নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু সংগঠক, লেখক ও সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২২


প্রতিষ্ঠিত লেখক, আলোকিত মানুষ, সাংবাদিক ও সংগঠক রোকনুজ্জামান খান। ছেলেবুড়ো সবার কাছে যিনি দাদা ভাই নামেই সম্যক পরিচিত ছিলেন। মানুষ গড়ার কারিগর দাদা ভাই গড়তেই ভালোবাসতেন তাই গড়তেই শিখেছিলেন। অন্য কোন লোভ-লালসা, পদমর্যাদা, অর্থ-বিত্ত তাঁকে কখনও স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ছিল একটি শিশুকে কিভাবে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা যায়। শিশুদের চিত্তবৃত্তির উন্মেষ ও প্রতিভার বিকাশে তিনি নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন। রোকনুজ্জামান খান নিজে অনেক কবিতা ও ছড়া লিখেছেন এবং শিশুদের লেখা সংশোধন ও সম্পাদনা করে পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তি্নি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের পরিচালক। তাঁর সম্পাদিত আমার প্রথম লেখা (১৯৫৭) গ্রন্থে বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও লেখকদের সেসব লেখা স্থান পেয়েছে, যেগুলি কচি-কাঁচার পাতায় প্রথম মুদ্রিত হয়েছে।
"বাক বাক্‌ কুম পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি, চড়বে সোনার পালকি"

তাঁর অসামান্য শিশুতোষ ছড়া হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। হাট্টিমাটিম টিম, খোকন খোকন ডাক পাড়ি, আজব হলেও গুজব নয় প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর সম্পাদিত ঝিকিমিকি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিশুসংকলন ৷ এসব রচনার মাধ্যমে তিনি কোমলমতি শিশুদের মনে নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম ও চারিত্রিক গুণাবলি জাগ্রত করার চেষ্টা করেন ৷ এছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেছেন - আমার প্রথম লেখা, বার্ষিক কচি ও কাঁচা, ছোটদের আবৃত্তি ইত্যাদি পুস্তক। সৃজনশলতার উজ্জ্বল নক্ষত্র রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এর আজ ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আলোকিত মানুষ, সাংবাদিক ও সংগঠক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

দাদা ভাই রোকনুজ্জামান খান ১৯২৫ সালের ০৯ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার পাংশায় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মোখাইর উদ্দীন খান। মায়ের নাম রাহেলা খাতুন। তার পৈত্রিক বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার ভবানীপুর গ্রামে। সেকালের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদক রওশন আলী চৌধুরী ও এয়াকুব আলী চৌধুরী ছিলেন দাদাভাইয়ের নানা। শৈশবে মাকে হারিয়ে নানা বাড়িতে তিনি বড় হন এবং পাংশা জর্জ স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি কলকাতা চলে যান এবং কলকাতায় মুকুল আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই ১৯৪৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতার দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৪৮ সালে আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ইত্তেহাদ পত্রিকার 'মিতালী মজলিস' নামীয় শিশু বিভাগের দায়িত্ব লাভের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে শিশু সওগাত পত্রিকায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে দৈনিক মিল্লাতের কিশোর দুনিয়া'র শিশু বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগ দিয়ে তরুণ সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তিনি মৃত্যুর আগমূহুর্ত পর্যন্ত এই পত্রিকায় কাজ করেন। ২রা এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের উপযোগী কচিকাঁচার আসর বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন এবং আসর পরিচালকের নামকরণ করা হয় দাদাভাই। সেই থেকে তিনি নতুন পরিচয় পান দাদাভাই। তাঁর পরিচিতিতেই ছোটদের উপযোগী করে এই পত্রিকায় লিখতেন সুফিয়া কামাল, আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন, শওকত ওসমান, আহসান হাবীব, ফয়েজ আহমেদ, হোসনে আরা, নাসির আলী, হাবীবুর রহমানসহ বিখ্যাত অনেক লেখক। দৈনিক ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর বিভাগের পরিচালক হিসেবে নিরলসভাবে আমৃত্যু কাজ করেছেন।

এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ‘কচি কাঁচা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৬৫ সালে তাঁর হাতে গড়া কঁচি-কাঁচার মেলা আজ বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ শিশু-কিশোর সংগঠন। আমৃত্যু তিনি সন্তানের মতো সংগঠনটিকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন । শিশুরা সেরা মানব সম্পদ, শিশুরা স্বর্গের দেবদূত। এদের মানুষ গড়ার কারিগর এই দাদাভাই। শৈশব থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিলো শিশুদের জন্য একটি স্বর্গ-উদ্যান তৈরি করা। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সে স্বপ্ন সফল হয়েছে বলতে হবে। হাজারো সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকে সেই রূপালী স্বপ্ন সফল করে তোলা কঠিন ব্যাপার। দাদাভাই এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরলসভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, লাখো লাখো শিশু-কিশোরকে স্বর্গের আলোকে আলোকিত করেছেন। তাঁর মতো একজন দক্ষ ও শিশু দরদী মানুষ এদেশে কম জন্মগ্রহণ করেছেন। সারাটি জীবন তিনি শিশুদের নিয়েই চিন্তাভাবনা করেছেন। তাঁর হাতে গড়া শিশুরা আজ জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমৃত্যু তিনি আগামী দিনের শিশুদের নিয়ে চিন্তা করেছেন। আজকের বাংলাদেশ শিশু একাডেমী তাঁরই প্রস্তাবে গড়া। দাদাভাই কচিকাঁচার মেলা ব্যতীত বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি, শিশু একাডেমী, শিশু কল্যাণ পরিষদ বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। সৃজনশীল ও সাংগঠনিক কর্মের পুরস্কারস্বরূপ রোকনুজ্জামান খান বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮), শিশু একাডেমী পুরস্কার (১৯৯৪), একুশে পদক (১৯৯৮), জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও রোটারি ফাউন্ডেশন ট্রাস্টির পল হ্যারিস ফেলো সম্মানে ভুষিত হন ৷ শিশু সংগঠনে অসামান্য অবদান রাখায় রোকনুজ্জামান খান ২০০০ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (মরনোত্তর) ভূষিত হন।

পারিবারিক জীবনে দাদাভাই ছিলেন দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী ব্যাক্তিত্ব ‘বেগম’ সম্পাদক নূরজাহান বেগম, যিনি দেশের সকলের কাছে সুপরিচিত। তাঁর শ্বশুর সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ছিলেন প্রখ্যাতজন। ছোটদের প্রিয় রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ১৯৯৯ সালের ০৩ ডিসেম্বর সবাইকে ছেড়ে চলে যান সেই অচেনা এক দেশে। যে দেশ থেকে কেউই আর কখনই ফেরে না। আজ দাদাভাই নেই কিন্তু তাঁর মেধা ও বিবেক যে-কজন মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন, পরবর্তীকালে সেই গুণী মানুষগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আজকের দেশ জুড়ে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরেণ্য অথবা সম্মানের সাথে কাজ করে যাচ্ছে তাদের পেশায় বিশেষভাবে সাহিত্য ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বরেণ্য ব্যক্তিরা কোনো না কোনোভাবে সান্নিধ্য পেয়েছেন এই গুণী মানুষটির। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের সদস্য ছিলেন। এ রকম হাজারো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সত্ ও নিষ্ঠার সাথে এখনও অনেক সামাজিক ও রাষ্ট্রিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে দাদাভাইকে আজ আর কেউ স্মরণ করে না। যারা তাঁকে অবহেলা করছেন তাঁরাই একদিন নিশ্চিহ্ন হবেন। আর দাদাভাই আমাদের মাঝে থাকবেন চিরকাল, চিরদিন, চিরঞ্জীব হয়ে। কেউ স্মরণে রাখুন বা নাই রাখুন আজ ছেলেবুড়ো সবার প্রিয় দাদাভাইয়ের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মানুষ গড়ার আলোকিত মানুষ রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

নুর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: কচি কাঁচার আসর....

শিশুদের জন্য অনেক কিছু করেছেন উনি....

তাঁর জন্য রলো শ্রদ্ধা

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে আর্কিওপটেরিক্স
সাথে থেকে গুণী জনদের সম্মান জানানোর জন্য।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৭

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: গুণীজনরাই সমাজের আলো সমাজের আশা....
তাঁদের জীবন থেকে অনেক কিছু শেখা যায়....

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আর্কিওপটেরিক্স
মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইলো।

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:২২

বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা।



খুব সুন্দর করে আলোকপাত করেছেন প্রিয় ভাই।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে
গুণীমানুষদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: উনি শিশুদের খুব ভালোবাসতেন।
ভালো লোক।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যারা শিশুদের ভালোবাসতে জানে
তারা অবশ্যই ভালো লোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.