নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বনামধন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফীর ৯৩তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:২৪


প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক ও সংগ্রামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফী। রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশাত্ববোধক গানেও ছিলো তার ব্যপক জনপ্রিয়তা। এ ছাড়াও ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রেখেছিলেন। বাংলাদেশের সবকটি জাতীয় আন্দোলনসহ নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ ছিলেন শিল্পী কলিম শরাফী। প্রগতিশীলতার মশাল হাতে সেই তরুণ বয়সে যে সংগ্রাম তিনি সূচনা করেছিলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে গেছেন নিরলসভাবে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধেও সম্পৃক্ততা ছিল কলিম শরাফীর। মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে অবস্থান করে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। গান গেয়ে, বিভিন্ন সভা-সমিতিতে অংশ নিয়ে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে তিনি লন্ডন থেকে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানেও তিনি এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। অতঃপর দেশ স্বাধীন হলে কলিম শরাফী দেশে ফেরেন। বিশ্বকবি রবী ঠাকুরের জন্মের ৬৩ বছর পরে একই দিনে ১৯২৪ সালের ৮ই মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করনে এই কিংবদন্তি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্প। আজ তাঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। স্বনামধন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

কলিম শরাফী ১৯২৪ সালের ৮ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শিউড়ী মহকুমার খয়রাডিহি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মাখদুমজাদা শাহ সৈয়দ কলিম আহমেদ শরাফী। কলিম শরাফীর পিতার নাম সামি আহমেদ শরাফী ও মাতার নাম আলিয়া বেগম। কলিম শরাফীর পূর্বপুরুষ মধ্যপ্রাচ্য থেকে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গে ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। বিহার শরিফের পীর হযরত শারফুদ্দিন ইয়াহিয়া মানেরির উত্তরাধিকারী হিসেবে তার পীরের আসনে বসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাবা শাহ সৈয়দ সামী আহমেদ শরাফী নিজে পীরের আসনে বসেননি, আর তার সন্তান কলিম শরাফীও বাবাকে অনুসরণ করেছেন। আরো মজার ব্যাপার হলো, তাদের ছিল পারিবারিকভাবে সিনেমা হলের ব্যবসা। দশজনের মতো তিনিও যদি পারিবারিক পেশার সঙ্গে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিতেন, তাহলে এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে হয়তো এমন করে পেতাম না। জীবন-দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পেশাগত বৈপরীত্যের এটি এক আশ্চর্য নজির বটে। কলিম শরাফীর পুরো ছেলেবেলাই কাটে নানাবাড়িতে। গ্রামের লেটোর গান, ঝুমুর গান, আলকাফ, কীর্তন দেখতে দেখতেই তিনি বড় হয়ে উঠেন। সবার অলক্ষ্যই সঙ্গীতের প্রতি এক অনির্বচনীয় টান যেন বাসা বাঁধে তার মনের গভীরে।

কলিম শরাফীর লেখাপড়ার হাতেখড়ি ১৯২৯ সালে আরবি ওস্তাদজী আর বাংলা পণ্ডিত মশাইয়ের হাতে তাঁতীপাড়া পাঠশালায়। তাঁতীপাড়া প্রাইমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে কলকাতায় বাবার কাছে চলে আসেন । ১৯৩৫ সালে কলকাতায় ভর্তি হন মাদ্রাসা-ই-আলিয়াতে, যার অন্য নাম ছিল ক্যালকাটা মাদ্রাসা। অ্যাংলো পর্শিয়ান বিভাগে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর সহপাঠী হিসেবে পান শহীদুল্লা কায়সারকে। কলিম শরাফী যখন দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তখন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু 'হলওয়েল মনুমেন্ট' অপসারণের আন্দোলন শুরু করেন। নেতাজীর ডাকে তরুণ বাঙালি ছাত্রসমাজের সঙ্গে কিশোর কলিম শরাফীও আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। একবার এক মিছিলে হঠাৎ করেই পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজনের সঙ্গে তিনিও আহত হন। এরপর কলিম শরাফী চলে যান ভারতের বীরভূমে। ১৯৪২ সালে সেখান থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। পরীক্ষার পরই তিনি গান্ধীজীর ব্রিটিশবিরোধী 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। আন্দোলন ঠেকাতে ব্রিটিশরাজও তৎপর হয়ে ওঠে। ১৯৪২ সালের আগস্টে শরাফী ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া অ্যাক্টের আওতায় নিজ বাড়িতে গ্রেফতার হন কলিম শরাফী। গ্রেফতারের পর কলিম শরাফীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় শিউড়ি জেলে। একটানা ১১ মাস জেল খাটার পর অবশেষে মুক্তি পান কলিম শরাফী। কারামুক্তির পর তাঁকে ভর্তির উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে নিয়ে যান প্রণব গুহঠাকুরতা। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের পটভূমির কারণে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হতে পারলেন না। শরাফী ভর্তি হন হেতমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে।

এরই মধ্যে দেশজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। যাকে বলা হয় 'পঞ্চাশের মন্বন্তর'। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান কলিম শরাফী। চারদিকে তখন চরম দুর্ভিক্ষ। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ১৯৪৫ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজ ছেড়ে তিনি ভর্তি হন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে। এখানেও পড়াশোনা চালাতে পারলেন না। এর পর তিনি কলকাতার বিখ্যাত সঙ্গীত বিদ্যালয় 'দক্ষিণী' থেকে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে শরাফী যোগ দেন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন, সংক্ষেপে আইপিটিএ-তে। এখানেই তার শিল্পী সত্তার পুরো বিকাশ ঘটে।গান শেখা এবং গান পরিবেশনা দুটোই চলতে থাকে সমান তালে। এক সময় 'দক্ষিণী'তে যোগ দিলেন শিক্ষক হিসেবেও। এখানে পেলেন সঙ্গীতগুরু দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রকে। এঁরা সবাই রবীন্দ্রসঙ্গীত, গণসঙ্গীত, আধুনিক- সব ধরনের গানই গাইতেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে কলিম শরাফী তখন পেলেন বিশেষ অনুপ্রেরণা। এসময় কলকাতার প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং গণজাগরণের গান গাওয়ার দরুন স্থানীয় প্রশাসন তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখতো। ফলে ১৯৪৮ সালে তিনি আবারও গ্রেফতার হন। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। এসময় আইপিটিএ-এর নেতৃত্বে আসে পরিবর্তন। পরিবর্তন আসে নীতিতেও। পরিবর্তিত নীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারলেন না আইপিটিএ-এর তখনকার স্বনামখ্যাত অনেক শিল্পী। ফলে কেউ হলেন নিষ্ক্রিয়, কেউবা পাড়ি জমালেন বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই)। অন্যদিকে মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, অশোক মজুমদার, মোহাম্মদ ইসরাইল, কলিম শরাফী প্রমুখ আইপিটিএ থেকে বেরিয়ে এসে গঠন করলেন নাট্যসংস্থা 'বহুরূপী'। এটা ১৯৪৮ সালের ঘটনা। সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পর কলকাতায় আবার শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এসময় মুসলিম হওয়ার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েন কলিম শরাফী। প্রচণ্ড অর্থকষ্ট তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে যেন। অর্থকষ্টের মাঝেই ১৯৪৯ সালে তিনি বিয়ে করেন কামেলা খাতুনকে। কামেলা খাতুন তার প্রথম স্ত্রী।

১৯৫০ সালে পুরো পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি তার প্রথম স্ত্রী কামেলা খাতুন ও একমাত্র শিশুকন্যাকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় এসে ক্যাজুয়াল আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন রেডিওতে। ১৯৫১ সালে ঢাকা ছেড়ে তিনি চলে যান চট্টগ্রামে। তারপর গেট্‌জ ব্রাদার্স নামে একটি আমেরিকান কোম্পানিতে চাকুরিতে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে তাঁর জীবনে ঘটে দু'টি স্মরণীয় ঘটনা। প্রথমটি চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংযোজন। আর এটা ঘটে 'আকাশ আর মাটি' চলচ্চিত্রে। পূর্ব পাকিস্তানে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথের 'দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে' গানটির দু'লাইনে কণ্ঠ দেন কলিম শরাফী। আর দ্বিতিয়টি স্ত্রী কামেলা খাতুনের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৫৮ সালে দেশজুড়ে জারি হলো আইউব খানের সামরিক শাসন। রেডিওতে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হলো কলিম শরাফীর গান। একাত্তরে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত ঐ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। এরই মধ্যে তিনি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘অবাক পৃথিবী’ গানটি গেয়ে পাকিস্তান গোয়েন্দা দফতরের সন্দেহের চোখে পড়েন। প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং গণজাগরণের গান গাওয়ার ফলে শুরু থেকেই সন্দেহের চোখে দেখা হতে থাকে। এতকিছুর পরও কিন্তু কলিম শরাফীর গান থেমে থাকেননি। ১৯৬৩ সালে তার জীবনে আসে উল্লেখযোগ্য দু'টি ঘটনা। এ বছর তাঁর দুটি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। গান দুটি হলো- 'কুহেলী রাত মায়া ছড়ায়' এবং 'আজ হলো শনিবার'। এসময় কলকাতায় অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলনেও তিনি যোগ দেন। আর দ্বিতিয় স্মরণীয় ঘটনা কলিম শরাফী দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। স্ত্রী নাওশাবাকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর নতুন সংসার-যাত্রা।

১৯৬৪ সালে জাপানীদের কারিগরি সহযোগিতায় ঢাকায় প্রথম টিভি সেন্টার চালু হলে কলিম শরাফী যোগ দেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর পদে। ১৯৬৪-৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে শিল্পী কলিম শরাফী উদীচীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি দীর্ঘকাল ছিলেন উদীচীর উপদেষ্টা ও সভাপতি। এ ছাড়াও তিনি ১৯৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান গ্রামোফোন কোং লিঃ এর পরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৪-৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন এর চীফ ইনফরমেশন অফিসার ও জেনারেল ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ১৯৭৬ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গঠিত একুশে উদযাপন কমিটিতে তাঁর নাম রয়েছে এমন খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে এক ঘণ্টার নোটিশে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন থেকে। ৯০ এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের সংগঠিত করার কাজ করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গণআদালতে সম্পৃক্ত হওয়ায় ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় কলিম শরাফীকে আসামি করা হয়।

গভীর রবীন্দ্র-অন্তঃপ্রাণ শিল্পী ছিলেন কলিম শরাফী। তাঁর প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকায় আছেঃ আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান; আমি তখন ছিলেম মগন গহন ঘুমের ঘোরে যখন বৃষ্টি নামল; আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী; আকাশভরা সূর্যতারা; যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক অমি তোমায় ছাড়ব না মা ইত্যাদি জনপ্রিয় গান। তাঁর দীর্ঘ জীবনে মাত্র ৫টি গানের ক্যাসেট/অ্যালবাম বেরিয়েছে বরেণ্য শিল্পী কলিম শরাফীর। শিরোনামগুলো হলোঃ এই কথাটি মনে রেখো; আমি যখন তার দুয়ারে; কলিম শরাফীর যত গান; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান এবং জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের কথা ও সুরে নবজীবনের গান। সঙ্গীত শিল্পে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জনাব কলিম শরাফী একুশে পদক (১৯৮৫), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৯), 'নাসিরউদ্দিন স্বর্ণ পদক' (১৯৮৮), 'বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ স্বর্ণ পদক' (১৯৮৭), সত্যজিত রায় পুরস্কার (১৯৯৫) এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র হতে 'কৃতি বাঙ্গালী সম্মাননা পদক' (১৯৮৮)-এ ভূষিত হন। বাংলা একাডেমী ফেলোশীপ, রবীন্দ্র সুবর্ণ জয়ন্তী পাটনা, কলিকাতার শিল্প মেলার বঙ্গ সংস্কৃতি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, সিকোয়েন্স এওয়ার্ড অব অনার, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এওয়ার্ড, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গুনিজন সংবর্ধনা, পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৫তম জন্ম বার্ষিকী, ডি-৮ আর্ট এন্ড কালচার ফেস্টিভেল, পাকিস্তান ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সম্মানিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলা একাডেমী প্রবর্তিত 'রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১০' এ তাঁকে ভূষিত হন।

২০১০ সালের ২ নভেম্বর সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে উত্তর বারিধারায় নিজ বাসভবনে উপমহাদেশের এই পুরোধা সঙ্গীতগুরুর বর্ণাঢ্য কীর্তিময় জীবনের চির অবসান ঘটে। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মৃত্যুর পূর্বে সাতদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে ছয় দশকের গৌরবময় একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটল। ছেদ পড়ল এক বিশুদ্ধ সাংগীতিক প্রবহমানতায়। মৃত্যুৃকালে তিনি স্ত্রী নাওশাবা খাতুন, কন্যা আলেয়া শরাফী ও পুত্র আজিজ শরাফীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কলিম শরাফী ছিলেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক অগ্রসৈনিক এবং ঐক্যের প্রতীক। তাই এই বরেণ্য শিল্পীর প্রতি আমাদের ভালবাসা কখনো ফুরোবার নয়।

আজ ৮ই মে ২০১৭ইং প্রখ্যাত সঙ্গীতসাধক দেশবরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীর জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বরেন্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীর ৯৩ তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২| ০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সর্বদা আপনাকে সাথে পাই
আনন্দে মেতে থাকি তাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.