নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনপ্রিয় সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭

বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তী’র নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যিনি ২১ হাজার গানের স্রস্টা ও আমাদের বাংলা গানের সর্বকালের সেরা গীতিকারদের একজন। তিনি একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, রচয়িতা, গীতিকার ও সুরকার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেও টেলিভিশনের জন্য গান লিখে গেছেন। বিবিসি বাংলা তৈরিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তার লেখা তিনটি গান। গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। চলচ্চিত্রে নানা ভূমিকার জন্য তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ২০০২ সালে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার বাংলাদেশের একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি, ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য, সেন্সরবোর্ডের সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের আজ ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জনপ্রিয় সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২-৬৩ সালে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় প্রথম গান লিখেন ‘’ “বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে” যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্থানে গান লিখা শুরু করেন। সেইসময়ে গানপ্রতি ৫০ টাকা পেতেন যা দিয়ে তাঁর পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু। সেই যে শুরু করেছিলেন আজ অবধি তাঁর গান লিখা আজো চলছে। ১৯৬৫ সাল থেকে যুক্ত হন চলচ্চিত্রে। লিখতে শুরু করেন কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছবির পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার কিছু টিভি নাটকও পরিচালনা করেন। সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবিতে ‘’আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লিখা সফলতার সাথে শুরু করেন। গানটি আজো প্রয়াত আঞ্জুমান আরা বেগম ও বশির আহমেদের কণ্ঠের সেরাগানগুলোর তালিকায় শীর্ষে আছে । রুনা লায়লার গাওয়া চলচ্চিত্রের প্রথম গান ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে কি হবে ‘’ গানটিও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা । তাঁর লিখা বহু কালজয়ী গান আমাদের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডারের আলাদা এক সম্পদ হয়ে আছে। শুধু তাই নয় , তাঁর লিখা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রেরণাদায়ক গান হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল যা আজো গাওয়া হয় ও হবে চিরকাল । বিবিসি বাংলা শতাব্দির সেরা ২০ গানের মাঝে জয় বাংলা বাংলার জয় গানটি সহ আরও দুটো গানসহ গাজির লিখা মোট ৩ টি গান স্থান পেয়েছে ।আঞ্জুমান আরা বেগম , রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন,এন্দ্রু কিশোর, সৈয়দ আব্দুল হাদি সহ এমন কোন খ্যাতিমান শিল্পী নেই যে যার কণ্ঠে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা গান নেই । জহিরুল হকের ‘সারেন্ডার’ ছবিতে জসিমের লিপে ‘সবাই তো ভালোবাসা চায় ‘ গানটি দিয়ে তো সারেন্ডার ও জসিমকে দর্শকদের হৃদয়ে ঠাই করে দিয়েছেন এবং যে গানটির জন্য সুরকার আলম খান ও শিল্পী অ্যান্ড্রো কিশোর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ।###
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবি প্রযোজনার একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যার নাম ‘দেশ চিত্রকথা’। দেশ চিত্রকথা থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ৪২ টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার সবগুলোতে তিনি পরিচালক হিসেবে ছিলেন না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলো হলো –শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন,আর্তনাদ,পাষাণের প্রেম, এই যে দুনিয়া। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবিগুলোর কাহিনীগুলো হতো নাটকীয়তায় ভরপুর যা বেশ কয়েকবার মোড় নিতো। কিন্তু গাজী যেন কিভাবে কিভাবে সব নাটকীয়তা এক সুতোয় বেঁধে সুন্দর এক সমাপ্তি টানতেন যা দর্শকদের মুগ্ধ করতো। পরিচালনা ছাড়াও তার প্রযোজিত ছবিগুলো হলো সমাধান,অগ্নিশিখা, অনুরোধ, জিঞ্জির, আনারকলি, নানটু ঘোটক, চোর, বিচারপতি, সন্ধি, স্বাক্ষর ইত্যাদি। অন্যর প্রযোজিত কিন্তু গাজীর পরিচালনার ছবিগুলো হলো ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘জীবনের গল্প’, অনন্ত জলিল প্রযোজিত ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ‘উচিৎ শিক্ষা’, ১৯৯৬ সালে ‘অজান্তে’ ,২০০১ সালে ‘চুড়িওয়ালা’, ২০০২ সালে ‘লাল দরিয়া’, ২০০৩ সালে ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’ চলচ্চিত্রগুলোর জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে সর্বমোট ৫ বার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ছাড়াও একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার এদেশের গর্ব, দেশকে ভালবেসে লিখেছেন অমর দেশের গান, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ভাণ্ডার। তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির একটি ‘প্রতিষ্ঠান’ হয়ে চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। চিরকাল ‘বাংলাদেশী’ বা বাংলাদেশপন্থি হয়ে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এই মেধাবী মানুষটি যিনি আজ আমাদের মিডিয়ায় বড় অবহেলিত। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের আজ ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে দেশের এই বরেণ্য মেধাবী মানুষটিকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সংবাদপত্র
সম্পাদনাঃনূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০০

রাজীব নুর বলেছেন: গান পাগল মানুষ ছিলেন।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এখনও আছেন। থাকবেন আরো অনেক দিন
ধন্যবাদ রাজীব ভাই, মন্তব্য প্রদানের জন্য।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০২

মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় গীতিকারকে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ হাসিব ভাই,
প্রিয় গীতিকারের জন্মদিনে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৩

জগতারন বলেছেন:
পোষ্ট
+++

জনপ্রিয় সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
সহমত !

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

দাদা এবার ছিলো তার ৭৯তম জন্মবার্ষিকী।
তিন বছর আগের লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.