নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রম এর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৬


গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রম যিনি শহীদ জুয়েল নামে সর্বাধিক পরিচিত। তিনি ক্রিকেটার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ঢাকার কিংবদন্তিতুল্য ক্র্যাক প্লাটুন এর সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের শেষ দিকে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে যান শহীদ জুয়েল। সেখানে তাকে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্ল্যাটুনে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকায় এসে গেরিলা অপারেশন শুরু করেন। ফার্মগেট ছাড়াও এলিফ্যান্ট রোডের পাওয়ার স্টেশন, যাত্রাবাড়ী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে গেরিলা অপারেশনে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ জুয়েলকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদানের ঘোষণা দেয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার জুয়েলকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ১৪৮। ১৯৯৭ সালে "জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার (মরণোত্ত, ক্রিকেট) প্রদান করা হয়।স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে পাকিস্তানি সেনারা তাকে আটক করে। ধারণা করা হয় ৩১ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা ক্রিকেটার জুয়েলকে হত্যা করে। আজ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম চৌধুরীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

জুয়েল ১৯৫০ সালের ১৮ জানুয়ারি তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিণ পাইকশা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী এবং মা ফিরোজা বেগম। রাজধানী ঢাকার টিকাটুলির ৬/১ কে এম দাস লেনেও তার বাবার বাড়ি ছিল, সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৭১ সালে জুয়েল ঢাকার জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভারতের মেলাঘর ট্রেনিং সেন্টার অন্যগুলোর চেয়ে একটু আলাদা ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের সব ঘাড়ত্যাড়াগুলোর আখড়াও ছিল বলা যায়। এর মূল কারণ হলো তারুণ্যনির্ভর শক্তি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে সেখানে কঠোর প্রশিক্ষণ হতো। সেখান থেকে বিভিন্ন অপারেশন নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ এই বাংলাদেশে আসতে হতো। তাদের কেউ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র, কেউ বা কেবলই বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করেছে, কারো নতুন চাকরি, আবার কেউ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতো, কিন্তু দেশের ডাকে আর হয়ে ওঠেনি। মেজর খালেদ মোশাররফের অধীনে কে ফোর্সের সদস্যরা ছিলেন শহীদ রুমি, বদি, আজাদ ও বিখ্যাত ক্রিকেটার জুয়েলসহ আরও অনেকে। তাদেরকে শেখানোই হতো, কীভাবে দ্রুত অপারেশন করে ভোজবাজির মতো মিলিয়ে যাওয়া যায়। অনেকটা কমান্ডো আর গেরিলার মিশেল। কে ফোর্সের প্রথম অপারেশনের জায়গা ছিল ঢাকাতেই। মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক আক্রমণের জন্যই তাদের তৈরি করা হয়েছিল। পুরো ঢাকা তটস্থ করে দিয়েছিল ছেলেগুলো। কে ফোর্সের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ অবাক হয়ে বলেছিলেন, 'হোটেলের আশেপাশে গোলাগুলি করতে বললাম, এরা হোটেলের ভিতরে গিয়ে গ্রেনেড ফাটিয়ে এলো! দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল! সেই থেকে কে ফোর্সের নাম হয়ে গেলো ক্র্যাকপ্লাটুন। ঢাকার স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিল 'বিচ্ছুবাহিনী' নামে। পুরো ৯ মাসে শত শত সফল অপারেশন চালিয়েছে তারা। এই ক্র্যাক কিংবা বিচ্ছুদের একজন ছিলেন জুয়েল।পরাধীন বাংলার অন্যতম সেরা ওপেনার, সঙ্গে উইকেটকিপিং। জুয়েল হতে পারতেন লাল-সবুজ বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক, অন্তত সেই স্বপ্ন তিনি দেখতেন। যুদ্ধে প্রথমবার আহত হওয়ার পর, হয়তো বা পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনে ধড়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণ থাকা অবস্থাতেও স্বপ্নটা দেখতেন। '৬০ এর দশকে অনেক বাঙালি ক্রিকেটার পাকিস্তানের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের দাপুটে সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সালমান কবির, রকিবুল হাসান, দৌলাত-উজ-জামান ও শহীদ জুয়েল। যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, জুয়েল তখন নিজের ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে ছিলেন। তরুণ এই ক্রিকেটার আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন, জিতেছেন ঢাকা লিগ। যে 'মোশতাক ভাই'-এর হাত ধরে আজাদ বয়েজ ক্লাবের শুরু, সেই মোশতাক ভাইয়ের সঙ্গে জুয়েলের ছিল আপ্রাণ সম্পর্ক। কিন্তু ২৭ মার্চ যখন মোশতাক ভাইয়ের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত দেহটা জেলা ক্রীড়া পরিষদের মূল ভবনের সামনে খুঁজে পেলেন জুয়েল, তখন আর নিজেকে থামাতে পারেননি তিনি। ক্রিকেট ব্যাট আর কিপিং গ্লাভস খুলে রেখে হাতে তুলে নিয়েছেন স্টেনগান।

জুয়েলের যুদ্ধে যাওয়ার লড়াইটাও সহজ ছিল না। পিতৃহীন ছেলেটাকে ছাড়তে চাননি মা। চাননি চোখের আড়াল করতে। বাসা থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যান জুয়েল। একবার ক্র্যাকপ্লাটুনের উপর সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ারস্টেশন উড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পড়লো। তারই ধারাবাহিকতায় এক রাতে জায়গাটা রেকি করতে বের হলেন বদি, আজাদ, জুয়েলসহ মোট ১০ জন যোদ্ধা। বাড্ডার পিরুলিয়া গ্রাম থেকে নৌকায় যাত্রা করার পর বেশ কিছুদূর গিয়ে সবাই টের পেলেন, সামনে থেকে আরেকটা নৌকা আসছে। আর সেটা পাকিস্তানি আর্মিতে ভরা। একমাত্র বদি ছাড়া সবার স্টেনগান ছিল নৌকার পাটাতনের নিচে। সেটা বুঝতে পেরেই বদি কোনো কিছু না ভেবেই সমানে ব্রাশফায়ার চালিয়ে দিলেন সামনের নৌকার দিকে। হানাদার অনেকে মরলো, নৌকা উল্টে গেল; কয়েকজন হয়তো বেঁচেছিলো সাঁতরে। ওদের পক্ষ থেকেও গুলি ছোঁড়া হয়েছিলো। টর্চের আলোয় দেখা গেল, পাক হানাদারদের ছোঁড়া গুলি জুয়েলের আঙুল ভেদ করে চলে গেছে। এরপর আর অপারেশনে নামা হয়নি জুয়েলের। থাকতেন ঢাকার বড় মগবাজার এলাকায় সহযোদ্ধা আজাদের বাড়িতে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ রাজাকারদের সহায়তায় ২৯ আগস্ট তাঁকে আটক করে তাদের ক্যাম্পে উঠিয়ে নিয়ে যায় জুয়েলকে। অকথ্য নির্যাতনের মাধ্যমে সব তথ্য বের তার কাছ থেকে আদায় করতে চেয়েছিলো শত্রুরা। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের মতোই মাটি কামড়ে সেদিন দেশের জন্য ব্যাট করে গেছেন জুয়েল। ৩১ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে হত্যা করে। স্বাধীন বাংলায় জুয়েল মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য বীর বিক্রমে ভূষিত হয়েছিলেন। দেশের ক্রিকেটও তাকে মনে রেখেছে, 'হোম অব ক্রিকেট'খ্যাত মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জুয়েল স্ট্যান্ড তারই নামানুসারে করা। আর আজাদ বয়েজ ক্লাবের সেই মোশতাক ভাইয়ের নামে মোশতাক স্ট্যান্ড। প্রতি বিজয় দিবসে তাদের স্বরণে সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় শহীদ জুয়েল-মোশতাক স্মৃতি প্রীতি ম্যাচ। আজ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



উনার জন্য শ্রদ্ধা ও উনার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা রলো।

-তখনকার অবরুদ্ধ ঢাকায়, এই ধরণের কম প্রস্তুতিতে গেরিলা অপারেশনের কোন দরকার ছিলো না; মেজর খালেদ মোশাররফ ও ক্যা: হামিদের সঠিক কোন সাপ্লাই ও কমান্ডিং কন্ট্রোল ছিলো না ঢাকায়; উনারা ছেলেগুলোকে কম ট্রেনিং নিয়ে পাঠিয়েছিলেন; ছেলেগুলো ওখানে আবার বিনা ট্রেনিং'এ নতুন কিছু ছেলেকে রিক্রুট করেছিলো, ইহা ছিলো একটা বড় ভুল।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব কেন বুঝেন না
মৃত্যু অবধারিত এবং তা
আসবে সঠিক সময়ে। এক পলক
আগেও না আবার এক পলক পরেও না।
যা যেখানে যে ভাবে মৃত্যু লিখিত আছে
সে ভাবেই সে সময়ে মানুষের মৃত্যু ঘটবে
তা মানুন আর নাই মানুন!

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের মৃত্যুবার্ষিকীতে
.......................................................................................................
আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

@ স্বপ্নের শঙ্খচিল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা
আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৩

নূর আলম হিরণ বলেছেন: শ্রদ্ধা উনিসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ হিরণ ভাই
আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রমের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.