নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আলহামদুলিল্লাহ ...। আজ শুক্রবার, শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন। সপ্তাহের সকল দিনের শ্রেষ্ঠ দিন জুম্মাবার। আরবি শব্দ জুমুআ-এর অর্থ একত্র হওয়া। আল্লাহতায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়। আল্লাহতায়ালা এই দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ।’ সূরা জুমুআ :০৯ ।শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেন তার খুতবায়। প্রথম হিজরিতে জুমার নামাজ ফরজ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ। হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি—এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩) মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন।
জুমা বারের ফজিলতঃ
সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তারা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন। হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯) এদিন যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩ ) জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)
জুম্মাবারে মনিন বান্দাদের করনীয়ঃ শুক্রবারে বিশেষ করণীয় হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। এই সূরা তিলাওয়াতের ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যারা জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাদের জন্য একটা নূর সৃষ্টি করবেন, যা কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আলোর কারণ হবে।’ শুক্রবারের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। সে সঙ্গে উল্লেখ করেছেন এ দিনের কিছু আমলের কথা, যে আমলের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়। শুক্রবারে মসজিদে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হলো, ইমামের কাছাকাছি বসার চেষ্টা করা, চুপচাপ খুতবা শোনা, সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করা, রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা ও আল্লাহর কাছে প্রচুর পরিমাণে দোয়া করা। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হলো জুমার দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। সহিহ বোখারি। এ দিনে নিম্নলিখিতি সুন্নাত গুলো আদায় করতে সচেষ্ট হনঃ
১) ফজরের সালাত জামাতে আদায় করুন (আল-বায়হাকী, সহী আল-আলবানি-১১১৯)
২) সালাত আল-জুম্মার পূর্বের এবং পরের করণীয়ঃ
৩) জুম্মার দিন গোসল করা (বুখারী এবং মুসলিম:১৯৫১ এবং ৯৭৭)
৪) জুম্মার সালাতে শীঘ্র উপস্থিত হওয়া (বুখারী এবং মুসলিম: ৯২৯ এবং ১৯৬৪)
৫) পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা (আল-তিরমিজি-৪৯৬)
৬) মনোযোগ সহকারে জুম্মার খুৎবা শোনা (আল-বুখারী ৯৩৪ এবং মুসলিম ৮৫১)
হুসিয়ারীঃ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স.) যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই। (মুসলিম : ৬৫২, মুসনাদে আহমাদঃ ৩৮১৬, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৫৩৯, আসু-সুনানুল কুবরা : ৪৯৩৫)। যে ব্যক্তি এদিনে অনর্থক কর্ম করল এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করল সে ব্যক্তির জুমুআহ যোহরে পরিণত হয়ে যাবে।” (সুনানু আবূ দাঊদ, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ তারগীব ৭২০নং) (মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী, সহীহুল জামে ৫৭৭। জুমার নামাজে মুসলি্লরা যাবতীয় কাজকর্ম স্থগিত রেখে মসজিদ অভিমুখে গমন করেন এবং সবাই একত্রে জামাতে নামাজ আদায় করেন। এভাবে মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। গড়ে ওঠে সামাজিক ভ্রাতৃত্ব, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, পারস্পরিক হৃদ্যতা ও সম্প্রীতি। আর মানুষের প্রতি রোজার বিধান প্রদানের উদ্দেশ্যই হলো, মানুষের মধ্যে উল্লেখিত গুণগুলো সৃষ্টি করা। জুমা'আর এই দিনে আসুন আমরা সবাই আল্লাহ্ তা'আলার কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও "জান্নাতুল ফিরদাউস" লাভের জন্য দোয়া করি। সবাইকে জুম্মা মোবারক।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
২| ০৭ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮
লক্ষণ ভান্ডারী বলেছেন: নুরুভাইজান।
সুন্দর লিখেন আপনি। আপনার লেখা পাঠ করে ধর্মীয় কিছু নতুন তথ্য জেনে নিলাম।
সাথে থাকবেন। এটা প্রত্যাশা রাখি। বিগত ঈদের শুভেচ্ছা রইল।
জয়গুরু।
৩| ০৭ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৭
মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: জুম্মা মোবারক,জুম্মার নামায পড়ে এসেই আপনার তথ্যবহল দরকারী পোস্ট পড়লাম।
৪| ০৭ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আজ জুম্মা পড়া হয় নি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:৩১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: মসজিদে আযান হয়েছে,
আসুন নামাজে যাই ।