নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্রাট হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের ৪১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪


দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ূন এর পত্নী এবং মুঘল সম্রাট আকবর এর মাতা হামিদা বানু বেগম। যিনি বেগা বেগম নামেই সবার কাছে পরিচিত। তিনি ‘মরিয়ম মাকানি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মুঘল সম্রাট শাহজাহান স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম প্রকাশ মুমতাজ মহলের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে ‘তাজমহল’ তৈরি করেন এ কথা আমাদের সবারই জানা। তাজমহলকে সবাই ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে জানলেও এর অর্ধশত বছর আগে ভালোবাসার আরেক নিদর্শন তৈরি করে গিয়েছিলেন হামিদা বানু বেগম। স্বামী হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তৈরি করা হয় হুমায়ুনের সমাধি। যা ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে ভারত বর্ষের তৈরি করা প্রথম স্থাপনা। তিনি পার্সি ও হিন্দুস্তানি কারিগর দ্বারা হুমায়ূনের সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। এ সমাধি ‘হুমায়ুন’স টম্ব’ বা হুমায়ুনের সমাধি নামে গোটা উপমহাদেশে অধিক পরিচিত। ভারতে উদ্যান সমৃদ্ধ প্রথম কোনো সমাধিও এটি। ইতিহাসবিদগণের দাবি- হুমায়ুনের সমাধির অনুকরণ করে পরবর্তীতে তৈরি করা হয় ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পরিচিত পাওয়া সম্রাট শাহজাহানের ‘তাজমহল’। আজ হামিদা বানু বেগমের ৪১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। সম্রাট হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হামিদা বানু ১৫২৪ সালের ২১ এপ্রিল পারসিয়ান শিয়া পরিবারে শেখ আলী আকবর জামির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। আলী আকবর প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের কনিষ্ঠ পুত্র হিন্দল মির্জার বন্ধু ও শিক্ষক ছিলেন। হামিদার মা মাহনা আফরাজ বেগম আলী আকবরকে সিন্ধুর পাট শহরে বিয়ে করেন। বংশগতভাবে হামিদা ধর্মপ্রাণা মুসলিম ছিলেন। আলওয়ার শহরে বাবরের স্ত্রী ও হুমায়ুনের সৎমা দিলদার বেগমের আয়োজিত এক ভোজসভায় হুমায়ুনের সঙ্গে ১৭ বছরের বালিকা হামিদার প্রথম দেখা হয়। শের শাহ সুরির আক্রমণে নিষ্ক্রান্ত হওয়া হুমায়ুন তখন নির্বাসিত ছিলেন।যখন হুমায়ুন ও হামিদার বিয়ের প্রস্তাব উত্থাপিত হয় তখন হামিদা ও হিন্দল উভয়েই এতে আপত্তি করেন। ধারণা করা হয় হামিদা হিন্দলকে ভালবাসতেন যদিও এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। হিন্দলের বোন ও হামিদার ঘনিষ্ঠ সখী গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুননামা’ বইতে নির্দেশ করেন যে সেই সময় হিন্দলের প্রাসাদে এবং দিলদার বেগমের আয়োজিত সভায় হামিদাকে প্রায়শই দেখা যেত। প্রথমে হামিদা বাদশাহর সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন। ৪০ দিন চেষ্টার পর দিলদার বেগমের প্ররোচনায় অবশেষে তিনি হুমায়ুনকে বিয়ে করতে রাজি হন। হামিদা তার বই হুমায়ুননামাতে লিখেছেন “আমি এমন একজনকে বিয়ে করব যার কণ্ঠদেশ পর্যন্ত আমার হাত পৌঁছতে পারে, এমন কাউকে নয় যাকে আমি স্পর্শ করতে পারি না”। শের শাহ সুরি ১৫৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার উত্তরসূরী ইসলাম শাহও ১৫৫৪ সালে মারা যান। এভাবে সুরি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। ১৫৫৪ সালের নভেম্বরে হুমায়ুন ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হলে হামিদা কাবুল গিয়ে থাকেন। সম্রাট হুমায়ুন ১৫৫৫ সালে দিল্লি পুনরুদ্ধার করতে পারলেও ফিরে আসার বছরখানেকের মধ্যে ১৫৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি পাঠাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৫৫৬ সালে ঘটে যাওয়া এই অকালমৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৪৭ আর তার উত্তরাধিকারী পরবর্তীকালের বিখ্যাত সম্রাট আকবরের বয়স ছিল মাত্র ১৩। মৃত্যুর পর দিল্লি রাজপ্রাসাদেই তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু হিমু নামে একজন শাসক দিল্লি দখল করলে তার সমাধি পাঞ্জাবের সিরহিন্দে স্থানান্তর করেছিলেন। রাজত্বের দ্বিতীয় বছরেই হামিদা আকবরের কাছে কাবুলে চলে আসেন এবং তার কাছে থেকে যান। হামিদা তখন বিভিন্ন দরবারি কাজেও হস্তক্ষেপ করেন, বিশেষত আকবর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বৈরাম খাঁর স্বেচ্ছাচারিতার সময়। মুঘলরা ফের দিল্লি দখল করলে ১৫৬৫ সালে হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগম অসাধারণ নিদর্শন ‘হুমায়ুন’স টম্ব’ বা হুমায়ুনের সমাধিসমাধি নির্ধারণের কাজ শুরু করেন। এ সমাধির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৫৭২ সালে। এর নির্মাণ ব্যয় হয় তৎকালীন সময়ের প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ সমাধির নকশা প্রস্তুত করেন পারসিক স্থপতি মিরাক মির্জা গিয়াস। এ সমাধি নকশা করার আগে নকশাকার মির্জা গিয়াসকে উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে নিয়ে আসা হয়। হুমায়ুন’স টম্বের আগে তিনি ভারত, উজবেকিস্তান এবং আফগানিস্তানের অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেন। হুমায়ুন’স টম্ব নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মির্জা গিয়াসের মৃত্যু হয়। পরে তার পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবনে মিরাক গিয়াসুুদ্দিন পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যের রয়েছে আভিজাত্যের শিল্প ছোঁয়া। সদর দরজা থেকে সমাধি পর্যন্ত রয়েছে অনেক ছোট ছোট স্মারক। রয়েছে সুরি শাসক শের শাহের রাজসভার আফগান অভিজাত পুরুষ ঈসা খান নিয়াজির সমাধি। রয়েছে হুমায়ুনের স্ত্রী ও হুমায়ুনের সমাধির প্রতিষ্ঠাতা হামিদা বেগমের সমাধিও। এ ছাড়া সম্রাট শাহজাহানপুত্র দারাশিকো, জাহান্দর শাহ, ফারুকশিয়ার, রফি উদ দৌলত ও দ্বিতীয় আলমগীরের সমাধিও। হুমায়ুনের সমাধি পরিদর্শন না করলে বোঝা যাবে না এর স্থাপত্য শৈল্পিকতার কথা। এ ঐতিহ্যের নানান স্থাপনাই বলে দেয় কতটুকু পরিশ্রম করা হয়েছে এর নকশা এবং নির্মাণে। প্রতি বছর লাখো দর্শনার্থী এখানে আসেন শুধুমাত্র ভালোবাসার এই নিদর্শন দেখতে। ভারত ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটকের পরিদর্শনের শর্ট লিস্টে থাকে প্রেমের অন্যতম এ নিদর্শন। হুমায়ুনের সমাধির মনমুগ্ধকর শৈল্পিক নিদর্শন শুধু উপমহাদেশেই নয়, বিশ্ববাসীর কাছেই এক অপার বিস্ময়।

১৬০৪ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যবরণ করেন হামিদা হামিদা বানু বেগম। তাকে দিল্লীতে সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসৌধতে কবর দেওয়া হয়। তিনি আকবরের মৃত্যুর ঠিক এক বৎসর পূর্বে এবং স্বামী হুমায়ুনের মৃত্যুর প্রায় অর্ধশত বছর পরে মারা যান। ইংরেজ পর্যটক থমাস করিয়ট এর ভাষ্যমতে আকবর হামিদাকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতেন। একবার লাহোর থেকে আগ্রা যাওয়ার পথে আকবর নিজে তার পালকি টেনে নদী পার করেছিলেন। যুবরাজ জাহাঙ্গীর যখন পিতা আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, হামিদা তখন বুদ্ধিমত্তার সাথে বিষয়টি সামাল দেন। জাহাঙ্গীর আকবরের প্রিয় মন্ত্রী আবুল ফজল ইবনে মুবারককে মেরে ফেলার পরেও পিতাপুত্রে পুনর্মিলন সাধিত হয়। আকবর সমগ্র জীবনে কেবল দুইবার চুলদাড়ি ফেলে দিয়েছেন- এক পালক মাতা জিজি আনগার মৃত্যুতে আর দুই গর্ভধারিণী হামিদার মৃত্যুতে। আজ হামিদা বানু বেগমের ৪১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। সম্রাট হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:২২

রাজীব নুর বলেছেন: এ সমস্ত নারীদের আসলে গুপ্তচর বানানো হয়েছে। তারা কেউই নিজ থেকে গুপ্তচর হয় নি। আসলে এসমস্ত নারীরা বোকা। এই সমাজ তাদের শুধু ব্যবহার করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.