নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম ধর্মে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব কর্তব্য

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২


আল্লাহর ঘোষণাঃ আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু । তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় . মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে। ( আত্ তওবা- ৭১) আর নবী (সঃ) বলেছেনঃ নারীরা পুরুষের অর্ধাংশ- (আবু দাউদ, তিরমিযী) বিশ্বের যত বড় বড় ব্যক্তি, তারা সবাই নারীর গর্ভে অস্তিত্ব লাভ করেছে, নারী কর্তৃক প্রসবিত এবং নারীর ক্রোড়েই লালিত পালিত হয়েছে। মানবজাতির মর্যাদা বাড়িয়েছে নারী, গোটা মানবতাই নারীর কাছে ঋণী। তাই পুরুষ সমাজের কর্তব্য, আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে মেয়েদের সহযোগিতা করা। মায়ের আত্মত্যাগের ফলেই জাতি সৎ ও সুসন্তান লাভ করে। তাই মায়েদের প্রতি অবহেলা দেখালে, তাদের প্রতি স্বামীর যে দায়িত্ব রয়েছে তা পালনে অবহেলা দেখালে পরিবার সমাজে ভাংগন নেমে আসে। ইসলাম নারীদেরকে যে অধিকার প্রদান করেছে তা অবহেলা করে মানবীয় নিয়ম ও আইন করে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। স্মরনতব্য যে ১৯৪৫ সালের জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘ গঠন করেছিল নারীর মর্যাদা বিষয়ক কমিশন, ১৯৫২তে নারীর রাজনৈতিক অধিকার সনদ। ১৯৯৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে বিশ্বের ১৮৫ টি দেশ ১০ হাজার সরকারি প্রতিনিধি এবং ২০ হাজারসহ বেসরকারি প্রায় ৩০ হাজার প্রতিনিধি অংশ নেয়। নারীদের অধিকার নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। এতো কিছু করেও নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রবর্তকরাকি নারীর অধিকার দিতে সফলকাম হয়েছে? গোটা বিশ্ব যখন নারীকে অপরাধের উৎস এবং সাক্ষাত পাপ ও গোণাহের কারণ মনে করে বসে ছিল তখন বিশ্ব জাহানের সর্ব কালের অতি পবিত্র ও স্রেষ্ট মানব মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) পাপ ও অশ্লীলতায় ভরা চিন্তার মূলে পরিবর্তন আনতে ঘোষণা দিলেন, “দুনিয়ার বস্তু নিশ্চয়ের মধ্যে আমি ভালবাসি নারী, এবং সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতলকারী হল নামায। (নাসায়ী- অনুচ্ছেদ- হুব্বুন নিসা)। নারীর মর্যাদা ও সম্মানের সঠিক মাপকাঠি হলো ব্যক্তির উচ্চমানের নৈতিক গুণাবলী এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি তার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা। স্বামী এবং স্ত্রী কখনোই একজন আরেক জনের প্রতিদন্ধি নয়। যদিও পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থায়, স্বামী এবং স্ত্রী একজনকে আরেক জনের প্রতিদন্ধি হিসাবে দেখানো হয়। মনে রাখতে হবে, ইসলামে স্বামী এবং স্ত্রী হলো একজন আরেক জনের সহযোগী। তাই পুরুষ সমাজের কর্তব্য, আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে মেয়েদের সহযোগিতা করা । নারীর সামাজিক অধিকার আলোচনার আগে দেখা যাক আল্লাহ স্বামীদের প্রতি স্ত্রীর কী অধিকার দিয়েছেনঃ

১)স্বামীদের কাছ থেকে স্ত্রীদের নৈতিক ও ইসলামী শিক্ষা লাভ করার অধিকারঃ
কোরআন বলেছেঃ হে ইমানদার গণ , তোমরা নিজেকে এবং তোমার পরিবার পরিজনকে দোজখের আগুন থেকে বাঁচাও। ( আত্ তাহরীম-৬) দোজখের আগুন থেকে বাঁচার পথতো পরিবারের সদস্যদেরকে ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া এবং সে অনুসারে আল্লাহর দীন পালনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা। স্ত্রী পুত্র দেরকে ইলমে দীন শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে প্রচুর হাদিস বর্তমান।
মালেক ইবনে হুয়াইসির বলেনঃ আমরা কয়েকজন যুবক দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য নবী (সঃ)-এর কাছে বিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। যে সময় তিনি উপলব্ধি করলেন আমরা বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছি তখন বললেনঃ নিজের স্ত্রী পুত্রের কাছে ফিরে যাও এবং সেখানে অবস্থান করো । তাদেরকে দীন সম্পর্কে শিক্ষা দাও এবং তা মেনে চলতে নির্দেশ দাও।” ( বোখারী,কিতাবুল আযান) স্বামী দ্বীনদার হলে স্ত্রীকে দ্বীন পালনে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। স্ত্রীর ইসলামের জ্ঞান না থাকলে তাকে অবশ্যই ইসলামী জ্ঞান প্রদান করতে হবে। স্ত্রী যাতে প্রতিদিনের ইসলামী হুকুম পালন করতে পারে, এজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সে যাতে নামায পরে এজন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এমন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না যা তার ইসলাম পালনে বাঁধা তৈরি করে। তার পর্দার বিধান নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। তার বসবাসের পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বামীর দায়িত্ব।

২) স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকার
অর্থনৈতিক অধিকারের প্রথম স্তরে রয়েছে মোহর লাভের অধিকার। স্বামীর প্রথম দায়িত্ব হল স্ত্রীকে তার বংশ মর্যাদার দিকে খেয়াল রেখে স্বামীকে তার সাধ্য মত নির্দিষ্ট পরিমানে মোহর প্রদান করা। এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ- ওয়া আতুন্ নেসায়া ছাদুকাতিহিন্না নেহলা- তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মনের সন্তোষ সহকারে তাদের মোহর প্রদান কর। ( সূরা নেসা ঃ ৪)
পরিবারে স্ত্রী ও অন্যান্য সদস্যদের ভরণ- পোষণের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কোরআনে এরশাদ হয়েছে-“ আর তাদেরকে ( স্ত্রীদেরকে) খোর পোষ প্রদান কর , সচ্ছল ব্যক্তি তার সাধ্যানুযায়ী এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি তার সাধ্যানুযায়ী ন্যায় সংগত ভাবে কিছু খরচপত্রের ব্যবস্থা করে, এ হল মোহসেনদের দায়িত্ব। (সূরা আল বাকারা-২৩৬)
এ ব্যাপারে অল্লাহর রসুল (সঃ) ফরমানঃ “তোমাদের উপর স্ত্রীদের অধিকার হলো তাদের জন্য পোশাক পরিচ্ছদ ও খাদ্য দ্রব্যের উত্তম ব্যবস্থা করা।( তিরমিজিঃ১১০১) প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব তার স্ত্রীর ভরণ পোষণ করা। সর্বোপরি একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো, স্ত্রীর দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা। হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ “তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে। – আবু দাউদ : ২১৪২ঃ স্ত্রীর চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল চাহিদা পূরণ করতে হবে। আর স্বামীর মৌলিক দায়িত্ব হলো হালাল পথে উপার্জন করা। কিন্তু বর্তমান সমাজে তাতো করেই না বরং অনেক অর্বাচীন স্বামী ও তার পরিবারের মা বাবারা বিবাহের পূর্বে ও পরে স্ত্রীর বাবা মার কাছ থেকে যৌতুক আদায় করে থাকে। তারা ভুলে যায় স্ত্রীরও মর্যাদা আছে। সে সংসারে ক্রীতদাস হয়ে আসেনি। যতক্ষণ টাকা থাকে ততক্ষণ তার দাম থাকে। এই শরিয়ত বিরোধী আচরণের কারণে সংসারে অশান্তি লেগে থাকে।

৩) স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার অধিকার স্ত্রীদের মূূল অধিকার।
বিবাহ শুধুমাত্র শরিয়তি ব্যবস্থা ও আইনের বিধান নয়। আইনের ঊর্ধ্বে প্রেম ভালবাসার এক সম্পর্ক সৃষ্টি হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। এই ভালবাসা আল্লাহ মেহেরবানী করে মানব মানবীর হৃদয়তলে পয়দা করে দিয়েছেন। আল্লাহর ঘোষণাঃ এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে তিনি তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পার এবং তোমাদের মাঝে ভালবাসা ও মেহেরবানী সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ( সূরা রূমঃ ২১)
স্ত্রী শিশু কৈশোর ও যৌবনের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা বাড়ি ঘর, বাবা মাকে, স্নেহের ভাই-বোন ছেড়ে চলে আসে স্বামীর ঘরে। এক নতুন পরিবেশে নিজেকে সামলিয়ে নিতে হয়। এ সময় সব চাইতে বেশি প্রয়োজন হয় স্বামীর ভালবাসা। তাই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর থাকতে হবে আন্তরিক অনুরাগ ও আকর্ষণ। প্রত্যেক স্ত্রী কামনা করে স্বামী তার সমস্ত শরীরমন জীবন যৌবন তার উপর বিন্যস্ত করে নিতান্ত নির্ভর করে চলুক। এই ইচ্ছার প্রতি স্বামীর সম্মান দেখান উচিত।
স্বামীকে হতে হবে উদার চিত্তের অধিকারী। স্ত্রীর কোন দুর্বলতাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে স্ত্রীর মনে কষ্ট দেয়া স্বামীর উচিত নয়। স্ত্রীর চাল চলনে কোন প্রকার সন্দেহ নিয়ে তাকে বিব্রত করা হলে পরস্পরের ভালবাসায় চির ধরে । ফলে সংসার বিষময় হয়ে ওঠে। তাই স্বামীকে ভালবাসার ডালি নিয়ে হাজির হতে হবে স্ত্রীর কাছে। বাইরের লোকে মেয়েদের জেঠামি সইতে পারে না, তাদের কথায় স্বামীকে কান দেয়া চলবে না। স্বামীকে বুঝতে হবে স্ত্রীকে, তাকে ভাল বাসতে হবে অন্তর দিয়ে। এটাই স্বামীর প্রতি স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকার।
মানুষের সামাজিক চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে জৈবিক চাহিদা। অপরদিকে বিবাহ হল এই জৈবিক চাহিদা পূরণের হালাল মাধ্যম। তাই স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব হল স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূর্ণ করা। পবিত্র কুরআনে এসেছেঃ
তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। – বাকারা : ২২৩
ইসলামে স্ত্রীর এই চাহিদাকে অনেক বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছে। হযরত উমর রাঃ আদেশ প্রদান করে দেন, কোন বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীর নিকট থেকে ৪ মাসের বেশী আলাদা বা দূরে থাকতে পারবে না।

৪। স্ত্রীকে আঘাত কিংবা মারধর করা যাবে নাঃ
এটা একদম প্রাথমিক বিষয় যে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে মারধর করবে না। কেননা একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর যত্ন এবং নিরাপত্তা রক্ষা করা। একজন রক্ষক কখনোই ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। মনে রাখতে হবে মেয়েটির পিতা-মাতা তার হাতে তুলে দিয়েছে মেয়েটির জীবনের দায়িত্ব নেয়ার জন্য, শোষণের জন্য নয়। একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর একজন ভাল বন্ধু হওয়া। পরস্পরের মধ্যে যদি কখনো বাত বিতণ্ডা হয় তবে উভয় পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আর কখনো স্ত্রীর মুখে আঘাত করা যাবে না।
হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি। – সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪৩০৯, ২৪৪৬৪, ২৫৪২৫, ২৭৬৫৮, মুয়াত্তা মালেক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮, গয়াতুল মারাম ২৫২, মুখতাসার শামাইল ২৯৯।

৫। স্ত্রীর গোপন কিছু অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে নাঃ
স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে যখন কোন বিষয় সংঘটিত হয়, তা কখনোই অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। প্রত্যেক স্বামী এবং স্ত্রীর দায়িত্ব হলো তাদের গোপন কথা গোপন রাখা।

৬। কৃতজ্ঞতা এবং প্রশংসা করাঃ
স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতিটি ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান করা। স্ত্রী যদি স্বামী কে কোন উপহার প্রদান করে তবে অবশ্যই স্বামীর উচিত তা গ্রহণ করা। এছাড়া স্বামীর উচিত স্ত্রীকে উপহার প্রদান করা। স্ত্রীর বেশ কিছু কাজ যেমনঃ
ক। স্ত্রীর রান্নার প্রশংসা করা, খ। সৌন্দর্যের প্রশংসা করা, গ। শিশু-লালন পালনের প্রশংসা করা, ঘ। তার কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, স্বামীর সামান্য একটু প্রশংসা স্ত্রীকে অনেক বেশী খুশি রাখে।

৭। স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা সময় ব্যয় করা এবং হাসি মুখে কথা বলাঃ
স্ত্রীকে সার্বক্ষনিক চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি রাখা যাবে না। এতে করে স্ত্রীর মন মেজাজ খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাওয়া কিংবা তার আত্মীয় স্বজনের বাসায় গমন করা যেতে পারে। এতে করে তার মধ্যে সতেজতা আসবে। এছাড়াও স্ত্রীর সাথে হাসি মুখে কথা বলাটাও একটা ইবাদত। তার সাথে হাসি ঠাট্টা করা যেতে পারে। আনন্দ-ফুর্তি কিংবা শরীয়ত মোতাবেক যেকোন বিনোদন বা খেলাধুলাও করা যেতে পারে।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলে তাঁকে অতিক্রম করে যাই।
– আবূ দাউদ ২৫৭৮, আহমাদ ২৩৫৯৮, ২৪৪৬০, ২৫৭২০, ২৫৭৪৫. ২৫৮৬৬, ইরওয়াহ ১৫০২, সহীহাহ ১৩১, আদাবুয যিফাফ ১৭১। উক্ত হাদিসে দেখা যায় স্বয়ং রাসূল সাঃ তাঁর স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করতেন।

৮। স্বামীর কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার।
সামুরতা বিন্জুনদুব (রাঃ ) বর্ণনা করেন - “রসুলুল্লাহ (সঃ) বরেছেনঃ স্ত্রী লোকদেরকে পার্শ্বদেশের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । যদি তুমি তাকে সম্পূর্ণ সোজা করতে চাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে , সুতরাং তার সাথে নরম ব্যবহার কর , তাহলে সুখময় ও স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপন করা যাবে।( তারগীব ও তারহীব) পারিবারিক ব্যবস্থায় স্বামীর হাতে থাকে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব, যদি কোন স্বামী নিজ স্ত্রীর ভাবাবেগ ও অনুভূতির প্রতি ভ্রক্ষেপ না করে শুধুমাত্র নিজের কথা মানাবার জিদ করে তবে পাবিারিক জীবন প্রকৃত সুখ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে । তাই হুযুর (সঃ) পুরুষদেরকে স্ত্রীদের সংগে কোমলও ভালবাসাপূর্ণ ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়েছেন। একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর কথাকে মর্যাদা দেয়া। পারিবারিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। স্ত্রীর যেকোন দাবিকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বামীকে মনে রাখতে হবে তার স্ত্রী হলো তার অর্ধাংশ। তাই স্ত্রী যেকোন বিষয়ে মতামত প্রদান করার অধিকার রাখে। এ ছাড়াও স্বামীদের উপরে স্ত্রীদের আরো হক রয়েছে, যা এই আটটি হক আদায় হলে তা সহজেই আদায় হয়ে যায়। তবে শেষ কথা হলো, ইসলামে নৈতিকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম তার অনুসারীদের আইনের ঊর্ধ্বে উঠে নৈতিকতার ওপর চলতেই উদ্বুদ্ধ করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু আইনের সম্পর্ক নয়; বরং তাদের সম্পর্ক হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক। শুধু আইনের বিশুদ্ধ উত্তাপের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে পারে না কোনো সুস্থ সমাজ। কল্যাণ তখনই আসবে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যখন আইনের গণ্ডি পেরিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের সুন্নতের ওপর চলতে সচেষ্ট হতে হবে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
উভয়কেই একে অপরের জন্য তৈরি করা হয় / হয়েছে।কাজেই দু'জন যখন একই তাল-লয়-সুরে বাজবে তখনই সংসার পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে সুখে-শান্তিতে।আর যখন তার ভিন্নতা হবে তখনই সংসার না হয়ে সং সার হয়ে যায় আর পারিবারিক জীবন জীবন হয় উঠে বিষময়।

সংসারের সুখের জন্য উভয়েরই ত্যাগ ও সমঝোতার মনোভাব জরুরী।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সাহস করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ কামরুজ্জামান ভাই।
ভাবছিলাম হয়তো ক্যাচালের জন্য কেউ মন্তব্যই করবে না। যা হোক
আপনাকে ধন্যবাদ।
সার কথা হলো ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানবতার ধর্ম। সঠিত দিকনির্দেশনার
ধর্ম। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন ও মহানবীর জীবনাদর্শ হাদিস
সমূহ আমল করলে কোন সমস্যা হবেনা। ইনসাআল্লাহ। তবে ফেৎনা ফেসাদের
জামানায় আমরা আমাদের নিজেদের মনগড়া কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা করে
সহজ সরল জীবন বিধানকে জটিল করে তুলছি। আমরা সবাই সবার থেকে
বড় এ্টি ভাব আমাদেরকে পতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ স্ত্রীদের প্রতি
স্বামীদের কর্তব্য লিখলাম কাল যদি স্বামীদের প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য লিখতে যাই
তখনই হবে সংঘাত। আল্লাহ আমাদেরকোরআন সুন্নাহর আলোকে চলার
হেদায়েদ দান করুন। আমিন।

২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো লিখেছেন, আশা করি স্বামীরা এই ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হবে। সমস্যা হল আমরা ধর্ম নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী মানতে চাই। ধর্মের কিছু পছন্দ না হলে তখন ওটার বিরুদ্ধে বলতে পছন্দ করি। ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ এই ব্লগে খুব কম মানুষকেই দেখা যায়। অনেকে এই আলাপ পছন্দও করে না। অথচ এই ইন্টারনেটের যুগে ধর্ম জানা আগের চেয়ে অনেক সহজ। এখন থেকে ২০ বছর আগে অনেক ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জানতে হলে পর্যাপ্ত বই পুস্তক সুলভ ছিল না। এখন যে কেউ চাইলেই বিশ্বের বড় বড় ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তিদের বক্তব্য সহজেই জানতে পারে। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায় তার পরও মানুষ তার ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ধারণা থেকে সরে আসতে চায় না।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সঠিক পর্যবেক্ষণ !! তাই
আমিও ভয়ে ভয়ে থাকি আবার
কখন কার রোষাণলে পড়ি।
জানতে হলে পড়ার বিকল্প নাই
তার সবাকে সত্য ও সঠিক জানার জন্য
পড়ার আহ্বান জানাই। তা হলেই সকল
ভ্রান্তির অবসান হবে।

৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সবার আগে পিতা তার কন্যাদের সমান চোখে দেখুক,তার পর স্বামী।পিতার সাথে কন্যার রক্তের সম্পর্ক সেই পিতাই ছেলের থেকে কন্যাকে ঠকায় আর স্বামীর সাথে তো দেনমোহর এর সম্পর্ক।আজ আছে কাল নেই

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

নূরুলইসলাম ভাই সব পিতা মাতার কাছে তার
সন্তান বড়ই আদরের। পিতা মাতার কাছে ছেলে
মেয়ের কোন ভেদাভেদ নাই। আর ঠকানোর প্রশ্ন
কেন এসেছে জানিনা, তবে ইসলাম ছেলে মেয়ের
যে টুকু প্রাপ্য দিতে বলেছে তা না দিলে সন্তানদের
হক আদায় হবেনা তার জন্য তাকে কঠিন জবাব দিহির
মধ্যে পড়তে হবে। বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) আজ থেকে ১৪শত বছর আগেই বলে গিয়েছেন,
“উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অপরকে শেখাও, সকল জ্ঞানের অর্ধেক হল এই জ্ঞান”।
মুসলিম হাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অনেকেরই উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।
এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে।
উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে।
একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে।
একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে।
যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের
অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না।

৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু মাত্র শিরোনাম দেখেই আমি বুঝে ফেলেছি এই পোষ্ট মুরুব্বী লিখেছেন।

আমার কাছে কিছু ধর্মীয় বই আছে- স্বামী স্ত্রীর দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে। চরম বই। এ বই যদি এযুগের কোনো নারীকে দেই, সেই নারী আমাকে মারবে।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আগে সুরভীকে পড়তে দিন
সে যদি আপনার উপর মারমুখী হন
তা হলেই বুঝবো বইগুলো উপভোগ্য নাকি
বিভেদ সৃষ্টি করে। তবে পরের বউকে স্বামী-স্ত্রীর
কর্তব্য শিখাতে যাবেন না। বিপদ হতে পারে।

৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই পোস্ট টি খুব মন দিয়ে পড়েছি।

মুরুব্বী কিছু মনে করবেন- দারুন বিনোদন পেয়েছি। যদিও আপনি ধর্মের আলোকে সব কথা বলেছেন।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

বিনোদনের মাঝে শিক্ষণীয় বিষয় থাকলে
তা কল্যাণ বয়ে আনে। ফেৎনার সৃষ্টি করেনা।
তবে স্বামীল প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য লিখলে তসলীমারা
আমার নিকুচি করে ছাড়বে।

৬| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

নতুন বলেছেন: সমস্যা হইলো ধর্ম নারীকে পুরুষের অধীনে থাকতে বলেছে।

আর স্বামীকে স্ত্রীকে প্রহার করার অনুমুতি দিয়েছে। তাকে পছন্দ না হলে তালাক দেওয়ার অধিকার দিয়েছে।

এক সাথে ৪ স্ত্রী রাখার অনুমুতি দিয়েছে।

পুরুষ জান্নাতে ৭২ হুরী পাবে নারী পাবে তার স্বামীকে।

কিন্তু একজন নারীকে তার স্বামীকে প্রহারের অনুমুতি দেয়নি। এক সাথে ৪ স্বামী রাখার অনুমুতি দেয়নাই।

নারীর সাক্ষীর গ্রহনযোগ্যতা পুরুষের চেয়ে কম।

পর্দার নাম করে কাপরের বস্তা বানিয়ে রাখতে চায় কট্টরপন্হীরা।

ধর্ম পুরুষ নিয়ন্ত্রন করে তাই এই ধর্মের ভয় দেখিয়ে নারীকে নিয়ন্ত্রন করতে চায়। আর কিছুই না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.