নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী এবং সমাজ সমালোচক বার্ট্রান্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেল। বার্ট্রান্ড রাসেল নামেই যিনি সমাধিক পরিচিত। রাসেলকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়। এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে। এছাড়াও তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি। রাসেল দার্শনিক হিসেবে বিশ্বময় খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন৷ বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেল পেয়েছিলেন দু' দুবার৷ তার কাছে নোবেল ছিল সোনায় সোহাগা৷ বার্ট্রান্ড রাসেল ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ এবং ১৯৭০ সালের আজকের দিনে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। (Young Bertrand Russel)
বার্ট্রান্ড রাসেল ১৮৭২ সালের ১৮ মে যুক্তরাজ্যের মনমাউথশায়ারের ট্রেলেখে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমিক শিক্ষা শেষে ১৮৯০ সালে তিনি কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৯৩ সালে গণিতে প্রথম শ্রেণী অর্জন করে বিএ পাস করেন। রাসেল ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। তিনি বলতেনঃ " সৎলোকের নিরবতা অসৎ লোকের শক্তি যোগায়"। বার্ট্রান্ড রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন এবং যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকার জন্য তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়াও ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রাসেল। ১৯৫২ সালে ব্রিটেন যখন আণবিক বোমার প্রথম বিস্ফোরণ ঘটায় তখন রাসেল তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন৷ ব্রিটেন সরকার তাকে এবং তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে দুমাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল৷ ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন যখন সুয়েজ আক্রমণ করে তখনও তিনি এমন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কারাবরণ করেছিলেন৷ অথচ প্রধানমন্ত্রী ইডেন ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু এবং তিনি তাকে সমীহ করতেন৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তিনি নুরেমবার্গ স্টাইলের ট্রাইবুন্যাল গঠন করে গণহত্যার অভিযোগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জনসনের বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং তাকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করেছিলেন৷ ষাটের দশকে কিউবা ইসু নিয়ে যখন আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ করার দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয় তখন মানবপ্রেমিক রাসেল দূতিয়ালি করে উভয় পরাশক্তিকে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করেছিলেন৷ ১০ দিনে তিনি তিন তিন বার মস্কো এবং ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হন, ক্রুশ্চেভ এবং কেনেডি সমঝোতায় পৌঁছেন৷ ব্রিটেনকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়৷ তার গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তিও রয়েছে অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ব্রিটেনে মহিলাদের ভোটাধিকার ছিল না ৷ বার্ট্রান্ড রাসেল মহিলাদের ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জয়ীও হয়েছিলেন৷ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং বহুবার ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন৷ কিন্তু কোনো বারই তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি৷ অথচ যখনই তিনি নির্বাচনী এলাকায় যেতেন লোকজন তাকে আন্তরিকতায় বরণ করতো, শ্রদ্ধায় প্রায় মাথা নোয়াতো৷ মনে হতো তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী৷ এলাকার ভোটারদের এরকম দ্বৈত ভূমিকার কারণ জানতে তিনি উৎসাহী হলেন৷ সপ্তমবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রায় জনে জনে জিজ্ঞেস করেছিলেন_ কেন তারা তাকে ভোট দিতে চান না৷ তখন তারা উত্তর দিয়েছিলেন আপনি হচ্ছেন বিশ্বের বিবেক৷ আপনি কেন নির্বাচন করতে এসে আপনাকে ক্ষুদ্র করবেন৷ ভোট না দিয়ে রাসেলের নির্বাচনী এলাকার লোকেরা নাকি রাসেলকে ক্ষুদ্র হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন৷ অথচ ব্রিটেনে রাসেলের পরিবার ছিল একটা রাজনৈতিক পরিবার৷ তার দাদা ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জন রাসেল৷ তিনি ব্রিটেনের রাজনীতিতে একজন মহত্ ও মহান ব্যক্তি ছিলেন।রাজনৈতিক পরিবারের লোক হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে এসে বার্ট্রান্ড রাসেল কিছুই করতে পারেননি।
রাসেল এবং হোয়াইট হুড একত্রে প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি বই অটোবায়োগ্রাফি এবং মাই ফিলোসফিক্যাল ডেভেলপমেন্ট। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ" যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন।
বার্ট্রান্ড রাসেল সম্পর্কে একটি মজার তথ্যঃ
মৃত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার!
বার্ট্রান্ড রাসেল ১৯২০ সালে চীন দেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে তিনি কোনো পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন না। জাপানি এক পত্রিকা বহু চেষ্টার পর সাক্ষাৎকার নিতে না পেরে ছেপে দিল, রাসেল মারা গেছেন। এই খবরের প্রতিবাদে প্রতিবাদলিপি পাঠালেন রাসেল। কিন্তু সেই পত্রিকা প্রতিবাদলিপিও ছাপল না। পরে চীন থেকে দেশে ফেরার পথে জাপানে যাত্রাবিরতি দেন রাসেল। সব পত্রিকা তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ছুটে এল। তার মধ্যে সেই পত্রিকাও ছিল। রাসেল তাঁর সহকারীর হাত দিয়ে প্রত্যেক রিপোর্টারের হাতে একটা করে চিরকুট ধরিয়ে দেন। তাতে লেখা ছিলঃ 'বার্ট্রান্ড রাসেল মারা যাওয়ায় তাঁর পক্ষে সাক্ষাৎকার দেওয়া সম্ভব নয়।' দার্শনিক, অঙ্কশাস্ত্রবিদ ও সমাজ সংস্কারক বার্ট্রান্ড রাসেল ৯৭ বছরের দীর্ঘ জীবন শেষে ১৯৭০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে পরলোক গমন করেন। আজ তার ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জ্বি রাজীব ভাই
অসাধারণ মানুষ ।
২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনার মৃত্যু কি ২ বার হয়েছিলো?
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সবই আপনার দেখার ভুল।
চোখের অবস্থাতো খুবই খারাপ মনে হয়!
এক জিনিস ২ টা দেখেন !!
৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
তাই মনে হচ্ছে, এক সপ্তাহে উনাকে ২ বার দেখেছি সামুতে।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চোখের যত্ন নিন ।
আগামী বছরে আবার
দেখতে পারেন যদি
আপনি/আমি বেঁচে থাকি।
৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
সঠিক সময়ে খাবেন, ব্যায়াম করবেন; আগামী বছর আবার পোষ্ট দিতে পারবেন।
৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫২
সনেট কবি বলেছেন: তাঁর জন্য শ্রদ্ধা।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: দারুন বুদ্ধিমান একজন মানুষ।