নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১১


১০ জানুয়ারি,পাকিস্তানের কারাগারে দীর্ঘ কারাবাস শেষে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশে ফিরে আসার দিন। বাঙালির পূর্ণ বিজয়ের দিন। ১৯৭২ সালের আজকের দিনটিতে স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। জীবন-মৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ঙ্কর অধ্যায় পার হয়ে সারা জীবনের স্বপ্ন, সাধনা ও নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়।স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে দীর্ঘ কারাবাস শেষে বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯৭২ সালের আজকের দিনটিতে স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। গোটা জাতি সেদিন হর্ষধ্বনি দিয়ে তেজোদীপ্ত ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে তাদের প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানায়। জাতির পিতা তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন 'অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা (A Journey from darkness to light)।' সেই দিন থেকে জাতির জনকের ফেরার দিনটি ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে লাখ লাখ নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা চালায়। এ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই শুরু করার ডাক দেন। স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দখলদার পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে, ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। কারাগারের যে সেলে তাকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়। এ খবর আপামর বাঙালিকে খেপিয়ে তুললে সর্বাত্মক যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে মুক্তিসেনারা। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পাকিস্তানি খায়েশ আর পূর্ণ হয়নি। স্বাধীনতার কিছুদিন পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। ১০ জানুয়ারি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে বিজয়ীর বেশে তার প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি। লযে দেশ এবং যে স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন। বিমানবন্দরে অস্থায়ী সরকারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের এই বরপুত্রকে। তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সেদিনকার রেসকোর্স ময়দান ছিল লোকে লোকারণ্য।

বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালী ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বহির্বিশ্বকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা। তিনি ডাক দিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত মন্ত্রমুগ্ধ জনতা দু’হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। রেসকোর্সের জনসভায় তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাষণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।’ ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন ‘আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতিকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আগমন বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নে বাঙালি যখন বাস্তবতার মুখোমুখি- তখন পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে লন্ডন-দিল্লী হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফেরেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ অনুরাগীর ভালোবাসায় সিক্ত হন। বাংলাদেশের জনগণ এদিনই প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বাংলার মানুষ তখনও জানত না তাদের নয়নের মণি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জীবিত আছেন কিনা? তাই বিজয়ের মধ্যেও মানুষের মনে ছিল শঙ্কা ও বিষাদের ছাপ। এ ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। তাই ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারি ছিল বাঙালির জন্য পূর্ণ বিজয়ের দিন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি আলোকিত অধ্যায়। সেদিন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পেয়ে বাঙালি বিজয়ের পরিপূর্ণ আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করেছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে সবাইকে শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নুরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৮

কলাবাগান১ বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪২

আখেনাটেন বলেছেন: বীর বাঙালীর বাংলার মাটিতে ঐতিহাসিক পদার্পণ।

৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি মনে মনে এ বিষয়টি নিয়ে আপনার একটি লেখা আশা করছিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.