নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক প্রতিভাবান অভিনেতা ছিলেন বুলবুল আহমেদ। তিনি রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র তিনটি মাধ্যমেই কাজ করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বুলবুল আহমেদের মতো প্রশান্ত সৌম্য চেহারার অভিনেতা আর আসেননি। শ্রুতিমধুর পৌরুষ-দীপ্ত কন্ঠের আভিজাত্য সুদর্শনতার সাথে মানিয়েছিলো খুব। অভিনয়ের সব শাখায় সফল বিচরণ ছিলো তাঁর। দু’শরও বেশি ছবি, অগণিত নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনায় প্রতিভার ছোঁয়া রেখেছিলেন। মৃত্যুতে মানুষের শারীরিক উপস্থিতির অবসান ঘটলেও কর্ম তাকে বাঁচিয়ে রাখে। আর সেই মানুষ যদি হন কীর্তিমান কেউ তাহলে তার এ বেঁচে থাকা হয় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর। তেমনই এক কীর্তিমান মানুষ বুলবুল আহমেদ। দেশীয় চলচ্চিত্র এবং নাট্যাঙ্গনের ডাকসাইটে অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। মহানায়ক খ্যাত ঢাকার ছবির দেবদাস হিসাবে চিরস্মরণীয় এ কীর্তিমানের আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
বুল বুল আহমেদ ১৯৪১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ঢাকার আগামসিহ লেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম তবাররুক আহমেদ, বাবা-মা আদর করে ডাকতেন বুলবুল নামে। বাবা খলিল আহমেদ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি এক সময় মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি অভিনয় করতেন, নাটক রচনা করতেন। বাবার অভিনয় দেখে ছোটবেলা থেকেই বুলবুল আহমেদের অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বুলবুল আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবনে তিনি জড়িত ছিলেন মঞ্চাভিনয়ে। পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৬৫ সালে তিনি চাকরি জীবন শুরু করেন তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বার্ষিক নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের সূত্রেই নাট্যকার-নির্মাতা প্রয়াত আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে বুলবুল আহমেদের পরিচয় ছিল। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘বরফ গলা নদী’ ছিল বুলবুল আহমেদের প্রথম টিভি নাটক। এরপর নিয়মিত তিনি নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। সে সময় তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘মালঞ্চ’, ‘ইডিয়ট’, ‘মাল্যদান’, ‘বড়দিদি’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘শেষ বিকালের মেয়ে’ প্রভৃতি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম পরিচালিত ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। এরপর তিনি অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য কয়েকজন বন্ধু মিলে জীবন নিয়ে জুয়া নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন। ছবিটি ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় এবং তিনি অভিনেতা হিসেবে দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগাতে সক্ষম হন। তার পর্দা উপস্থিতি প্রশংসিত হওয়ায় ১০ বছরের ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলচ্চিত্রকে পথ চলার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন তিনি। অভিনয় করেন ‘অঙ্গীকার’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘দি ফাদার’, ‘মহানায়ক’, ‘বধূবিদায়’ প্রভৃতি ছবিতে ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ১৯৮২ সালে তিনি দেবদাস ছবিতে দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেন বুলবুল আহমেদ। তার পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ‘ওয়াদা’, ‘ভালো মানুষ’, ‘মহানায়ক’, ‘রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কতো যে আপন’ প্রভৃতি। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টিভি নাটকেও বুলবুল আহমেদ অভিনয় চালিয়ে যান। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে তিনি দারুণ প্রশংসিত হন। নব্বইয়ের দশকে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে টিভি নাটকে নিয়মিত হন। ৪৪ বছরের শিল্পী জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় ৩০০ নাটক আর দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। পারিবারিক জীবনে বুলবুল আহমেদ ছিলেন বেশ সুখী। স্ত্রী ডেইজি আহমেদ আর তিন সন্তান- ঐন্দ্রিলা, তিলোত্তমা ও ছেলে শুভকে নিয়ে ছিল তার সাজানো সংসার।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে চার বার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। পরিচালক হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। তাঁর পরিচালিত রাজলক্ষী শ্রীকান্ত এই চলচ্চিত্রটি ১৩টি শাখায় বাচসাস পুরষ্কার লাভ করেছিল। ২০১০ সালের ১৪ই জুলাই দিবাগত রাত ১টায় অর্থাৎ ১৫ই জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এই গুনী অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯। মহানায়ক বুলবুল আহমেদকে অন্তিম শয্যায় শায়িত করা হয় বাবা-মায়ের কবরের পাশে আজিমপুর গোরস্তানে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ডেইজি আহমেদ, দুই মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভসহ অনেক ভক্ত রেখে গেছেন। মহানায়ক খ্যাত অভিনেতা বুল বুল আহমদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৯
কথার ফুলঝুরি! বলেছেন: অনেক অনেকদিন পর এই মহানায়কের ছবি দেখলাম। আমার খুবই প্রিয় একজন অভিনেতা।
মৃত্যুবার্ষিকী তে শ্রদ্ধাঞ্জলি তাঁর প্রতি।
৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: প্রিয় নায়কের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো অভিনেতা।
৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৪:২০
জগতারন বলেছেন:
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বুলবুল আহমেদের মতো প্রশান্ত সৌম্য চেহারার অভিনেতা আর আসেননি।
শ্রুতিমধুর পৌরুষ-দীপ্ত কন্ঠের আভিজাত্য সুদর্শনতার সাথে মানিয়েছিলো খুব।
বুলবুল আহমেদ-এর সুন্দর অভিনয় আমার খুব ভালো লাগতো।
মহানায়ক খ্যাত অভিনেতা বুল বুল আহমদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
রাকু হাসান বলেছেন: উনার অভিনয় ভাল লাগতো ,আল্লাহ্ তাকে শান্তি দান করুক