নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের ৮১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৭


“নিঃশ্বঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর বড় সম্পদ নেই” এই উক্তিটি যার তিনি কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অমীমাংসিত একটি চরিত্র কর্নেল তাহের। একটি আদর্শকে তাড়া করতে গিয়ে একজন মানুষ যতটুকু দিতে পারেন, দিয়েছেন সবটুকুই। যদিও সে আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু তথাকথিত বহু সাফল্যের চেয়ে কোনো কোনো ব্যর্থতাও হয়ে উঠতে পারে উজ্জ্বল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। স্বাধীনতা যুদ্ধে দুঃসাহসিক এক অভিযানের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, যুদ্ধক্ষেত্রের দুর্ধর্ষ এক অপারেশনে হারিয়েছেন একটি পা, ক্রাচে ভর দিয়ে তারপর নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরল এক সিপাহি অভ্যুত্থানের এবং সর্বোপরি কিংবদন্তি সেই ক্ষুদিরামের পর শিকার হয়েছেন উপমহাদেশের দ্বিতীয় রাজনৈতিক ফাঁসির। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীর আজ ৮১তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে ভারতের আসাম প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন কর্ণেল আবু তাহের। জন্মদিনে মুক্তিযোদ্ধা এবং বামপন্থী বিপ্লবের নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছায়।

মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী এই মহান যোদ্ধা ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসাম প্রদেশের বাদারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরে আসাম থেকে তাঁর পরিবার বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় আসেন। তাঁর বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম আশরাফুন্নেছা। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন চট্টগ্রামের প্রবর্তক স্কুল ও কুমিল্লার ইউসুফ স্কুল থেকে। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগদেন। ১৯৭১ সালে তিনি ১১ নাম্বার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ৭১’সালের ১৪ নভেম্বর কামালপুরে সম্মুখ যুদ্ধে এই বীর সেনানী গোলার আঘাতে আহত হয়ে তার বা পা হারান। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। একই বছর সেনাবাহিনী হতে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আকাঙ্খায় জাসদীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।

জাসদে যোগদানের পূর্বে তাহের বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে ব্যাপক মত বিনিময় করেছিলেন। তাহের যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাদের মধ্যে ছিলেন জনাব বদরুদ্দিন উমর, কমরেড তোয়াহা, মনজুরুল আহসান খান, আবুল বাশার, সিরাজুল হোসেন খান, দেবেন শিকদার এবং সিরাজ শিকদার ছাড়াও অন্যান্য বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। তাঁরা আলোচনা করেছেন বিপ্লবের নীতি ও কৌশল নিয়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন আবাসভূমি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলেও সমাজ বদলে জাসদের বিপ্লবী প্রচেষ্টা সফল হয় নি। কিন্তু যে সমৃদ্ধ আন্দোলনের ইতিহাস তারা রচনা করেছেন, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানের বাস্তবতায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশকে বদলে দেয়ার লড়াইয়ে সামিল করা জাসদের পোড় খাওয়া সংগ্রামী এবং আপোষহীন নেতা ও সংগঠকদের এক ঐতিহাসিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাসদ, গণবাহিনী ও সৈনিক সংস্থার উদ্যোগে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী জনতার অভ্যূত্থান সংঘঠিত হয়। এসময় জাসদ নেতৃত্বসহ কর্নেল তাহের গ্রেফতার হয়ে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে প্রসহনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম, সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও বিচারপতি আব্দুস সাত্তার (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কর্নেল এমএ তাহেরের সামরিক আদালতে বিচারের প্রক্রিয়া করেন। এরই এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এমএ তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এ মামলায় কর্নেল তাহের সহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইউসুফ হায়দার। কর্নেল ইউসুফ হায়দার কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন এক পর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেনঃ আমি আমার জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখিছি, আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।”এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

জিয়াউর রহমান, আব্দুস সাত্তার ও আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমই কর্নেল তাহেরের বিচারের পরিকল্পনা করেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশু। এর আগে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ ই-মেইলের মাধ্যমে বলেছিলেন, তাহেরের ফাঁসির আদেশ 'পূর্বনির্ধারিত' ও 'পরিকল্পিত' ছিল। কর্নেল আবু তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেই সামরিক আদালতে তার বিচার সাজিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনীতির ওই যুগসন্ধিক্ষণে গোপন আদালতে ওই বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেয়া রায়ের অভিমতে একথা বলা হয়েছে। হাই কোর্ট বলেছে, তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার তাহেরকে বিচারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিলো।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদেরডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে লেখক অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন যে, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার মনস্থির করেছিলেন। আদালত এ প্রসঙ্গে বলেছে, যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জেনারেল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তার বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। মামলার শুনানির এক পর্যায়ে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আদালত কক্ষে এলে লেখা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। “তিনি স্বীকার করেন তিনি এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখক এবং তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন,” বলেছে আদালত।

আ্মাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি পা হারিয়েও কর্নেল আবু তাহের যেভাবে তাঁর মনোবল শক্ত রাখতে পেরেছিলেন তা নিঃসন্দেহে অনুসরনযোগ্য। তবে পরিতাপের বিষয় সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের সাহচর্য না পেয়ে মানুষটি যাকে বিশ্বাস করেছিল সে বিশ্বাসঘাতকতা করে এই দেশ থেকে মুছে দিতে চেয়েছে একজন দেশপ্রেমিকের নাম। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীর আজ ৮১তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে মুক্তিযোদ্ধা এবং বামপন্থী বিপ্লবের নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কর্নেল তাহের বলেছিলেন - মুজিবের লাশ দাফন না করে উচিত ছিলো সাগরে ফেলে দেয়া।
আমি কর্নেল তাহেরকে শ্রদ্ধা করি। তবে আমি বিশ্বাস করি, যে কোন ভয়াবহ অন্যায়ের ফলাফল মানুষ দুই জায়গায় পায়।
এই ধরনের একটি অন্যায় মনোভাব রাখার কারনেই হয়ত তাঁর বিনাদোষে ফাঁসি হয়েছে আর কেউ বা সামরিক ক্যুতে নিহত হয়েছেন। প্রকৃতির বিচার খুবই নির্মম।


১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কাভা ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শত ব্যস্ততার মাঝে আমার লেখা জনতার কর্ণেল তাহেরের প্রবন্ধে আপনার মূল্যকান মন্তব্য প্রদানের জন্য। তবে আমার বিশ্বাস যে তাহের জনতার, সে তাহের মরে নাই। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ জুলাই একটি কালো দিন। এই দিনে বিশেষ সামরিক আদালতে প্রহসনের এক বিচারে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীরউত্তম কর্নেল আবু তাহেরকে। আপনি জানেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে ফারুক-রশিদের নেতৃত্বাধীন একদল উচ্ছৃঙ্খল ক্ষমতালোভী সামরিক অফিসার। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সামরিক বাহিনীতে একের পর এক ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর ঘটনা ঘটতে থাকে। মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে ক্যান্টনমেন্টে একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। সর্বশেষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে নিজে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে আবির্ভূত হন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ক্যান্টনমেন্ট। এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান বীরউত্তম তাহেরের কাছে এই বলে সাহায্য প্রার্থনা করেন যেনো তাঁকে বাঁচানো হয়। নানা ঘটনা প্রবাহে বীর উত্তম তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাহেরের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সিপাহীরাই জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন। জিয়া মুক্ত হওয়ার পর তাহেরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেন। কিন্তু দ্রুতই চোখ উল্টে ফেলেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতা কুক্ষিগত করেই সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেন। ৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর বীর উত্তম তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রেপ্তারের আগে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বীরউত্তম তাহেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করে এক নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান। এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারিগর ছিলেন তিনিই। তারই নীলনকশা অনুযায়ী অত্যন্ত গোপনে এবং তড়িঘড়ি করে হত্যাকাণ্ড সম্পাদন করা হয়েছিল। বিপ্লবী তাহের দৃঢ়তার সাথে নিজ হাতে ফাঁসির রশি নিজের গলায় পড়ে সারাবিশ্বে মুক্তিকামী মানুষের জন্যে এক অনন্য নজীর স্থাপন করে যান। ফাঁসির আগে তিনি ছিলেন ভীষণ ধীর স্থির এবং শান্ত। তবে শাসকদের প্রতি তাঁর ঘৃণাটা ছিল মারাত্মক। ২০১১ সালের ২২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন সেই রায়ে বলা হয়েছিল-এই মৃত্যৃদন্ডাদেশ স্পষ্টতই সামরিক জান্তার বন্দুকের নল থেকে উৎসারিত স্বেচ্ছাচারী আইনের বল প্রয়োগ। ঠাণ্ডা মাথায় মাথায় খুন ছাড়া এই রায়কে আর কী বলা যায়।’ এই রায়ের আগে অন্যতম সাক্ষী হয়ে এসেছিলেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজ। যিনি গোপন বিচারের অন্যতম এক প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। বীরের মতো জীবনদানকারী প্রকৃত দেশপ্রেমিক এই বিপ্লবীর মৃত্যু নেই। মৃত্যু পর্যন্ত সৎ নির্লোভ থেকে দেখিয়ে গেছেন সাহসী পথ। মর্যাদার প্রশ্নে হার মানেননি কোনো বিশ্বাসঘাতকের কাছে। কর্নেল তাহের ছিলেন এক অসম সাহসী বীর যোদ্ধা তাই তার মৃত্যু নেই।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩৭

এমজেডএফ বলেছেন: কর্নেল তাহেরের ফাঁসীর পরিকল্পনায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণিত তথ্যগুলো যোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ গুরুত্বের সাথে লেখাটি পাঠ করার জন্য।
তাহেরের মৃত্যুদণ্ডকে ঠাণ্ডা মাথার খুন হিসেবে অভিহিত করা হয়। রায়ে বলা হয়, কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড একটি হত্যাকাণ্ড। কারণ, ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানে মনস্থির করেন। ওই হত্যাকাণ্ডকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিত্রিত করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু জেনারেল জিয়া জীবিত নেই, আইন অনুযায়ী তাঁর বিচার সম্ভব নয়। তাই দণ্ডবিধি অনুযায়ী তার বিচার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এ হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে সরকারের উচিত হবে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:২২

জগতারন বলেছেন:
ইতিহাস ও প্রকৃতির অভিশাপ কাউকে ক্ষমা করে না।
চাঁদ, সূর্য এবং সত্যকে কেউ কোনদিনও ঢাকিয়া রাখিতে পারে না।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এ কথা অনস্বীকার্য যে, কর্নেল আবু তাহের ছিলেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং বীর যোদ্ধা। তিনি এবং তার ৭ নভেম্বেরের বিপ্লব নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু তার দেশপ্রেম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং যুদ্ধের ময়দানে অসম সাহসিকতার বিষয়ে দ্বিমত থাকার কোন অবকাশ নেই
তার বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দীতে তাহের বলেন- ‘বাংলাদেশের মানুষ বীরের জাতি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই জাতি মরে যেতে পারে না। সাতই নভেম্বরের অভ্যুত্থান এ জাতিকে অদম্য সাহস যোগাবে। এ অভ্যুত্থান থেকে যে শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা তারা পেয়েছে তা ভবিষ্যতে তাদের পথ দেখাবে। আমি ভীত নই। আমার দেশ ও জাতিকে আমি ভালোবাসি। এ জাতির অস্তিত্বে আমি মিশে রয়েছি। কার সাহস আছে আমাদের আলাদা করার। নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড়ো সম্পদ নেই। আমি তার অধিকারী আমি আমার জাতিকে তা অর্জন করতে ডাক দিয়ে যাই।’

৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:০০

অনল চৌধুরী বলেছেন: তাহের যে গণ-বাহিনী গঠনের কথা বলেছিলেন,সেটা যুক্তিসঙ্গত ছিলো।
কিন্ত বিপ্লবের নামে তিনি একটা সুশংখল বাহিনীর মধ্যে খুনা-খুনীর সূচনা করেছিলেন,সেটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
তার কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
জিয়া-এরশাদরা ক্ষমতা নিতে পেরেছে।

তিনি তার মতবাদ নিয়ে বিপথে না হিয়ে জনগণকে সচেতন করার পথে যেতে পারতেন।
আদালতে তার মৃত্যদন্ডের রায় প্রহসন ছিলো,কিন্ত নিয়তি নির্ধারিত।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অমীমাংসিত একটি চরিত্র কর্নেল তাহের।
একটি আদর্শকে তাড়া করতে গিয়ে একজন মানুষ যতটুকু দিতে পারেন, দিয়েছেন সবটুকুই।
ইতিহাসের বিচার আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:০৬

নুরহোসেন নুর বলেছেন: ভাগ্য কখনোই পিছু ছেড়ে যায় না,
কর্নেল তাহেরের মত জিয়াউর রহমানেরও হয়েছে নিয়তির বিচার।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যুগে যুগে নরপিশাচ, বিশ্বাসঘাতকদের কাহিনী আমরা শুনে আসছি।
প্রথম দিকে আমরা যে যাই বলি না কেন, পরবর্তী সময়ে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।
যেমনটি ৩৫ বছর পর ফিরে এলো শহীদ তাহেরের জীবনে; তিনি কোনো অন্যায় করেননি,
ক্ষমতার লোভে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তার এ বিশ্বাসবোধ নিয়েই
সামরিক ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহের।

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.