নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের নান্দনিক শিল্পচর্চার পথিকৃৎ শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদের ৯৩তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

২৩ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫২


এদেশে শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ শুদ্ধতম শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ। সফিউদ্দীন আহমেদ চল্লিশ দশকের মধ্য পর্যায়ে ভারতবর্ষের চিত্রকলা জগতের একজন প্রচারবিমুখ, প্রচ্ছন্নে থাকা উদীয়মান উজ্জ্বল চিত্রশিল্পীর নাম। তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন এক ধরনের ঋজুতা আছে যা তাঁকে আর দশজনের চেয়ে স্বতন্ত্র বলে চিহ্নিত করে। সফিউদ্দিন আহমেদ শিল্প চর্চায় নিজের সৃজনশীলতায় তিনি তৈরি করেছেন স্বকীয় শিল্পপথ। শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ ১৯২২ সালে আজকের দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রের জনক শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদের ৯৩তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা।

(পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বরেণ্য চিত্রশিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ)
চিত্র শিল্পী সফিউদ্দিন আহমদ ১৯২২ সালের ২৩ জুন কলিকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুল থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ১৯৩৬-৪২ কালপর্বে স্নাতক সমমানের ছ-বছরের শিক্ষা কোর্সে তিনি ছিলেন ফাইন আর্টসের ছাত্র; তারপর ১৯৪৪-৪৬ পর্বে শিক্ষকতার কোর্সে তিনি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন ছাপচিত্র। মুকুল দে, রমেন চক্রবর্তী প্রমুখ শিল্পী ভারতের ছাপচিত্রকে বিশ শতকের ত্রিশের দশকে যে উন্নত শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেন তা সফিউদ্দীন আহমেদকে আকৃষ্ট করে। তিনিও এ-বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণসহ তাঁর শিক্ষকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভারতীয় ছাপচিত্রকে পৌঁছে দেন শিল্পের উন্নত মহিমায়। ফলে সমগ্র ভারতের আধুনিক ছাপচিত্রের অগ্রণী শিল্পীদের তালিকায় তাঁর নামও অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। চল্লিশের দশকে কলকাতার আর্ট কলেজে পড়ার সময়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন ছাপচিত্রে। তার কিছু অসাধারণ কাজের মাধ্যমে তিনি ভারতের কলারসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় ধানমন্ডিতে চলে আসেন। তিনি সাত দশকের বেশি সময় ধরে শিল্পচর্চায় দেশের চারুকলার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন।

(জলের নিনাদ, এচিং একুয়াটিন্ট ও এনগ্রেভিং, ১৯৮৫)
সফিউদ্দিন আহমদ ১৯৫৮ সালে যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস থেকে এচিং ও এনগ্রেভিংয়ে সম্মানের সঙ্গে ডিপ্লোমা লাভ করেন এবং এ বছর থেকেই দেশে-বিদেশে বহু দলবদ্ধ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। সফিউদ্দীন তাঁর সৃজন ও শিল্প ব্যক্তিত্ব দ্বারা এ দেশের আধুনিক শিল্প আন্দোলনকে বহুমাত্রা দান করেছিলেন। তাঁর সৃষ্টি উৎকর্ষে ও শিল্পিত জ্ঞানে হয়ে উঠেছিল অভিনব। তার অনুসৃত পথে ব্রতী হয়েছেন পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম। আমাদের বরেণ্য চিত্র শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী সফিউদ্দিন আহমেদের ছাত্র। এছাড়াও শিল্পী হাশেম খান, আবুল বারক আলভী, ফরিদা জামান, আবুল খায়ের, সুবীর চৌধুরী সফিউদ্দিন আহমেদের কাজের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি শিল্পী জয়নুল আবেদীনের সাথে ও অন্যান্য শিল্পীরা মিলে একসঙ্গে ঢাকা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ছাপচিত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

(মেলার পথে, উড এনগ্রেভিং, ১৯৪৭)
বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রের জনক শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ তাঁর জীবনব্যাপী সাধনার দ্বারা আমাদের ছাপচিত্র জগৎকে বিশ্বমানে উন্নীত করেছেন। ছাপচিত্রের অনেকগুলো মাধ্যমকে তিনি ব্যাপক ও গভীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সমৃদ্ধ করেছেন। এসব মাধ্যমের মধ্যে রয়েছে: উড এনগ্রেভিং, ড্রাই পয়েন্ট, এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, কপার এনগ্রেভিং প্রভৃতি। দুই বাংলার রঙ তার কাছে ছিল ভিন্ন।তাই পশ্চিম বাংলার প্রকৃতির ধূসরতা ও বাংলাদেশে নীলাভ সবুজের ছড়াছড়িকে মিশিয়ে নিয়েছেন।প্রাথমিক ভাবে তার কাজে পরিস্ফুটিত হয় লোকশিল্পের বৈশিষ্ট্য। কালো রঙের প্রতি দুর্বলতা ছিল শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের । তাই কালো রঙের অনুশীলনের জন্য ত্রিশ-চল্লিশের দশকেই শিয়ালদা স্টেশনে গেছেন রাতের বেলার কালো রঙ দেখতে । লন্ডনে সফিউদ্দিন আহমেদ কালোর বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার করেন এচিং-অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশকে তিন বছরের মতো সময়ে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে বেশ কিছু রেখাচিত্র আঁকেন যা ‘ব্ল্যাক সিরিজ’ বা ‘কালো চিত্রমালা’নামে পরিচিত। তাঁর শিল্পকর্মে ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন মাধ্যমে রচনার মাধ্যমে। তার কলিকাতায় আঁকা ছবিতে এসেছে মহানগরের বস্তিজীবন, বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলের নিসর্গ, দুমকার প্রকৃতি ও সাঁওতাল-জীবন এবং ঢাকায় আঁকা ছবিতে বিষয়বস্তু হিসেবে এসেছে বন্যা, জাল, মাছ, নৌকা, ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি নানা শ্রমজীবী মানুষ এই জন্য তাঁকে বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রের জনক বলা হয়।

নীরবে-নিভৃতে বাস করা প্রচারবিমুখ এই গুণী শিল্পীর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী 'রেখার অশেষ আলো' (The Limitless Luminosity of Line) অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে ২০০৮ সালে ২৩শে জুন যা উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এই প্রদর্শনী সম্পর্কে সফিউদ্দিনের ছাত্র শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, "তাঁর চিত্রকর্ম সম্পর্কে আমার বলার কিছু নেই, ধৃষ্টতাও নেই। তার চিত্রকর্মের যে বিশালতা, বলিষ্ঠতা ও ব্যাপকতা এবং ড্রইংয়ে রংয়ের প্রলেপ, যেভাবে লাইন টেনেছেন তা শুধু অনুধাবন করার বিষয়"। এরপর ২০১০ সালে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে 'শিল্পের অশেষ আলো' শীর্ষক দুইটি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। প্রত্যেকটি প্রদর্শনীই শিল্পী ও শিল্প-সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়ে। কিন্তু শেষ বয়সে শারীরিক কারণে ছবি আঁকতেক না পারায় আর কোনো প্রদর্শনী করা হয়ে উঠেনি ক্ষণজন্মা এ শিল্পীর।

(শান্তিনিকেতনের দৃশ্যপট, কালি ও কলম, ১৯৪৫)
বাংলাদেশের চিত্রকলার ভুবনে সফিউদ্দীন আহমেদ উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো দেদীপ্যমান। দীর্ঘদিনের একব্রতী শিল্পসাধনার মধ্যে দিয়ে এই শিল্পীপুরুষ বাংলাদেশের শিল্পের ভুবনকে নানাভাবে সমৃদ্ধ ও দীপিত করেছেন। তিনিই এদেশের ছাপচিত্রের জগতে অনন্যসাধারণ এক শিল্পগুরু। সমকালীন চিত্রের ভুবনে প্রধান শিল্পীও বটে। তাঁর সৃজনী উদ্যম, শিল্পিত মানস ও শিক্ষাব্রতী হৃদয়ের স্পর্শে আলোড়িত এবং সিক্ত হয়ে এদেশের অগণিত শিল্পী তাঁদের শিল্পীসত্তাকে আলোকাভিসারী করে তুলেছেন।

এই গুণী শিল্পী তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৪৫ সালে কলকাতা একাডেমি অব ফাইন আর্ট থেকে একাডেমি প্রেসিডেন্ট পদক, ১৯৪৭ সালে ভারতের পাটনার শিল্পকলা পরিষদ থেকে ‘দ্বারভাঙ্গা মহারাজার স্বর্ণপদক’, ১৯৬৩ সালে চারুকলায় অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকারের দেওয়া ‘প্রেসিডেন্ট পদক’, ১৯৭৮ সালে চারুকলায় অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’ এবং ১৯৯৬ সালে ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ লাভ করেন।

২০১২ সালের ১৯ মে শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে গত বছর শিল্পী সফিউদ্দীন চলে গেলেন না ফেরার দেশে, এক অজানা দেশে যেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসবেন না। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি কালের অবসান ঘটল। বাংলাদেশে শিল্পকলা চর্চার যাঁরা পথিকৃৎ, তাঁদের সর্বশেষ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তাঁর স্বতন্ত্র জীবনদৃষ্টির কারণেই তাঁর মৃত্যুতে যে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা দীর্ঘ দীর্ঘকাল অনুভূত হবে।কাঁপা কাঁপা হাতে আর তুলি বোলাবেন না সাদা চিত্রপটে। নয় দশকের জীবনের দেহাবসান হলেও, রয়ে গেছে তার সৃষ্টি, তার কর্ম। সাথে তার গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীরা তো রয়েছেনই। যারা তার কাছ থেকে চিত্রকলার প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করে আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

আজ ২৩ জুন শিল্পচর্চার জনক শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমদের ৯৩তম জন্মদিন। চিত্রকলার শুদ্ধতম শিল্পীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:০৭

কাবিল বলেছেন: ৯৩তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ।

২৩ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কাবিল ভাই
শিল্পচর্চার জনক শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমদের
জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.