নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নববর্ষে পান্তা ইলিশঃ বাঙ্গালীর আত্মঘাতি সংস্কৃতি

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭


নববর্ষে পান্তা ইলিশঃ বাঙ্গালীর আত্মঘাতি সংস্কৃতি
ঢাকা, ১৪ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবারঃ বাংলা নববর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে বছরের অন্যান্য দিনে যে ছেলেটি বা মেয়েটি ফাস্ট ফুডে মজে থাকে সেদিন তারা পান্তা খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। ওয়েস্টার্ন পোষাকে আগ্রহী যুবকরা পাজামা পাঞ্জাবী পরে আর যুবতীরা লাল সাদা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ী পরে খোপায় ফুল গেথে পরিবেশটাকে রাঙিয়ে তোলে। সবত্রই একটা সাজ সাজ রব, উৎসবের আমেজ। পহেলা বৈশাখ এলে আমরা একদিনের জন্য বাঙ্গালী সাজার চেষ্টা করি। অথচ সরা বছর ভীনদেশী সংস্কৃতি আর অনুষ্ঠান নিয়ে মত্ত থেকে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আর সংস্কৃতিকে ভুলে থাকি। আধুনিক নববর্ষ পালনের তত্ত্ব তালাশ করতে গিয়ে জানা যায়। ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। এরপরে ১৯৮৩ সালে একই ভাবে ভাল কিছু উদ্যোগ নেয়া হয় নববর্ষ পালনের জন্য। দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানের দুই প্রদেশের সংস্কৃতি আলাদা। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি মনে করতো পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি ভারত থেকে আমদানী করা। অর্থাৎ তারা সংস্কৃতির নামে যা পালণ করে তা ভারতীয় সংস্কৃতি। তাই পাকিস্তানে সংস্কৃতির শুদ্ধি অভিযানে পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের গান কবিতা নিষিদ্ধ করে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারীর প্রতিবাদে ১৯৬৫ সালে ( ১৩৭৫ বঙ্গাব্দে) ছায়ানট নামের একটি সংগঠন রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ উৎসব পালনের আয়োজন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসো হে বৈশাখ, এসো , এসো, গানের মাধ্যমে তারা স্বাগত জানাতে শুরু করে নতুন বছরকে। তবে যতদুর জানা যায় ১৯৬৭ সালের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়নি। পরবর্তীতে রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরন এগিয়ে যায় আরো এক ধাপ। বিস্তৃত হতে শুরু করে ছায়ানট নামের সংগঠনটি। যা এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি মহিরূহে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২ সালের পর থেকে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি পায়। ১৯৮০ সালে বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এক ধাপ বাড়তি ছোঁয়া পায় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। ছড়িয়ে পড়ে সবার অন্তরে অন্তরে। জাতীয় এই উৎসবটি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এদিনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলা বছরের প্রথম দিনকে বরণের আনন্দে থাকে মাতোয়ারা।

আশির দশকে ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণী এক অদ্ভুত ব্যাপার শুরু করে দেয়। শুরুটা হলো দেশের সবচেয়ে প্রগতিশীল এলাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশেই। এদিন সম্পূর্ণ ভাবেই বাঙালিয়ানা জাহির করতে ব্যাস্ত ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণী রমনার লেকের পাড়েই বসে পড়েন ইলিশ পান্তা খেতে। গ্রামের মানুষ পান্তা খেতো, একসময় শহরের মানুষও খেতো সীমিত পর্যায়ে যখন ফ্রিজের সহজ লভ্যতা ছিলোনা। এখন গ্রামে পান্তার প্রচলন থাকলেও, শহরে একদমই নেই। শহরে কেবল পহেলা বৈশাখে ফিরে আসে যেটা সত্যিকারের পান্তা না। পহেলা বৈশাখে গরম ভাতে পানি ঢেলে পান্তা নাম দিয়ে পশরা সাজায় দোকানিরা। বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ হল পান্তা-ইলিশ। যেন এই পান্তা-ইলিশ না হলে আর পহেলা বৈশাখের কোন আমেজই থাকে না। কিন্তু পান্তার সাথে এই ইলিশের যোগসূত্র খুব বেশী দিনের নয়। এটাকে একটা ফিউশন বলা যেতে পারে। শহরের মধবিত্ত শ্রেণীর অতি পছন্দের ইলিশের সাথে গ্রামের গরীব কৃষক শ্রেণীর পান্তার ফিউশন। এবং তারা ধীরে ধীরে এ ব্যাপারটা জনপ্রিয়ও করে ফেলে। হুজুগে বাঙ্গালী বলে একটা কথা আছে, সে কথাটা খুব বেশি মিথ্যাও যে নয় তার প্রমাণ এই পান্তা ইলিশের ব্যাপারটাও। নববর্ষে মানুষ পান্তা ইলিশ খাচ্ছে এটা বাঙ্গালী জাতীর একটি ক্ষুদ্র অংশের সংস্কৃতি। হয়তো পান্তা ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে কিন্ত ঐতিহ্য নয়। হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলে যা আছে, আর যা ধরে রেখেছি তা হচ্ছে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য। সে হিসেবে ইলিশ আমাদের সংস্কৃতিতে প্রভাব রাখলেও ঐতিহ্যে নয়। আর যা আমাদের ঐতি্হ্যে নাই তা বাঙ্গালীর সংস্কৃতি নয় বরং পান্তা ইলিশ আমাদের অপসংস্কৃতি। যারা এই পান্তা ইলিশের বাঙ্গালী তারা কি কখনো স্বাদ নিয়েছেন পান্তা আর কাচা মরিচের! বাঙ্গালীরা পান্তার সাথে কাঁচা অথবা পোড়া মরিচ সাথে একটি পেয়াজ সহযোগে সকালে উদর পূর্তি করে কাজে বের হতেন। এটাই চিরাচরিত বাঙ্গালীদের খাদ্যাভ্যাস ও ঐতিহ্য। যদি বাঙ্গালীর ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ধারক বাহক হতে চাও, তা হলে পান্তা ভাত আর কাঁচা লঙ্কা সহযোগে বাঙ্গালীত্ব জাহির করো। মিছা মিছি এর সাথে ইলিশ বেচারার জীবন নিয়ে টানা টানি কেন?

একদিনে মুষ্টিমেয় কতিপয়দের বাঙ্গালীয়ানা প্রমানা করার জন্য শত হাজার টন ইলিশের আত্মাহুতি দিতে হয় সে হিসাব কি করে দেখেছো তোমরা? শুধু নববর্ষের পান্তা ইলিশ ভোক্তাদের উদর পূর্তির জন্য জানুয়ারি থেকেই মজুদ করা হয় সম্ভাবনাময় এই রূপালী ইলিশ। সাথে চলে জাটকা নিধন। মার্চ মাসে কয়েক হাজার টন জাটকা আটকের খবর প্রকাশিত হয় প্রতিকার পাতায়। যা যা পরিণত বয়সে কোটি বাঙ্গালীর রসনার স্বাদ পরিপুর্ণ করতে পারতো। বাংলাদেশ থেকে ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের রপ্তানিমূল্য কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজিপ্রতি মূল্য ৭০০ টাকা এবং দেড় কেজির বেশি ওজনের ইলিশের কেজিপ্রতি মূল্য ১০০০ টাকার মতো যা সরকার নির্ধারিত। অথচ এই নববর্ষকে উপলক্ষ্য করে কোথাও কোথাও এক জোড়া ইলিশ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়! ভাবতে অবাক লাগে কারা এই ইলিশের ক্রেতা !! তাদের আয়ের উৎস কি? ননসেন্স রাইমের” প্রবর্তক সুকুমার রায়কে তখন খুব মনে পড়ে। তার মাথাতেও এমন নানা প্রশ্ন ঠোকর মারতো। “মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার - সবাই বলে, ”মিথ্যে বাজে বকিসনে আর খবরদার!” আমিও তাই তাই চুপ করে থাকি ধমক খেয়ে। তবে চুপ করে থাকলেও মনে মনে হিসেব নিকেশ করতে দোষ নাই। সেজন্য হিসেবের খাতায় অংক মিলাবার চেষ্টা করি। নববর্ষে পান্তা-্ইলিশের প্রচলন উঠিয়ে দেওয়া গেলে সম্ভাবনাময় ইলিশ গুলো জাটকা অবস্থায় অকালে মারা পড়তো না, যাতে করে লক্ষ লক্ষ টন ইলিশের স্বাদ যেমন নিতে পারতো কোটি বাঙ্গালী তেমনি দেশের রিজার্ভ ভেপে ফুলে উঠতে পারতো পরিণত ইলিশের চক চকে উদরের মতো। যারা প্রশস্ত কপাল নিয়ে ধরণীতে আছো তাদের ইলিশ খেতে বারণ করার মতো দুঃসাহস আমার নাই, তবে কিঞ্চিত অনুকম্পা প্রত্যাশা করি। বাঙ্গালী তার বাঙ্গালিয়ানা জাহিরক করবে এটা গর্বের ও গৌরবের। তবে একদিনের লোক দোখানো বাঙ্গালী না হয়ে মনে প্রাণে সারা জীবনের তরে বাঙ্গালী হয়ে ধারক ও বাহক হন বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির। পরিহার করুন আত্মঘাতি সংস্কৃতির চর্চা। এই পহেলা বৈশাখে আমাদের শপথ হোক শুধু মাত্র একদিনের বাঙ্গালী সাঁজার চেষ্টা না করে বরং আমরা সারা বছরই বাঙ্গালী থাকবো। বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করবো।
তাই এবারের নববর্ষে পান্তা ইলিশের পরিবর্তে বাঙ্গা্লীর চিরায়ত ঐতিহ্য পান্তা-কাঁচা মরিচ সহযোগে শুরু করুন নববর্ষ উৎযাপন। তাতে যেমন বাঁচবে আমাদের সংস্কৃতি তেমনি বাঁচবে বেচার ইলিশ !!

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: নূরু ভাই কেমন আছেন? শুভ নববর্ষ

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, কামাল ভাই ভালো আছি।
আপনার জন্যও নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩

রেগুলা বলেছেন: আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে মঙ্গলশোভা যাত্রারও ছিলনা তাই বলে কি মঙ্গলশোভা যাত্রার নববর্ষের অংশ নয়? ঠিক একই ভাবে বিবেচনা করলে ইলিশও নববর্ষের অংশ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: হয়তোবা, হয়তো বা নয়। তবে যে সময়টাতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ সেই সময়টাতে এদেরকে অন্যায়ভাবে আহরণ করে আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে ইলিশশূণ্য পদ্মা উপহার দেবো? আগে সাম্প্রদায়িকতা ছিলনা, মঙ্গল শোভা যাত্রায় কোন নরখাদক কিংবা লম্পপরা হাজির হতোনা, এখন প্রায়ই দেখা যায় এ্ই সকল মানুষ নামের জানোয়ারদের, তাহলে কি এদরেকেও নববর্ষের অংশ ভাবতো হবে?
আমাদের ভাবতে হবে কোনটা আমাদের জন্য কল্যাণকর, তা গ্রহণ করতে হবে আর বর্জন করতে হবে বাহুল্যতাকে।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৩৫

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: সুন্দর লেখা। ভালো লাগলো।

পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা রইলো

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: অনুপ্রেরণা দেবার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ হোক নতুন বছরের প্রতিটি দিন

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪

করুণাধারা বলেছেন:
ভাল লিখেছেন। হুজুগে গা না ভাসিয়ে।আমাদের এটা ভেবে দেখা উচিত। ভাল থাকুন।

১৩ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ করুণাধারা,
আসুন আমরা আরও একবার ভাবি উচ্চমূল্যের
বাজারে একটি ইলিশ কিনবার পূর্বে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.