নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক রায় বাহাদুর জলধর সেনের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭


কালের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া বঙ্গদেশের অন্যতম কর্ম প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব রায় বাহাদুর জলধর সেন। তিনি একাধারে কৃতী ভ্রমণ কাহিনী, রম্যরচনা, উপন্যাস লেখক এবং সাংবাদিক। তিনি বাংলায় প্রকাশিত উন্নতমানের সাহিত্য পত্রিকা ‘মাসিক ভারতবর্ষের’ সম্পাদক। মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকাটির কথা এখন হয়তো অনেকাই জানেন না। কিন্তু একসময় এটি ছিল খুবই জনপ্রিয় পত্রিকা। জলধর সেন দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল এবং অনেক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়েছিলেন। তার প্রতিভার প্রশংসা করেছেন দেশের অনেক কৃতী ব্যক্তি। কর্ম প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার জলধর সেনকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। ১৬০ সালের আজকের দিনে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন রায় বাহাদূর জলধর সেন। আজ তার ৭১৫৬তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে রায় বাহাদুর জলধর সেনকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভ্চ্ছায়।

জলধর সেন ১৮৬০ সালের ১৩ মার্চ কুষ্টিয়া জেলার (তত্কালীন বৃহত্তর নদীয়া জেলা) কুমারখালী গ্রামে (বর্তমানে কুমারখালী শহর) এক এক সম্ভ্রান্ত ও সংস্কৃতিবান হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জয়ধর সেন। তার স্কুল শিক্ষা জীবন অতিবাহিত হয় কুমারখালীতেই। ১৮৭৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত কুমারখালী হাইস্কুল থেকে এন্ট্রাস (বর্তমান সময়ের মাধ্যমিক সমমান) পরীক্ষায় পাস করেন। এন্ট্রাস পরীক্ষা পাস করার পর তিনি উচ্চতর শিক্ষা লাভ করার জন্য চলে আসেন কলকাতা শহরে। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেনারেল এসেব্লী ইনস্টিটিউশনে তিনি ফার্স্ট আর্টস বা এফএ ক্লাসে (বর্তমান কালের উচ্চ মাধ্যমিক সমমান) ভর্তি হন। কিন্তু নানা কারণে তিনি এফএ পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বেশিদূর না এগোলেও তিনি ঘরে বসে প্রচুর লেখাপড়া করেছিলেন।

জলধর সেনের কর্মজীবন শুরু হয় একজন স্কুল শিক্ষক হিসেবে। ১৮৮৩ সালে তিনি গোয়ালন্দ হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত হন। স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় তার সহধর্মিণী, কন্যা ও মাতার মৃত্যু হয়। এই তিনটি মৃত্যুতে তিনি খুব দুঃখ পান। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য তিনি হিমালয় চলে যান। হিমালয় থেকে ফিরে এসে আবার শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু গোয়ালন্দ হাইস্কুলে নয়, অন্য প্রতিষ্ঠানে। ১৮৯১ সালে তিনি মহিষাদল রাজ স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৮৯৪ সালে তিনি আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৮৯৯ সালে শিক্ষকতার চাকরি ইস্তফা দিয়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় এসে শুরু হয় তার অন্য পেশা। তিনি শুরু করলেন সাংবাদিকতা। তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয় সাপ্তাহিক ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকায়। এই পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে তিনি কাজ করতেন। সাপ্তাহিকে ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকার কাজ ছেড়ে দিয়ে তিনি যোগদান করেন সাপ্তাহিক ‘হিতবাদী’ পত্রিকায়। ‘হিতবাদী’ নামক পত্রিকায় তিনি যোগদান করেন সম্পাদক হিসেবে। এই পত্রিকায় তিনি কাজ করেন ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অবনিবনার কারণে ‘হিতবাদী’ পত্রিকায় তার কাজ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এই পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কিছু সময় পর টাঙ্গাইলের সন্তোষের (তখন টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত ছিল) জমিদার বাড়ির গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। কিছু সময় পর তাকে নিযুক্ত করা হয় জমিদার বাড়ির দেওয়ান। ১৯০৯ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি সন্তোষের জমিদার বাড়ির দেওয়ান হিসেবে কাজ করেন। তার কর্মদক্ষতা সবারই প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। জমিদার বাড়ির চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি আবার সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯১১ সালে তার সম্পাদনায় ‘সুলভ সমাচার’ নামক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিছু সময় পর তিনি যোগদান করেন ‘মাসিক ভারতবর্ষ’ নামক বিখ্যাত পত্রিকায়। তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ‘মাসিক ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় তিনি কাজ করেন একটানা ছাব্বিশ বছর। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই পত্রিকায় কাজ করেন। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে অনেক লেখক সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক খ্যাতনামা সাহিত্যসেবী ‘মাসিক ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় লিখেছেন। এই পত্রিকাটি সাড়া বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। ‘মাসিক ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময়কে জলধর সেনের চাকরি জীবনের স্বর্ণ অধ্যায় বলা যায়।

(কাঙাল হরিনাথ ওরফে হরিনাথ মজুমদার)
জলধর সেন শুধু পত্রিকা সম্পাদনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি নিজে লেখালেখিও করতেন। তিনি আজীবন সাহিত্য সাধনা করে গেছেন এবং নিজেকে একজন সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার সাহিত্য শিক্ষাগুরু ছিলেন কাঙাল হরিনাথ ওরফে হরিনাথ মজুমদার। কাঙাল হরিনাথের জন্মও কুমারখালীতে। মূলত কাঙাল হরিনাথের অনুপ্রেরণাতেই তিনি সাহিত্য সাধনা শুরু করেন। সাহিত্যের অন্যতম প্রধান শাখা গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি বিভাগে তার সহজ পদচারণা ছিল। তার সর্বমোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বিয়াল্লিশটি। জলধর সেন বেশ কিছুদিনের জন্য হিমালয় ভ্রমণে গিয়েছিলেন এর উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয় সে যুগের অসমান্য জনপ্রিয় ভ্রমণকাহিনী হিমালয়। এ ছাড়াও ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানের ভ্রমণ নিয়ে রচিত তার অপর বইয়ের নাম প্রবাসচিত্র। এই বইটি সহজ ও চিত্তাকর্ষক ভাষায় রচিত হয়েছে। তাঁর রচিত গল্পের বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য, কাঙ্গালের ঠাকুর, বড় মানুষ প্রভৃতি । তাঁর রচিত উপন্যাস হল দুঃখিনী, অভাগী, (তিন খণ্ডে রচিত) উৎস প্রভৃতি । কাঙাল হরিনাথ (দুই খণ্ডে সমাপ্ত) তার রচিত জীবনী গ্রন্থ। তাঁর সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরিনাথ গ্রন্থাবলী, ও প্রমথনাথের কাব্য গ্রন্থাবলী । অপরাজেয় কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম জীবনের লেখায় জলধর সেনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। জলধর সেনের কোনো কোনো লেখায় পতিতাদের প্রতি সহূদয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। এটা তার মহানুভবতার পরিচয় বহন করে। বিধবা বিবাহের প্রতি তার সমর্থন সহূদয়তার পরিচয়।

১৯২৯ সালে কর্ম প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার জলধর সেনকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। তিনি দুইবার বিখ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের’ সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৩২ সালে কলকাতায় রামমোহন লাইব্রেরি মিলনায়তনে বঙ্গবাসীর পক্ষ থেকে জলধর সেনকে বিপুল সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন বাংলার অপরাজেয় কথাশিল্পী সাহিত্য সম্রাট শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কোনো রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি বড় কথা নয়, দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষের কাছ থেকে তিনি বিপুল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন তার তুলনা হয় না। এখানেই তিনি অনন্য।

লেখক, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক জলধর সেন ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুৃকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। জলধর সেনের ব্যক্তিত্ব, সম্পাদক হিসেবে তার দক্ষতা এবং সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আজ ঔপন্যাসিক রায় বাহাদুর জলধর সেনের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে রায় বাহাদুর জলধর সেনকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভ্চ্ছায়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

কাবিল বলেছেন: ঔপন্যাসিক রায় বাহাদুর জলধর সেনের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভ্চ্ছায়।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯

সায়ান তানভি বলেছেন: ভাল পোস্ট। ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০২

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: শুভেচ্ছা জলধর সেনকে। বাংলা সাহিত্য তাঁকে ভুলে যাচ্ছে না তো?
আপনাকে ধন্যবাদ।

৪| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: রায়বাহাদুর জলধর সেনের ১৫৬ তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।

৫| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২২

বিজন রয় বলেছেন: শুভেচ্ছা।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.