নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্র গবেষক এবং সমাজ কর্মী রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৪


বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রগতিশীল কবি, প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিসেবী, সমাজকর্মী ও সাহিত্যিক রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী। তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, চিঠিপত্রসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় নিবেদিত ছিলেন। ১৯৩৯ সালে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে শেষ সাহিত্য সভায় অভিভাষণ রচনা ও পাঠ করেন কবি রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী। রথীন্দ্রনাথ ঘটক চৌধুরী একসময় অগ্রণী, অরণী ইত্যাদি পত্রিকায় চাকরী ও পত্রিকা সম্পাদনার কাজে সহায়তা করতেন। ১৯৪৯ সালে অভিধার নামে একটি মাসিক পত্রিকার শারদীয় র্সখ্যার সম্পাদনা করেন। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় জাতিয়তায় পরিচালিত দেশভাগ বিরোধী কমিউনিষ্ট ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন চাষী কৃষকের তেভাগার সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সমগ্র প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় শরিক ছিলেন রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী। ১৯৭১ সালে স্থানীয় গুরুদাস বিদ্যালয় মাঠে সর্বদলীয় সভায় সভাপতি হিসেবে তিনি বাঙ্গালীর সমাজতান্ত্রিক স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। আজ এই সাংস্কৃতিসেবী ও সমাজকর্মীর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৮ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে কবির জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী ১৯২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুরের বর্তমান শরীয়তপুর জেলার বালুচরে শিক্ষা-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ সম্পন্ন জনশ্রদ্ধেয় এক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সূর্যকান্ত ঘটক চৌধুরী এবং মাতার নাম রত্নাবালা দেবী। সূর্যকান্ত ঘটক চৌধুরী ছিলেন ঐ অঞ্চলের জমিদার। তাদের আদিবাস ছিলো নড়িয়া উপজেলার রাজনগরে।পরবর্তীতে রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর পিতামহ রজনীকান্ত ঘটক চৌধুরী বর্তমান পালং উপজেলার বালুচর গ্রামে স্থায়ী নিবাস গড়েন। সূর্যকান্তের দশ সন্তানের মধ্যে রথীন্দ্রনাথ ঘটক ছিলেন তৃতীয়। জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি কখনোই জমিদারপ্রথার পক্ষে ছিলেন না। উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল জমিদারির মালিক হলেও স্কুলজীবনে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের তিনি ছিলেন সক্রিয় কর্মী। এর জন্য অবশ্য তাকে স্কুলজীবনেই দেড় বছর কারাবাসে কাটাতে হয়। রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় তুলাসার গুরুদাস উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় থেকে। ১৯৩৯ সালে এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ওই বছরেই তার পিতার হাত ধরে আশ্রম্য শিষ্যরূপে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। ১৯৪০ সালে শান্তিনিকেতন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে বি,এ ব্লাসে ভর্তি হন। তবে তার বি,এ পরীক্ষা দেওয়া হয়নি কারন বি,এ ক্লাসে অধ্যয়নকালে মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে কমিউনিষ্ট আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ১৯৪২ সালে তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রগতি লেখক শিল্পী সঙ্ঘে যোগ দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় ব্যাপক বোমাবাজি হলে বাধ্য হয়েই দেশে ফিরে আসেন রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুর্ভিপীড়িত বাংলায় আর্তমানবতার সেবায় নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন বৃহত্তর ফরিদপুরের অগ্রণী সৈনিক। ১৯৪৪ সালে তিনি অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনে তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয় কর্মী। এছাড়া তিনি ভাষা সংগ্রামেও নেতৃত্বদান করেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে প্রথম লোকগীতি উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর কথিকা পাঠের মাধ্যমে উৎসব সূচিত হয়। তিনি ১৬ বছরাধিক স্কুলে শিকতায় নিযুক্ত ছিলেন। স্থানীয় পালং ইউনিয়ন পরিষদে ২৫ বছরাধিক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী বিদ্যালয় শিক্ষক কবি রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী স্কুল, কলেজ, পাঠাগার, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠাসহ আদর্শিক বিভিন্ন সমাজকর্মে যুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তরকালে সংঘটিত দাঙ্গাকবলিত ও দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলার বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য, মজুদদারবিরোধী আন্দোলন, লঙ্গরখানা ও চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করেন।

শরীয়তপুর মাহাকুমা ও জেলা গঠনে রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর অবদান সর্বজন স্বীকৃত। ১৯৭৭ সালের ১লা নভেম্বর শরীয়তপুর মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় যার মূখ্য ভূমিকা পালন করেন রথীন্দ্রনাথ ঘটক চৌধুরী। ১৯৮৩ সালে শরীয়তপুর মহাকুমা বাতিল করে উপজেলা গঠন করলে জেলা বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে রথীন্দ্রনাথ ঘটক চৌধুরীকে সভাপতি করে শরীয়তপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। অবশেষে তার প্রচেষ্ঠায় ১৯৮৪ সালেল ১লা মার্চ বাংলাদেশ সরকার শরীয়তপুরকে জেলা হিসেবে উন্নীত করেন। এ ছাড়াও এতদাঞ্চলে স্কুল, কলেজ, পাঠাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চিকিৎসালয়, সেবা কেন্দ্র প্রভৃতি গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তার সাহিত্যযাত্রা শুরু হলেও ছাত্রজীবনে 'সাহিত্যিকা'র সম্পাদক হয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেন। রবীন্দ্রজীবনে শেষ শ্রদ্ধাবাসরের সম্মানপত্র লেখা ও পাঠ করার দায়িত্ব পালন তার সাহিত্যকীর্তির অন্যতম উদাহরণ। রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী আড়াই সহস্রাধিক কবিতা চারশতাধিক প্রবন্ধ, শতাধিক গল্প, শতাধিক সঙ্গীতসহ অজস্র সাহিত্য সংস্কৃতি সৃজন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ সুকান্তের হস্তারে কবিতার পান্ডুলিপি, পূর্বাপর, পদপে, রবীন্দ্র তরুমূলে, কয়েকজন লোক কবি ও প্রসঙ্গত, ঝরাপাতা ইত্যাদি। শান্তিনিকেতনে ছাত্রাবস্থায় তিনি রসবল্লভ ছদ্ধনামে উল্টো হাওয়া নামক একটি প্রহসন রচনা করেছিৈলেন যাতে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। মৃত্যুৃর আগে তিনি সোনার বাংলা গান বিতর্ক নামে একটি রচনা লিখেছিলেন যা প্রকাশিত হয়েছিলো তার মৃত্যুৃর পর ১৯৮৮ সালের সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। মুর্শিদী-ভাটিয়ালি, কবিগান, জারিগান ও ভাওয়াইয়া গান তিনিই জনপ্রিয় করে তোলেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই কবি ১৯৮৮ সালের ১৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুৃকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। মৃত্যুৃকালে তিনি স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী রানীঘটক চৌধুরী ও নয় সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। মৃত্যুর পরে ১৯৮৪র সালের ১২ জুলাই তার স্মৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠা করা হয় রথীন্দ্র সাতিত্য পরিষদ। রবীন্দ্র গবেষক রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর আজ ৩২তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে কবির জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৩

বিজন রয় বলেছেন: প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্র গবেষক এবং সমাজ কর্মী রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভাল আছেন তো?

১৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকেও ধন্যবাদ বিজন দাদা
রবীন্দ্র গবেষক এবং সমাজ কর্মী
রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।

২| ১৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১২

মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: আমিকি তাঁহার ২/৪ খানা কাব্যগ্রন্থের নাম জানিতে পারি? এর আগেও চেষ্টা করিয়াছিলাম কেহ জানাইতে পারে নাই। আমার পুরাতন কবি সাহিত্যিকদের বইপত্র কেনার বাতিক রহিয়াছে। ধন্যবাদ।

১৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:


জনাব বাসার সাহেব
ধন্যবাদ কবি্ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করিবার জন্য।
তবে যদি আপনি আমার লেখা প্রবন্ধটি মনযোগ সহকারে
পাঠ করিতেন তাহা হইলে আপনাকে অপরের স্মরণান্ন হইতে
হইতোনা। আপনি নিজেই তাহার কাব্যগ্রন্থের খোঁজখবর্ব পাইতে
পারিতেন। আপনার অমনোযোগীতার কারনে সে সুযোগ হইতে
বঞ্চিত হইয়াছেন। যা হোক রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী আড়াই সহস্রাধিক
কবিতা চারশতাধিক প্রবন্ধ, শতাধিক গল্প, শতাধিক সঙ্গীতসহ
অজস্র সাহিত্য সংস্কৃতি সৃজন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ সুকান্তের
হস্তাক্ষরে কবিতার পান্ডুলিপি, পূর্বাপর, পদপে, রবীন্দ্র তরুমূলে,
কয়েকজন লোক কবি ও প্রসঙ্গত, ঝরাপাতা ইত্যাদি।

৩| ১৫ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমার খুব আফসোস হয়। ট্র একটা জীবন। অথচ কত কিছু আছে জানার। চেনার। বুঝার।

১৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

কথা সত্য।
তাইতো কবি বলেনঃ
“এ খেদ মোর মনে
ভালবেসে মিটল না আশ- কুলাল না এ জীবনে
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?/ এ ভুবনে?

তবে সুখের মুহূর্তে জীবন ছোটো লাগে ।
আর দুঃখের মুহূর্তে অনন্ত সময় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.