নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাটি ও মানুষকে ভালবাসার প্রেরণার উৎস গীতিকার, সুরকার, কন্ঠশিল্পী, ভাষা সৈনিক আব্দুল লতিফের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪


ভাষার গানের অমর গীতিকার, সুরকার, কন্ঠশিল্পী, ভাষা সৈনিক আব্দুল লতিফ। তিনি ছিলেন এদেশের ভাষা সংগ্রাম, ঊনসত্তুরের গন অভূত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীনতা ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সকল সংগ্রামে লড়াকু ছাত্রজনতার অকুতোভয় শক্তি ও সাহসের এক অফুরন্ত উৎস। তাঁর রচিত ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ গানটিতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা এবং বাঙালী জাতিসত্বা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তৎকালীন শাষকগোষ্ঠী সহ সর্বকালের শত্রু ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ করার শক্তি ও সাহসের চিরন্তন বানী। এছাড়াও তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত জনপ্রিয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো এর প্রথম সুরকার। ২০০৫ সালের ভাষার মাসের আজকের দিনে মৃত্যুবরন করেন গীতিকার, সুরকার আব্দুল লতিফ। বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের রচয়িতা এই মহান শিল্পীর ১০ম মৃত্যুৃবার্ষিকী আজ। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

ভাষার গানের অমর গীতিকার ভাষা সৈনিক আব্দুল লতিফ ১৯৩৫ সালের ৭ মার্চ বরিশালের রায়পাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আমিনুদ্দিন। উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর তিনি উচ্চ শিক্ষাতর্থে কলকাতায় যান। এখানে বছর তিনেক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ সুরেন্দ্রনাথ দাসের কাছে। সেখানে ১৬ বছর বয়স থেকে কংগ্রেস সাহিত্য সংঘে গান গাইতে শুরু করেন তিনি। তবে প্রতিনিয়ত দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। ১৯৪৮-৪৯ সালের দিকে উপোস করে দিন কেটেছে। কলকাতার জীবনে এআরপিতে চাকরি যাওয়ার পর তাঁবু সেলাইয়ের কাজ করে দিন কাটিয়েছেন। তবু সঙ্গীত চর্চা বাদ দিতে পারেননি। ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে আব্দুল লতিফ দেশে ফিরে পরবর্তী মাসে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে অডিশন দিয়ে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করতে লাগলেন। একই বছরের ৪ কিংবা ৫ আগস্ট মোদাচ্ছের আলী রচিত ও আব্দুল হালিম চৌধুরী সুরারোপিত ‘সেথায় খুঁজিও মোরে' তার প্রথম বেতারে গাওয়া আধুনিক গান।

মাতৃভাষার ওপর তখনকার শাসকদের আঘাত বাঙালির অন্ধ চক্ষু যেমন খুলে দিয়েছিল, তেমনি মনের বন্ধ কপাটও সেদিন খুলে যায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি লিখেছিলেন-‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়...।' গানটি লিখে প্রচন্ড উত্তেজনা অনুভব করেছিলেন। স্ত্রী নাজমা লতিফের পরামর্শে তখনই ছুটে যান খ্যাতিমান কবি ফররুখ আহমদের কাছে। সেদিন এই গানের কথা পড়ে কবি ফররুখ আহমদ বলেছিলেন, ‘লতিফ তুই অমর হয়ে গেলি'। আব্দুল লতিফের এই গান ভাষা আন্দোলনে মুক্তিকামী লাখো-কোটি মানুষের মনে সেদিন জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। এই গান এখনও মানুষের হৃদয়ে শিহরণ জাগায়। এ ছাড়াও তিনি নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চ অনুষ্ঠানে গান গাইতেন এবং ভাষা আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। ফলে আমাদের গণসঙ্গীতের ক্ষেত্রে একটি কালোত্তীর্ণ ধারার উন্মেষ ঘটে যা আমাদের চেতনাকে করেছে জাগ্রত ও শানিত। আব্দুল লতিফ তার জীবনে অসংখ্য গানে সুরারোপ করেছেন এবং কন্ঠ দিয়েছেন। ১৯৫২ সালের মে মাসে পুরনো রেলস্টেশনের কাছে ছিল ঢাকা কলেজ, সেই কলেজের ছাত্ররা বর্তমান গুলিস্তানের কাছাকাছি ব্রিটানিয়া সিনেমা হলে যে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, সেখানেই আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটির প্রথম সুরকার করেছিলেন তিনিই। ৪-৫ বছর গানটি তার সুরে গেয়েছেন, অনেকেই গেয়েছেন হয়তো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলতাফ মাহমুদের সুরটাই টিকে যায়। সঙ্গীত বিষয়ক তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন আব্দুল লতিফ। ‘দেশের গান ভাষার গান' (বাংলা একাডেমী), ‘দিলরবাব' (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি' (বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ) থেকে প্রকাশিত হয়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কোন সময়েই আব্দুল লতিফ নীরব দর্শক ছিলেন না। তিনি সবসময়ই গণমানুষের কাতারে দাঁড়িয়েছেন, কলম ধরেছেন, গানের ভাষায় স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সেই সময়ে রচিত ও গীত অন্যান্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেসব গান, সেগুলো হলোঃ ‘রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন করিলিরে বাঙ্গালী/ তোরা ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি', ‘শুধু ঘুম পাড়ানি গান আজি নয়', ‘জামাত হয়েছে খাড়া', ‘বল বীর বল উন্নত মম শির', ‘হেই সামালো, ধান হো, কাস্তেটা দাও শান হো', ‘ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে ঘুমিয়ে গেলে যারা' শুনেছি আওয়াজ শুনছি, রাতের দেয়ালে পড়ছে আঘাত, এক, দুই, তিন গুণছি, ভুলব না ভুলবা একুশে ফেব্রুয়ারি, বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা, মাউন্ট ব্যাটেন সাহেব ও তোমার সাধের বাটান কার হাতে দিয়া গেলা, লঙ্গর ছাড়িয়া নায়ের দে দুখী দাইয়া, মোদের গরব মোদের আশা, জনতার সংগ্রাম চলবেই চলবে, অনেক একুশ দেখেছি, দেখেছি তোমায় নাগরিক বেশে, আমার দেশের ছাত্রছাত্রীর নাই তুলনা নেই (গণঅভ্যুত্থান দিবসের ওপর ভিত্তি করে আব্দুল লতিফ রচিত, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য (সুভাষ মুখোপাধ্যায়), ‘সোনা সোনা সোনা/ লোকে বলে সোনা (আব্দুল লতিফ) ইত্যাদি। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময়ও প্রচুর গান লিখেছেন আব্দুল লতিফ এবং বিডি হাবিবুল্লাহ। আব্দুল লতিফের লেখা সেসব গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হকের নায়ে চড়বি কারা আয়', ‘ডাকল পাখি রাঙলো আকাশ', ‘জোয়ার এলো ডাকছে কারা হাঁকছে তুরা/ এবার মাঝি নাও তোল 'ইত্যাদি। তিনি তাঁর রচিত ও সুরারোপিত অন্তত দু হাজার গানের সমৃদ্ধ সৃষ্টি সম্ভার রেখে গেছেন এবং কন্ঠ দিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুল লতিফ ১৯৫২ সালের ২৮ ডিসেম্বর পটুয়া কামরুল হাসানের বোন মিস নাজমাকে বিয়ে করেন। চাকুরী করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তরে। আব্দুল লতিফ জহির রায়হান পরিচালিত ‘শেষ পর্যন্ত' ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। কণ্ঠ দান করেছেন এমন ছবির সংখ্যা ২০ থেকে ২২। নিজের গাওয়া ডিস্ক রয়েছে ২টি এবং পরিচালিত সঙ্গীতের একটি। এই গুণী-সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ১৯৭৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ১৯৭৪ সালে পূর্ব জার্মানি সফর করেন। ১৯৭৫ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত পরিবার পরিকল্পনা সেমিনারে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দান করেন আবদুল লতিফ। সংগীতে স্বকীয় অবদানের জন্য তিনি বহু জাতীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার যথাঃ একুশের পদক, স্বাধীনতা, পদক, বাংলা একাডেমী পদক, শিল্পকলা একাডেমী পদক, সিধু স্মৃতি পদক, বরিশাল মেয়র পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। প্রখ্যাত গায়ক, ভাষা সৈনিক ও গীতিকার আব্দুল লতিফ ৭০ বছর বয়সে ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন। আগেরদিন রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বাতাসেই তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। সকালে হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার জানান, তিনি ঘণ্টাখানেক আগেই ইন্তিকাল করেছেন। এক বছরেরও বেশি সময় তিনি শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। বাড়িতেই তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয় সর্বশেষ ৭/৮ মাস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃভূমি, মাটি ও মানুষকে ভালবাসার অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস ভাষার গানের অমর গীতিকার, সুরকার, কন্ঠশিল্পী, ভাষা সৈনিক আব্দুল লতিফের ১০ম মুত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫০

শাহ আজিজ বলেছেন: আমাদের দেখা হয়েছিল বা দেখাশোনার শুরু তার বাসাতে ৭৮এ , ইস্কাটনে সরকারী বাসভবনে। একদম সাদাসিধে আর গর্বহীন। খুব উজ্জীবিত হতাম তার সংস্পর্শে। ওর ছেলে আমাদের বন্ধু ছিলেন। একে একে মাঝিমাল্লারা সব চলে গেছেন কিন্তু নৌকাটি আর কেউ বাইছেনা বা গুন ধরছেনা ।

স্মরণ করি এই শিল্পীকে ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আজিজ ভাই
চমৎকার অনুভূতি শেয়ার
করার জন্য। ঘুড়েতে দেখছিনা কেন?
ভালো থাকব্নে।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭

শাহ আজিজ বলেছেন:


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.