নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দু\'বারের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম ফরাসী মহিলা বিজ্ঞানী মেরী কুরীর ৮১তম মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪


ফরাসী বিজ্ঞানী মেরী কুরী, পুরো নাম মেরী স্কলোডসকা কুরী। ডাক নাম মানিয়া। তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য পুরো পৃথিবী তাঁকে মনে রাখবে সবসময়। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী যিনি দু’বার দু’টি বিষয়ে (পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন) নোবেল পুরস্কার লাভ করে ছিলেন। আজীবন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করে এক অজানা রোগে (সম্ভবত লিউকেমিয়া) ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে স্বল্প বয়সে এই মহীয়সী বিজ্ঞান সাধিকার জীবনপ্রদ্বীপ চিরদিনের জন্য নির্বাপিত হয়। আজ তার ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিজ্ঞানী মেরী কুরীর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মেরী স্কলোডসকা কুরী রাশিয়ায় অত্যাচারী জার শাসনের নিষ্পেষণের আমলে ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে তাঁকে মানিয়া নামে ডাকা হতো। তাঁর বাবা ব্লাদিস্লাভ শক্লোদোভস্কি ওয়ার্সে একটি নামকরা কলেজের পদার্থের অধ্যাপক ছিলেন এবং মা ছিলেন একটি নামকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাঁর বাবা প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ে আসর বসাতেন। একসময় মেরীর পরিবার মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়ায় তাঁর বড় বোনের পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য ১৮৬৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি মাসিক পাঁচশ রুবল-এর বিনিময়ে এক অভিজাত রুশ আইনজীবির বাড়িতে গভর্নেসের চাকরি নেন। তাদের দুবোনের মধ্যে শর্ত ছিল একজনের পড়াশুনা শেষ হবার পর অপর জনের পড়াশুনার খরচ যোগাবে। তাই অনেক মানসিক পীড়নের মধ্যে তাঁকে তিন বছর চাকরি করতে হয় এবং এরই মধ্যে তার বড় বোন ব্রোনিয়া ডাক্তারী পাস করে। পূর্ব শর্তানুযায়ী এবার মেরী তাঁর বোনের আর্থিক সহায়তায় বিজ্ঞানের উচচশিক্ষার জন্য প্রথমে অস্ট্রিয়ার শাসনাধীন ‘ক্রাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে' পড়তে যান। কিন্তু সেখানে তিনি বিজ্ঞান ক্লাসে যোগ দিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচিব তাকে অসম্মতি জ্ঞাপন করে বলেন “বিজ্ঞান মেয়েদের জন্য নয় তাই তিনি যেন রন্ধন শিক্ষা ক্লাসে যোগ দেন।” পরবর্তীতে ডাক্তার হবার আশায় মেরী ভর্তি হয়েছিলেন প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষকেরা তাঁর কল্পনাশক্তি, উদ্যম ও মেধা দেখে তাঁকে উৎসাহিত করতেন নতুন নতুন গবেষণায়।

(ল্যাবরেটরীতে গবেষণারত মেরী কুরী ও পিয়ারে কুরী)
এসময় তার পরিচয় ঘটে ফরাসী বিজ্ঞানী পিয়ারে কুরীর সাথে যিনি ইতিমধ্যে চুম্বকত্ব ও পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পিয়ারে কুরী মেরীর জীবনকে পরিবর্তীত করার ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা রাখেন। তারা বিয়েও করেন। এর পর মেরী পেয়ারে কুরীর সাথে যৌথভাবে গবেষণা করেন। ১৮৯৮ সালেই এই দম্পতি প্রথমে পিচব্লেণ্ড হতে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পলোনিয়াম এবং পরে রেডিয়াম আবিষ্কার করেন যা ইউরোনিয়াম হতে দশ লক্ষগুণ বেশি শক্তিশালী। এই রেডিয়ামের ব্যবহার অপরিসীম। কুরী দম্পতি প্রমাণ করলেন কোন কোন মৌলের পরমাণু ক্রমাগত ভেঙে গিয়ে রশ্মি বিকিরণ করে। এই বিকিরণ অন্য পদার্থ ভেদ করেও যেতে পারে।এই ধরণের পদার্থকে বলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আর এই গুণকে বলে তেজস্ক্রিয়তা। বিরল ধাতু ইউরেনিয়ামের লবণ থেকে তাঁরা রেডিয়াম,পলোনিয়াম মৌল দুটি আবিষ্কারকরেন। এ আবিষ্কারের জন্য ১৯০৩ সালে মেরী কুরী এবং পিয়ের কুরী যৌথভাবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১০ সালে মেরী কুরী রেডিয়াম ক্লোরাইডকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ রেডিয়াম নিষ্কাষণ করেন। এই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য ১৯১১ সালে মেরীকে রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী যিনি দু’বার নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ১৫টি স্বর্ণপদক, ১৯টি ডিগ্রি এবং অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

গবেষণা ছাড়াও মেরী কুরী দ্বিতীয় যুদ্ধে আহত সৈনিকদের দিয়েছেন একাগ্র সেবা, ভবিষ্যত বিজ্ঞানীদের দিয়েছেন উপদেশ ও পরামর্শ। সর্বোপরি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে যিনি ঢেলে দিয়েছেন তাঁর সবটুকু সময়। মেরী কুরী তাঁর বাকিজীবন রেডিয়াম গবেষণাগারে কাটিয়ে দিয়েছেন। রেডিয়ামের বিষ তাঁকে সমস্ত জীবন ধরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আজীবন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করে এক অজানা রোগে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই মহিয়ষী বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, " সুপ্রসিদ্ধ মনীষীদের মাঝে একমাত্র মেরি কুরীর জীবনই যশের প্রভাবমুক্ত ছিল। নিজের জীবনটা যিনি অপরিচিতের মতো সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পেরিয়ে গিয়েছেন, সেই চিরকেলে নারীর কথা লিখতে বসে আজ আমি নিজের মধ্যে সাহিত্য প্রতিভার অভাব বোধ করছি।"

আজ এই মিহিষী নারীর ৮১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিজ্ঞানী মেরী কুরীর মৃত্যুদিনে তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সূত্রঃ ওমেন্স হিস্ট্রি
লিংকঃ History of Marie Curie

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: সুপ্রসিদ্ধ মনীষীদের মাঝে একমাত্র মেরি কুরীর জীবনই যশের প্রভাবমুক্ত ছিল। +++্

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ গোল্ডেন গ্লাইডার
চমৎকার শ্রদ্ধায় সুন্দর মন্তব্যের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.