নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐতিহাসিক ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবসের ১৪তম বার্ষিকী আজঃ চাই ৬ দফা চুক্তির বাস্তবায়ন

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩৬


আজ ২৬ আগস্ট, ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৪তম বার্ষিকী। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ি কয়লাখনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য এশিয়া এনার্জি কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিডিআর গুলি চালালে তিনজন নিহত হন ও প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। পরবর্তীতে আন্দোলন পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর, বিরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ফুলবাড়ী চুক্তি করতে বাধ্য হয়। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতি বছর ২৬ আগস্ট "ফুলবাড়ী দিবস" হিসেবে পালন করে। ঘটনার ১৩ বছর পরেও পূরণ হয়নি সেই ৬ দফা দাবি। নাম বদলে আজও বহাল তবিয়তে আছে এশিয়া এনার্জি। এখনও বাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি। উল্টো আন্দোলনকারী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মাথার উপর চেপে বসেছে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা একাধিক মামলা। এদিকে, দিবসে বন্দি হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীর উম্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়ন বিরোধী আন্দোলন। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নানা কর্মসূচি পালন করে। প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশকে বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার যে লড়াই বাংলাদেশে চলমান, ২৬ আগস্ট, ২০০৬ সালে সংগঠিত ফুলবাড়ি গণঅভ্যুত্থান তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সারা দুনিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার স্বার্থে উন্মুক্ত খননের ধ্বংসযজ্ঞের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে আছে, তা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ফুলবাড়ি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ফুলবাড়ির জনগণ শুধু নিজেদের এলাকা নয়, বাংলাদেশের গোটা উত্তরবঙ্গকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৪তম বার্ষিকীতে সকল শহীদদের জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী এশিয়া এনার্জি নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানির ফুলবাড়ীস্থ অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিছিলের ওপর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত ছাত্র তরিকুল ইসলামসহ আমিন ও সালেকিন নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয় বেশকিছু মিছিলকারী। এদের মধ্যে বাবলু রায় নামে একজন চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এখনও সেই গুলির ক্ষত বহন করছে অনেকে। এরপর ফুলবাড়ীবাসী টানা চারদিনের গণআন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে ছয় দফা শর্তে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যা ফুলবাড়ী ছয় দফা চুক্তি বলে পরিচিত। এরপর থেকে এই দিনটিকে ফুলবাড়ীবাসী ও আন্দোলনকারী সংগঠন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এবং সেই সময়ের সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছে। ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে কয়েক বছর ধরে ফুলবাড়ীবাসী স্থানীয়ভাবে গঠিত অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন এবং তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নিয়মিত আন্দোলন করে আসলেও এখন কেবলমাত্র দিবস পালন ছাড়া সেই আন্দোলন করতে দেখা যায়না। ফলে দিবস পালনের মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীর ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন। এদিকে, ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া এনার্জির প্রধান গেরী এন লাই স্ব-স্ত্রীক তাদের ফকিরপাড়া ওর্য়াকশপ অফিসে মিটিং করে তারা ফুলবাড়ী অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাদের অফিসে গিয়ে হামলা করে গেরি এনলাইয়ের বহনকৃত কার ভাঙচুর করে এবং আশপাশে রাখা গাড়িগুলো ভাঙচুর ও লুটপাট করে জনতাকে নিয়ে। এ ঘটনায় ওই বছর ১০ অক্টোবর এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে আন্দোলকারী সংগঠনের ১৯ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে দিনাজপুরে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অপরদিকে, আন্দোলনকারী সংগঠনের দুইজন নেতা তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু খনি আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক পরপর দুইবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে পরস্পর নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে এক সময় আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল এখন তা অনেকটায় ভাঙনের সুর শুরু হয়েছে। এ কারণে নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমতে শুরু করেছে।

ঐতিহাসিক ফুলবাড়ী দিবসের প্রাক্কালে আমরা সালাম জানাই শহীদ তরিকুল, সালেকিন, আল আমিন; বীর যোদ্ধা বাবলু রায়, প্রদীপ, শ্রীমন বাস্কেসহ অগণিত সংগ্রামী মানুষকে। মানুষের ঐক্য ও অবিরাম প্রতিরোধ উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশকে রক্ষা করেছে, নদী-কৃষিজমি-ভূগর্ভস্থ পানির আধারকে এক অকল্পনীয় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে। ফুলবাড়ি গণঅভ্যুত্থানের এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল এই অভ্যুত্থান দপ করে জ্বলে ওঠা আগুনের মতো হঠাৎ নিভে যায়নি, কর্পোরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সংহতির বন্ধন আরও মজবুত করেছে, স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সপক্ষের রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের রাস্তা তৈরি করেছে, ফুলবাড়ির প্রতিরোধের সঙ্গে সারা দেশের মানুষকে শরিক করেছে, স্থানীয় প্রতিরোধকে জাতীয়, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কর্পোরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান আন্তর্জাতিক প্রতিরোধের সঙ্গেও যুক্ত করে দিন দিন ফুলবাড়ির চেতনা আরও মজবুত করেছে। ফলে বহুজাতিক এশিয়া এনার্জি ও তার দেশীয় লবিস্টদের নানামুখী তৎরতার বিরুদ্ধে সেখানকার জনগণকে ২৬ আগস্টের পরও বার বারই ফুঁসে উঠতে দেখা গেছে । উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি-সম্পদ, জনস্বাস্থ্য-জনজীবন ও জীবিকার বিপরীতে মুনাফা-অন্ধ তৎপরতায় বিশ্বের বাস্তুসংস্থান, নদী-সমুদ্র-জলবায়ু আক্রান্ত। এই ধারায় বিশ্ব চলতে থাকলে সামনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় আসবে। বাংলাদেশের জন্য বিপদ হবে আরও বেশি। তাই যেসব প্রকল্প প্রাণ প্রকৃতি, জনস্বাস্থ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জননিরাপত্তা বিপন্ন করে সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে মুনাফার বদলে মানুষকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে বিশ্বজুড়ে। ফুলবাড়ী আন্দোলন এই দাবিতেই গণঅভ্যুত্থান তৈরি করেছিল, আর বুকের রক্তে, সংগ্রামে ১৪ বছর ধরে প্রতিরোধ জাগ্রত রেখেছে। দিবসটি উপলক্ষে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সারাদেশের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, র‌্যালি, প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। এছাড়া দেশে-বিদেশে অনলাইনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে রাত ৮টায়। ঐতিহাসিক দিবসে আমাদের প্রত্যাশা আন্দোলনকারী নেতাদের নামে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:



বেগম জিয়া এই ঘটনা ঘটার আগে জানতেন যে, এখানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মানুষের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা হবে; নাকি উনার মগজ এত বড় ছিলো না?

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হয়তো জা্নতেন নয়তো না।
তবে এখন বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: বর্তমান বা ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। আপনি পড়ে আছেন অতীতে। আর কত অতীতে থাকবেন? ভবিষ্যৎ নিয়ে না লিখতে পারেন বর্তমান নিয়ে লিখুন।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে
আমি হাপিয়ে উঠেছি। হয়তো একদিন
থেমে যাবো। বর্তমান বড়ই কঠিন সময়
পার করছে। হতাশ হচ্ছি। ভবিষ্যৎ দূর্ভেদ্য
অন্ধকার কোন আলো দেখছিনা। তাই তা নিয়ে
মাথা ঘামাইনা। অচিরেই পর্দ টেনে দেবো !!

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পর্দাটেনে দিব মানে কি? কত আর বয়স হল।৭০/৭৫।আমি ত আশি ছুঁই ছুঁই ,তাওতো অমন কথা মুখে আনি না। এখন একশ বছরতো ডাল ভাত।কাল জিরা আর মধু খাবেন,বয়স কোথায় পালাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.