নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার বুলবুল গায়ক ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দীন আহমদের ১১৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১৬


বাংলার বুলবুল গায়ক অমর ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আব্বাস উদ্দীনের পরিচিতি দেশজোড়া। আধুনিক গান, স্বদেশী গান, ইসলামি গান, পল্লীগীতি, উর্দুগান সবই তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লীগীতিতে তার মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। ত্রিভূবনের প্রিয় মুহাম্মদ, তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে অথবা ওকি গাড়িয়াল ভাই, আমার গহিন গাঙের নাইয়া… ইত্যাদি গান গেয়ে যিনি সমগ্র বাংলা মাতোয়ারা করেছিলেন, তিনিই শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদ। অদ্ভুত সুন্দর-সুমধুর কণ্ঠস্বর, একবার শুনেই যিনি গানকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারতেন, কেবল নিজের সাধনা বলেই যিনি নিখুঁতভাবে গান গাওয়া শেখেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি প্রথম গেয়েছিলেন আব্বাস উদ্দিন আহমদ। এই গানটি এমন একটি গান যে গান না শুনলে আমাদের সংস্কৃতিতে রোজার ঈদকে ঈদই মনে হয় না। সেই ঐতিহ্যবাহী গানের সঙ্গীত শিল্পী আমাদের দেশজ গানের মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদের ১১৪তম জন্ম দিন আজ। ১৯০১ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ। কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদের ১১৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদ ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাফর আলী আহমদ এবং মায়ের না বেগম লুৎফন নেসা। পিতা পেশায় ছিলেন আইনজীবি। আব্বাস উদ্দীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের এক প্রাইমারি স্কুলে। যেমন ছিল তার গানের গলা, তেমনি পড়াশোনাতেও গভীর মনোযোগ। খুব ভালো ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯১৯ সালে তুফানগঞ্জ হাইস্কুল থেকে আব্বাস উদ্দীন ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। কিন্তু এখানে বেশিদিন থাকা হয়নি। তার মন এবং স্বাস্থ্য কোনোটাই ভালো যাচ্ছিল না। তাই তিনি রাজশাহী কলেজ ছেড়ে এসে ভর্তি হলেন কাছের শহর কুচবিহার কলেজে। ১৯২১ সালে কুচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এখান থেকে বিএ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে তিনি কোলকাতায় চলে আসেন এবং সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে আব্বাস উদ্দীণ আত্মপ্রকাশ করেন আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে। আব্বাস উদ্দীন যে সময় গান শুরু করেন সময়টা ছিল বাংলার মুসলমান সমাজের নবজাগরণের কাল। আব্বাস উদ্দীন নবজাগরণের শিল্পী। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং অন্যান্য মুসলমান কবি-সাহিত্যিকরা তাদের রচনা দিয়ে মুসলিম চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। কুচবিহারে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আব্বাস উদ্দীনের প্রথম পরিচয় ঘটে। নজরুলও খুব স্নেহ করতেন আব্বাস উদ্দীনকে। কবি সকলের কাছে আব্বাস উদ্দীনকে পরিচয় দিতেন ‘আমার ছোট ভাই’ বলে। প্রায় বিশ বছর তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহচর্যে ছিলেন। আব্বাস উদ্দীন নজরুলের অনেকগুলো গান এরই মধ্যে রেকর্ড করে ফেলেছেন। তাই তাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তার প্রথম রেকর্ডের গান ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল মরে গো’ ও অপর পিঠে ‘স্মরণ পায়ের ওগো প্রিয়’ বাজারে বের হবার পর পরই সাড়া পড়ে যায়। আব্বাস উদ্দিন ছিলেন প্রথম মুসল্মান গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ এম ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করতেন। রেকর্ড গুলো ছিল বাণিজ্যিক ভাবে ভীষণ সফল। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামি ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দীন আহমদ ছিলেন সেই শতাব্দীর প্রতিভা।

গানের জগতে আব্বাস উদ্দীনের কোনো ওস্তাদের তালিম ছিল না। আপন প্রতিভাবলে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরেন। তিনি প্রথমে ছিলেন পল্লীগায়ের একজন গায়ক। যাত্রা , থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে তিনি গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর নিকট উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখেছিলেন। রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে আব্বাস উদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। তারপর জারি, সারি, ভাটিয়ালি , মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান ইত্যাদি গান গেয়ে জনপ্রিয় হন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লি গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা আজও অদ্বিতীয়। আব্বাস উদ্দীন ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। প্রথমে তিনি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীত্বের সময় তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চল্লিশের দশকে আব্বাস উদ্দিনের গান পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে মুসলিম জনতার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭ সালে) ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন। আব্বাস পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে উদ্দীন আহমেদ ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংগীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তার্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে যোগদান করেন।

গানে কণ্ঠদানের পাশাপাশি আব্বাস উদ্দীন আহমেদ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি মোট ৪টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই ৪টি সিনেমা হলো 'বিষ্ণুমায়া' (১৯৩২),'মহানিশা' (১৯৩৬),'একটি কথা' ও 'ঠিকাদার'(১৯৪০)। ঠিকাদার সিনেমাতে আব্বাস উদ্দীন একজন কুলির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এসব সিনেমাতে তিনি গানও করেছিলেন। তখনকার দিনে মুসলমান ব্যাক্তির সিনেমা করা ছিল একটা ব্যতিক্রম ঘটনা। ধারণা করা হয় যে তিনি এর চেয়ে বেশি সংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও তা উল্লেখ করেন নি। কারণ সেই চরিত্রগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। আব্বাস উদ্দীনের রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় সাতশত। তার লেখা ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ (১৯৬০) একটি মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ আত্মচরিত একমাত্র গ্রন্থ। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (১৯৮১) ভূষিত হন। শিল্পী আব্বাস উদ্দীন পিতা হিসেবেও ছিলেন সফল। তার বড় ছেলে ড. মোস্তফা কামাল বার এট ল’ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতি ছিলেন। মেজো ছেলে মোস্তফা জামান আব্বাসী একজন প্রথিতযথা কণ্ঠশিল্পী ও লেখক। একমাত্র মেয়ে ফেরদৌসী রহমানের নাম কারোরই অজানা নয়। আধুনিক, খেয়াল, গজল, ভাইয়াইয়া, ঠুংরী প্রভৃতি গানে স্বনামখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের সমান দখল রয়েছে।

পল্লীগানের এই মহান সম্রাট ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ৭ টা ২০ মিনিট বাংলার কোটি হৃদয় ভাসিয়ে তিনি চির বিদায় নেন। মাত্র ৫৮ বছরের হায়াতে জিন্দেগীতে শিল্পী আব্বাস উদ্দীন সঙ্গীত জগতে যে অবদান রেখে গেছেন, তা এ জাতি যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে। তার গাওয়া গান হাজার বছর বাংলার মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন তুলবে। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সন্তান মোস্তফা জামান আব্বাসী, ফেরদৌসি রহমানসহ লক্ষ ভাওয়াইয়া শিল্পী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভাওয়াইয়া সংস্কৃতিকে। বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদের আজ ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। ভাওয়াইয়া সম্রাটের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছ।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:


উনার ছেলেমেয়েরা খুবই ভালো করেছেন জীবনে।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৩৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের লেখা 'আমার শিল্পী জীবনের কথা' বইটি ১৯৬৯ সালে আমি পড়েছি। তখন আমি দশম শ্রেনির ছাত্র ছিলাম।
উনার ১১৮ তম জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:



উনি তো গান গেয়ে মানুষ নাচাইয়া ওপারে গেছেন, সেখানে উনার কি অবস্হা হয় কে জানে!

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকার জিপিও জায়গাটা কি উনাদের??

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: -------ওপারের বিষয়ে শুধু বাহ্যিক আচরণ/আলামত-ই বিচার্য নয়; মানুষের বাতেনি (গোপন- আমল/ইবাদত) যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টির অগোচরেই করে থাকে। সেটাও বিবেচ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন- উনাকে জান্নাত নসীব করুন। আমিন।

পুনশ্চ: নূর ভাই --্আবার ব্লগ পড়তে পেড়ে - আহ্লাদিত। ধন্যবাদ আপনার ধারাবাহিক লেখার জন্য। যে গুলো মিস করেছি - সেগুলো চেষ্ঠা করব পড়ে দেখার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.