেছি এত টাকা দিয়ে কি করবো। কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম আমি মারা গেছি কিন্তু আমার টাকা পয়সা কোথায় আছে আমি কাউকে বলে যেতে পারিনি। সবাই এসে আমায় দাফন করে গেলো কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের দেখতে পাইনি। আপনাকে দেখতে পেলাম, আপনি আমার জানাজায় ইমামতি করছেন, আমার জন্য সবার কাছে মাপ চেয়েছেন।”
এসব বলে উনি উনার আলমারি থেকে চারটে চেক বই বের করলেন। চেকে আগে থেকেই লেখা ছিল শুধু আমাদের সামনে সিগেনাচার করলেন। চারটে চেক উনি প্রিন্সিপালের হাতে দিয়ে বললেন এখানে আমার জমানো ১কোটি ৪৩লাখ টাকা আপনাকে দিলাম। আপনার আর সভাপতির নামে একটা ওয়াকফাহ একাউন্ট খুলবেন ইসলামী ব্যাংকে। সব টাকা উঠিয়ে এনে ঐ একাউন্টে জমা রাখবেন। সেখান থেকে যা মুনাফা আসবে দুইটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার নাম বললেন তাদের যেনো সে অর্থ দেওয়া হয়। সবার মুখে আলহামদুলিল্লাহ্ উচ্চারিত হলো।
সবাই বের হয়ে গেলে আমি উনার কাছে এসে বললাম আমাদের স্কুলে ছাত্রীদের জন্য ভালো একটা এটেস্ট বাথরুমসহ কমনরুম নেই। মেয়েরা পাবলিক বাথরুমে যেতে সমস্যা হয়। আপনি যদি এটার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে স্কুলের ছাত্রীদের বেশ উপকার হতো। উনি আমার দিকে বিরক্তি সহকারে তাকিয়ে বললো এগুলো করার জন্য সরকারি টাকা আসে আমার টাকা আমি এসবে খরচ করতে চাইনা। আমি বলতে চাইছিইলাম আপনি যে দুই মাদ্রাসায় টাকা দিলেন সেগুলোও এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা আমাদের স্কুলও তাই কিন্তু উনার চাহনি দেখে বুঝতে পারলাম এটা বলে কাজ হবেনা। উনি যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে চলে গেছেন।
আমি যখন প্রাইমারি শেষ করে আমাদের হাই স্কুলে ভর্তি হই আমার সাথে ভর্তি হয় আমাদের পাশের বাড়ির রবিউল। বয়সে আমাদের থেকে দুই তিন বছর বড় হবে। বুঝাই যাচ্ছে প্রাইমারি শেষ করতে তার সময় লেগেছে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলে কোনো স্কুল ড্রেস ছিলো না, যার যা আছে তাই পড়ে আসতো। কিন্তু হাই স্কুলে ড্রেস ছিল, সাদা শার্ট কালো প্যান্ট। তবে প্যান্টের ব্যাপারে শিথিলতা ছিল, যেকোন কালারের প্যান্ট পড়লেই চলতো। আমাদের ক্লাসে প্রতিদিনই তিন চারজন স্কুল ড্রেস না পড়ে আসতো। স্কুল ড্রেসের জন্য আমাদের আকতার স্যার প্রতিদিনই ধরতো। যারা পড়ে আসতো না তাদের কানে ধরাতেন, বেত মারতেন কিংবা ক্লাস থেকে বের করে দিতেন।
তেমনই একদিন আকতার স্যার ড্রেস না পড়ে আসা সবাইকে দাঁড় করালেন। যথারীতি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন ড্রেস কেনো পড়ে আসেনি। যে যার মত কারন বলতে লাগলো, কারো ড্রেস ভিজে ছিল, কারো নতুন ড্রেস বানাতে দিসে, কেউ ভুলে গেছে পড়তে! শেষে রবিউলকে বললো তুই তো কোনোদিনই ড্রেস পড়ে আসস না, কারণ কি? আজ বল তোর সমস্যা কি? ড্রেস না পড়ে আসার কারণ সে কোনোদিন না বললেও সেদিন রবিউল আকতার স্যারের একেবারে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো “সকালে ভাত খেয়ে আসি কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেন না, আবার ড্রেস!”
আকতার স্যার সেদিন তাকে আর কিছু বলেননি, শুধু সেদিন না আর কোনোদিনই আকতার স্যার আমাদের ক্লাসে স্কুল ড্রেসের জন্য কাউকে শাস্তি দেননি। শুধু মুখে বলতেন যেন স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে আসি।
কোনো এক দুপুর  বেলায় আমি স্কুল থেকে বাড়ি এসে দেখতে পেলাম ঘরে আম্মা,বোন কেউ নেই। ভাত না খেয়েই বই খাতা রেখে আমাদের পুকুর ঘাটে যাই, সেখানেও কাউকে দেখতে পেলাম না। কি মনে করে আমার পুকুরে গোসল করতে ইচ্ছে হলো। আমি তখনো পুরোপুরি সাঁতার জানিনা। আমি জামা খুলে পুকুরে নেমে পড়লাম। ঘাটে একটা বাঁশ ছিল সেটা ধরে ধরে সাঁতার দিচ্ছিলাম। আমাদের পুকুর পাড়ে একটা আম গাছ ছিল, সেই গাছ থেকে একটা কাঁচা আম পড়লো। আমটি আমার থেকে হাত দশেক দূরে ভাসতে ছিল। আমি অনেক চেষ্টা করেও আমটি নিতে পারছিলাম না। একসময় যেতে যেতে আমটির প্রায় কাছেই চলে গেলাম কিন্তু নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম। হাত ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমি ডুবে যেতে লাগলাম। অনেক পানি পেটে চলে গেলো নাক, মুখ দিয়ে। আমার মনে আছে পানির নিচে যখন, তখনই ভাবলাম আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে কেউ বাঁচাবে না।
কিন্তু কিছুক্ষন পর আমি আমার শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, কেউ একজন আমাকে টেনে উপরে উঠাচ্ছে। উপরে উঠার পর দেখলাম আমাদের বাড়ির জেসমিন, আমার চাচাতো বোন আমাকে টেনে তুললো। সেও পুকুরে গোসল করতে এসেছিল। আমাকে উপরে উঠিয়ে সে অনেকক্ষন বকাঝকা করে আম্মাকে ডেকে আনলো। আম্মা এসে আমাকে একটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ঘরে নিয়ে গেল। আমার সে চাচাতো বোনের কাছে আমি আজীবন ঋণী। আজো তাকে দেখলে আমি যত ব্যস্ত থাকি তার সাথে কিছুক্ষন কথা বলি, খোঁজখবর নিই।
স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়(২)
স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়(১)
 ১৭ টি
    	১৭ টি    	 +৪/-০
    	+৪/-০  ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:২৭
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:২৭
নূর আলম হিরণ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় জগতরন ভাই। জীবন আসলে এমনই। আশেপাশের ছোট অনেক গল্প আমাদের ভাবিয়ে তোলে।
২|  ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:৪৩
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:৪৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: 
একদম জীবন থেকে নেয়া সত্যি ভাবনার বৈকি ।
  ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:৪৮
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:৪৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: সবার জীবনে এমন গল্প থাকে কম বেশি। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৩|  ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:০৭
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:০৭
সোনাগাজী বলেছেন: 
মাদ্রাসায় দান করাটাও সঠিক হতো, যদি সেই টাকায় চাকুরী সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করা হতো।
  ০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:২৮
০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:২৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: মাদ্রাসায় দান ঠিক আছে, ঐখানে যে পরিমান অর্থ ছিল তার থেকে ১০-১২ লাখ স্কুলে উনি দিতে পারতেন। স্কুল কলেজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের এখানে এখনো আফগানিস্তানের মতোই।
৪|  ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৩৬
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৩৬
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: ১) যে যেখানে দান করে শান্তি পায় করুক না । একেবারে না করার চেয়ে কোথাও না কোথাও দান করা ভাল। 
২) ড্রেস পড়েনি কেন জবাবে প্রাইমারীর ছেলেটির কথাটা এদেশের অনেক মাস্টার্সের ছাত্র স্যারকে বলতে পারতো কিনা সন্দিহান। 
৩) রাখে আল্লাহ মারে কে ।
  ০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:৩০
০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:৩০
নূর আলম হিরণ বলেছেন: দানের টাকাই আমাদের এদিকে সব মাদ্রাসা,এতিম খানা গড়ে উঠেছে।
৫|  ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৩৭
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৩৭
প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: মাদ্রাসায় দিলেন,স্কুলে দিলেন না !
  ০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:৩০
০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:৩০
নূর আলম হিরণ বলেছেন: স্কুলে দান অনেকেই করতে চান না।
৬|  ০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:১৬
০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:১৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনার আর সভাপতির নামে একটা ওয়াকফাহ একাউন্ট খুলবেন ইসলামী ব্যাংকে। সব টাকা উঠিয়ে এনে ঐ একাউন্টে জমা রাখবেন। সেখান থেকে যা মুনাফা আসবে দুইটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার নাম বললেন তাদের যেনো সে অর্থ দেওয়া হয়। সবার মুখে আলহামদুলিল্লাহ্ উচ্চারিত হলো। 
আমারতো মনে হচ্ছে উনি সাওয়াব এর আশা দান করে উলটা পাপ কামানোর মেশিন চালু করে দিয়ে গেলেন। ইসলামি ব্যাংকের মুনা মানে সেই সুদই। শুধু নাটা ভিন্ন।
স্কুলের প্রয়োজটা মিটালে বরং সদকায়ে জারিয়া হতো, মৃত্যও পরেও সাওয়াব পেতেন। 
“সকালে ভাত খেয়ে আসি কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেন না, আবার ড্রেস!”
আহারে। চরম সত্যি গুলি কখনো কখনো নির্বাক করে দেয়।
  ০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:৩৩
০৮ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:৩৩
নূর আলম হিরণ বলেছেন: আমাদের এদিকে ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে সবার ধারণা ভিন্ন। ইসলামী ব্যাংকে লেনদেন করাটা সওয়াবের এই একটা প্রচার হয়েছে অনেক আগেই। কারা প্রচার করেছে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
সে রবিউল প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে বহু আগে, এখন সে কোটি টাকার বেশি মালিক।
৭|  ১০ ই মে, ২০২২  রাত ১২:৫৫
১০ ই মে, ২০২২  রাত ১২:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি আমটা নিতে গিয়ে পুকুরে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলেন। আপনার কাজিন আপনাকে বাচালো। কিন্তু আপনার মা এসে আপনাকে মারলো কেন? সে কি জানে না আপনি ডুবে যাচ্ছিলেন? 
খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। পড়তে ভালো লেগেছে।
  ১০ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:০০
১০ ই মে, ২০২২  সন্ধ্যা  ৬:০০
নূর আলম হিরণ বলেছেন: মা মারলো, কারন একা একা কেনো ঐ দুপুর বেলায় সেখানে গোসল করতে গিয়েছিলাম। ঐ পুকুরে আমরা খুব কমই গোসল করি। আমাদের ছোট্ট একটা পুকুর আছে ঘরের পিছনে সেটাতে গোসল করতাম।
৮|  ১০ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৫৩
১০ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৫৩
মিরোরডডল  বলেছেন: 
বাথরুমের প্রপোজালটা ভালো ছিলো ।
প্রাইমারি স্কুলের ঘটনাটা সত্যি করুণ ! 
মা কি চাচাতো বোনের সামনেই লাঠিপেটা করলো ?   
 
  ১০ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৫৯
১০ ই মে, ২০২২  বিকাল ৫:৫৯
নূর আলম হিরণ বলেছেন: তখন ছোট ছিলাম, ক্লাস থ্রিতে পড়তাম চাচাতো বোনের সামনেই পিটিয়েছিল 
৯|  ০৫ ই মে, ২০২৪  বিকাল ৩:৪৩
০৫ ই মে, ২০২৪  বিকাল ৩:৪৩
আরাফআহনাফ বলেছেন: মায়েদের শাসন এমনই ছিলো- আর এখন কোথায় যেন এসব শাষন হারিয়ে গেছে।
ভালো লাগলো আপনার লেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:১৬
০৮ ই মে, ২০২২  বিকাল ৪:১৬
জগতারন বলেছেন:
---- উনি যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে চলে গেছেন।
......................।
“সকালে ভাত খেয়ে আসি কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেন না, আবার ড্রেস!”
এসব কথা আমাদের ভাবায়-- ।
পোষ্টে + এবং
লাইক !