নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ববাক বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মুসলিম অভিনেত্রী বনানী চৌধুরীর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭


উপমহাদেশের প্রথম বিএ পাস মুসলমান অভিনেত্রী বনানী চৌধুরী। আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে উপমহাদেশে চলচ্চিত্রের এ যাত্রা নানা কারণে মোটেও সহজ ছিল না। সীমাহীন বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র। বিশেষ করে এর সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের সামাজিক বাধা, কুসংস্কারের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে এ পেশায়। তবে চলচ্চিত্র গবেষকদের দৃষ্টিতে এ বাংলার মুসলমান কলাকুশলীদেরই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। গত শতকের শুরুতে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, যেসব মুসলমান চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের অনেকেই নিজেদের নাম আড়াল করে অন্য নামে চলচ্চিত্রে কাজ করতেন। এ রকম পরিবেশে কোনো মুসলমান নারীর চলচ্চিত্রে নাম লেখানোর বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। তৎকালীন সমাজে মুসলিম নারীদের বাড়ির বাইরে প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু শত বাধা পেরিয়ে তিনি গড়েছেন এক দৃষ্টান্ত এবং সহজ করে দিয়েছেন তাঁর পরবর্তী মুসলিম অভিনেত্রীদের চলচ্চিত্রে অংশেগ্রহণের পথ। প্রথম মুসলমান বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রোকেয়া খাতুন নামের এক নারী। সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অভিনয়ে নামলেও পদে পদে তাকে বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে নির্বাক ছবি ‘ওয়ান্ডার ড্যান্সার’ দিয়ে ছবির ক্যারিয়ার শুরু হয় রোকেয়ার। রোকেয়া খাতুনের পর আরো একজন মুসলমান বাঙালি নারী চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন এক নতুন প্রতিভা তার নাম বনানী চৌধুরী (আসল নাম বেগম আনোয়ারা নাহার চৌধুরী লিলি)। তাকে ধরা হয় উপমহাদেশের প্রথম স্ববাক চলচ্চিত্রের প্রথম বিএ পাস মুসলমান অভিনেত্রী হিসেবে। ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ছবিতে মাস্টার দা’র স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার পর তিনি সারা বাংলায় প্রশংসিত হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় তিনি জহির রায়হান পরিচালিত ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিতে অভিনয় করেন। পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধে ঢাকায় তার অভিনীত ছবি হলো—ধীরে বহে মেঘনা, সুখ দুঃখের সাথী, আল্লাহ মেহেরবান, আকাশপরী ইত্যাদি। মঞ্চেও তিনি নিয়মিত অভিনয় করতেন। আকাশবাণী কলকাতায় তিনি নিয়মিত অভিনয় করতেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও বনানী চৌধুরী কলকাতার মঞ্চ ও বেতারের সংগে সংযুক্ত ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল এ তারকার আজ ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৫ সালের আজকের দিনে এ অভিনেত্রী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। স্ববাক বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মুসলিম অভিনেত্রী বনানী চৌধুরী মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বনানী চৌধুরী ১৯২৪ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর আসল নাম বেগম আনোয়ারা নাহার চৌধুরী লিলি। বনানী তাঁর প্রতিকী নাম। তিনি বনানী নাম ব্যবহার করেন কারণ মানুষ বিশেষ করে মুসলিম সমাজের মানুষ যেন ভাবে তিনি হিন্দু ধর্মের এবং তাঁর উপর সমাজের প্রতিবন্ধকতা কম আসে। বনানী চৌধুরীর পুলিশ কর্মকর্তা পিতার নাম আফসার উদ্দিন। বনগাঁ ছিল তাঁর বাবার কর্মস্থল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের পৈতিক নিবাস ছিল বৃহত্তর যশোর জেলার শ্রীপুর থানার সোনাতনদি গ্রাম। যা বর্তমানে মাগুরা জেলাতে অবস্থিত। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলাস্থ সাগরদিঘী গ্রামের একটি স্কুলে। অল্প বয়সে তাঁর বিয়ে হয় এবং পরে তিনি স্বামীর উৎসাহেই পড়ালেখা চালিয়ে যান। ১৯৪১ সালে তিনি ম্যাট্টিক পাস করেন। এবং পরে আই. এ. ও তারপর বি. এ. পাস করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর শিল্পী প্রতিভার পরিচয় মিলতে থাকে। গ্রামে বা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পুরষ্কার পাওয়ার মাধ্যমে। এছাড়া কবিতা আবৃত্তিতেও তাঁর সুনাম ছিল। ছোটবেলা থেকেই তাঁর চলচ্চিত্রের প্রতিও একটা দুর্বলতা ছিল। এই আকর্ষণকে বাস্তবে রূপ দেন বনানী চৌধুরীর স্বামী ও তাঁর দুই বন্ধু মানিক বন্দোপাধ্যায় এবং সুলতান আহমেদ। চলচ্চিত্র জীবনের শুরু থেকে বনানী চৌধুরী কিছু বিখ্যাত মানুষের সাথে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ পাহাড়ী সান্যাল,প্রমথেশ বসু,হেমেন গুপ্ত,নীতিশ বসু,ছবি বিশ্বাস, জহির রায়হান ,জহর গাঙ্গুলীসহ অন্যান্যরা। তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘তপোভঙ্গ’। এরপর ১৯৪৬ সালে অভিনয় করেন ‘বিশ বছর আগে’ ছবিতে। নির্মাণের দুই বছর পর ছবিটি মুক্তি পেলে আলোচনায় আসেন বনানী চৌধুরী। এরপর একে একে করেন ‘চলার পথে’, ‘অভিযোগ’, ‘পূর্বরাগ’, ‘নন্দরাণীর সংসার’, ‘পরশপাথর’, ‘মহাসম্পদ’, ‘বিষের ধোঁয়া’, ‘মায়াজাল’, ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’, ‘শাপমোচন’, ‘শোন বরনারী’, ‘আম্রপালী’, ‘শেষের কবিতা’, ‘ঝাঁসী কি রাণী’, ‘তাপসী’, ‘কেরী সাহেবের মুনসী’ প্রভৃতি। ১৯৪৯-১৯৫১ সালের মধ্যে বনানী অভিনীত ও মুক্তিপ্রাপ্ত বিষের ধোঁয়া, মায়াজাল ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ছবি তিনটি সাড়া পায়। ১৯৭০ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে তিনি জহির রায়হান পরিচালিত ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিতে অভিনয় করেন। পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধে ঢাকায় তার অভিনীত ছবির মধ্যে অন্যতম ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সুখ দুঃখের সাথী’, ‘আল্লাহ মেহেরবান’ ও ‘আকাশপরী’

১৯৯৫ সালের আজকের ৫ জা্নুয়ারি এ ভিনেত্রী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাঁকে ঢাকার বানানী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়। মুসলিম সমাজ চলচ্চিত্র জগতের তারকাকে যখন ভালো চোখে দেখত না সেই যুগে মুসলমান মেয়ে বনানী চৌধুরী এক অর্থে বিদ্রোহ করেই ফিল্মে এসেছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন। চলচ্চিত্রে শুরুটা তিনি যে সাহসিকতার মধ্য দিয়ে করেছিলেন, মৃত্যু অবধি ঠিক একই রকমভাবে চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ অভিনেত্রী। সে জন্য এখনও অনেকে তার কথা মনে করেন। বনানী চৌধুরী সত্যিই অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।’বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল এ তারকার আজ ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। স্ববাক বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম মুসলিম অভিনেত্রী বনানী চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম প্যারার, পরের প্যারায় মানে দ্বিতীয় প্যারায় দ্বিতীয় লাইনে ''বিশেষ করে'' হবে। আপনার টাইপে ভুল করে হয়েছে ''বিশেকরে'। '

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাহ রাজীব ভাই
চমৎকার!
জহুরীর চোখ,
কয়লা -ময়লা থেকে
ঠিকই হীরা বের করে ছাড়লেন !!

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪২

জগতারন বলেছেন:

বেগম আনোয়ারা নাহার চৌধুরী লিল, (বনানী চৌধুরী তাঁর প্রতিকী নাম)-এর সমন্ধে আমি জানতামই না। তাঁর সমন্ধে সবিস্তারিত আপনার মাধ্যমেই আমার জানা হলো। এই সস্কৃতিবান ও শিক্ষিত নারীর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করি।

আপনার প্রতিও সুভেচ্ছা এখানে তুলে দেয়ার জন্য।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৮

শরীফ আতরাফ বলেছেন: সম্ভবত গত ৩রা জানুয়ারী সামুর একজন বিখ্যাত ব্লগার ইমন জুবায়ের এর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। যদি তাকে চিনে থাকেন বা তার লেখা পড়ে থাকেন তবে একটা পোস্ট দিয়েন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.