নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত রুশ ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর ১৫৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২২


রুশ চিকিৎসক, ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। আন্তন চেখভ নামে যিনি সমাাধিক পরিচিত। আন্তন চেখভকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। তাঁর ছোটগল্পগুলো লেখক, সমালোচক সমাজে প্রভূত সমাদর অর্জন করেছে। নাট্যকার হিসেবে পেশাজীবনে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক রচনা করেন। ১৮৮৭ সালে চেখভের ছোটগল্প সংকলন ‘অ্যাট ডাস্ক’ পুশকিন পুরস্কার লাভ করে। শুরুতে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টারস, দ্য সীগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে। সেই সময়ে সাহিত্য জগতের কীর্তিমান ব্যক্তিদের মধ্যে চেখভ ছিলেন দ্বিতীয়। তলস্তয়ের পরপরই ছিল তাঁর অবস্থান। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়র ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়। আজ এই নাট্যকারের ১৫৯তম জন্মদিন। ১৮৬০সালের আজকের দিনে তিনি রাশিয়ার তাগানরোগ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটগল্প লেখক ও চিকিৎসক আন্তন পাভলোভিচ চেখভের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ১৮৬০ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ রাশিয়ার তাগানরোগ শহরে এক সওদাগরের পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। চেখভের পিতা, পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ ছিলেন ভোরোনেজ প্রদেশের একজন প্রাক্তন ভূমিদাস কৃষক। পাভেল চেখভের ছয় সন্তানের মধ্যে আন্তন চেখভ ছিলেন তৃতীয়। চেখভের পিতা চেখভকে ও তাঁর এক ভাই নিকোলাইকে গ্রিক স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলটি চলছিল অসফলভাবে এবং দুই বছর পরেই এটি পরিণত হয় তাগানরোগ শরীরচর্চা কেন্দ্রে, আর এখন একে বলা হয় “চেখভ জিমনেসিয়াম”। স্কুলে চেখভের কৃতিত্ব ছিল গড়পড়তা মানের। প্রথমে তিনি গ্রীক পদ্ধতির স্কুল শেষ করেন, তার পর রুশ ধারার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন এবং একই সঙ্গে বাবার দোকানে কাজ করা শুরু করেন। ১৮৭৬ সালে বাবার ব্যবসায় ক্ষতি হয় ও তিনি সপরিবারে মস্কো চলে যান। চেখভ এর পর তিন বছর তাগানরোগে ছিলেন। মস্কো এসে তিনি অনতিবিলম্বে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা বিদ্যার শাখায় যোগ দেন। এই সময়ে সাহিত্যিক কাজকর্ম থেকেই তাঁর প্রধান আয় হত। ১৮৮৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সাঙ্গ করে মস্কোর উপকন্ঠে ডাক্তারী করা শুরু করেন। একই সঙ্গে চালু রাখেন সাহিত্য চর্চা। তিনি বলতেনঃ " ডাক্তারী হল আমার বৈধ স্ত্রী আর সাহিত্য হল অবৈধ প্রেম"।

১৮৯০ সালের শুরুতে বাস্তবেই রাশিয়ার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেন আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। তাঁর নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে গিয়েছিল "জীবন মুখী" লেখকের উপাধি। যিনি সমাজের সমস্যার কথা বলেন. ১৮৯০ সালে চেখভ সাখালিন দ্বীপের নির্বাসিত দের শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সেখানে তিন মাস সময়ের মধ্যে আন্তন পাভলোভিচ ডাক্তার, সমাজ বিদ ও গবেষকের কাজ করে এখানের অসংখ্য বন্দীর কথা লিপিবদ্ধ করেন। জন গণনার কাজ করে প্রায় দশ হাজার লোকের হিসাব করেন। ১৮৯২ সালে চেখভ মস্কোর উপকন্ঠে মেলিখোভো বলে একটি গ্রামের জমিদারী কিনে নেন এবং সেখানে তাঁর সামাজিক কাজকর্ম শুরু করেন। এখানে তিনি নিজের খরচে ডাক্তার খানা, চাষীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনটি স্কুল খোলেন ও একটি পোস্ট অফিস ও টেলিগ্রাফের জন্য সুপারিশ করে তা বহাল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনাঃ
১। ছয় নম্বর ওয়ার্ড, ২। খোলসের মানুষ, ৩। ইওনীচ, ৪। রাস্প বেরী ও ৫। গ্রামের ইতিকথা নামে ধারাবাহিক লেখা শেষ করেন। সাথে তিন বছর নামের উপন্যাস এবং ১। চাইকা (গাঙচিল), ও ২। ইভান খুড়ো (চাচা ভানিয়া) নামের নাটক লেখেন।

(১৯০১ সালে মধুচন্দ্রিমায় চেখভ এবং ওলগা)
১৮৯৭ সালে চেখভের যক্ষা রোগ বেড়ে যায়, আর তিনি হেমন্ত ও শীত কাল নিতসে ও প্যারিসে কাটিয়ে ১৮৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষ্ণ সাগর তীরের ইয়ালতা শহরে ফিরে আসেন। সেখানে স্বাস্থ্য বজায় রেখে চেখভের পক্ষে যতটা সম্ভব হয়েছিল, ততটাই তিনি সমাজ সেবা করতে থাকেন। বিবাহভীতিতে ভোগা আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ১৯০১ সালের ২৫ মে মস্কো আর্ট থিয়েটারের অভিনেত্রী ওলগা ক্নিপ্পের বিয়ে করেন। তার সঙ্গে চেখভের প্রথম দেখা হয় ‘দ্য সীগাল’ নাটকের মহড়ায়। এই সময়ে চেখভের স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে চেখভ লেখক ইভান বুনিনকে বলেছিলেন যে তাঁর ধারণা লোকে তাঁর লেখা আর সাত বছর পড়বে। বুনিনের প্রশ্ন ছিল, "সাত কেন?" "ঠিক আছে, সাড়ে সাত", চেখভের জবাব। "মন্দ নয়। আমি বেঁচে আছি আর বছর ছয়েক।" ১৯০১ সাল থেকেই যক্ষা রোগ তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। ১৯০৪ সালে তাঁর লেখা আরও একটি নাটকের মঞ্চাভিনয়ের ব্যবস্থা হয়। সে বিখ্যাত নাটকের নাম মঞ্জরী আমের মঞ্জরী (চেরি ফলের বাগান)। এই নাটকটি চেখভের লেখা শেষ শিল্প কর্ম। ১৯০৪ সালের ১৫ই জুলাই রাতে তাঁর খুব খারাপ লাগতে থাকে, দেখতে আসা ডাক্তারকে তিনি শান্ত গলায় আত্ম বিশ্বাসের সঙ্গে বলেনঃ "আমি মারা যাচ্ছি"। তার পর আস্তে ধীরে শ্যাম্পেন ঢেলে খেয়ে শুয়ে পড়েন ও তাঁর দেহাবসান হয়। মস্কোর নভোদেভিচি কবর খানায় চেখভ কে কবর দেওয়া হয়। বিনয়ী ও নিরহঙ্কার চেখভ তাঁর মরণোত্তর খ্যাতির এই ব্যাপ্তির কথা কল্পনাও করতে পারেননি। যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন, সে বছরে দ্য চেরি অরচার্ডের বিপুল সংবর্ধনা এ কথাই প্রকাশ করে যে রুশ জনগণের মনের কতটা উচ্চাসনে তিনি স্থান করে নিয়েছেন।

চেখভের গল্পগুলো এখনও তেমনই বিস্ময়কর (এবং অপরিহার্য), যেমনটা ছিল প্রথম প্রকাশের সময়ে। শুধুমাত্র তাঁর বিপুল সংখ্যক গল্পের সম্ভারই নয় – খুব কম লেখকই, যদি আদৌ তেমন কেউ থেকে থাকেন, তাঁর চেয়ে বেশি লিখেছেন – তিনি যে বিস্ময়জনক হারে সেরা গ্রন্থ ও গল্প রচনা করেছেন তা যেমন আমাদের আধ্যাত্মিক মুক্তির অনুভূতি দেয়, তেমনি আনন্দিত ও আলোড়িতও করে। তাঁর লেখা রচনা আমাদের আবেগ অনুভূতিকে যেভাবে তুলে ধরে তা শুধুমাত্র সত্যিকারের শিল্পকর্মের পক্ষেই সম্ভব। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর আজ ১৫৯তম জন্মবার্ষিকী। বিখ্যাত রুশ ছোটগল্পকার ও চিকিৎসক আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: বিখ্যাত রুশ ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর ১৫৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেশ প্রেমিক বাঙালী, শুভ সকাল।
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

আমার সোভিয়েত শৈশব !!
আঁকড়ে ধরে আছি আজো। আন্তন পাভলোভিচ চেখভ , আপনাদের শুভেচ্ছা। কি দারুন শৈশব ই দিয়েছেন আমার!
পোস্টে ভালো লাগা রইলো নূর ভাই। ভালো থাকবেন আপনি।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌরভ
চমৎকার আশাজাগানিয়া মন্তব্যের জন্য।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আপনার জন্য।

৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:২১

সিগন্যাস বলেছেন: রুশদের সাহিত্য অনেক উন্নত। বাঙালিরা পঞ্চাশ বছরেও তেমন কিছু করতে পারলো সাহিত্যে।যাও দুতিনজন ভালো সাহিত্যিক আছে তাদের বাসাও কলকাতায় এদেশে নয় যেমন শীর্ষেন্দু

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হতাস হবার কিছু নাই
সিগন্যাস ভাই।
আমাদের দেশেও বিখ্যাতসব
সাহিত্যিক রয়েছেন কিন্তু দুঃখের
বিষয় আমরা তাদের মূল্যায়ন করিনা
বলেই আমরা দৈন্য !!

৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৩৬

প্রামানিক বলেছেন: আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর ১৫৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই
প্রীত হলাম আপনার মন্তব্যে।
ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা রইলো।

৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ছোট গল্প গুলো আমি পড়েছি। খুব ভালো।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর
গল্পগুলো পাঠ করার জন্য।

৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: রুশ সাহিত্য অতুলনীয়......

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ আর্কিওপটেরিক্স ।
শুভেচ্ছা জানবেন মন্তব্য প্রদানের জন্য।

৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২৬

সিগন্যাস বলেছেন: আর্কি ভাইয়ের সাথে সহমত

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমিও সহমত প্রকাশ করছি আপনার সাথে।
ধন্যবাদ সিগন্যাস ভাই

৮| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: বিগত কয়েকদিন যাবত উনার গল্প পড়ছি। পরিবারে সমাজে, ও বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণীতে ঘটে যাওয়া নানা সুক্ষ বিষয় গুলো সুনিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.