নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উনিশ শতকের নব জাগরণের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, বাঙালির প্রমিথিউস মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯১তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৪


আমাদের অহঙ্কার, বাঙালি জাতির গর্ব, আধুনিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাণপুরুষ, বাংলা সনেটের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে ইংরেজ শাসনসৃষ্ট নবোত্থিত মধ্যবিত্ত বাঙালির মনন, অনুভূতি ও সাহিত্য-চেতনার জগতে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে যারা ঋতি্বকের ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে মধুসূদনের ভূমিকা অসাধারণ। সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের ইতিহাসও তার পটপরিবর্তন করে। এ বদলের পেছনে বিপ্লব একটা অনিবার্য সত্য হিসেবে দেখা দেয়। বাংলার ইতিহাসেও একটা ভাবের বিপ্লব ঘটেছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে। সেই বিপ্লবেরই সোনার ফসল আধুনিক সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল এ বিপ্লব। তিনি হলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তার সাহিত্য বোধ ও ইতিহাস বোধের তুলনা হয় না। বাংলা কবিতার প্রথম আধুনিক কবি পুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্তের হাত ধরেই নব্য বাংলার সাহিত্য পূর্ণরূপে আত্ম প্রকাশ করে। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী মধুসূদনের জীবন চরন ছিল ততোধিক বিস্ময়কর। ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছিলেন, ইংরেজী সাহিত্য রচনা করেছিলেন, সমাধিক খ্যাতি ও যশ অর্জনের জন্য। অনন্য প্রতিভার অধিকারী সরস্বতীর বরপুত্র মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের আজকের দিনে যশোরের সাগরদাঁড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১৯১তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালির প্রমিথিউস মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

উনিশ শতকের নব জাগরণের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, বাঙালির প্রমিথিউস মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলার যশোহর জেলায় কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত সাগরদাঁরি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মধুসূদন দত্তের পূর্ব পুরুষের আদি নিবাস ছিল বালি, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ। বসতি ছিল গোপালপুর, তালা, সাতক্ষীরা। প্রথম পুরুষের নাম ছিল রামরাম দত্ত। দ্বিতীয় পুরুষ হিসাবে ছিলেন রাম কিশোর দত্ত। তিনি বৈবাহিক সূত্রে সাতক্ষীরার গোপালপুর থেকে আসেন যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে। তৎপুত্র মহারাজ রামনিধি দত্ত যিনি ছিলেন মাইকেল মধুসূদনের পিতামহ। মধুসূদনের পিতা ছিলেন মহামতি রাজ নারায়ন দত্ত। মাতা ছিলেন রাড়ুলী কাঠিপাড়া গ্রামের গৌরীচরণ ঘোষের কন্যা জাহ্নবী দেবী। রাজ নারায়ন দত্তের কোন কন্যা সন্তান ছিলো না। তিন পুত্র সন্তান ছিল যথাক্রমে মধুসূদন দত্ত, মহেন্দ্র নারায়ন দত্ত, প্রসন্ন কুমার দত্ত, তারা বয়সেই মারা যায়। মধুসূদন ছিলেন পিতা মাতার বড় সন্তান।

শিশুকালে মধুসূদনের হাতে খড়ি হয়েছিল তাঁদের বাড়ীর চন্ডীমণ্ডপে। এরপর তিনি তাঁর গ্রামের নিকটবর্তী শেখপুরা গ্রামের এক মৌলভী শিক্ষকের নিকট ফরাসী শিখতে যেতেন। চন্ডীমণ্ডপে শিক্ষা ও মৌলভী শিক্ষকের শিক্ষায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে মধুসূদন হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪১ সাল পর্যন্ত সেখানে ইংরেজী ও ফরাসী অধ্যয়ন করেন। এই সময় খিদিপুরে তাঁদের নিজের বাড়ীতেই তিনি বসবাস করতেন। ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী কবি মধুসূদন খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। এই সময় তিনি হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরস্থ বিশপস্ কলেজে ভর্তি হন এবং চার বৎসর সেখানে অধ্যয়ন করেন। এখানে অধ্যয়নকালে তিনি গ্রীক, ল্যাটিন, ফরাসী, হিব্রু প্রভৃতি ভাষা আয়ত্ব করেন। ১৮৪৮ সাল থেকে পিতার অর্থ সাহায্য বন্ধ হলে ১৯৪৮ সালে কবি মাদ্রাজে গমন করেন। প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। মাদ্রাজ যাবার পরেই তিনি ইংরেজ রমণী রেবেকা ম্যাক্টাভিসকে বিবাহ করেন। ১৮৪৯ সালে রচনা করেন ইংরেজী কাব্য The Captive Lady। ১৮৫১ সালে মাতার মৃত্যুর কারণে ঐ সালে পিতার সাথে শেষ সাক্ষাত করেন। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী গ্রহন করেন। ১৮৫৬ সালে তিনি রেবেকাকে ত্যাগ করে এক ফরাসী মহিলা হেনরিয়েটার সাথে বিবাহ করে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং তাঁর রচনার স্বর্ণকালের সূচনা হয়। ১৮৫৮ সালে তিনি রচনা করেন নাটক শর্মিষ্ঠা ।

শর্মিষ্ঠা একটি পৌরাণিক নাটক। এটিই আধুনিক পাশ্চাত্য শৈলীতে রচিত প্রথম বাংলা নাটক। নাটকের আখ্যানবস্তু মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত রাজা যযাতি, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনী থেকে গৃহীত। অবশ্য পাশ্চাত্য নাট্যশৈলীতে লিখলেও, মাইকেল এই নাটকে সংস্কৃত শৈলীকে সম্পূর্ণ বর্জন করেননি। এই নাটকের কাব্য ও অলংকার-বহুল দীর্ঘ সংলাপ, ঘটনার বর্ণনাত্মক রীতি, প্রবেশক, নটী, বিদুষক প্রভৃতির ব্যবহার সংস্কৃত শৈলীর অনুরূপ। আবার ইংরেজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক ধারার প্রভাবও এই নাটকে স্পষ্ট। প্রথম রচনা হিসেবে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও, সেই যুগের ইংরেজি-শিক্ষিত পাঠকসমাজে এই নাটকটি খুবই সমাদৃত হয়। শর্মিষ্ঠাতেই মধুসূদন বাংলা নাটকের ভাষা নির্মাণের চেষ্টায় ব্রতী হয়েছিলেন। সে-চেষ্টা কৃষ্ণ কুমারীতে পূর্ণতা পেয়েছে। শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী, তিলোত্তমা, মেঘনাদ বধ, বীরাঙ্গনায় যে ব্যক্তি সচেতনভাবে মহৎ বিষয়ের বাহন হিসেবে ভাষাকে সমুন্নত আভিজাত্য দিতে চেয়েছেন, সেই একই ব্যক্তি কি 'একেই কি বলে সভ্যতা' ও 'বুড়ো শালিকে' অপূর্ব দক্ষতায় ভাষাকে ব্রাত্যজনের বাহন করেননি? ব্রজাঙ্গনায় তাকেই আবার নির্ঝরের কুলু কুলু ধ্বনিতে রূপান্তরিত করেছেন। ভাষা ও সাহিত্যের এই সব্যসাচী সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনে লক্ষ্য ভেদ করে শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্যকে অনন্য বৈশিষ্ট্যে ও অপার সম্ভাবনায় মূর্ত করেছেন। ১৮৬০ সালে একেই কি বলে সভ্যতা ওবুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নামক দুটি প্রহসন লেখেন । বছরেই সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখেন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য। অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রথম সার্থক প্রকাশ তিলোত্তমায়। তিল তিল সুন্দর দিয়ে গড়া এই সুন্দরের প্রতিমা বাঙালির নবজীবনের ভোরে কেবলমাত্র মহাসমুদ্রের তরঙ্গ ছন্দের মহাকল্লোলই বাঙালিকে শোনায়নি, একই সঙ্গে তাকে নির্বূ্যঢ় সুন্দরের তৃষ্ণায়ও উৎকণ্ঠিত করেছে।

এরপর ১৮৬১ সালে তিনি রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি "মেঘনাদবধ কাব্য"। এই মহা কাব্যের চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন - রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমূখ। কাব্যকে অষ্টাধিক সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করেছেন। কিন্তু সর্গান্তে তিনি নূতন ছন্দ ব্যবহার করেননি, সর্গশেষে পরবর্তী সর্গকথা আভাসিত করেননি। বিপুলভাবে বন্দিত এবং তীব্রভাবে নিন্দিত এই মহাকাব্য বাংলা কবিতার ইতিহাসে স্মরণীয়তম রচনা। এর পর লেখেন ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) যা তাঁর রচনার মধ্যে অন্যতম। মহাকাব্যের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাহিত্যিক জীবনে স্বদেশে খ্যাতি ও যশ লাভ করেও পরিতৃপ্ত হতে পারেননি। দুর্বার উচ্চকাঙ্খা ও অপরিতৃপ্ত বাসনা তাঁর শৈল্পিক স্বত্ত্বাকে স্বদেশের মাটি থেকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় দেশ দেশান্তরে। ১৮৬২ সালে জুন মাসের ৯ তারিখে ব্যারিস্টারী পড়ার মনোবাসনায় তিনি স্ত্রী, পুত্র কন্যা কোলকাতায় রেখে বিলাত যাত্রা করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ভার্সাই নগরে সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। এই সময় তাঁর তীব্র অর্থাভাব দেখা দেয় এবং ঋণের দায়ে জেলে যাবার উপক্রম হলে, তাঁর লেখা পত্র পেয়েই দয়ার সাগর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় দেড় হাজার টাকা পাঠিয়ে এবং পরে আরও টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে, কবিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। ব্যারিষ্টারী শিক্ষা সমাপ্ত ১৮৬৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর। ভার্সাইতে থাকাকালীন ইতালীয় ভাষার সনেট বাংলায় প্রবর্তনের চেষ্টা করেন, যার ফল তাঁরচতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬)। ১৮৬৭ সাল থেকে আইন ব্যবসা শুরু। ১৮৭০ সালে সুপ্রিম কোর্টে চাকুরী গ্রহন করেন।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে কলিকাতার আলিপুর দাতব্য চিকিৎসালয়ে রোগশয্যায় কপর্দকহীন অবস্থায় অনাহারে ও চিকিৎসাহীনতায় ভূগে একই সালের ২৯ শে জুন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরনিদ্রায় শায়িত হন যশোর জেলার প্রথম ব্যারিষ্টার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তাঁর সমাধিস্থলে নিচের কবিতাটি লেখা রয়েছেঃ
দাঁড়াও, পথিক-বর জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী!


আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯১তম জন্মবার্ষিকী। বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার, বাঙালির প্রমিথিউস মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৪

সরদার হারুন বলেছেন: আপনার লেখা অসমপূর্ণ থাকলেও সে্ৗন্দর্য হারায় নি । সুন্দর লেখা

উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

+++++++++++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.