নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণেতা দীনেশচন্দ্র সেন এর ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫২


শিক্ষাবিদ, গবেষক, লোক-সাহিত্যবিশারদ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার দীনেশচন্দ্র সেন। তিনি ছিলেন বাঙালি সংস্কৃতির এক প্রকৃত সাধক। অখণ্ড বাংলার ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং জীবন নিয়েই ছিল তাঁর আমৃত্যু গবেষণার আরাধনা। এই অখণ্ডতাকে সামগ্রিক করে তোলার জন্য তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল এ অঞ্চলের ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর ওপর। কারণ তারাই বাংলার আত্মাকে প্রকৃত অর্থে ধারণ করেছে। এই অনার্য ব্রাত্যদের অধিকাংশেরই বসবাস ছিল পূর্ববঙ্গে। ফলে পূর্ববঙ্গকে মন্থন করেই তিনি উদ্ধার করেছেন সেই অমৃত, যার মধ্যে সংগুপ্ত রয়েছে ইতিহাসের প্রকৃত সত্য। বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ। ফলে বাঙালিত্ব আর হিন্দুত্বকে তিনি কখনো এক করে দেখেননি।শাস্ত্রীয় সংকীর্ণতার পরিবর্তে ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে উদার মনোভঙ্গি সক্রিয়, তা তাকে জাতপাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে প্রকৃত মানবিক ও সেক্যুলার হতে সহায়তা করেছে। ফলে এ অঞ্চলের অনার্য মানুষ বারবার ধর্মান্তরিত হলেও তার মধ্যে বজায় থেকেছে উদার মানবিক অসাম্প্রদায়িক চেতনা। পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা সংকলন ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে যে কৃতিত্বের পরিচয় তিনি দেন, তা এককথায় অসাধারণ। কিন্তু এর পেছনে তাঁর যে মনোভঙ্গি সক্রিয়, সেটি প্রায়ই অনালোচিত থেকে যায়। স্মরণীয় যে, ঔপনিবেশিক শাসন উপনিবেশিত মানুষের মধ্যে যে হীনম্মন্যতার জন্ম দিয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্যই স্বাজাত্যবোধে উদ্বুদ্ধ এ দেশের শিক্ষিত মানস নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্বরূপ অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হয়। এই স্পৃহাই দীনেশচন্দ্র সেনকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় গ্রামাঞ্চল মন্থন করে প্রাচীন পুঁথি আবিষ্কারের কঠিন শ্রমে ব্রতী হওয়ার প্রেরণা জোগায়। ওই গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি এই সত্যে উপনীত হন যে, অখণ্ড বাংলার ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যেও পূর্ববঙ্গের রয়েছে ভিন্নতর বৈশিষ্ট্য। বাংলার পূর্ব অঞ্চলে অধিক হারে নিম্নবর্গীয় অনার্য জনগোষ্ঠীর বসবাসসূত্রে এখানেই প্রকৃত প্রাণস্পন্দিত সাহিত্যের চর্চা অনেক বেশি বেগবান ছিল। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যেমন প্রতিনিয়ত সংগ্রামমুখর, তেমনি সহজ-সরল, জটিলতামুক্ত, উদার চেতনায় স্বচ্ছ ও ঋদ্ধ। ধর্মতান্ত্রিক সংকীর্ণতা তাদের জীবনকে কলুষিত কিংবা মানবিক আবেগশূন্য করেনি। ফলে মধ্যযুগীয় পটভূমিতেও এই অঞ্চলেই সৃষ্টি হতে পেরেছে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে ধর্মাচ্ছন্নতামুক্ত মানবিক প্রেমের আখ্যানমূলক গীতিকাসমূহ। সাহিত্য ও গবেষণায় অবদানের জন্য দীনেশচন্দ্র সেন ১৯২১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক ‘রায়বাহাদুর’ উপাধি পান। একই সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে এবং ১৯৩১ সালে তিনি জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন। আজ এই সাধকের ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

দীনেশচন্দ্র সেন ১৮৬৬ সালের ৩ নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার সুয়াপুর গ্রামে। পিতা ঈশ্বরচন্দ্র সেন মানিকগঞ্জ আদালতের উকিল ছিলেন। তার মায়ের নাম রূপলতা দেবী। দীনেশচন্দ্র সেন জগন্নাথ স্কুল থেকে এনট্রান্স (১৮৮২), ঢাকা কলেজ থেকে এফ.এ (১৮৮৫) পাস করেন। এ সময় পিতা-মাতার মৃত্যুর কারণে তিনি বহিরাগত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে ১৮৮৯ সালে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় সিলেটের হবিগঞ্জ স্কুলে (১৮৮৭)। পরে তিনি কুমিল্লার শম্ভুনাথ ইনস্টিটিউশন (১৮৮৯) ও ভিক্টোরিয়া স্কুল (১৮৯০)-এর প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন। কিশোর বয়স থেকে দীনেশচন্দ্র সেন সাহিত্য-অনুরাগী ছিলেন। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ কুমার ভূপেন্দ্রসিংহ (১৮৯০)। এটি একটি আখ্যান কাব্য। দেশের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর গভীর মমতা। এ মমতা তাঁকে দেশপ্রেম, কবিবন্দনা এবং অতীতের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। কুমিল্লায় অবস্থানকালে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুথি সংগ্রহ করেন। ব্যাপক শ্রমসাধ্য এ কাজে তিনি গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন এবং দীর্ঘ সময়ের গবেষণায় কুমিল্লা থেকে ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বঙ্গভাষা ও সাহিত্য শীর্ষক একটি আকরগ্রন্থ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের ওপর এটি একটি সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণাগ্রন্থ যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ সমকালের পন্ডিতদের প্রশংসা লাভ করে। এ অসাধারণ গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় দীনেশচন্দ্র সেন এ বিষয়ে পথিকৃৎ-এর সম্মান ও পান্ডিত্যের স্বীকৃতি লাভ করেন। সৃজনশীল লেখক হিসেবেও দীনেশচন্দ্র সেন পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলা সাহিত্য বিষয়ে গবেষণামূলক ও ইতিহাসধর্মী গ্রন্থ প্রণয়ন, পৌরাণিক আখ্যান রচনা, লোকসাহিত্য সম্পাদনা ও বাঙালির ইতিহাস প্রণয়নের পাশাপাশি তিনি রচনা করেন কবিতা, উপন্যাস ও গল্প। সব মিলে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৬০। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ বঙ্গ-সাহিত্য পরিচয় (দুই খন্ড, সম্পাদনা: ১৯১৪), The Vaisnava Literature of Medieval Bengal (১৯১৭), Chaitanya and his Companions (১৯১৭) The Folk Literature of Bengal (১৯২০), The Bengali Ramayana (১৯২০), Bengali Prose Style : ১৮০০-১৮৫৭ (১৯২১), সরল বাঙ্গালা সাহিত্য (১৯২২), ঘরের কথা ও যুগসাহিত্য (১৯২২), Glimpses of Bengal Life (১৯২৫), বৃহৎ বঙ্গ (দুই খন্ড, ১৯৩৫), আশুতোষ-স্মৃতিকথা (১৯৩৬), বাংলার পুরনারী (১৯৩৯), প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান (১৯৪০)।

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের লেখকরা হিন্দু-মুসলমান ব্যবহার করতেন। কিন্তু ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে আসেন। তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দীনেশচন্দ্র সেন ব্যতিক্রম । তিনি রেনেসাঁর পথ অবলম্বন করেছেন। তাই তিনি সাম্প্রদিকতা পথে না হেঁটে বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য খুঁজে বের করছেন।বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসার ফল বৃহৎ বঙ্গ। এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস। ঘরের কথা ও যুগসাহিত্য গ্রন্থটি দীনেশচন্দ্র সেনের আত্মজীবনী। বাংলা জীবনী সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর এ গ্রন্থের মূল্য স্বীকার্য। তিনি এ গ্রন্থে নিজের বেড়ে ওঠা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতসহ তাঁর সাহিত্যিক জীবনের কথা অত্যন্ত সরল ও মনোহর ভাষায় বিবৃত করেন।চিন্তা ও চেতনায় অনগ্রসর মুসলিম সমাজের সাংস্কৃতিক অবদানকে দীনেশচন্দ্র সেন অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করেন তাঁর প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান শীর্ষক গ্রন্থটিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের অবদান অনেক ক্ষেত্রে অগ্রবর্তীর, ভুলে যাওয়া উচিত নয় এ সত্য-এ হচ্ছে তাঁর উল্লিখিত গ্রন্থটির প্রধান বক্তব্য। দীনেশচন্দ্র সেনের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। তিনি শুধু নিজে বাংলা সাহিত্যের শেকড়ের সন্ধানই করেননি অন্যদের দিয়েও সন্ধান চালিয়েয়েন। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অপরিসীম। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করেছিলেন। ১৯৩৯ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতার বেহালায় তাঁর মৃত্যু হয়। আজ এই সাধকের ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্ম নুরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: দীনেশচন্দ্র সেন সম্পর্কে আমি জানি। বাংলা একাডেমি তাকে নিয়ে লিখেছেন। আমি পড়েছি।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ নূর ভাই
অন্তত এই গুণী ব্যক্তি সম্পর্কে
জনার জন্য।
পড়ুন আরো, জানুন বেশী!

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩০

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: যারা বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করেন তারা এই মহান মানুষের ইতিহাস পড়ে গর্ব বোধ করেন। আসলেই এরা আমাদের জন্য অনেক রত্ন রেখেগেছেন।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ তাজুল ভাই
চমৎকার মন্তব্য প্রদানের জন্য।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ মাহমুদুর ভাই
আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.