নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল্লাহতায়ালার হুকুমের অবাধ্য হয়ে যেসব জাতিগুলো তাঁর গজবে পতিত হয়ে ছিলো

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২৮


প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার, যিনি আমাদের জন্য হালাল ও হারামকে স্পষ্ট করে দিতে যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে এক আল্লাহর দিকে ডাকতেন এবং যাবতীয় মন্দ কর্ম বর্জন করতে বলতেন। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শয়তানের দুষ্ট চক্রান্ত ছিলো সবসময়ই তৎপর। সে একের পর এক মন্দ কর্ম নিয়ে মানুষের সামনে হাজির হয়। আর এতে কিছু মানুষ আটকে যায়, লুফে নেয় শয়তানের প্রস্তাব, আর বিসর্জন দেয় নিজের ঈমান। আর আল্লাহতায়ালার হুকুমের অবাধ্য হলে আল্লাহ তাআলা অবাধ্য জাতির উপর আজাব ও গজব প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ না করায় কয়েকটি জাতি রাতারাতি ধুলায় মিশে গেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ সূরা রুম, আয়াত ৪১। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ-প্রবণতা বেড়ে গেলে সে জাতির অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে অপমৃত্যুর হার বেড়ে যায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদের চাপিয়ে দেন।’ হাদিসের বর্ণনায়, ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে এমন সব দুরারোগ্য ব্যাধির সংক্রমণ হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ এই ধ্বংস ও পতন হতে পারে বিভিন্নভাবে। যেমন আসমানি-জমিনি বালামুসিবত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ না করায় কয়েকটি জাতি রাতারাতি ধুলায় মিশে গেছে। নিছক ঘটনার বর্ণনা এর উদ্দেশ্য নয়; বরং মুসলিম গবেষকরা বলেন, জ্ঞানী ব্যক্তিদের উচিত পূর্ববর্তী জাতিগুলোর অবস্থা, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর বিচার ও বিধান, শাস্তি ও পুরস্কার ইত্যাদি সম্পর্কে জানা। যেন তার মাধ্যমে নিজেকে এবং স্বজাতিকে সতর্ক করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ঘটনাবলিতে আছে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)

১। নূহ নবী (আঃ) এর জাতিঃ নূহ নবীর নৌকা ও মহাপ্লাবনের কাহিনী শোনেনি এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবে না। কোরআন ও বাইবেলে নূহ নবীর এই ঘটনা বিস্তারিত রয়েছে। যে কয়েকটি মহাবৈপ্লবিক ঘটনা মানব ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দিয়েছিল, নুহ (আঃ)-এর সময়ের মহাপ্লাবন এর অন্যতম। এই ঘটনা ছিল মানবজাতির জন্য একটি দৃষ্টান্ত ও শিক্ষা। যা পৃথিবীতে এক নতুন সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। আল কোরআনের একাধিক স্থানে নুহ (আ)-এর সময়ের মহাপ্লাবনের বর্ণনা এসেছে। পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থেও গুরুত্বের সঙ্গে নুহ (আ.) মহাপ্লাবনের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে। কোরআনের বর্ণনা মতে, নুহ (আঃ)-এর জাতি আল্লাহ ও তাঁর নবীর প্রতি সীমাহীন ঔদ্ধত্য প্রকাশ করায় আল্লাহ তাদের সমূলে ধ্বংস করেন। তার আগে তিনি নুহ (আঃ)-কে প্রকাণ্ড এক নৌকা তৈরির নির্দেশ দেন। নুহ (আঃ)-এর জাতি নৌকা তৈরিসহ মুমিনদের প্রস্তুতি দেখে হাসাহাসি করে এবং তাতে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ অবাধ্যদের ডুবিয়ে হত্যা করেন এবং মুমিনদের রক্ষা করেন। মুমিনদের সঙ্গে পশু-পাখিদেরও আল্লাহ রক্ষা করেন। অবিশ্বাসীদের দলভুক্ত হওয়ায় নুহ (আঃ)-এর এক সন্তানও মহাপ্লাবনে মারা যায়।। সূরা হুদে এ বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, (আল্লাহর শাস্তি প্রদান ও কাফেরদের ধ্বংসের পর) বলা হলো, হে পৃথিবী, তুমি পানি শোষণ করে নাও এবং হে আকাশ, তুমি ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হল এবং কার্য সমাপ্ত হল, নৌকা জুদি পর্বতের উপর স্থির হল এবং বলা হল ধ্বংসই সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়েরর পরিণাম। এই মহাপ্লাবনের পর অবশিষ্ট মুমিনদের মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। আল্লাহ তাআলা এই সম্পর্কে বলেন, ‘নুহ আমাকে আহ্বান করেছিল। আর আমি কত উত্তম সাড়াদানকারী। তাকে ও তার পরিবারবর্গকে আমি উদ্ধার করেছিলাম মহা সংকট থেকে। তার বংশধরদের আমি বিদ্যমান রেখেছি বংশপরম্পরায়। আমি তা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি।’ (সুরা : সাফ্ফাত, আয়াত : ৭৫-৭৮)

২। লূত (আঃ) এর জাতিঃ পবিত্র কোরআনে নুহ (আঃ) ছাড়া একাধিক নবী (আ.) ও তাঁদের জাতির ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ্যযোগ্য এক জাতি ‘লুত’ তথা ‘সুদুম’। যে জাতি সৃষ্টিকর্তার অমোঘ নিয়মের লঙ্গণ করে, নিজেরাই নিজেদের মত করে মহা অনৈকিতায় মত্ত হয়েছিল। তারা চরম হীন ও লজ্জাকর কর্মে লিপ্ত হয়ে মানুষ নামের সংজ্ঞা হতে বহু দূরে সরে গিয়েছিল। তারা ইতিহাসের এমনই একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছিল-যাদের ধ্বংসের দৃষ্টান্ত পুরো মানব জাতির জন্য এক চরম শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শয়তানের প্রস্তাবিত বিভিন্ন মন্দকর্মের মধ্যে জঘন্যতম একটি মন্দকর্ম হলো ‘সমকামিতা’। সমকামিতা কোনো নতুন বিষয় নয়। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে এই পাপাচারের আদি ইতিহাস সম্পর্কে একদিকে যেমন মানুষকে অবগত করেছেন, অন্যদিকে এই পাপাচারে লিপ্ত জনগোষ্ঠীকে তিনি কিভাবে আযাব দিয়ে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করেছেন সে সম্পর্কেও সবিস্তারে বর্ণনা দান করেছেন যাতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। অর্থাৎ, এ এতই নোংরা পাপ যে অপরাধীরা এর শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়েছিলো।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমি লূত (আঃ) কে প্রেরণ করেছিলাম। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” [সূরা আ’রাফ(৭): ৮০-৮১]
হযরত লূত (আঃ) এর সম্প্রদায় বসবাস করত সাদ্দূম নগরীতে। তারা ডাকাতি করতো, প্রকাশ্য সভা বানিয়ে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা করতো। তারা সর্বপ্রথম এমন একটি গর্হিত পাপ করে যা এর পূর্বে কোনো আদম সন্তান করেনি।
লূত (আঃ) এর পাপী সম্প্রদায়ই প্রথম সমকামিতা (অর্থাৎ পুরুষ-পুরুষ এবং মহিলা-মহিলা যৌন আচরণ করা) শুরু করে। লূত (আঃ) যখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন তারা লূত(আঃ) কে নির্বাসন দিতে চায় এবং উপহাস করে বলে -“এরা নিজেদের বেশি পবিত্র রাখতে চায়।” তাফসিরে পাওয়া যায়, হযরত জিব্রাইল (আঃ), ইস্রাফিল (আঃ) ও মিকাইল (আঃ) সুদর্শন পুরুষের রূপ ধরে হযরত লূত (আঃ) এর এলাকায় উপস্থিত হন, এবং মেহমান হন। লূত(আঃ) গোপনে তাদেরকে আশ্রয় দেন, কিন্তু লূত (আঃ) এর এক স্ত্রী এই খবর পাপাচারী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়। পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার জন্য লূত (আঃ) এর বাসস্থান আক্রমণ করে। শেষ পর্যায়ে লূত (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাঁর মেহমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। তখন ফেরেশতাগণ বলে উঠেনঃ
“হে লূত (আঃ)! আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু নিশ্চয় তোমার স্ত্রীর উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?” [সূরা হুদ(১১): ১১] মুফাসসিরগণ বলেন- এরপর প্রথম জিব্রাইল (আঃ) তাদের সামনে আসেন এবং তাঁর ডানা দ্বারা হালকা আঘাত করেন। এতেই সকল পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়।এরপর জিব্রাইল (আঃ) লূত(আঃ) এর নিরাপদে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
এরপর ডানা দিয়ে সমগ্র সাদ্দূম নগরীকেই গোড়া সহ তুলে ফেলেন, এত উঁচুতে নিয়ে যান যে প্রথম আসমানের রক্ষী ফেরেশতারাও সাদ্দূম নগরীর কুকুর আর মোরগের ডাক শুনতে পাচ্ছিলো। এবার পুরো জনপদকে উল্টো করে সজোরে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। এবার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী বাসিন্দা কোনো কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল তাদের উপরও প্রস্তর খণ্ড এসে পড়ে। এরপর আল্লাহ সে স্থানে দূষিত পানির জলাধারা প্রবাহিত করে দেন। “অবশেষে আমার (আল্লাহর) আদেশ চলে আসলো, তখন আমি উক্ত জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।” [সূরা হুদ(১১): ৮২]

৩। হুদ (আঃ)-এর আদ জাতিঃ
আদ জাতির লোকেরা ছিল উন্নত। নির্মাণশিল্পে তারা ছিল জগৎসেরা। তারা সুরম্য অট্টালিকা ও বাগান তৈরি করত। তাদের তৈরি ইরাম-এর মতো অনিন্দ্য সুন্দর শহর পৃথিবীর আর কোথাও ছিল না। তারা অঙ্কন শিল্পেও ছিল দক্ষ। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা যেমন অগ্রসর ছিল, তেমনি সংস্কৃতিতেও অনন্য। শুরুর দিকে আদরা হযরত নুহ (আ.)-এর ধর্মমত মেনে চলত। তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করত। কিন্তু কালক্রমে তারা আল্লাহকে ভুলে যেতে শুরু করে। তারা মনে করত, তাদের সব অর্জন স্বীয় যোগ্যতায়।আদরা ভুলে গেল যে, আল্লাহ বা স্রষ্টা বলতে কেউ আছেন। তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা যে আল্লাহই তাদের দিয়েছেন, তাও তারা বেমালুম ভুলে গেল। ফলে তারা অহংকারী হয়ে উঠল এবং সত্যিকারের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ল। আদ জাতির লোকদের সতর্ক করার জন্য আল্লাহ হযরত হুদ (আ.)-কে দুনিয়ায় পাঠালেন। হযরত হুদ (আ.) আদ জাতির লোকদের গর্ব পরিত্যাগ করার আহ্বান জানালেন এবং আল্লাহর ইবাদত করার উপদেশ দিলেন। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনার কথাও বললেন। হযরত হুদ (আ.) বললেন, ‘তোমরা মজবুত অট্টালিকা বানিয়েছ এ জন্য যে, তোমরা এখানে চিরকাল থাকবে। তোমরা যখন তোমাদের দুর্বলের ওপর জুলুম করো তখন তোমরা স্বৈরশাসকের মতো বর্বর আচরণ করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমাকে মান্য করো। কিন্তু লোকেরা হুদ (আ.)-এর কথা শুনল না, বরং তারা তার কথা প্রত্যাখ্যান করল। তাকে বোকা ও মিথ্যাবাদী বলে গালাগাল দিল। নবীর প্রতি এরূপ অন্যায় আচরণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলেন। ফলে আদদের এলাকায় দেখা দিল প্রচণ্ড খরা। এতে তিন বছর তারা দুর্ভিক্ষের মধ্যে কাটাল। তারপরও তাদের স্বভাব-চরিত্রে কোনো পরিবর্তন হলো না। এবার সেখানে শুরু হলো ভয়ানক ঝড়। এই ঝড় সাত রাত ও আট দিন ধরে চলল। ফলে গোটা আদ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। আল্লাহ তার রহমতে হযরত হুদ (আঃ) ও তার অনুসারীদের রক্ষা করলেন।

৪। সালেহ (আঃ)-এর সামুদ সম্প্রদায়ঃ
সামুদ জাতি শিল্প ও সংস্কৃতিতে পৃথিবীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আদ জাতির পর তারাই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী জাতি। কিন্তু তাদের জীবনযাপনের মান যতটা উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল, মানবতা ও নৈতিকতার মান ততই নি¤œগামী ছিল। একদিকে উন্মুক্ত প্রান্তরে পাথর খোদাই করে করে প্রাসাদের পর প্রাসাদ তৈরি হচ্ছিল, অন্যদিকে সমাজে কুফর, শিরক ও পৌত্তলিকতার প্রসার ঘটছিল। অন্যায় ও অবিচারে সমাজ জর্জরিত হতে থাকে। সমাজে চরিত্রহীন লোকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। হজরত সালেহ (আ.) যে সত্যের দাওয়াত দিয়েছেন, তাতে নি¤œ শ্রেণির লোকেরাই সাড়া দেয়। হিজর ছিল সামুদ জাতির কেন্দ্রীয় আবাসস্থল। এর ধ্বংসাবশেষ মদিনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। বর্তমান শহর আল উলা থেকে কয়েক মাইল ব্যবধানে তা দেখা যায়। সালেহ (আ.) সারা জীবন তাদের হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে অল্প কিছু সঙ্গী ছাড়া গোটা জাতি তার অবাধ্যই থেকে যায়। একপর্যায়ে তারা দাবি করে, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী মাদি উট বের করে দেখান। এটি দেখাতে পারলে আমরা আপনার ওপর ইমান আনব। সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহর কুদরতে পাহাড় থেকে একটি অদ্ভুত রকমের মাদি উট বের হয়। তা দেখে কিছু লোক ইমান আনে। কিন্তু তাদের সর্দাররা ইমান আনেনি, বরং তারা সে মাদি উটকে হত্যা করে ফেলে। এতে সালেহ (আ.) তার জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসার ঘোষণা দেন। তিনি তাদের সতর্ক করে দেন যে তিন দিন পরই আল্লাহর আজাব তোমাদের ধ্বংস করে দেবে।
নির্ধারিত সময়ে আসমানি আজাব এসে অবিশ্বাসীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারপর সীমা লঙ্ঘনকারীদের মহানাদ আঘাত করে। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে (ধ্বংস হয়ে যায়)। যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি। উদ্ধত সামুদ জাতির প্রতি হজরত সালেহ (আ.)-এর হুঁশিয়ারি সত্যি বাস্তবায়িত হয়েছে। হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড শব্দে ভূমিকম্প তাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলে। বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে যায়। অবশেষে তাদের অপমৃত্যু ঘটে।

৫। মুসা (আঃ)-এর জাতিঃ
নিজেকে খোদা দাবি করেছিল ফেরাউন। তার কাছে ইমানের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন মুসা ও হারুন (আ.)। বিনিময়ে মুসা (আ.)-কে হত্যা করতে মনস্থির করে ফেরাউন। সদলবলে ফেরাউন একদিন মুসা (আ.)-কে ধাওয়া করে। তিন দিকে ঘেরাও হওয়া মুসার দলের সামনে ছিল উত্তাল সাগর। আল্লাহর হুকুমে সাগরে পথ সৃষ্টি হয়। নিজের দল নিয়ে মুসা (আ.) এই পথ দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে যান। কিন্তু সাগরে ডুবে মারা যায় ফেরাউন। আল্লাহ তাকে পৃথিবীবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন। তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় সাগরে নিমজ্জিত থাকার পরও তার লাশে কোনো পচন ধরেনি। জানা যায়, ১৮৯৮ সালে কিংস ভ্যালির থিবিসে দ্বিতীয় রামাসিসের পুত্র ও মহাযাত্রাকালীন ফেরাউনের মমি করা লাশ আবিষ্কার করা হয়। সেখান থেকে তা কায়রোতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯০৭ সালের ৮ জুলাই মমিটির আবরণ অপসারণ করা হয়। কয়েকটি জায়গায় কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও মমিটি তখনো সন্তোষজনকভাবে সংরক্ষিত ছিল। তার গলা থেকে মাথা পর্যন্ত উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে অবশিষ্ট দেহ কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় দর্শকদের দেখার জন্য কায়রো জাদুঘরে রাখা আছে।
ঐতিহাসিক চিহ্ন-দ্রব্য সংরক্ষণ করা মানুষের স্বাভাবিক কর্তব্য। কিন্তু এ মমির ক্ষেত্রে সেই কর্তব্য অনেক বেশি বড় ও ব্যাপক হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ এ মমি হচ্ছে এমন একজনের লাশের বাস্তব উপস্থিতি, যে মুসা (আ.)-কে চিনত। তার পরও সে তার হেদায়েত প্রত্যাখ্যান করেছিল। আত্মরক্ষার্থে পলায়নকালে মুসার পশ্চাদ্ধাবন করেছিল এবং সেই প্রক্রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছে। আর কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তার লাশ পরবর্তী সময় মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। আল্লাহর হুকুমে তা ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিল। সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম সাগরতীরে যেখানে ফেরাউনের লাশ সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, আজও জায়গায়টি অপরিবর্তিত আছে। বর্তমানে এ জায়গার নাম জাবালে ফেরাউন বা ফেরাউন পর্বত। এরই কাছাকাছি আছে একটি গরম পানির ঝরনা। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছে হাম্মামে ফেরাউন। এর অবস্থানস্থল হচ্ছে আবু জানিমের কয়েক মাইল ওপরে উত্তরের দিকে।

৬। হযরত শোয়াইব (আঃ) এর জাতিঃ হযরত শোয়াইব (আঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন মাদইয়ান সম্প্রদায়ের কাছে। তিনি ছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর তৃতীয় স্ত্রী কাতুরার ঘরের পুত্র মাদইয়ানের বংশধর। ধারণা করা হয়, বর্তমান সিরিয়ার মুয়ান নামক স্থানে কওমে য়াইবের বসবাস ছিল। মাদইয়ানবাসী পার্থিব লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে পারস্পরিক লেনদেনের সময় ওজনে কম দিয়ে মানুষের হক আত্মসাৎ করত। দুর্নীতি, রাহাজানি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও মজুদদারির মতো জঘন্য অন্যায় কাজ তাদের সমাজের মধ্যে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এসব পাপে তারা এমনভাবে লিপ্ত ছিল যে, তারা কখনো মনে করত না যে, এসব কাজ অত্যন্ত জঘন্য বা গর্হিত। বরং তারা এসবের জন্য গর্ববোধ করত। মাদইয়ান সম্প্রদায়কে সুপথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা শোয়াইব (আ.)-কে তাদের কাছে পাঠান। হযরত শোয়াইব (আ.) সর্বপ্রথম তাদের তাওহিদের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাদের বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহতায়ালার ইবাদত কর, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।’ তাওহিদের দাওয়াত দেওয়ার পরপরই হযরত শোয়াইব (আ.) তাদের ওজনে কম দেওয়ার জঘন্য মানসিকতাকে ত্যাগ করার উপদেশ দিলেন।
তিনি তাদের ওজনে কম না দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। তিনি আরও বলেন, আজ আমি তোমাদের সচ্ছল ও ভালো অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাদের ব্যাপারে পরিবেষ্টনকারী দিনের আজাবের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। হে আমার কওম! ওজনে কম দিও না এবং লোকদের সঙ্গে প্রতারণা কোরো না। আর সমাজের বুকে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি কোরো না।
এ থেকে বোঝা যায়, ওজনে কম দেওয়া যেমন হারাম, তেমনি অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করাও হারাম। হযরত শোয়াইব (আ.) তাদের আরও উপদেশ দিলেন, মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার জন্য রাস্তাঘাটে ওঁৎ পেতে অপেক্ষা কোরো না। কিন্তু উপদেশের বিনিময়ে কেবল উপহাস-পরিহাসই পেয়েছেন শোয়াইব (আ.)। অবশেষে তারা যখন সীমালঙ্ঘন করে ফেলল তখন আল্লাহ তায়ালার গজব এসে গেল। কয়েক দিন তাদের অঞ্চলে প্রচ- গরম পড়ল। গরমে তারা ছটফট করতে লাগল। অতঃপর কাছাকাছি একটা ময়দানের ওপর গাঢ় মেঘমালা দেখা দিল। ময়দানে মেঘের ছায়া পড়ল। শীতল বাতাস বইতে লাগল। এলাকার সবাই ওই ময়দানে উপস্থিত হলো। বলতে লাগল, এই মেঘ থেকে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কিন্তু তাদের ওপর অগ্নিবৃষ্টি শুরু করল। আর নিচের দিকে শুরু হলো প্রচ- ভূমিকম্প। ফলে সবাই সেখানে ধ্বংস হয়ে গেল।

আগের জাতিগুলোকে আল্লাহ দুই ধরনের শাস্তি দিয়েছেন। যথাঃ
১। . সর্বগ্রাসী শাস্তি। যার মাধ্যমে জাতি ও গোত্রের সবাইকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের কেউ সেই শাস্তি থেকে রক্ষা পায়নি। যেমনটি হয়েছিল নুহ, আদ ও সামুদ জাতির সঙ্গে। ইসলাম গবেষকদের দাবি, আল্লাহ আপন অনুগ্রহ ও দয়ায় মানবজাতি থেকে এমন সর্বগ্রাসী শাস্তি রহিত করেছেন।
২। এমন শাস্তি, যা জাতি ও সম্প্রদায়ের জীবন সংকীর্ণ করে তোলে, তবে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয় না। যেমন—মহামারি, ঝড়-তুফান ও ভূমিকম্প। আল্লাহ নানাবিদ কারণে পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে ধ্বংসের মুখোমুখি করেছেন, যার কয়েকটি হলোঃ

১। বিচারব্যবস্থার নৈরাজ্যঃ প্রতিটি অপরাধ ও সীমা লঙ্ঘনের বিপরীতে আল্লাহ শাস্তির বিধান রেখেছেন। আগের জাতিগুলো আল্লাহর শাস্তির বিধান বাস্তবায়নে বৈষম্য করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। উসামা বিন জায়েদ (রা.) একজন কুরাইশি নারীর শাস্তি হ্রাসের ব্যাপারে সুপারিশ করলে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর হদের ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’ অতঃপর তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের আগে যারা ধ্বংস হয়েছিল, তাদের মধ্যে কোনো সম্মানিত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত এবং যখন কোনো দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত তার ওপর হদ বাস্তবায়ন করত। আল্লাহর শপথ! যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৮৮)
২। অর্থের মোহঃ তীব্র অর্থমোহ ও লিপ্সা মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে এবং কৃপণতা সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পদ দ্বারা যথাযথভাবে উপকৃত হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা তা কিয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে। তোমরা কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করে দিয়েছিল। কেননা তা তাদেরকে রক্তপাত ও অবৈধ জিনিস বৈধ জ্ঞান করতে উৎসাহিত করেছিল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৭৮)
৩। অনর্থক প্রশ্ন ও বিতর্কঃ আম্বিয়া (আঃ)-এর বিরোধিতা ও তাঁদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংস ত্বরান্বিত করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দীর্ঘ হাদিসে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা নবীদের সঙ্গে বেশি বেশি প্রশ্ন ও তাঁদের বিরোধিতা করে ধ্বংস হয়েছে। আমি যখন তোমাদের কোনো বিষয়ে আদেশ করি তা যথাসম্ভব পালন করো এবং যখন তোমাদের কোনো বিষয়ে নিষেধ করি তা পরিহার করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭২৮৮)
৪। দ্বিনের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি : ইসলাম কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি অনুমোদন করে না। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা দ্বিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকো। কেননা তোমাদের আগের লোকেরা দ্বিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩০৫৭)
৫। পাপ ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাওয়াঃ কোরআনের একাধিক স্থানে পাপ ও পাপাচার ছড়িয়ে পড়াকে জাতিগুলোর ধ্বংসের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘কেবল পাপাচারী সম্প্রদায়কেই ধ্বংস করা হবে।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ৩৫)
৬। সংশয়পূর্ণ বিষয়ের পেছনে পড়াঃ পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলোর মধ্যে কোনো অপূর্ণতা, সংশয় ও বিরোধ নেই। তবে কোরআনের কিছু আয়াত সুস্পষ্ট, যাকে মুহকাম বলা হয় আর কিছু আয়াত সবার জন্য সুস্পষ্ট নয়—এগুলোকে মুতাশাবিহ বলা হয়। কোরআনের মুতাশাবিহ আয়াত নিয়ে বিতর্ক সর্বসাধারণের জন্য অনুমোদিত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন সকালে আমি মহানবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি দুই ব্যক্তিকে কোরআনের একটি আয়াত নিয়ে বিতর্ক করতে শুনলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে এলেন, তাঁর মুখমণ্ডলে রাগের ছাপ ছিল। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা তাদের কিতাবের ব্যাপারে মতবিরোধ করে ধ্বংস হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৬)
৭। দ্বিন পালনে শিথিলতাঃ জাগতিক জীবনে মোহ ও ব্যস্ততা মানুষকে দ্বিন পালনে শিথিল করে দেয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং যা তোমাদের খুশি করে তার আকাঙ্ক্ষা রাখো। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না, কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের অগ্রবর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের বিনাশ করবে, যেমন তাদের বিনাশ করেছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৫৮)

আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামী জ্ঞান দান করুন, আমাদের সামনে হালাল-হারাম স্পষ্ট করুন, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করুন এবং আমাদেরকে সঠিকপথগামী করে তার গজব থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন। আমিন।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১১

তারেক ফাহিম বলেছেন: নবীদের ঘটনাবলি কি নবী আগমনের সিরিয়াল হিসাবে দিয়েছেন?

পোস্টে ভালোলাগা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ফাহিম ভাই আপনাকে ধন্যবাদ
সুন্দন প্রশ্ন করার জন্য। আমি
নবীদে্র ঘটনাবলী সিরিয়ালি
সাজাতে পারিনাই বলে দুাঃখিত।
ঘটনবালীর গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়েছি।

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



প্রাচীন আরবেরা 'গোত্রকে' জাতি হিসেব করতো।

অনেক গোত্র আক্রান্ত হয়ে, মহামারিতে, দুর্ভিক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; সেই সব কাহিনী মুখে মুখে আরবদের মাঝে প্রচলিত ছিল। আরবদেশ পাশ সেচেয়ে বড় সভ্যতা ছিল ফেরাউনদের মিশর, ব্যবিলন; এগুলো রাজ্য ছিল, শতশত রাজা এগুলো শাসন করেছে; যুদ্ধ বিগ্রহ, উথ্থান পতনের মাঝ দিয়ে এরাই বর্তমান সভ্যতাতে রূপান্তরিত হয়েছে।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যখন আরবের অবিশ্বাসীরা আল্লাহর
অবাধ্য হয়েছে তনই আল্লাহর তরফ
থেকে তাদের উপর গজব নাজিল
হয়ে তাদেরকে ধ্বংশ করে দিয়েছে
যা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে।
আমি তাই বর্ণনা করেছি।

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



পাকিস্তানীরা দাবী করে যে, তারা বাংগালীদের চেয়ে বেশী ধার্মিক; তারা ভেংগে ছোট হয়ে গেছে; শিয়া সুন্নী মারামারি ক্রমেই বড় হচ্ছে; এটা নিয়ে আপনার ধর্মীয় ব্যাখ্যা কি হবে?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমরা সবাই নিজেদের বাপ দাদা সূত্রে পাওয়া ধর্ম নাম হিসেবে
নিজেদের মুসলমান দাবী করি। অথচ কোরান এমন দাবীদারকে মোটেও
মুসলমান বলছে না।কোরানে মুসলমান মানে জ্ঞান হবার পর স্ব ইচ্ছায়
স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণকারীকে বুঝায়। নবী ইব্রাহীম (আ) তার সন্তানদের
উপদেশ দিচ্ছেন যেনো তারা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরন না করে। আমাদের
বাবা মা ওলীও না নবীও না। শুধু বংশগত মুসলিম আর সেই সূত্রে আমরাও
মুসলিম দাবী করি। অথচ যেখানে খোদ নবীর সন্তানদেরই মুসলমান হতে
বলা হচ্ছে, তাদের তো মুসলমান হবার কোন দরকারই নেই যেহেতু
তাদের বাবা মুসলমান হয়েছে এরপরেও কেনো নবী তাদের মুসলমান
হতে বলছেন? এতে বোঝা গেলো জন্মগতভাবে পাওয়া মুসলিম নামের
কোন ভিত্তি নেই ইসলামে।
আজ সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে অনেক ভাগ,
যেমন: শিয়া, সুন্নি, হানাফি, সালাফি, ওহাবী, মালেকী, শাফেয়ী।
সবাই নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে। তাই সংঘাত হয়। প্রকৃত মুসলমান
বিনয়ী হয়, গর্ব উল্লাস করে অন্যকে ছোট করে কখনো নিজেকে
মুসলমান বলে ঢাকঢোল পিটায় না।

৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: এসব কাহিনী বিটিভির আলিফ লায়লাকেও হার মানায়।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার তাই মনে হলো ?

৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আল্লাহ আর আগের মতো একটিভ নেই।বিয়ে পড়ানো,স্বামী স্ত্রী ঝঘড়ার মিমাংসা করা মুসলমানদের হয়ে যুদ্ধ করা ইত্যাদি কাজগুলো এখন আর করছেন না।আয়েশা ( রা:) বলতেন,আপনার আল্লাহ আপনার সুখে জন্য সদা ব্যস্থ থাকে।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আল্লাহ তার সকল বান্দাদের সহি বুঝ
দান করার তৌফিক দান করুন। আমিন

৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: পোস্ট পড়িনি। কিন্তু এসব পোস্টে ইসলাম বিদ্বেষীদের মন্তব্য দেখে মন খারাপ হয়। ব্লগ কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয় না। আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহর দেয়া রিযিক খেয়ে সুখে বেঁচে দুনিয়ার সুখ উপভোগ করেও এরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কষ্ট পেয়ে লাভ নাই।
আল্রাহ তার কিছু বান্দাদের থেকে
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তাদের চক্ষু
কর্ণ সীল করে দিয়েছেন। তাই তারা
হেদায়েত প্রাপ্ত তবে না। আল্লাহ আমাদে
যেন তাদের দলভূক্ত না করেন সেই দোয়া
করি। আমিন

৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইয়া

ভালো থাকুন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অর্সংখ্য ধন্যবাদ আপু
আল্লাহ আপনাকে তার রহমতের
ছায়াতলে আশ্রয় দিন। আমিন

৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩১

রানার ব্লগ বলেছেন: নবীগণ কেন সম্প্রদায় ভিত্তিক এসেছেন ?

কেন পৃথিবী ব্যাপী আসে নাই ?

নবী মুহাম্মাদ (সঃ) প্রথমে কোরাইশ বংশের উপর অবতির্ন হয়েছেন, এর পর তিনি তার বাহু বলে পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রে রাজত্ব করেছেন, তিনি অন্যান্য রাষ্ট্রে ধর্ম প্রচার বা প্রসার করেন নাই তিনি দুত পাঠিয়েছেন ইসলাম মেনে নিতে না মানলে সরাসরি যুদ্ধ্যে নেমে গেছেন, কেন?

তিনি এমন তো করতে পারতেন, যদি কোন রাস্ট্র ইসলাম মানতে না চায় সেখানে তিনি নিজে বা তার প্রতিনিধি পাঠিয়ে বোঝাতে পারতেন, আলোচনা করতে পারতেন, না বুঝলে তিনি জনসম্মুখে তার বানীকে প্রচারের ব্যাবস্থা করতে পারতেন, শান্ত বা শান্তিপুর্ন ভাবে মানুষকে ধর্মের পথে ডাকতে পারতেন, তিনি কি তা করেছেন বা তার সাহাবিরা তা করেছেন ?

তিনি আরবের কোরাইশ ও মদিনা ব্যাতিত সকল জায়গায় বাহুবল ও প্রভাব খাটিয়ে মানুষকে ইসলাম ধর্মের অনুগত করেছেন যার প্রভাব তার ইন্তেকালের পর হয়েছে হাজার হাজার লোক তৎক্ষণাৎ ইসলাম ত্যাগ করে তাদের পুরাতন ধর্মে ফেরত চলে গিয়েছিলো, এটাও তার সাহাবারা সহ্য করতে পারেন নাই তারা এই ধর্মান্তর না মেনে নিয়ে অস্র প্রয়গ করেছিলেন, তারা কি বোঝাতে পারতেন না বা তাদের কে শান্তিপুর্ন ভাবে ইসলামের দাওয়াত দিতে পারতেন না।

কেন তিনি নিজে অন্যান্য রাষ্ট্রে গিয়ে ধর্ম প্রচার করেন নাই। তিনি তো বিশ্ব নবী তাই নয় কি ?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (মঃ)
যাকে সৃষ্টি না করলে পৃথিবীই সৃষ্টি করা হতোনা,
তিনি ভুল করেছেন এমন চিন্তা যেন আমাদের মনে
না আসে তার জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

৯| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৫

নতুন বলেছেন: অনেক গুলি জাতি সৃস্টিকতার হুকুমে ধংষ হয়ে গেছে তার বর্ণনা দিলেন।

কিন্তু যারা মারা গিয়েছিলো তাদের মধ্যে সদ্যজাত শিশু থেকে ১৫ বছর পযন্ত শিশু ছিলো কত গুলি? নারী বৃদ্ধ ছিলো কতজন?

সৃস্টিকতা সবাইকে মেরে ফেললো?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

নতুন দা
মহান তাআলা ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও
ক্ষুধা, জান ও মাল এবং ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। (হে পয়গম্বর!)
আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।” (সূরা বাক্বারাহ ১৫৫)
কুরআন মজীদে আরো এসেছেঃ
‘আর যখন তোমাদের ওপর মুসিবত এল, যার দ্বিগুণ তোমরা ঘটিয়েছ,
তখন তোমরা বললে, এটা কোত্থেকে এল! (হে নবী) আপনি বলে দিন,
এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল ইমরান ১৬৫)
এখানে নারী ও শিশুদের ব্যপারেও কৃপা করা হয়না।

১০| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৪

নতুন বলেছেন: সর্বশক্তিমান কেন শিশু, নারী,বৃদ্ধ বাদ দিয়ে যারা দুস্টু তাদের হত্যা করেন না?

তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় মেহেরবান, নিরাপত্তা-দান কারী, পরম ক্ষমাশীল, পরাক্রমশালী, ..... এমন সব ৯৯ গুনের সাথে একটু হিসাব করে দেখুন নুহ আ: এর মতন যেই সব জাতিকে ধ্বংশ করা হয়েছে তার মাঝে কতগুলি শিশু ছিলো.... :(

সকল আজাব এবং জাতি ধ্বংশের লিস্টি থেকে এই নিরপরাধ বাচ্চাদের হত্যার হিসার করলে কি এই গুন বাচক নামের সাথে যায়????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.