নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩


বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, হলিউড সিনেমার প্রথম থেকে মধ্যকালের বিখ্যাততম শিল্পীদের অন্যতম ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন। ১৮৮৯ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ফিল্মের জন্য ক্যামেরা আবিষ্কার করলেন। পৃথিবী জুড়ে হৈ হৈ শুরু হয়ে গেলো। একই বছরে অস্ট্রিয়ায় জন্ম নিলো পৃথিবীর নির্মম ঘাতক হিটলার। সে বছরই আরেক শিশু জন্ম নেয়, যে কিনা পৃথিবীর মানুষকে হাসাতে হাসাতে লুটোপুটি খাইয়ে ইতিহাসের সেরা কৌতুক অভিনেতা এবং নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। সেই মানুষটির নাম ‘চার্লি চ্যাপলিন’। প্রকৃতি যেন নিজের জন্যই এই কাকতালীয় ঘটনাটির সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। যদি ক্যামেরা না হতো তাহলে পৃথিবীর ইতিহাসে চলচ্চিত্র বলে কোনো কিছুর উদ্ভব হতো না এবং চ্যাপলিনও পৃথিবীর মানুষকে হাসাতে পারতেন না। আবার যদি হিটলার পৃথিবীতে না জন্মাতো তাহলে ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদও জানাতে পারতেন না পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক ও বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম পুরুষ স্যার চার্লস স্পেন্সর চ্যাপলিন। চলচ্চিত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও বিশ্ব বরেণ্য কৌতুকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের আজ ৪১তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ১৯৭৭ সালের আজকের দিনে তিনি সুইজারল্যান্ডের ভেভেতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

১৮৮৯ সালের ১৬ই এপ্রিল লণ্ডনের লন্ডনের ইষ্ট স্ট্রিট ওয়ালওয়ার্থে জন্ম গ্রহণ করেন পৃথিবী বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চার্লি চ্যাপলিন (Charlie Chaplin)। তার পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র,। চার্লি চ্যাপলিন জন্ম নিয়ে সর্বদাই কুয়াশা রয়েছে। চার্লি চ্যাপলিনের কোনো বৈধ জন্ম প্রমানপত্র পাওয়া যায়নি। সংবাদ মাধ্যম নানা সময়ে নানারকম তথ্য দিয়েছে তার জন্মস্থান সম্পর্কে। এমনকি চলচ্চিত্র জীবনের প্রথমদিকে চ্যাপলিন নিজেও একবার বলেছেন যে তিনি ফ্রান্সের ফঁতেউব্ল শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৯১ সালের আদমসুমারী থেকে জানা যায় যে চার্লি তার মা হান্নাহ চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সাথে ওয়ালওয়ার্থ, দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটন জেলার অন্তর্গত। ইতিমধ্যে তার পিতা চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়ারের সাথে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। চ্যাপলিনের শৈশব কাটে প্রচন্ড দারিদ্র আর কষ্টের মাঝে। তাই হয়তো তিনি উপলদ্ধি করতেন দেওয়া ও পাওয়াতে কী আনন্দ। তিনি একটা কথা প্রায়ই বলতেন যে, বৃষ্টিতে হাঁটা খুবই ভালো কারণ এই সময় কেউ তোমার চোখের অশ্রু দেখতে পায় না"। অত্যধিক দারিদ্রই চ্যাপলিনকে শিশু বয়সেই অভিনয়ের দিকে ঠেলে দেয়। তার মা-বাবা দুজনেই মঞ্চের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তাই এই পেশাতে আসাটা তাঁর কাছে সহজ ছিল। চ্যাপলিন সেইসময়ের জনপ্রিয় লোকদল “জ্যাকসন্স এইট ল্যাঙ্কাসায়ার ল্যাডস” এর সদস্য হিসাবে নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৪ বছর বয়সে তিনি উইলিয়াম জিলেট অভিনীত শার্লক হোমস নাটকে কাগজওয়ালা বিলির চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সুবাদে তিনি ব্রিটেনের নানা প্রদেশে ভ্রমণ করেন ও অভিনেতা হিসাবে তিনি যে খুবই সম্ভাবনাময় তা সবাইকে জানিয়ে দেন ।

১৯১৪ সালে তাঁর নিজের সৃষ্ট দ্য ট্রাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি দিয়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন চার্লি চ্যাপলিনে। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে মানুষকে হাসানোর মত দূরহ কাজটি শুধুমাত্র অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যিনি করতেন অত্যন্ত সফলভাবে। সাদাসিধা ভবঘুরে একটা মানুষ, যার পরনে নোংরা ঢিলেঢালা প্যান্ট, শরীরে জড়ানো জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো মতো হ্যাট আর হাতে লাঠি। যে ব্যাপারটি কারও চোখ এড়ায় না তা হচ্ছে লোকটার কিম্ভুত আকৃতির গোঁফ। লোকটা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে আর ঘটাচ্ছে অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা। আর এসব দেখেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে বিশ্বের কোটি মানুষ। দ্যা ট্রাম্প চলচ্চিত্র খুঁজে পেয়েছিলো সর্বকালের সেরা শোম্যানকে। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগালে “শার্লট” নামে পরিচিত চ্যাপলিনের ট্রাম্প ভবঘুরে হলেও বিট্রিশ ভদ্রজনোচিত আদব-কায়দায় সুসংস্কৃত এবং সম্মানবোধে অটুট। শার্লটের পরনে চাপা কোট, সাইজে বড় প্যান্ট, বড় জুতো, মাথায় বাউলার হ্যাট, হাতে ছড়ি আর একমেবাদ্বিতীয়ম টুথব্রাশ গোঁফ। চ্যাপলিনের বর্ণময় ব্যক্তিজীবন তথা সমাজজীবন খ্যাতি - বিতর্ক দুইয়েরই নিম্ন থেকে শীর্ষবিন্দু ছুঁয়ে গেছে। হলিউড সিনেমার প্রথম থেকে মধ্যকালের বিখ্যাততম শিল্পীদের অন্যতম চ্যাপলিন পৃথিবী বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকও বটে।

চার্লি চ্যাপলিনের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ মেকিং অব লিভিং (১৯১৪), দ্য ট্রাম্প (১৯১৪), কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস (১৯১৫), এ ডগস লাইফ (১৯১৭), শোল্ডার আর্মস (১৯১৮), দ্য কিড (১৯২১), দ্য সার্কাস (১৯২৬), সিটি লাইটস (১৯৩১), মডার্ন টাইমস (১৯৩৬), দ্য গ্রেট ডিক্টেটর (১৯৪০), দ্য গোল্ড রাশ (১৯৪২), লাইম লাইট (১৯৫২), এ কিং অব নিউইয়ক (১৯৫৭) প্রভৃতি। সিটি লাইট ১৯৩১ সালে নির্মিত একটি নির্বাক হাস্যরসাত্মক প্রেমের ছবি। এই ছবিটি চার্লি চ্যাপলিন কাহিনী লেখা, পরিচালনা, প্রযোজনায় নির্মিত। প্রায় সপ্ত-যুগ আগে নির্মিত এই ছবিটা এখনো তুমুল ভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তার জনপ্রিয়তা বজায় রেখে চলেছে। এটি কমেডি-রোমান্টিক ছবির ক্যাটাগরিতে আজো এক নম্বর স্থান দখল করে আছে। হাস্যরসের মধ্য দিয়ে চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রে উঠে এসেছিল সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিসহ তৎকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, হিটলারের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, জাতীয়তাবাদ, মানবাধিকারসহ নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তু। প্রতিটি চলচ্চিত্রেই স্যার চ্যাপলিন কোনো না কোনো বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন এবং তিনি সেটা করেছিলেন তাঁর চিরচেনা দ্য ট্রাম্প স্টাইলে। বিশেষ করে বিভিন্ন ছবিতে তার রাজনৈতিক জ্ঞানের যে পরিস্ফুটন দেখা যেত তা ছিল সত্যিই অসাধারণ। নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অন্যতম মৌলিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব চ্যাপলিন নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সংলাপ রচনা, পরিচালনা, প্রযোজনা এমন কী সঙ্গীত পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। জীবদ্দশায় চ্যাপলিন কিছু অসাধারণ উক্তি করেছিলেন। তিনি তার শৈশব সম্পর্কে বলতেন, ‘আমার শৈশব ছিলো অত্যন্ত কষ্টের। কিন্তু এখন তা আমার কাছে নস্টালজিয়া, অনেকটা স্বপ্নের মতো।’ মানুষের জীবন সম্পর্কে তিনি বলতেন, ‘মানুষের জীবন ক্লোজ শটে দেখলে ট্র্যাজেডি, কিন্তু লং শটে সেটাই কমেডি।’ নির্বাক চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তী সবাক চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘শব্দ খুবই দুর্বল। ওটাকে ‘হাতি’র চেয়ে বড় কিছুই বলা যায় না।’ আর এই কমেডিয়ানের শ্রেষ্ঠ উক্তি সম্ভবত এটাই: ‘না হেসে একটা দিন পার করা মানে একটা দিন নষ্ট করা।’

চার্লি চ্যাপলিন সম্পর্কে একটি মজার তথ্যঃ চার্লি চ্যাপলিন তখন পৃথিবী-বিখ্যাত। তার অনুকরনে অভিনয়ের একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল। গোপনে চার্লি চ্যাপলিনও নাম দিলেন।প্রতিযোগিতাও হয়ে গেল। ১ম ও ২য় যারা হলেন তাদের নাম ঘোষনা করা হল। আর মজার কথা হল চার্লি চ্যাপলিন এখানে ৩য় হন। তার জীবনের একটি বিশাল ট্র্যাজেডি হলো তার একটি স্বীকৃতি! সেটি হচ্ছে চ্যাপলিনের অস্কার জয়। তিনি অনারারি অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও কম্পোজার হিসেবেও অস্কার জিতেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এতোবড় একজন অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও অভিনেতা হিসেবে কখনোই তিনি অস্কার জিততে পারেননি। চলচ্চি্ত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের অন্যতম চার্লি চ্যাপলিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে সুইজারল্যাণ্ডের ভেভেতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। দুঃখের বিষয় মৃত্যুর মাত্র চার মাসের মাথায় তার মৃতদেহ চুরি হয়ে গিয়েছিলো। পরে অবশ্য পুলিশ তা খুঁজে বের করে।

বিশ্ব বরেণ্য এই ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিখ্যাত চলিচ্চত্র পরিচালক, কৌতুক অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: এখনো সময় পেলে ইউটিউবে দেখি- আর নিজে নিজে হাসি!


--ভাইজান এফবিতে কি সময় কম দেন!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রিফাত ভাই
চিরঞ্জিব চার্লি চ্যাপলিনের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

এফবি আমি খুব একটা পছন্দ করিনা।
মনে কিছু করবেন না।
শালীনতার অভাব বোধ করি শেখানে।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: শ্রদ্ধা.....

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: ছয় সাত বছর আগে আমি চার্লি চ্যাপলিনকে নিয়ে সামুতে এই পোষ্ট টা দিয়েছিলাম।

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২

যোখার সারনায়েভ বলেছেন: এখনো কোটি মানুষের হৃদয়ে আছেন তিনি।

৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২২

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: রিকোয়েস্টটা উঠিয়ে নিলাম। ধন্যবাদ আপনার অনুভতি জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.