নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়াল ১২ই নভেম্বর আজঃ ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে

১২ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৯


ভয়াল ১২ই নভেম্বর আজ। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বরগুনা ও ভোলাসহ দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় গোর্কি। গোর্কির আঘাতে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল। ৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরো খারাপ হতে লাগল এবং মধ্যরাত থেকেই ফুঁসে উঠতে শুরু করে সমুদ্র। তীব্র বেগে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসল পাহাড় সমান উচু ঢেউ। ৩০-৪০ ফুট উচু সেই ঢেউ আছড়ে পড়ল লোকালয়ের উপর। আর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো মানুষ, গবাদি পশু, বাড়ি-ঘর এবং ক্ষেতের সোনালী ফসল। পথে প্রান্তরে উন্মুক্ত আকাশের নীচে পড়েছিলো কেবল লাশ আর লাশ। কত কুকুর, শিয়াল আর শকুন খেয়েছে সে লাশ তার কোনো হিসাব নেই। মরণপুরীতে রুপ নেয় ভোলাসহ গোটা অঞ্চল।
১৯৭০ সালের এই দিনটি ছিল রোজার দিন। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিসহ টানা বাতাস বই ছিল সারা দিন। উপকূলের উপর দিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। শুধু রেখে যায় ধ্বংসযজ্ঞ। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনের লাশ খুজেও পায়নি। জলচ্ছাসের পর থেকে দেড়মাস পর্যন্ত স্বজন হারানোদের কান্নায় উপকুলের আকাশ পাতাল ভারী ছিল। প্রলয়ংকরী এই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মেঘনা উপকুলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার গুচ্ছ গ্রাম, চর আবদুল্লাহ, আজাদনগর, কাটাবনিয়া, পোঁড়াখালি, চর জগবন্ধু, চর সামছুদ্দিন, বাতিরখাল, চর কাঁকড়া, সদর উপজেলার চর মনসা,চর রমনী মোহন এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ মারা যান। নিখোঁজ এবং আহত হয় আরও কয়েক লাখ মানুষ। লাখ লাখ গবাদিপশু ও ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হয় ব্যাপক। বহু চর, দ্বীপ ও গ্রাম একেবারে জনশূন্য হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের পর যত্রতত্র গড়ে ওঠে লাশের স্তূপ। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। ১৯৭০ সালের এই দিনে মারা যায় অন্তত দশ লাখ নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর।বন্যার পরে দেখেছি সাপ আর মানুষ দৌলতখানের চৌকিঘাটে জড়িয়ে পড়ে আছে। মমতাময়ী মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে মেঘনার পাড়ে মৃত অবস্থায়। সোনাপুরের একটি বাগানে গাছের ডালে এক মহিলার লাশ ঝুলছে। এমনিভাবে মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখানসহ সমগ্র জেলায় মানুষ আর গবাদি পশু সেদিন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলে ভেসে গেছে। জন-মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছিলো দ্বীপজেলা ভোলা। গত ৪৪ বছরের সব কয়টি ঘুর্নীঝড়ের চেয়ে ৭০’র ঝড়টি সব চাইতে হিংস্র ছিল বলে দাবী করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

একদিকে স্বজনহারা মানুষের কান্না, তার ওপরে তীব্র শীত এবং খাদ্য সঙ্কট বেঁচে থাকা অবশিষ্ট মানুষদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেদিন কাল রাতে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এমন করুণ দৃশ্যের বর্ণনাও শুনেছেন যে, মা নিজে বাঁচতে গিয়ে তার কোলের সন্তানকে ছেড়ে দিয়েছে সামুদ্রিক জোয়ারের স্রোতে। সন্তান ছেড়ে দিয়েছে তার বাবা-মাকে। স্বামী তার স্ত্রীকে। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে মানুষ জীবন বাঁচিয়েছে গাছের ডালে চড়ে। দিনের পর দিন মানুষ কলার থোড় কিংবা গাছের পাতা খেয়ে জীবনধারণ করেছে। বিশেষ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দূরবর্তী চরদ্বীপগুলোর বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষ দিন কাটিয়েছে অনাহারে। ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার এই জলোচ্ছ্বাসে একই সাথে সেদিন স্রোতের টানে ভেসে যায় বহু গবাদি পশু ও ঘর-বাড়ী। ক্ষতিগ্রস্থ হয় শত শত একর জমির ফসল। লন্ড ভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকার জনপদ। আর শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হন। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। স্বজন হারানো মানুষগুলোর কান্নায় সেদিন উপকূলীয় এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এখনও সে ভয়াল ১২ই নভেম্তরের কলো রাত্রির কথা মনে পড়লে ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে থাকা এখানকার মানুষগুলো আতকে উঠে।

এদিন সকাল থেকেই আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন ছিল। দুপুরের পর থেকে আস্তে অস্তে বাতাস বইতে শুরু করে। বিকেলের দিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সন্ধ্যায় বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। এর পর বাতাস ও বৃষ্টির প্রচন্ডতা বেড়ে যায়। রাত ২টা আড়াইটার দিকে মেঘনা-তেতুঁলিয়া ও বঙ্গোপসাগরের জলচ্ছাসের পানি ১৪ ফুট উচুঁ বেড়িবাধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোটা ভোলা জেলা তলিয়ে যায়। এ সময় মির্জাকালু বাজারের সদর রোডে হাটুর ওপরে ( ৩/৪ ফুট) পানি ওঠে। রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মাঠ-ঘাট এমনকি গাছের সাথে ঝুলে ছিরো শত শত মানুষের মৃতদেহ। দুর্যোগের সেদিনে জলোচ্ছ্বাসে গৃহহীন হয়ে পরে লাখ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় চর কুকুড়ি-মুকুড়ির মানুষের সেখানে প্রায় সকলেই সেদিনের জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারায়। পরদিন ১৩ নভেম্বর ভোরে পানি যখন নামতে শুরু করে তখন প্রচন্ড বেগে জলচ্ছাসের পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে অগনিত মানুষের লাশ। বিভিন্ন গাছের মাথায় ঝুলতে দেখা গেছে মানুষ ও পশুর মৃতদেহ। চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। যেন লাশের মিছিল হয়েছিল সেদিনের জলচ্ছাসে। গোটা জেলাকে তছতছ করে মৃত্যুপূরীতে পরিনত করে দিয়েছিলো। চারিদিকে ছিল শুধু লাশ আর লাশ। এক টুকরো কাপড় পেলে আব্রু ঢেকেছিল জীবিতরা। সেদিন বিনা জানাজায় কবর দেয়া হয় বহু মৃতদের। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দীর্ঘ ১৫-২০ দিনেও কোথাও পৌঁছেনি কোন ধরনের ত্রাণ। এমনকি নদী-পুকুরের পানিও পান করতে পারেনি তারা। কারণ সর্বত্র ছিল শুধু মানুষ আর গবাদি পশুর লাশ আর লাশ। এছাড়া ফলে বেঁচে থাকা মানুষগুলো সময় কাটিয়েছে এক নিদারুণ যন্ত্রণায়। যদিও আজকের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অনেকটা অবাস্তব মনে হতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে গোটা বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হবে। সে সময় আজকের মতো প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল না। এছাড়া অবকাঠামোগত যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছিল। যে কারণে প্রলয়ঙ্করী এ ঘূর্ণিঝড়ের পুরো খবর ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বহু মানুষ সাগরে ভেসে গিয়েছিল। এরপরও যারা বেঁচে গিয়েছিল তারাও বৈরী প্রকৃতিকে মোকাবেলা করছে। এ সব মানুষ জীবিত অবস্থায় দিনের পর দিন সাগরে ভেসে বেড়িয়েছে। বানের পানিতে ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ির কাঠ কিংবা মৃত গবাদিপশুর পিঠের ওপর চড়ে মানুষ তীরে ফেরার জন্য আকাশ পানে তাকিয়ে সময় কাটিয়েছে। প্রায় ৪ যুগ পরেও সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে অরক্ষিত চরে এখনো বাস করছে লাখো মানুষ। প্রাকৃতিক দূর্যেগে এসব চরের বাসিন্দাদের ঠাঁই নেয়ার জন্য এখনো গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত বেড়িবাধ, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। ১২ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসের ধ্বংশলীলা নিঃসন্দেহে দুঃখের স্মৃতি হয়ে চির স্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে স্বজন হারা মানুষসহ বিশ্ববাসীর কাছে। প্রকৃতির নিষ্ঠুর আগ্রাসনের স্মরনীয় বিস্বাদের স্মৃতিময় সেই ভয়াল ১২ই নভেম্বরের ভয়াবহ সময় যাদের উপর দিয়ে বয়ে গেছে শুধু তারাই জানে কি দুঃসময় ছিল তা।

উপসংহারঃ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে উপকূলবাসী ক্রমাগত প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখামখি হচ্ছে। জাতিসংঘের আওতায় এবং জলবায়ুপরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি)এর কার্যক্রমে বিগত বছরগুলোতে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই মর্মে একটা মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে,বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তবতা এবং এর অভিঘাত নানা মূখি ও সুদূর প্রসারী । আইপিসিসি সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্বের দরিদ্র দেশ গুলোই জটিল ওসুদূর প্রসারী অভিঘাতের মুখো মুখী হবে সবচেয়ে বেশি এবং দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর্ন্তজাতিক মহলে ইতি মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন কে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে পুঞ্জিভূত গ্রীন হাউজ গ্যাসের কারনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে চলছে। আর এই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিই নানা প্রকৃতির দূর্যোগের জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর দিকে বন্যা, খরা,ঘুর্নিঝড়,হারিকেন এর সংখ্যা বেড়ে চলছে। জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যাপক ভাবে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অসময়ে বন্যা ,অধিক বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটছে। পাশাপাশি জমাট বাঁধা বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে এসমস্ত ঘটনা কে এক সাথে বিচার করলে বলা যায় জলবায়ু পরির্বতন ঘটছে খুব দ্রুত এবং এর অভিঘাত হবে সুদূর প্রসারী । বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুততম সময়ে জলবায়ু প্রভাব ও এর ক্ষতির দিক চিন্তা করে দ্রুত জনসচেতনার পাশাপাশি এর অভিঘাত মোকাবিলায় প্রস্তুতি না থাকলে যে কোন সময় বড় ধরনের প্রাকৃতি দুর্য়োগের মত বড় কোন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভাগ্যিস তখন আমার জন্ম হয় নাই।

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২২

আহমেদ জী এস বলেছেন: নূর মোহাম্মদ নূরু,




শতাব্দীর ভয়ঙ্কর এক দূর্যোগের চিত্র তুলে ধরেছেন যা আমাদের অধিকাংশ ব্লগারদেরই জানা নেই। সাম্প্রতিক "আইলা" পর্যন্তই হয়তো তাদের জানা। কিন্তু ১৯৭০ এর সেই ঘূর্ণিঝড়ের হিংস্র তান্ডবের কাছে ১০টা আইলাও মনে হয় নস্যি।

তবে আমরা এমন সব প্রাকৃতিক দূর্যোগের মোকাবিলা করতে করতে মনে হয় "সিজনড" হয়ে গেছি।
ছোটবেলায় বাংলা বইয়ে সমবায়ের উপরে লেখা একটি গল্পের মর্মার্থ ছিলো এই- " আসুক তুফান তুফানরে আর ডড়াই না ..."।

আমরা যেন এখন তেমন ধারনাই লালন করছি ঘা খেয়ে খেয়ে।

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




মানুষ বাতাসকে ভয় পায়না, ভয় পায় পানিকে। আর জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় হলে তা বিশাল রূপ নেয়। ৭০ এর সময় সেটাই হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির চিত্রটি সবসময় পূর্ণাঙ্গভাবে উঠে আসেনা। কারণ, তখন তথ্য সংরক্ষণের ততোটা ব্যবস্থা ছিলোনা। তাছাড়া কর্তৃপক্ষ ডেডবডি কাউন্ট করে, সরকার ডেডবডি না পেলে মৃত হিসেবে লিপিবদ্ধ করে না। সাগরে যারা হারিয়ে গেছে তাদের হিসাব তো করা হয় না। সিডরে ১০,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলেছিলো রেডক্রস। কিন্তু সরকার বলেছিলো ৬,০০০ । সুতরাং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সবসময় ঠিকভাবে উঠে আসেনা।

৭০ এর ১২ নভেম্বরের সে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে যারা বেঁচে আছেন, তাদের সকলকেই আজো তাড়া করছে ভয়াল সে রাত। ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ। দেশের উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার এলাকার দেড় কোটি মানুষের কাছে এক বিভীষিকার রাত। ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বর রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস নিয়ে ২০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলের ১০টি জেলার বিশাল জনপদকে ভাসিয়ে নিয়েছিলো।

ভয়াল ঐ রাতে উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিলো। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিখোজ হলেও তাদের বেশীর ভাগেরই ঠিকানা হয়েছিলো না ফেরার দেশে। ফুসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছাস সে রাতে লক্ষাধীক মানুষকে ভাসিয়ে নেয়ায় তাদের সলিল সমাধী ঘটে। ফলে নিকটজনেরা তাদের লাশেরও কোন সন্ধান পাননি। এমনকি ’৭০-এর ১২ নভেম্বর জলোচ্ছাসের তান্ডবে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা ও নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর উপকূলের এমন কোন পরিবার ছিলো না যাদের কেউ না কেউ নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন।

৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৩

জগতারন বলেছেন:
আমাদের দেশের বাড়ী; ফরিদপুর জিলা, মাদারীপুর মহকুমা, রাজৈর থানা, টেকেরহাট শংকরদী গ্রামে। আমাদের বড়ী থকে ভোলার দুর্গত এলাকা মনে হয় ৬০ বা ৭০ মাইলের মতো হবে।
তখন আমার বয়স ছিল ১০ বছর। আমি সেই সময়ে প্রাইমারী স্কুলে ৫ম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষা দেই অথবা প্রস্তুতি নিতেছিলাম।
সেই ঝড়ের রাতে আমাদের গুষ্টীর সকল মানুষজন বড় চাচার ঘরে আশ্রয় নিয়াছিলাম। বর চাচা ১৯৬৫ সালে বড় করে মজবুত একটি ঘর দিয়াছিলেন। আমার মনে আছে বড় চাচা সামনের দরজা খুলিয়া দরজার সিঁড়ীতে দাড়াইয়া বাড়ীর অন্যান্যকে ডাকিয়া তাহাঁর ঘরে আসিতে ডাকিতেছিলেন। সারা রাত আমরা বড় চাচার ঘরেই ছিলাম। সেই ঝড়ে বড় চাচার ঘর বাদে আমাদের গুষ্টির সকলের ঘরই ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিল। পরের দিন অনেক বেলা পর্যন্তই ঝড় চলিতেছিল। ঝড় থামার পরে আমরা সকলে বাহির হইয়া আমাদের চির চিনা বাড়ী, পকুর-ঘাট, বাড়ীর পাশদিয়া যাওয়া আসার পথ, বাড়ির আশেপাশের, আমগাছ, জামগাছ,কড়ইগাছ, বাশঝাড়, ডোবানালা কচ্ছুই ঠিকমত সনাক্ত করিতে পারিতেছিলাম না।

প্রকৃতির নিষ্ঠুর আগ্রাসনের স্মরনীয় বিস্বাদের স্মৃতিময় ১৯৭০ সালের সেই ভয়াল ১২ই নভেম্বরের ভয়াবহ সময় যাদের উপর দিয়ে বয়ে গেছে শুধু তারাই জানে কি দুঃসময় ছিল তা।
সহমত!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.