নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

৫২' এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও আমাদের প্রাপ্তি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০২



শোকে বিহবল. গৌরবদীপ্ত বাঙালীর জীবনে অনন্য দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে বুকের রক্ত ঢেলে গৌরব অর্জনের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত একুশ এখনো সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনে শক্তি ও প্রেরণার উৎস। তবে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে সঠিক পদক্ষেপ আর যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এখনা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও মর্যদা নিশ্চিত করা যায়নি। তাইতে ভাষা আন্দোলনের ৬২ বছর পরেও আদালতসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন কার্যকর চেয়ে হাইকোর্টে রিট করতে হয়। গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ড. মোঃ ইউনুছ আলী আকন্দ। রিট আবেদনটি বাংলায় লেখা হয়েছে। রিট আবেদনে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন-১৯৮৭ বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বাংলা ভাষা আইন সর্বত্র অনুসরণ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং ওই আইনের ৪ ধারা অনুসারে প্রয়োজনীয় বিধি জারি করার নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না- এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ (১৯৮৭ সনের ২নং আইন) পাশ হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ তারিখে। উক্ত আইনের ৩(৩) ধারা অনুসারে অসদাচরণ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার/তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃংখলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু আরও দুঃখের বিষয় যে, দীর্ঘ ২৭ বছর শেষ হলেও উক্ত আইনটি ঢালাওভাবে প্রচার হয়নি বা উক্ত আইনটি সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে না। রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ ৭ জনকে বিবাদী করা হয়েছিলো।



সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম, চিঠিপত্র আদান প্রদান, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী বাংলায় লিখিত হচেছ না। সরকারি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কার্যক্রমও বাংলা ভাষায় প্রচলন হচ্ছে না। সরকার লাখ লাখ গাড়ির নম্বর প্লেট অনেক ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শব্দ দিয়ে আইনও করে। উদাহরণ স্বরূপ “বাংলাদেশ রাইফেলস” যেটি বাংলা শব্দ এটাকে পরিবর্তন করে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বি,জি,বি) নামে ইংরেজি শব্দ দিয়ে আইনও পাশ করে। যা সংবিধানের ৩/৭/২৬ অনুচ্ছেদের সহিত সাংঘর্ষিক। দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশনসহ অন্যান্য মিডিয়ার বিজ্ঞাপনেও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ব্যবহার হয়। Fair & Lovely, Horlicks, Complan, Saifur's-এর মতো আরো অজস্র দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদক বিজ্ঞাপনের বাতাবরণে ধাপ্পাবাজিপূর্ণ, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, বর্ণবাদী, বস্তাপঁচা, ঘিলুপঁচা বক্তব্য এবং ধারণার প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন যাবত। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মহলেও এ বিষয়ে কোনো কথাবার্তা অথবা আলোচনা হতে শোনা যায় না। অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে লেখা দেখা যায়। অনেক টেলিভিশন মিডিয়ার নামও ইংরেজীতে যেমনঃ Channel-9, BTV World, ATN Bangla, ATN News, Bangla vision, Channel-I, Channel-9, Channel-16, Channel-24, ETV, RTV, NTV, My TV, GTV, Independent TV etc. তাদের লাইসেন্সও সরকার ঐ নামেই দিয়েছে। তাদের প্রচার প্রচারণা বিজ্ঞাপনে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে দেখা যায়। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন (ইংরেজি সংবাদ ছাড়া), সাইনবোর্ড এবং গাড়ীসহ সকল ধরনের নাম্বার ও নেইমপ্লেটে (দুতাবাসের বাড়ি ব্যতীত) একমাসের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এখনা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও মর্যদা নিশ্চিত করা যায়নি।



২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুযারী (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯), বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হন মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার কলেজছাত্র রফিক উদ্দিন আহম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত এবং ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার সাধারণ জনতা আবদুল জব্বার। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন সরকারি কর্মচারী শফিউর রহমান এবং রক্তাক্ত ২১ ফেব্রুয়ারির মারাত্মক আহত ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার আবদুস সালাম নিহত হন '৫২-এর ৭ এপ্রিল। জাতীয়ভাবে স্বীকৃত এই পাঁচ ভাষা শহীদ ছাড়াও সে দিন নিহত হয়েছেন আরও অনেকে। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ভাষা আন্দোলন বলতে সাধারণত আমরা '৫২-এর ভাষা আন্দোলনকে বুঝি; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষা নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলন বা সংগ্রাম দেশ বিভাগের অনেক আগেই শুরু হয়ে ছিল। যা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামকে অব্যাহত রাখে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূডান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ বপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারি। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ দাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত এটি ছিলো একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।



একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল এই দিনটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা দিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুযারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে ঘোষণা করা হয় এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুযারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে।



আমরা কৃতজ্ঞ বিশ্বের সব জাতির কাছে, যারা বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ ও বাঙালির ঐতিহাসিক সংগ্রামকে সত্যাদর্শ দৃষ্টান্ত মনে করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের সম্মতি দিয়েছে শহীদ দিবসকে। সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে শিখবে এদিনের প্রেরণা থেকে। মাতৃভাষার মাধ্যমে সবার শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক চর্চার উত্তরণ ঘটবে; একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং ভাষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের ফলে বিশ্বশান্তি ও বিশ্ব সভ্যতার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ভাষার আগ্রাসন সংখ্যালঘু কোনো জনগোষ্ঠীকে যেন অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার তিমিরে আটকে রাখতে না পারে, এটিই ছিল বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের মর্মবাণী। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। ৫২'এর ভাষা আন্দোনের ৬২ বছরেও উচ্চ আদালতে উপেক্ষিত বাংলা ভাষা। সব ক্ষেত্রে বাংলা চালুর বিষয়ে সরকার তোড়জোড় করলেও তাদের নিজেদের করা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ২৪৯টি ওয়েবসাইটের মধ্যে সম্পূর্ণ বাংলায় আছে মাত্র ৩৩টি। বাকিগুলোর বেশির ভাগই ইংরেজিতে। বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষা মিলিয়ে আছে কয়েকটি। আবার অনেক ওয়েবসাইটের লিংকগুলো কাজ করে না। অন্যগুলো পুরনো তথ্যসংবলিত, দীর্ঘদিন আপডেট করা হয় না। অনেক লিংকে দু-একটি ছবি দিয়েই কাজ শেষ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটটি দীর্ঘদিন ধরে হ্যাকড অবস্থায় থাকলেও উদ্ধার হচ্ছে না। জাতীয় ওয়েব পোর্টালের ৫৯টি ওয়েবসাইটের আটটি বাংলায় এবং বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের ১৯০টি ওয়েবসাইটের মধ্যে সম্পূর্ণ বাংলায় আছে ২৫টি। তবে কেবিনেট বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য, প্রতিরক্ষা, বস্ত্র ও পাট, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইট পুরোপুরি বাংলায় আছে। আদালতে বাদী বিবাদীর পক্ষে বিপক্ষের রায় জানবার বা ঝুঝবার অধিকার থাকলেও ভাষা আন্দোলনের ৬১ বছরেও উচ্চ আদালতের রায় লেখা হয়না বাংলায়। লজিস্টিক সাপোর্ট, পরিভাষার সমস্যার জন্য উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় প্রদানের প্রধান বাধা বলে মনে করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল মনে করেন, বিচারপতিদের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।



সারাদেশে ভাষার প্রশিক্ষণ চলে বহু ভাবে, কিন্তু তার প্রায়োগিক বাস্তবতা নিয়েও রয়েছে নানান প্রশ্ন। ভাষার শুদ্ধ চর্চা ও লালনকে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য যথেষ্টসংখ্যক প্রশিক্ষণ ও চর্চাকেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ২০০১ সালে ১৫ মার্চ ১ দশমিক ০৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠতে শুরু করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকল্পটি। ২০১৫ সালে এসেও এটি রয়ে গেছে খণ্ডিত। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ে প্রকল্পের কেবল প্রথম পর্যায়ের কাজ কোনোক্রমে শেষ হয়েছে। জনবল সংকট প্রবল। ১২ তলা ভবন আটকে আছে তিনতলায়। জায়গা সংকটের দোহাই দিয়ে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়নি শহীদ মিনার। এমনই নানামাত্রিক জটিলতায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকল্প কেবল খোঁড়াচ্ছে। পুরোপুরি আলোর মুখ আজও দেখেনি। এ অবস্থায় সারা বছর এমনকি ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতেও প্রতিষ্ঠানটির ফটক খোলা হয় না। ব্যতিক্রম কেবল মহান একুশে ফেব্রুয়ারিসহ দু-একটি দিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ভাষার মর্যাদা-আভিজাত্য-শুদ্ধতা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে ভাষা শিক্ষক ও ভাষা প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করা করা হয়নি।ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কিছু সংরক্ষণ, সংগ্রহ এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণসহ আন্তর্জাতিক মানের একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের কথা থাকলেও তা এখনো অসম্পূর্ণ। দেশে প্রণীত শিক্ষানীতিতেও এ বিষয়ে নেই কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা । ভাবলে অবাক হতে হয়, বাংলা ভাষার একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাকরণ আজও লেখা হয়ে ওঠেনি। যদিও বাজারে পাওয়া যায় শত রকমের বাহারি সব ব্যাকরণ। বিদ্যালয়ে পড়ানো হয় ব্যাকরণ নামক নিম্নমানের নোটবই।



পদ্মা মেঘনায় জল যেমন গড়িয়েছে বিস্তর তেমনি সময়ও গড়িয়েছে অনেক। আর বিলম্ব না করে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর জন্য এখনই বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়নের জন্য গ্রহণ করতে হবে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ। অভিধানকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করার জন্যও গ্রহণ করতে হবে পদক্ষেপ। কেননা সময়ের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে সমাজগতিকে ধারণ করে ভাষাক্ষেত্রে অনবরত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন শব্দ। চলচ্চিত্র, নাটক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে ভাষার প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করা যায় পোস্টার-প্রচারপত্র, টেলিভিশন-রেডিওতে আলোচনা এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজনও নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি ভাষা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীসমাজকে ব্যাপকভাবে ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তির প্রবল প্রবাহের এ অনুকূল সময়ে বাংলা ভাষাকে ইউনিভার্সাল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজের (ইউএনএল) আওতায় আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীর অন্য ভাষাভাষীর কাছে বাংলাভাষাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে এ ভাষান্তরের (স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর) মহাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পারলে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্যসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক যাবতীয় ভাবসম্পদ সম্পর্কে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ অবগত হতে পারবে; বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীও অনুরূপভাবে জানতে পারবে অপরাপর ভাষাভাষীর কৃষ্টিসমেত দরকারি সব বিষয়। অফিস-আদালতে বা কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারিক বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য দরকার সরকারি আগ্রহ-উদ্যোগ। সরকারি-বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসচেতনতা কিংবা ইচ্ছা করে ভাষার অপপ্রয়োগ পরিহার করতে হবে।



আর এটি যথার্থরূপে সম্পন্ন করা গেলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো ভাষার যথাযথ উত্তরাধিকার নিশ্চিত হবে। এ জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে আগ্রহী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হতে সক্ষম প্রগতিশীল কর্মীদের মধ্যে এ বিষয়ে স্থবিরতা কাম্য নয়। জ্বালাও-পোড়াও ধরনের আন্দোলন নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগুলো যেমন নিজেদের বিনষ্ট অধিকারে নিয়ে যাচ্ছে চেতনার অনাবাদি জমিন, তার বিপরীতে পাল্টা মতাদর্শিক লড়াই চালু হওয়া আজ নিতান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সমাজে। এই লড়াইয়ের মশাল নিয়ে এগিয়ে আসার দাবি প্রগতিশীল তরুণ সমাজের কাছে। তাহলেই কেবল বাস্তবায়িত হবে একুশের ভাষা আন্দোলনের চেতনা অর্জিত হবে কাঙ্খিত লক্ষ্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.