নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শক্তিমান অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১৮


সব্যসাচী প্রতিভার অধিকারী, আমাদের দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী, শক্তিমান অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা। বেতার, টিভি, মঞ্চ, চলচ্চিত্র এই চার মাধ্যমেই তিনি তার সুঅভিনয়ের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। দোর্দান্ড প্রতাপে অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রে। সিনেমায় সুজাতা তার নায়িকা ছিলেন, তবে টেলিভিশনে বেশ কয়েকটি নাটকে মুস্তাফার নায়িকা ছিলেন সুজাতা। গোলাম মুস্তাফা ঢাকা টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে নাটকে অভিনয় শুরু করেন। প্রথমদিকে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নাটকে নায়ক চরিত্রে ছিলেন। মঞ্চ নাটককে জনপ্রিয় করার পিছনেও তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। বেতার নাটককওে তিনি শ্রোতাদের কাছে হৃদয়গ্রাহী করার পিছনে বিরাট অবদান রাখেন। আবৃত্তিকে শিল্পের পর্যায় উন্নীত করায় তার অবদান অনস্বীকার্য। ২০০৩ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

গোলাম মুস্তাফা ১৯৩৫ সালের ২ মার্চ বরিশাল জেলার পিরোজপুর মহাকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার।গোলাম মুস্তাফার স্কুলজীবন শুরু হয় পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ম্যাট্রিক পাস করেন খুলনা জিলা স্কুল থেকে। স্কুল-কলেজ জীবনে নাটকে অভিনয় করা তার শখ ছিল। ঢাকায় আসেন পঞ্চাশের দশকের মধ্য সময়ে। সেই থেকে তিনি ঢাকায় স্থায়ী হয়ে গেলেন। হঠাৎ করে বেতারের অভিনেত্রী হোসনে আরার সঙ্গে তার পরিচয় হলো। একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ১৯৫৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। গোলাম মুস্তাফা ১৯৫৯ সালে মুস্তাফিজের ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান। ওই ছবির নায়ক-নায়িকা ছিলেন রহমান ও চিত্রা সিনহা। ঢাকার প্রথম নায়ক ও পরিচালক আবদুল জব্বার খান তার ‘নাচঘর’ ছবিতে প্রথম নায়ক হিসেবে কাস্ট করলেন। নায়ক হিসেবে তার দ্বিতীয় ছবি ‘বন্ধন’ মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। নায়িকা ছিলেন চিত্রা সিনহা। এরপর ‘কাজল’ ছবিতে শবনমের বিপরীতে দুই নায়ক খলিল ও মুস্তাফা। উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘কাজল’ ছবিটি ব্যবসা সফল হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে নির্মিত হলো ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’। এ ছবিতে মুস্তাফার ডাবল রোল ছিল। তার দুই নায়িকা রেশমা আর ফরিদা মির্জা। ছবির শুটিং ঢাকাতে হয়েছিল। নায়ক হিসেবে এসএম পারভেজ পরিচালিত ‘বেগানা’ তার ৫ম ছবি। ১৯৬৭ সালে ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবিতে মুস্তাফা আবার রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সুচন্দার বিপরীতে অভিনয় করলেন। এর পরে ‘দাসী’ এবং ‘সোহানা সফর’ ছবি দুটিতে তিনি নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। ‘সোহানা সফর’ ছবিতে তার নায়িকা ছিল রওশন আরা কিন্তু এ ছবিটি পরে রিলিজ হলো না।

গোলাম মুস্তাফা বাংলা ও উর্দু মিলে প্রায় তিনশ চলচ্চিত্রে নায়ক, সহনায়ক, খলনায়ক সহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য উর্দু চলচ্চিত্র হচ্ছে 'পীরিত না জানে রীত', 'কাজল', 'চোখাই', 'চান্দা', 'তালাশ'। বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে 'আলিবাবার চল্লিশ চোর', 'রাজধানীর বুকে', 'নিজেকে হারায়ে খুজি', 'রক্তাক্ত বাংলা', 'রূপালী সৈকতে', 'সীমানা পেরিয়ে', 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'সূর্যসংগ্রাম', 'পদ্মা নদীর মাঝি', 'এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী', 'শুভদা', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'ধীরে বহে মেঘনা', 'চন্দ্রনাথ', 'দেবদাস' ইত্যাদি। গোলাম মুস্তাফা অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেন। গোলাম মুস্তাফা তার অভিনয় জীবনে খলনায়ক হিসেবেই বেশি সফল হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হারানো দিন’ ছবিতে মদ্যপ জমিদারের ভূমিকায় তার অভিনয়ের কথা অনেকের স্মৃতিতে এখনও অমলিন। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক সম্মানে ভুষিত হন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন।

গোলাম মুস্তাফা ছিলেন একজন নিবেদিত সংস্কৃতিকর্মী। তিনি বিভিন্ন সাময়িকীতে আধুনিক চলচ্চিত্র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি কর্নেল মেইগস রচিত ফেয়ার উইন্ড টু ভার্জিনিয়া গ্রন্থের সুপাঠ্য অনুবাদ করেন। ইউসিস, ঢাকা প্রকাশিত এই অনুবাদ গ্রন্থটির বাংলা নাম 'নতুন যুগের ভোরে'। তাঁর অনেক অনুবাদকর্ম বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই শক্তিমান অভিনেতা ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর ‘গোলাম মোস্তফা স্মরণ ও একুশের প্রথম প্রহর’ উদ্যাপন করে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। সব্যসাচীশিল্পী গোলাম মুস্তাফার আজ ১৬তম মৃৃত্যুবার্ষিকী। জন্মদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪০

রাকিব আর পি এম সি বলেছেন: নূরু ভাই, বরাবরের মতই একটি সুন্দর ও তথ্যবহুল পোস্ট। শুধু একটু সংশোধন করবেন প্রথম অংশটুকুর শেষ লাইনটাই। ওখানে ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণের পরিবর্তে মৃত্যুবরণ হবে। ধন্যবাদ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ রাকিব আর পি এম সি
আপনার জন্য ফাগুনের শুভেচ্ছা রইলো।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২০

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন অভিনেতা এবং আবৃত্তিকার।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
'আপনাকে ধন্যবাদ রাজীব ভাই
আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে
সর্বদা।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৮

সোহানী বলেছেন: কি শক্তিমান একজন অভিনেতা ছিলেন, আহ্ কিতার অভিনয় কি নায়ক কি খল নায়ক। ভালো লাগলো.......

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপু
অনেকদিন পরে ফিরলেন।
শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.