নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত সাহিত্যিক, সাংগঠনিক ও লেখক বাংলার নারী জাগরণের পুরোধা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪


নারীদের স্বাতন্ত্র ও অনুকরণীয় পরিচিতি প্রতিষ্ঠার জন্য যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন তিনি মুসলিম নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া। বর্তমান আধুনিক নারী সমাজ সৃষ্টিতে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদান অসামান্য। একবিংশ শতাব্দীর দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্যের শেকড় উপড়ে ফেলে সমতা, উন্নয়ন এবং শান্তি অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী যে যুগের দাবি আমরা শুনতে পাই তা বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল বেগম রোকেয়ার লেখনীতে। তিনি সবসময় বালিকা বা কন্যাশিশুর অধিকারের কথা বলেছেন। তিনি নারী শিক্ষাকে কখনো পুঁথিগত জ্ঞান অর্জনের মাঝে দেখতে চাননি। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন রাতারাতি কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে নারী সমাজ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। তিনি বলেন, "মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে তাহারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারীরূপে পরিচিত হইতে পারে।" এজন্য প্রয়োজন শিক্ষা। তিনি তার সাহসী লেখনীর মাধ্যমে নারী সমাজকে সংগঠিত করে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ডাকই দেননি, প্রস্তুত করার দায়িত্বও নিয়েছেন। বেগম রোকেয়া শুধু একজন সমাজ সংস্কারক বা কর্মী ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন অসাধারন সাহিত্যিক। নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি সাহিত্যপত্রে তাঁর বঙ্গগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও রসরচনা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সব ধরনের লেখাতেই ফুটে উঠেছে নারীদের সমস্যার কথা। মাত্র ৫২ বছরের ব্যবধানে ১৮৮০ সালের এই দিনে তার জন্ম এবং ১৯৩২ সালের একই দিনে তার মৃত্যু হয়। আজ তার ১৩৮তম জন্মবার্ষিকী এবং ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ক্ষন জন্মা এই মহিয়সী বাঙ্গালি সাহিত্যিক, নারী আন্দোলনের অগ্রদূত ও সমাজ সংস্করক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম-মৃত্যুবাষিকীতে আমাদের শুভেচ্ছা ও গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তাঁর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আর তিন ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যায়। তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান। ১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট উর্দুভাষী ও বিপত্মীক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বেগম রোকেয়া। বিয়ের পর তিনি 'বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন' নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনা মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন। স্বামীর উৎসাহ ও প্রেরণায় বাংলা ও ইংরেজী উত্তমরুপে আয়ত্ত করেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। অল্প বয়সেই স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় বেগম রোকেয়া সম্পূর্ণ একা হয়ে হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি সমাজসেবা ও সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। সৈয়দ সাখাওয়াত হেসেনের মৃত্যুর পাঁচ মাস পর স্বামীর জন্মস্থান ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১০ সালে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার ফলে স্কুল বন্ধ করে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং ১৯১১ সালের ১৫ই মার্চ তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল পুণরায় চালু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় এখানে ছাত্রী ছিল মাত্র ৮ জন। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪-তে। ১৯৩০ সালের মাঝে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়। স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন বেগম রোকেয়া। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা Sultana’s Dream। যার অনূদিত রূপের নাম সুলতানার স্বপ্ন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হলঃ পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। তাঁর প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর রচনা দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন, শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে নারী মুক্তি আসবে না - তা বলেছেন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি রয়েছে। স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়

২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের একমাত্র পুর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর ২০০৯ সালে 'নারী জাগরণের অগ্রদূত' হিসেবে তাঁর নামকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। এছাড়াও, মহিয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চীরস্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য "রোকেয়া হল" নামকরণ করা হয়। ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক, বাঙ্গালী নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের ১৩৮তম জন্ম ও ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসম্বের তার জন্ম এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। বাঙ্গালি সাহিত্যিক, নারী আন্দোলনের অগ্রদূত ও সমাজ সংস্করক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম-মৃত্যুবাষিকীতে আমাদের শুভেচ্ছা ও গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নুরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: মহীয়সী নারী....

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মহীয়সী নারী
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের
জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা
জানানোর জন্য।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
রোকেয়া সব সময়ই প্রাসঙ্গিক।

গভীর শ্রদ্ধাঞ্চলি।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ সরকার ভাই
শুভেচ্ছা আপনার জন্য।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪১

ফেনা বলেছেন: ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত সাহিত্যিক, সাংগঠনিক ও লেখক বাংলার নারী জাগরণের পুরোধা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ফেনা ভাই
লেখাটি আপনার অনলাইন পোর্টালে
স্থান দেবার জন্য। তবে লিংকটি সহজে কাজ করেনা।
বিকল্প পথে দেখতে হয়।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: ওয়ান্ডারফুল লেডী।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ রাজীব ভাই
মন্তব্য প্রদানের জন্য।

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০০

নজসু বলেছেন:


শ্রদ্ধা।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সুজন ভাই
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ
মহীয়সী নারীকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৪

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: তিনি আমাদের সকল নারী জাতির এক বিশাল অনুপ্রেরণা।
ধন্যবাদ আপনাকে।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.