নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী সত্যেন সেনের ১১২তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৪৪


প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পী সংঘ, উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ও রাজনীতিবিদ সত্যেন সেন। এ দেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সত্যেন সেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এদেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারার সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সত্যেন সেনের সৃষ্টিকর্ম ও সাহিত্য হলো সমাজ বাস্তবতার স্পষ্ট প্রকৃতি-স্বরূপের প্রতিচ্ছবি। তাঁর জীবনের সকল কিছুতেই মৌলিক বিষয় হিসেবে কাজ করেছে মানুষের জীবন-সংগ্রাম ও শ্রম-সভ্যতার ইতিহাস। স্বাধীনতার পর তিনি উদীচী পুনর্গঠনের কাজ করেন। সাহিত্য চর্চাও অব্যহত রাখেন। গান মাধ্যমে মানুষকে জাগরিত করা সহজ। এই উপলব্দি নিয়ে গণমানুষের জন্য মানুষের জীবন বাস্তবতার গান রচনা করেছেন। তাঁর গানের মূল বিষয়বস্তু হলো অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, শোষণমুক্তির জন্য আন্দোলন ও সাম্য-সুন্দর মানুষের পৃথিবী নির্মাণ। গান রচনার মাধ্যমেই মূলত তাঁর লেখালেখি জগতে আশা। পাশাপাশি গানের সুর করা ও গান শেখানোর কাজও তিনি করেছেন। শ্রমিকদের নিয়ে তিনি তাঁদের নিয়ে গান এবং পালা রচনা করতেন। গানের দল গঠন করে শ্রমিকদের এ কবিগান তিনি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ পরিবেশন করতেন। তার লেখা ১১টি গানের মধ্যে ‘চাষি দে তোর লাল সেলাম/তোর লাল নিশানারে’ গানটি তখন চাষিদের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৫৬ সালে বিক্রমপুরের ষোলঘরে কৃষক সমিতির সম্মেলনে প্রথম তারই নেতৃত্বে গানটি গাওয়া হয়। এছাড়া সত্যেন সেন গানের মাধ্যমে বরিশালে মনোরমা বসু মাসিমার ‘মাতৃমন্দিরের’ জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। সত্যেন সেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের বাঁকে তিনি কোথাও আপোষ করেননি। যারা করেছে, তাঁদেরকে তিনি ঘৃণা করতেন। তিনি মূলত কোনো লেখাই লেখার জন্য লিখতেন না। তিনি লিখতে মানূষের অধিকারের কথাগুলো। প্রথমে দৈনিক ‘মিল্লাত’ পরবর্তী সময়ে দৈনিক ‘সংবাদ’র মাধ্যমে সত্যেন সেন সাংবাদিকতা করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, শ্রমিক সংগঠক সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের আজকের দিনে মুন্সীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ১১২তম জন্মবার্ষিকী। সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ও রাজনীতিবিদ সত্যেন সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের মার্চ ২৮ তারিখে বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় ডাক নাম ছিল লস্কর। তার পিতা নাম ধরনীমোহন সেন, এবং মাতার নাম মৃণালীনি সেন। চার সন্তানের মধ্যে সত্যেন ছিল সর্বকনিষ্ঠ। সোনারং গ্রামের সেন পরিবার ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার এক অনন্য উদাহরণ। সত্যেনের কাকা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তার আর এক কাকা মনোমোহন সেন ছিলেন শিশুসাহিত্যিক। সত্যেন সেনের পরিবারেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়। প্রাইমারী ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও পরিবার ও গৃহ শিক্ষকের কাছেই সম্পন্ন করেছিলেন। ১৯১৯ সালে সোনারং হাইস্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯২১ সালে তিনি যখন সোনারং হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ লাভ করে। ১৯২৪ সালে সোনারঙ হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন।এবং সেখানকার একটি কলেজ থেকে এফএ ও বিএ পাস করেন। এর পর তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস বিভাগে এমএ শ্রেণীতে ভর্তি হন। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে ১৯৩১ সালে কারাবরণ করলে জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি কৃষক আন্দোলনে যোগদেন এবং আমৃত্যু বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও সত্যেন সেন ছিলেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক। প্রথমে দৈনিক মিল্লাতে তাঁর সাংবাদিক জীবনের শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ‘সংবাদ’র মাধ্যমে সত্যেন সেন সাংবাদিকতা করেছেন। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের বাঁকে তিনি কোথাও আপোষ করেননি। যারা করেছে, তাঁদেরকে তিনি ঘৃণা করতেন। শ্রমিক সংগঠক ও কথাশিল্পী সত্যেন সেন ১৯৬৯ সালে বিপ্লবী রণেশ দাশগুপ্ত, শহিদুল্লা কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এদেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারার সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সত্যেন সেনের সৃষ্টিকর্ম ও সাহিত্য হলো সমাজ বাস্তবতার স্পষ্ট প্রকৃতি-স্বরূপের প্রতিচ্ছবি। তাঁর জীবনের সকল কিছুতেই মৌলিক বিষয় হিসেবে কাজ করেছে মানুষের জীবন-সংগ্রাম ও শ্রম-সভ্যতার ইতিহাস। স্বাধীনতার পর তিনি উদীচী পুনর্গঠনের কাজ করেন। সাহিত্য চর্চাও অব্যহত রাখেন। গান মাধ্যমে মানুষকে জাগরিত করা সহজ। এই উপলব্দি নিয়ে গণমানুষের জন্য মানুষের জীবন বাস্তবতার গান রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ও গণসঙ্গীতের সুকন্ঠ গায়ক এবং গণসঙ্গীত রচয়িতা। জন্মলগ্ন থেকে উদীচী অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম করে আসছে। উদীচী ’৬৮, ’৬৯, ’৭০, ’৭১, সালে বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম।

সত্যেন সেনের সাহিত্যকর্ম সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার একটি নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যের অনন্য পথিকৃৎ। মানুষের জীবন ও ইতিহাসকে যে রচনাকার সামগ্রীকভাবে অবলোকন করতে সক্ষম না হন, যিনি মানব সমাজটাকে তার বর্তমানের সকল বৈষম্য দূর করে সঙ্গতিপূর্ণ এক মানব সমাজ সৃষ্টিতে নিজেকে উৎসর্গ না করেন এবং যিনি দূরগামী সেই লক্ষ্যকে নিত্য মুহূর্তের কর্ম ও আচরণের সঙ্গে যুক্ত করতে না পারেন, তাঁর পক্ষে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার অনুপ্রেরণাদায়ক সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়। সত্যেন সেন পরিণত বয়সে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন এবং তাঁর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। তিনি মূলত কোনো লেখাই লেখার জন্য লিখতেন না। তিনি লিখতে মানূষের অধিকারের কথাগুলো। সত্যেন সেনের সাহিত্যকর্ম সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার একটি নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যের অনন্য পথিকৃৎ। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমূহঃ

১। মহা বিদ্রোহের কাহিনী, ২। ভোরের বিহঙ্গী, ৩। রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ, ৪। অভিশপ্ত নগরী, ৫। পাপের সন্তান, ৬। সেয়ান, ৭। পদচিহ্ন, ৮। পুরুষমেধ, ৯। আলবেরুনী, ১০। সাত নম্বর ওয়ার্ড, ১১। বিদ্রোহী কৈর্বত, ১২। কুমারজীব, ১৩। অপারেজয়, ১৪। মা, ১৫। উত্তরণ, ১৬। একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে ইত্যাদি। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ সত্যেন সেন ১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে সাহিত্য মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।

১৯৭৩ সালে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে সত্যেন সেনের । চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। আশ্রয় নেন শান্তি নিকেতনের তার মেজদিদি প্রতিভা সেনের কাছে। সাহিত্য চর্চা ও অসুস্থতার মাঝে চলে যায় ৮টি বছর। ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি শারীরিক অবস্থার অবনতির হলে শান্তি নিকেতনের গুরুপল্লীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ১১২তম জন্মবার্ষিকী। আজীবন সংগ্রামী কৃষক সংগঠক, শিল্পী, সাংবাদিক ও লেখক সত্যেন সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৫৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো পোষ্ট।

২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ আপনাকে মাহমুদুর রহমান ভাই
ভালো থাকবেন সবসময়।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:১৩

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: ফুলেল শুভেচ্ছা তাঁকে।

২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আকতার ভাই
শুভেচ্ছা জানবেন।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৩০

হাবিব বলেছেন: বিপ্লবী সত্যেন সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সামুতে পুনরায় আপনার আগমন
শুভেচ্ছা স্বাগতম। কই ছিলেন এত দিন?

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:১৬

হাবিব বলেছেন: এতোদিন আমি কেন ব্লগ থেকে দূরে ছিলাম!

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.