নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর প্রতীক আহসান উল্লাহর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ। দুঃসাহসিক অভিযানের এক দলনেতা মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলের একটি উপদলের দলনেতা আহসান উল্লাহ। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ১৬ আগস্ট)। মোংলা বন্দরে পৃথিবীর বিখ্যাত যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো অপারেশনের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। দুঃসাহসিকতাপূর্ণ এই অভিযান তখন গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। মোংলা বন্দরে আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ জন নৌকমান্ডো অংশ নেন। ২০০৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন এই অকুতভয় মুক্তি যোদ্ধা। আজ তার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ ১৯৪২ সালের ২ ডিসেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আহমেদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আমিন উল্লাহ এবং মায়ের নাম জরিফা খাতুন। আহসান উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট আহসান উল্লাহ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজের কাছে থাকা ছোট রেডিও অন করলেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রটি অন করে কান পেতে থাকলেন। এই কেন্দ্রে একটি গান বাজার কথা। সেটা শুধু তিনিই জানেন। টিক টিক করে সময় এগোতে থাকল। সময় যেন কাটতেই চায় না। উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে আছেন। ঠিক যখন সাড়ে সাতটা, তখন তিনি শুনতে পেলেন তাঁর সেই কাঙ্ক্ষিত গান: ‘আমার পুতুল আজকে যাবে প্রথম শ্বশুরবাড়ি।’ গানটি শুনে আহসান উল্লাহ আর দেরি করলেন না। দ্রুত সহযোদ্ধা নৌকমান্ডোদের একত্র করে জানালেন, আজ রাতেই হবে তাঁদের প্রতীক্ষিত অপারেশন। তারপর আবেগময় কণ্ঠে সবাই শপথবাক্য পাঠ করলেন। এরপর সারা দিন গোপন শিবিরে উৎকণ্ঠায় কাটল। সন্ধ্যায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাতে রওনা হলেন লক্ষ্যস্থলে। গোপন শিবির থেকে লক্ষ্যস্থল পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে। তাঁরা লক্ষ্যস্থলে যখন পৌঁছালেন, তখন ভোর সাড়ে চারটা। তাঁর সহযোদ্ধারা দ্রুত বুকে মাইন বেঁধে নিলেন। তারপর পায়ে ফিনস পরে নিঃশব্দে নেমে পড়লেন পানিতে। পশুর নদীতে জাহাজ ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে। পানিতে নেমে নৌকমান্ডোরা ছড়িয়ে পড়লেন জাহাজগুলো লক্ষ্য করে। কোনো জাহাজের জন্য দুজন, কোনো জাহাজের জন্য একজন। নদীতে বড় বড় ঢেউ। বিশাল একেকটা ঢেউ শোঁ শোঁ শব্দে গড়িয়ে যাচ্ছে নৌকমান্ডোদের নাক-মুখের ওপর দিয়ে। অন্যদিকে বন্দরের সার্চলাইটের আলো সমানে ঘুরছে নদীর ওপর। কোনো কোনো জাহাজেরও সার্চলাইট জ্বালানো। আলোর ঝলকানির মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন তাঁরা।

নৌকমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে বেশির ভাগ জাহাজে লিমপেট মাইন লাগালেন। তারপর সময়ক্ষেপণ না করে সাঁতার কেটে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। তখন ভোর আনুমানিক সাড়ে পাঁচটা বা পৌনে ছয়টা। মাঝনদীতে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটল বিকট শব্দে। দু-তিন মিনিট পর আরেকটি। তারপর নদীতে শুরু হলো লঙ্কাকাণ্ড। একনাগাড়ে সাত-আট মিনিট ধরে একটির পর একটি মাইন বিস্ফোরণ। ৩৫-৪০টি মাইনের কান ফাটানো শব্দে বন্দরে অবস্থানরত আতঙ্কিত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করতে থাকল। এ ঘটনা মংলা বন্দরে। পৃথিবীর বিখ্যাত যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো অপারেশনের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। দুঃসাহসিকতাপূর্ণ এই অভিযান তখন গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। মংলা বন্দরে আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ জন নৌকমান্ডো অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আহসান উল্লাহকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৭৮। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী নূরজাহান বেগম ও দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেরা বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বসবাস করেন। আজ বীর মুুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ'র ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ধন্যবাদ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনার জন্য। অপারেশন জ্যাকপটের একটা অংশ হিসাবে উনি ও ওনার দল এই অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। অপারেশন জ্যাকপট এক সাথে ৪ জায়গায় একই সময়ে চালানো হয়েছিল ( চট্টগ্রাম, মংলা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ)। এটা সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আহসান উল্লাহর সাথে আপনার চেহারার মিল আছে। ভুলে আবার আহসান উল্লাহর বদলে আপনার ছবি দিয়ে দেন নি তো?

৩| ০৭ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আহসান উল্লাহর সাথে আপনার চেহারার মিল আছে। ভুলে আবার আহসান উল্লাহর বদলে আপনার ছবি দিয়ে দেন নি তো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.