নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও টেলিফোন যন্ত্রের আবিস্কারক পদার্থবিদ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের ১৭২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০০


(টেলিফোনের আবিস্কর্তা আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল)
স্রষ্টাকে ভুলে গেলেও সৃষ্টির মহিমা কিন্তু থেকেই যায। টেলিফোন সারাবিশ্বে এখন একটি জরুরী মাধ্যম। বর্তমান সময়ে ফোন ছাডা একটি মূহুর্তও চলেনা আমাদের। এই ফোন যন্ত্র যিনি আবিষ্কার করেন আমরা অনেকেই হয়তো ভুলতে বসেছি তাঁর নাম। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল-এর নাম স্মরণ করতে এখন হয়তো আমাদের অনেকেরই মাথা চুলকাতে হয়। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল সবচেয়ে বেশী পরিচিত। জন্মের ২৯ বছর পর তার জন্মদিনে ১৮৭৬ সালের ৩রা মার্চ তিনি আবিস্কার করেন এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে কথাবলার ও শোনার অভাবনীয় যন্ত্র টেলিফোন। পরবর্তী জীবনে বেল আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে উড়ো নৌকা এবং বিমানচালন বিদ্যা। ১৮৪৭ সালের আজকের দিনে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহন করেন বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। আজ তাঁর ১৭২তম জন্ম দিন। জন্মদিনে টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলকে ফুলেল শুভেচ্ছ।

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৪৭ সালের ৩রা মার্চ স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা আলেকজান্ডার মেলভিল বেল এবং মাতা এলিজা গ্রেইস সাইমন্ডস বেল। এডিনবার্গের ১৬ চারলোটি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে একটি পাথরের খোদাই থেকে জানা যায় যে এটিই তার পরিবারের আবাসস্থল এবং তার জন্মস্থান ছিল। গ্রাহাম বেলের দুইজন ভাই ছিলেন মেলভিল জেমস বেল এবং এডওয়ার্ড চার্লস বেল যাদের দুজনই পরবর্তীতে যক্ষায় মারা যান। জন্মের সময় তার নাম ছিল আলেকজান্ডার বেল, তবে তার বয়স যখন দশ বছর তখন তিনি তার বাবার কাছে তার বড় দুই ভাইয়ের মধ্যনামের মত একটি মধ্যনামের জন্য আবদার করেন। তার এগারো তম জন্মদিনে তার বাবা আলেকজান্ডার মেলভিল বেল তারই এক কানাডিয়ান বন্ধুর নাম অনুশারে তার ছোট ছেলের মধ্য নাম রাখেন গ্রাহাম। এর পর থেকেই তার নাম হয় আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা এলেক নামেই ডাকত।

ভাইদের মত আলেকজান্ডারও ছোটবেলায় পরিবারে বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করেন। যদিও খুব অল্প বয়সেই তাকে এডিনবার্গের রয়েল হাই স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, সেখানে তিনি চার ক্লাস পর্যন্তই পড়াশুনা করেন এবং মাত্র ১৫ বছর বয়সেই স্কুল ছেরে দেন। স্কুলে তার ফলাফল খুব একটা ভাল ছিল না এবং প্রায়শই স্কুল কামাই দেওয়ার প্রবনতা দেখা গিয়েছে। তার বাবার উচ্চাশা সত্বেও স্কুলের পাঠ্যবিষয়গুলোর প্রতি আলেকজান্ডারের কোন আগ্রহই ছিল না বরং বিজ্ঞান এবং বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে তার মারাত্বক আগ্রহ ছিল। শিশুকাল থেকেই আলেকজান্ডার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতুহলি ছিলেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে পেরেকের ব্রাশ এবং ঘুর্ণায়মান প্যাডেলের সমন্বয়ে আলেকজান্ডার একটি গম পেষাই যন্ত্র তৈরী করেন। স্কুল ত্যাগ করার পর আলেকজান্ডার তার দাদার সাথে বসবাস করার জন্য লন্ডনে গমন করেন। লন্ডনে তার দাদার সাথে থাকার সময় পড়াশুনার প্রতি তার গভীর ভালবাসা জন্মায়। দাদা আলেকজান্ডার বেল তার নাতিকে তারই শিক্ষানবিশ শিষ্য হিসেবে গ্রহন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আলেকজান্ডার শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে স্কটল্যান্ডের ওয়েস্টন হাউস একাডেমিতে যোগদান করেন। এর পরের বছর তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন যেখানে তার বড় ভাইও পড়েছিলেন। ১৮৬৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে কানাডায় চলে যান। স্বপরিবারে কানাডা চলে যাওয়ার আগে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেছিলেন। কানাডায় যাবার ১০ বছর পরে ১৮৮৮ সালে বেল পরিবার আমেরিকায় অভিবাসী হয়।

(আমেরিকান উদ্ভাবক এলিশা গ্রে)
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে সবচেয়ে বেশী পরিচিত হলেও মূলত তিনি এর প্রথম আবিষ্কারক নন। তিনি টেলিফোন যন্ত্রের প্রথম পেটেন্ট করেছিলেন বটে কিন্তু টেলিফেোনের আবিস্কারকের দাবি করতে পারেন অ্যান্তেনিও মিউচি। তিনি ১৮৫৭ সালে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক টেলিফোন আবিষ্কারের গবেষণায় সফলতা লাভ করেন। আর ১৮৬৫ সালে ইটালিয়ান আবিষ্কারক ইনোচেনযো মেনজাডি একটি স্পিকিং টেলিফোন আবিষ্কার করেন। হাঙ্গেরিয়ান আবিষ্কারক থিবেদার পুশকাস সুইচবোর্ড ও পার্টি লাইন আবিষ্কার করে টেলিফোনকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেন। তবে এরা বেল এর প্রধান প্রতিযোগী নন। বেল এর প্রধান প্রতিযোগী হলেন আমেরিকান উদ্ভাবক এলিশা গ্রে। ভাগ্য কখনো কখনো খুব নির্দয় হয় যেমন হয়েছিলো এলিশা গ্রের ক্ষেত্রে। সৌভাগ্য কিংবা দূঃভাগ্য, করুন অথবা মজার যাই হোক ব্যাপার হল এলিশা গ্রে এবং বেল একই দিন অর্থাৎ (১৮৭৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি) পেটেন্ট অফিসে যান টেলিফোন যন্ত্রের নিবন্ধন করার জন্য। তবে দুঃর্ভাগ্যজনকভাবে এলিশা গ্রে’র আইনজীবী বেল এর চেয়ে কয়েকঘন্টা পরে যাওয়ায় ১৮৭৬ সালে আলেকজাণ্ডার গ্রাহাম বেলকে টেলিফোনের প্রথম মার্কিন পেটেন্টের সম্মানে ভূষিত করা হয় এবং শেষপর্যন্ত বেলই টেলিফোন আবিষ্কারের কৃর্তত্ব লাভ করেন।

আজ আমরা দিনে বহুবার উচ্চারণ করি (Hello ) হ্যালো শব্দটি। এই Hello শব্দটি প্রথম উচ্চারিত হয়ে ছিল আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল-এর মুখেই। হ্যালো তার বান্ধবীর নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো। কথিত আছে ১৮৭৬ সালে টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি তার বান্ধবী হ্যালো কে-ই প্রথম ফোনটি করেছিলেন। যদিও বিতর্ক আছে আদৌ তার কোনো বান্ধবী ছিল কী-না। কারন মার্গারেট হেলো নামে কোন মহিলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি যাকে তিনি সত্যিকার ভালোবাসতেন। অনেকে বলেন বধির স্ত্রী ম্যাবেল হাবার্ড বেল ব্যাতীত তাঁর আর কোনো ভালোবাসার মানুষ ছিল না। মাবেল গার্ডিনার হুবার্ড ছিলেন গ্রাহাম বেলের বাগদত্তা। মাবেল ছিলেন শ্রবণ ও বাকশক্তিরহীতা। মাবেলের পিতা ধনী আইনজ্ঞ ছিলেন। তিনিই আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল-কে গবেষণা চালিয়ে যাবার খরচ পাতি যুগিয়ে ছিলেন। তবে টেলিফোন আবিষ্কার হবু শ্বশুরের উদ্দেশ্য ছিলো না। যতদূর যানা যায় , হবু শ্বশুর চেয়েছিলেন হিযারিং এইড জাতীয ডিভাইস আবিষ্কার করতে - যাতে তাঁর কণ্যা শ্রবণশক্তি ফিরে পান। কারণ শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মাবেলের পক্ষে টেলিফোনের কোনো শব্দই শোনার কথা না।

(গ্রাহাম বেল, মাবেল এর পরিবার)
আলেক্জান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর টেলিফোন প্যাটেন্ট করেন ১৮৭৬ সালে। পরের বছর ১৮৭৭-তে মাবেল-কে বিয়ে করেন তিনি। বেল ও মাবেলের ৪ সন্তান। এদের মাঝে ২ ছেলে শিশু অবস্থায় মারা যায়। কাকতালীয়ভাবে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল'এর মা এলিজা গ্রেইস সাইমন্ড্স বেল ও তাঁর স্ত্রী ম্যাবেল হুবার্ড উভয়েই ছিলেন বাক প্রতিবন্ধী অর্থাৎ বোবা। এ কারেনেই তিনি বোবাদের জীবনযাত্রার মান উন্নযনে অনেক গবেষণা করেছেন। তাঁকে বোবাদের পিতা তথা Father of the Dumb নামেও ডাকা হতো। টেলিফোন উদ্ভাবনের আগে থেকেই তিনি শ্রবণ ও কথন সংশ্লিষ্ট গবেষণা নিয়োজিত ছিলেন। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন যে টেলিফোন, সেটিকেই তিনি এক উটকো ঝামেলা মনে করতেন। এজন্যেই তিনি নিজের গবেষণা ও অধ্যায়ন কক্ষে কোন টেলিফোন রাখতেন না।

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৯২২ সালের ২রা আগষ্ট আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে পার্নিসিযাস অ্যানিমিযা রোগে নোভা স্কটিযা, কানাডায় মৃত্যুবরন করেন। বেল মারা যাওযার পর আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের জন্য অবিরাম রিং বাজানো হয। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য মতে যে মহান ব্যক্তি মানুষে-মানুষে যোগাযোগের এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাকে উপযুক্ত সম্মান দেখানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে। আজ এই মহান আবিস্কারকের ১৭২তম জন্মবার্ষিকী। বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও টেলিফোন যন্ত্রের আবিস্কারক পদার্থবিদ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালাবাসায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট বিজ্ঞানী।

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সবাইকে গ্রেটের কাতারে দাড় করালে চলবে।
কেউ কেউ বেশী গ্রেট কেউ আবার একটু কম গ্রেট তাইনা !
যা হোক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.