নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
জাতীয়তাবাদী চিন্তাবিদ,শিক্ষাবিদ, ও সাহিত্যিক রাজনারায়ন বসু। কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের খ্যাতনামা উকিল, কঠ, কেন, মুণ্ডক ও শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য বিখ্যাত রাজনারায়ন বসু ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের রক্ষণশীল ঘরানার ভারতীয় বাঙালি চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সামালোচক। এ জন্যে মাইকেল মধুসূধন দত্ত তাঁর বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। বস্তত, তিনি তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, রাজনারায়ণ সমকালীন যেকোনো বাঙালির চেয়ে সাহিত্যের অনেক ভালো বিশ্লেষক ছিলেন। তা ছাড়া, মাইকেল স্বীকার করেন যে, রাজনারায়ণের সমালোচনার প্রভাব তাঁর কবিতার ওপর পড়েছিল। এছাড়াও তিনি মন মাতানো বক্তা ছিলেন। বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর শ্রোতাদের অনেককেই জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তাঁর হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠতা নামে বক্তৃতায় (১৮৭৩) তিনি হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেন, একই সঙ্গে পাশ্চাত্য-বিরোধী মনোভাবও প্রকাশ করেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো : দেবেন্দ্রনাথ সাধারণত কোনো জনসভায় না গেলেও তিনি এই বক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন। ১৮৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনারায়ণ বৃদ্ধ হিন্দুর আশা নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তাতে তিনি সমগ্র ভারতবর্ষের হিন্দুদের একত্রিত করে একটি সংগঠনের অধীনে আনার আবেদন জানিয়েছিলেন। দেশাত্মবোধ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তায় আগাগোড়া নিমজ্জিত রাজনারায়ণ বসু মেদিনীপুরে ‘জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা’ এবং বেশ কয়েক বছর পরে কলকাতায় সঞ্জীবনী সভা নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্বাজাত্যবোধ এবং জাতীয়তাবোধ উদ্রেক করার জন্যে নবগোপাল মিত্র কর্তৃক স্থাপিত হিন্দু মেলাতেও তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। তরুণ রবীন্দ্রনাথসহ দেবেন্দ্রনাথের অন্য পুত্ররাও এ সভার সঙ্গে যুক্ত হন। বিখ্যাত ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর সঙ্গেও তার ছিলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের খ্যাতনামা উকিল রাজনারায়ন বসু ১৮২৬ সালের আজকের দিনে কলকাতার মেদদিনীাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ সাহিত্যিক রাজনারায়ন বসুর আজ ১৯২তম জন্মবার্ষিকী। নব জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ রাজ নারায়ণ বসুর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
রাজনারায়ণ বসু ১৮২৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চব্বিশপরগনার মেদেনীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নন্দকিশোর রামমোহন রায়। রাজনারায়ণ তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। পরে কলকাতার হেয়ার স্কুল এবং হিন্দু কলেজে (১৮৪০-৪৫) পড়েন। এ সময় মেধাবী ছাত্র হিসেবে হিন্দু কলেজের উচ্চতর বৃত্তি লাভ করেন। তবে ছাত্রজীবনে পানাসক্তি থেকে অসুস্থ হয়ে কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন। একই সময়ে ধর্মের স্বরূপ নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েন। ১৮৪৫ সালের ডিসেম্বরে বাবা মারা গেলে রাজনারায়ণের চিন্তাগত দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। পরের বছরের শুরুতে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন। ব্রাহ্মসমাজের নারীদের উপাসনার সময়ে প্রকাশ্যে পুরুষদের সঙ্গে একত্রে বসা উচিত কিনা, এ প্রশ্নে ব্রাহ্মসমাজ যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন কেশব সেন পরিচালিত অংশ নববিধান ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়। আর দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বাধীন মূল রক্ষণশীল অংশের নাম হয় আদি ব্রাহ্মসমাজ। এতে রাজনারায়ণ কিছুকাল প্রধান আচার্য হিসেবে নেতৃত্ব দেন। রাজনারায়ন বসুর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমূহঃ ১। হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা (১৮৭৩), ২। সে কাল আর এ কাল (১৮৭৪), ৩। হিন্দু অথবা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইতিবৃত্ত (১৮৭৬), ৪। বাঙ্গলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা (১৮৭৮), ৫। বিবিধ প্রবন্ধ (১৮৮২) এবং ৬। বৃদ্ধ হিন্দুর আশা (১৮৮৭)। তার মৃত্যুর ১০ বছর পর তার আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত’ প্রকাশিত হয়।
পাশ্চাত্য প্রভাবিত ও ইয়ংবেঙ্গল দলের সদস্য হিসেবে পরিচিত হলেও পরে জাতীয়তাবাদীতে পরিণত হন রাজনারায়ন বসু। এ ব্যাপারে দেবেন্দ্রনাথের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তার বন্ধু। তিনি রাজনারায়ণকে উপনিষদের ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে ব্রাহ্মসমাজের কাজে নিয়োগ করেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তা নিয়ে তিনি মেদিনীপুরে ‘জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা’ এবং বেশ কয়েক বছর পর কলকাতায় ‘সঞ্জীবনী সভা’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্বাজাত্যবোধ এবং জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার জন্যে নবগোপাল মিত্র স্থাপিত হিন্দু মেলাতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তরুণ রবীন্দ্রনাথসহ দেবেন্দ্রনাথের অন্য পুত্ররাও এ সভার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রায় দুই বছর এখানে কাজ করেন। ১৮৪৯ সালের মে মাসে সংস্কৃত কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৮৫১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেদিনীপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৬৮ সালে অসুস্থতার কারণে সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। রাজনারায়ণ হিন্দু সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিধবা বিবাহের সমর্থকদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি ‘মদ্যপান নিবারণী সভা’ গঠন করেন। মেদিনীপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয়, একটি গ্রন্থাগার, একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ও বির্তক সভা স্থাপন করেন। ১৮৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনারায়ণ ‘বৃদ্ধ হিন্দুর আশা’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তাতে ভারতবর্ষের হিন্দুদের একত্রিত করে একটি সংগঠনের অধীনে আনার আবেদন জানান। জীবদ্দশায় এ প্রতিষ্ঠান গঠিত না হলেও তার মৃত্যুর পর মোটামুটি একই উদ্দেশ্য নিয়ে হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯০৬)।
রাজনারায়ন বসু ছিলেন ভগবদ্ভক্ত, অনেকে তাকে ‘ঋষি’ বলতেন। নব জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ, সমাজ-সংস্কারক ঋষি রাজনারায়ণ বসু ১৮৯৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আজ সাহিত্যিক রাজনারায়ন বসুর আজ ১৯২তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয়তাবাদী চিন্তাবিদ,শিক্ষাবিদ, ও সাহিত্যিক রাজ নারায়ণ বসুর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১০
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর স্থাপনা।