নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুস সালামের ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৭


মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুস সালাম। ১৯৫২ সালে মাতৃ ভাষা রক্ষায় তাঁর অসামান্য ভূমিকা ও আত্মাহুতির কারণেই পরবর্তীকালে বাঙালি জাতিকে জাতীয় চেতনায় উজ্জ্বীবিত ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন আবদুস সালাম। পরে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯৫২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই মহান ভাষা শহীদের ৬৮তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুস সালামের মৃত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

আবদুস সালাম ১৯২৫ সালের ২৫ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া এবং মাতার নাম দৌলতের নেছা। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে আবদুস সালাম ছিলেন সবার বড়। আবদুস সালাম স্থানীয় মাতুভূঁইঞা করিমুল্লা জুনিয়র হাই স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। কর্ম জীবনে আবদুস সালাম তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের 'পিয়ন' হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬বি নং কোয়ার্টারে বাস করতেন। ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ ঢাকার রেস র্কোস ময়দানে তৎকালিন গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ় ভাষায় ঘোষনা করেন "উর্দূ, এবং উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা"। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে বাঙ্গালী, এমন সিদ্ধান্ত কখনো মানবো না এই দাবী উঠে সারা বাংলায়। এভাবে আরো ৪ বৎসর অতিবাহিত হয় তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র থামেনা। ১৯৫২ সালের ২৭শে জানুয়ারী পাকিস্তানের নব নিযুক্ত গর্ভণর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিন ঢাকায় এসে পুনরায় ঘোষনা দেন "উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"। এই ঘোষনা শুনার পর পুনরায় গর্জে উঠে বাঙ্গালী জাতি, প্রতিবাদে জ্বলে উঠে সারা বাংলা। ২১শে ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ র্কতৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে হরতালের ডাক দেওয়া হয়।


১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী, ৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ সকাল ৯টা হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জড়ো হতে লাগলো ছাত্র জনতা। পাকিস্তান সরকার ঐ দিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষনা করেন। একসময় সমবেত ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং গাজীউল হকের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সবাই মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিছিল যখন ঢাকা মেডিক্যালের কাছাকাছি আসে তখন ঢাকা জেলা প্রশাসক কোরাইশীর নির্দেশে শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলোগুলি। গুলিতে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। প্রথম শহীদ হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এম এ ক্লাশের ছাত্র আবুল বরকত। এরপর মারা যায়, জব্বার, শফিউর রহমান, রফিক আরো কয়েক জন নাম না জানা ছাত্র। ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিগ্রামে সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুনেন তার বাবা। আবদুস সালামসহ ১৭ জন ছাত্রকে মূমূর্ষভাবে অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সালামের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাশে থাকা সালামের ভাতিজা মকবুল আহম্মদ ধনা মিয়া ও সালামের জেঠাতো ভাই হাবিব উল্যাহ। সালামের ম্যাচের কাজের বুয়া তাদের চিনত। ঘটনার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সেই কাজের বুয়ার ছেলে মকবুলের কর্মস্থলে গিয়ে জানায় তার চাচা সালামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। মকবুল ছুটে যান হাবিব উল্যাহর কাছে। তারা দু’জনে মিলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দেখেন, পেটে গুলিবিদ্ধ সালাম সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বারান্দায় পড়ে আছেন। পর দিন সকাল ৯টার দিকে বেশ কিছু ছাত্র সালামের চিকিৎসা না করার অভিযোগে বেশ হট্টগোল করে। মকবুল ও হাবিব উল্যাহ হাসপাতালে যাতায়াতে থাকলেও ফাজিল মিয়া সংজ্ঞাহীন সালামের বিছানার পাশ থেকে নড়েননি। ২৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় আব্দুস সালামের। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর গোরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, জেঠাতো ভাই হাবিব উল্লাহসহ শত শত ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

২০০০ সালে তৎকালীন সরকার ভাষা শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানকালে গেজেটে তার মৃত্যুর তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারির স্থলে ৭ এপ্রিল উল্লেখ করা হয়। গেজেটে বলা হয় ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ এলোপাথাড়িভাবে গুলি চালালে অন্যান্যদের সাথে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯৫২ সালের ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন আবদুস সালাম। সেই থেকে সালামের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলেও রাষ্টীয়ভাবে ৭ এপ্রিল তার মৃত্যুৃদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শহীদ সালামের জীবিত একমাত্র ছোটভাই আবদুল করিমও ২৫ ফেব্রুয়ারি সালামের মৃত্যুর তারিখ স্বীকার করলেও সরকারি গেজেটের বিভ্রান্তিকর তারিখ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। মহান ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকার আবদুস সালাম কে ২০০০ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন। ফেনী স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ২০০০ সালে 'ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামে' রূপান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে দাগনভুঞা উপজেলা মিলনায়তনকে 'ভাষা শহীদ সালাম মিলনায়তন' করা হয় এবং তাঁর নিজ গ্রাম লক্ষ্মণপুরের নাম পরিবর্তন করে তার নামানুসারে 'সালাম নগর' রাখা হয়। আজ এই মহান ভাষা শহীদের ৬৮তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুস সালামের মৃত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন তারা বীর। তারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খানসাব
দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য
যাদের মধ্যে ভাষা শহীদ
আবদুস সালাম অন্যতম।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: তার পরিবার তখনও গরীব ছিল এখন গরীব । গ্রামের নাম, একটা পাঠাগার আর একটা পদক। এইছাড়া কিছুই না। শ্রদ্ধা ।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এমনই তো হয়
খেটে মরে যারা তারা
খেটে খেটেই যায়।
মধু যা খাবার তা
পল্টিবাজরাই খায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.