নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুরের যাদুকর, খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৩


অনন্য সুরেলা কন্ঠে অজস্র হৃদয়গ্রাহী গান গেয়ে সুরের যাদুকর উপাধিতে যে গুণী আখ্যায়িত হয়েছেন, তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একজন খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক। বাঙালী শ্রোতা দর্শকের কাছে তিনি "হেমন্ত মুখোপাধ্যায়" নামেই সু-পরিচিত আর হিন্দি সঙ্গীত জগৎ এ প্রসিদ্ধ "হেমন্ত কুমার" নামে । তাঁর অসাধারণ গায়কী ও সুমধূর কন্ঠের ঔদার্যে তিনি গানের জগতে হয়ে আছেন অমর। বাংলাগানের কালজয়ী এই সুরস্রষ্টা তার অবিস্মরণীয় সুরের আগুন যিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমগ্র বাংলায়, বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র উপমহাদেশে। ৯৪৫সালে বাংলা ছায়াছবি ‘নিমাই সন্ন্যাসীতে প্রথম নেপথ্য গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর গাওয়া অসংখ্য গান এখনো সঙ্গীত বোদ্ধাদের মুখে মুখে ফেরে। কোনো এক গাঁয়ের বঁধুর কথা শোন, পথের ক্লান্তি ভুলে, আজ দু’জনার দু’টি পথ, মুছে যাওয়া দিনগুলি, এই পথ যদি না শেষ হয়, এই রাত তোমার আমার ইত্যাদি আধুনিক গান গেয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সঙ্গীত রসিকদের মন জয় করেছেন। সুরের যাদুকরের আজ ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৯ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হেমন্ত মুখপাধ্যায় ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের পবিত্র শহর বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে হেমন্ত কুমারের পরিবার কলকাতায় আসেন। তার ছোটবেলা কাটে তিন ভাই এক বোন নীলিমার সাথে।বড় ভাই তারাজ্যোতি ছোটগল্প লিখতেন। ছোটভাই , অমল মুখপাধ্যায় কিছু বাংলা ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৬০ এর দশকে কিছু গান ও গেয়েছিলেন। হেমন্ত ভবানিপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ছিলেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু, তিনি সঙ্গীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। সেখানেই তার বাল্যবন্ধু ও কবি সুভাষ মুখপাধ্যায়ের সাথে পরিচয়। প্রথমে তাঁর সাহিত্যিক হবার ইচ্ছে ছিল। কিছুদিন, তিনি দেশএর জন্যে লেখেনও। কিন্তু যাঁর হবার কথা সঙ্গীতশিল্পী, তিনি কি অন্য কোনো কাজে মন বসাতে পারেন! ১৯৩৩ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের সহযোগিতায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র জন্য প্রথম গান ‘আমার গানেতে এল নবরূপী চিরন্তন’ রেকর্ড করেন হেমন্ত। কিন্তু গানটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। শেষতক ১৯৩৭ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি প্রবেশ করেন সঙ্গীত জগতে। এই বছর তিনি নরেশ ভট্টাচার্যের কথা এবং শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে গ্রামোফোন কোম্পানী কলম্বিয়ার জন্য ‘জানিতে যদিগো তুমি’ এবং ‘বলো গো তুমি মোরে’ গান দুটি রেকর্ড করেন। বাল্যবন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাকে গান গাইবার জন্য ইডেন গার্ডেনের স্টুডিওতেও নিয়ে গিয়েছিলেন একবার। এরপর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই তিনি ‘গ্রামোফোন কোম্পানী অফ ইন্ডিয়া’র জন্য গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৪০ সালে, সঙ্গীত পরিচালক কমল দাসগুপ্ত, হেমন্তকে দিয়ে, ফাইয়াজ হাস্মির কথায়ে "কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে" ও "ও প্রীত নিভানেভালি" গাওয়ালেন।

১৯৪১ সালে এই শিল্পী তাঁর প্লে-ব্যাক সংগীত জীবন শুরু করেন ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর থেকেই তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার একজন অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হন। ফলে দর্শক-শ্রোতা একের পর এক কালজয়ী বাংলা গান উপহার পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ‘ইরাদা’ ছবিতে প্লে-ব্যাক করে হিন্দী গানের শ্রোতাদেরকেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন হেমন্ত। একই বছরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রথম নিজের কম্পোজিশনে দুটো গান করেন। গান দুটির গীতিকার ছিলেন অমিয় বাগচী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন। তবে তিনি প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন ১৯৪৪ সালে ‘প্রিয় বান্ধবী’ সিনেমাতে। এছাড়াও কলম্বিয়ার লেবেলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন তিনি। তবে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে হেমন্ত আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ সিনেমার মাধ্যমে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকেই হেমন্ত নিজেকে সম্ভাবনাময় শিল্পী এবং কম্পোজার হিসেবে সবার নজর কাড়েন। সেসময় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে বলিউডি সিনেমা ‘নাগিন’ এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। এই ছবির গান সেসময় দুই বছর ধরে টপচার্টের শীর্ষে অবস্থান করেছিল এবং এই সিনেমার জন্যই হেমন্ত ১৯৫৫ সালে ‘ফিল্মফেয়ার বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর’ এর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি উত্তম কুমারের জন্য চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকেই যেন উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। পরবর্তী সময়ে এই জুটি পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা।

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৪৫ সালে হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের সাথে বেলা মুখপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। ১৯৪৩-এ বাংলা ছায়াছবি, কাশিনাথে, সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক বেলাকে দিয়ে কিছু জনপ্রিয় গান গাইয়েছিলেন, কিন্তু বিবাহের পর তিনি আর সঙ্গীত জগৎ এ প্রবেশ করলেন না। হেমন্তর দুই সন্তান - পুত্র, জয়ন্ত, ও কন্যা, রাণু। রাণু মুখপাধ্যায় ১৯৬০-৭০ এ গান গাইতেন। সঙ্গীতে অবদান রাখার জন্য হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধীতে ভূষিত করে, তিনি এই পদক প্রত্যাখান করেন। ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে এই গানটি শুনিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে যে এই শিল্পীর স্বরলিপি চিরদিনের জন্য খোদাই করা হয়ে গেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি কন্ঠশিল্পি, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সুরের যাদুকর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আজ ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪

মলাসইলমুইনা বলেছেন: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানলাম | উনি যে যাদবপুরে ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তা কখনোই জানতাম না | অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য |

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ মলাসইলমইনা <
জানারতো আসলে শেষ নাই।

২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২০

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট। পড়ে অনেক কিছু জানলাম এই গুণী শিল্পী সম্পর্কে।
আমার শুভেচ্ছা নিন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বরকতউল্লাহ ভাই,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আশা করি আগামীতেও সাথে পাবো।
ভালো থাকবেন।

৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: অসাধারণ কণ্ঠমাধুর্যের অধিকারি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।



ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আবু হেনা ভাই
আপনার কুশল কামনা করছি।

৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুরের যাদুকর, খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।






ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেশ প্রেমিক বাঙালী শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো লাগলো আপনাকে সহযাত্রী হিসেবে পেয়ে।

৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমার প্রিয় একজন

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে সচেতনহ্যাপী

৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:০৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জীবনে হেমন্তের প্রথম যে-গানটি শুনেছিলাম, স্কুলের অনুষ্ঠানে এক জুনিয়র ছাত্রের কণ্ঠে, সেটি হলো - 'শোনো বন্ধু শোনো, শহরের ইতিকথা'। ঐ ছোটো বয়সেই গানের সুর ও কথাগুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করেছিল।

এই সুরের জাদুকরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তাঁর গান ছাড়া কি হয়?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই।
চমৎকার মন্তব্য ও সুন্দর গানের জন্য।

৭| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৫

মিরোরডডল বলেছেন: Hemanto one of my favourites
ei gan gulo shunle abba k mone pore
amar abba anek posondo korto

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.