নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বরিশালের সুস্বাদু কিছু মাছের পরিচিতি

২৭ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৫:৫৯


ধান, নদী, খাল-এ তিনে বরিশাল। এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জলরাশি মৎস্য সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার। এ অঞ্চলের নদ-নদী রূপালী ইলিশে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি স্বাদু পানির অন্যান্য মাছের এক বিশাল সমারোহ। জেলায় মোট মৎস্যচাষির সংখ্যা ৪৪ হাজার ৪২৩ জন এবং মৎস্যজীবী ৭৪ হাজার ৫৭৯ জন। জেলার ২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৫০ জন। আর জনপ্রতি দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম হিসেবে মাছের মোট চাহিদা ৫০ হাজার ৯২৭ দশমিক ৩৫৫ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ সালে মাছের মোট উৎপাদন ৯১ হাজার ৮২৭ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ইলিশের উৎপাদন ৩৭ হাজার ৮০৬ দশমিক ২৯৮ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য মাছের উৎপাদন ৫৪ হাজার ২১ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন। জেলায় মোট মাছ উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪০ হাজার ৮৯৯ দশমিক ৯৭৫ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ অঞ্চলে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৭ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ অঞ্চলে মাছের উৎপাদন ১,১৩,২৫৭.৬০ মেট্রিক টন। পাশাপাশি বেড়েছে উদ্বৃত্তও। বরিশালের বাহারী মাছের মধ্যে রয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশ, শোল, গজার, দেশী পুঠি, সরপুঠি, বেলে মাছ, পাবদা, টেংরা, বাইন, রয়না (মেনি), মলা-ঢেলা, ফলি, খলশে, সিং, কৈ, মাগুর, টাকি, ঘের বা পুকুরের মাছের মধ্যে রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কালিবাউস, কারফু, চায়না সরপুটি, টাটকিনা, কার্প জাতীয় মাছসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির মাছ। খাল-বিলের বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ঘের ও নদীর মাছের পাইকারী ও খুচরা বাজার হিসেবে মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত পেয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট বন্দর এবং উজিরাপুরের সাতলা পাইকারী মৎস্য বাজার।

ইলিশ মাছঃ

ইলিশ (Hilsa) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে পরিচিত। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ইলিশের মোকাম বরিশাল। বৃহত্তর বরিশালের বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার মৎস্যজীবী রয়েছেন, এবং ইলিশ উৎপাদনেও তাদের অবস্থান চাঁদপুরের চাইতে কয়েক ধাপ এগিয়ে। তাই ইলিশের মোট উৎপাদনের হিসেবে বরগুনা জেলা থেকে দাবি তোলা হয়েছে যেন তাদেরকে "ইলিশের জেলা" ঘোষণা করা হয়। তবে ইলিশ উৎপাদনের হিসেবে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার স্থান শীর্ষে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই জেলায় মোট ইলিশ আহরণ হয় এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বরগুনা। গত অর্থ বছরে এই জেলা থেকে আহরিত ইলিশের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। বরগুনার প্রধান তিনটি নদী বিষখালী, বুড়িশ্বর (পায়রা) ও বলেশ্বর নদী থেকে আহরণ করা হয় ৪৯০০ মেট্রিক টন। এবং সাগর থেকে ৯১,০০০ মেট্রিক টন। বরগুনার ইলিশ অন্য যেকোনো জেলার ইলিশের চাইতে সুস্বাদু। আর এই জেলার ইলিশ সাইজেও বড় থাকে। একেকটা ইলিশ প্রায় এক কেজির মতো। তেলও হয় প্রচুর। ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য এ বছর ইলিশ মাছ উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরিশালে উৎপাদিত ইলিশ মাছের পরিমাণ ৩৮,৫১৮ মেট্রিক টন। ইলিশ মাছ যত জলে সাঁতার কাটে তত তার শরীর টোনড হয়ে ওঠে৷ আর তত ইলিশ মাছ সুস্বাদু হয়৷ জানবেন যে ইলিশ মাছের যত স্বাদ সেই ইলিশ তত পুষ্টিকর৷ইলিশ মাছে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই৷ বিশেষ করে ভিটামিন ডি কিন্ত্ত খুব কম খাবারেই পাওয়া যায়। অস্টিওপোরোসিসের জন্যও ইলিশ মাছ খুব ভালো। ইলিশ মাছে আরজিনিন থাকায় তা ডিপ্রেশনের জন্যও খুব ভালো৷ তাছাড়া ইলিশ মাছ ক্যান্সার প্রতিরোধক৷ হাঁপানি-র উপশমেও উপকারী৷ আবার সর্দি কাশির জন্যও ভালো।

বোয়াল মাছঃ

বোয়াল মাছটি ক্যাটফিশ প্রজাতির। এই মাছ বড় নদী, হ্রদ, এবং জলা জায়গাতে পাওয়া যায়। এই মাছটি ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং আরো অনেক দেশে পাওয়া যায়। এই মাছের হিংস্রতার জন্য এই মাছকে মিষ্টিজলের হাঙর বলা হয়। বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির মাছ বোয়াল। প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই মাছটিকে আগের মত আর পাওয়া যায় না। অথচ সামান্য একটু উদ্যোগ নিলেই এই বোয়াল মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় অনায়াসে। বোয়াল একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। কাজেই এ মাছটিকে প্রজননের আওতায় এনে উৎপাদন করতে কয়েকটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারন স্বাদু বোয়াল মাছের ঝোল খেতে হলে বোয়াল তো লাগবেই। বোয়াল মাছের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে যতেষ্ট। বোয়াল মাছ খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। তবে এটি যদি কোন নদীর বড় মাছ হয় তাহলে তো স্বাদের শেষ নেয়। বোয়াল মাছের উপকারিতা অনেক। বোয়াল মাছ খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে। শরীর সুস্থ রাখতে মাছ খাওয়ার অভ্যাস রাখুন। এই মাছ খেলে রক্ত ও পিত্তকে বিষিদ্ধ করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের শরীরে থাকা ‘ওমেগা থ্রি’ ফ্যাটি এসিড দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা সারাদিন কম্পিউটার বা কোনো ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মাছ থাকা একরকম আবশ্যক। মাছের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড শরীরে প্রবেশ করার পর ‘ফিল গুড’হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানসিক চাপ অনেক কমতে থাকে দ্রুত; সেই সঙ্গে মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই মানসিক চাপ দূরে রাখতে চাইলে নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। বোয়াল মাছের পুষ্টিগুণ থাকায় এর চাহিদা ব্যপক রয়েছে। তবে বোয়াল মাছের অপকারিতা কিছু রয়েছে। অধিক পরিমানে বোয়াল মাছ খেলে আমাদের শরীরে ত্রিদোষ বাড়ায় অম্লপিত্ত কুষ্ট ও হাপানি প্রভৃতি কঠিন রোগ উৎপাদন করে। তাই এজমা রোগীদের বোয়াল মাছ না খাওয়ায় ভালো।

চিতল মাছঃ

দেশি চিতল একটি স্বাদুপানির মাছ। চিতল মাছ খেতে সুস্বাদু এবং এর উচ্চ বাজার মূল্য ও চাহিদা রয়েছে। চিতল নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুরসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাদুপানির জলাশয়ে বাস করে। এরা পরিষ্কার পানিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। এ মাছ মাংসাশী এবং শিকারের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় পোকামাকড় ও তাদের শূককীট, ক্রাস্টেসিয়া জাতীয় প্রাণী, শামুক, ছোট মাছ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। কখনও কখনও বর্ষাকালে প্লাবিত ধানতে বা পাটক্ষেতে পোকামাকড় খাবার উদ্দেশ্যে এদের বিচরণ করতে দেখো যায়। এই প্রজাতির মাছ ভারত ও পাকিস্তান এর সিন্দু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মহানন্দা নদীর বেসিন সমূহ, মায়ানমার এবং সালয়ুন বা অন্যান্য নদীর বেসিন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং সমগ্র বাংলাদেশ এ পাওয়া যায়। তবে আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বিপন্ন প্রাণী হিসাবে চিহ্নিত। বাসস্থান কমে যাওয়া, ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল ব্যবহার করে অতিরিক্ত আহরণ, ডিমওয়ালা মাছ ধরা ইত্যাদি কারণে অন্যান্য দেশী মাছের মত চিতল মাছেরও সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। জেলে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার, অভয়াশ্রম সৃষ্টি, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা হতে বিরত থাকা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।একুয়ারিয়ামে বাহারি মাছ হিসেবেও চিতল মাছ পালন করা যেতে পারে।

নদীর পাঙ্গাস মাছঃ

আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রসমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনও ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।পাঙ্গাস মাঝের জাতগুলোর মধ্যে দেশী পাঙ্গাস ও থাই পাঙ্গাস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের ঐতিহ্য ’মাছে ভাতে বাঙ্গালী’-কে পুনরুদ্ধার করতে তাই পাঙ্গাস মাছের চাষ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

আইড় মাছঃ

আইড়। এর ইংরেজি নাম Long-whiskered Catfish এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sperata aor। মাছটির গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ সেন্টিমিটার। আইড় সুস্বাদু একটি মাছ। মাছটি পানির নিম্নস্তরের বসবাস করে। নদী-নালা, খাল-বিল, প্রাকৃতিক হাওর-জলাভূমিসহ পুকুর-ডোবাতে পাওয়া যেতো। তবে এখন এ মাছটি একেবারে বিলুপ্তির পথে। তবে বাজারে এই আইড় মাছের চাহিদা প্রচুর। গত দশ বছর আগে আমাদের হাইল হাওর বা বাইক্কা বিলে যেসব প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো সেগুলো এখন আর নেই। এখন অধিকাংশই চাষ করা মাছ। আগের মতো নদী, খাল-বিল, পুকুর-হাওরসহ প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো না থাকা, পাইল ফিসিং ২-৩ বছর নির্দিষ্ট স্থানে মাছসংরক্ষণ করে না রাখা এবং নদী ও খালবিলে নতুন পানি আসার সময় শুকনো জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরার কারণে আড়ই মাছসহ দেশি প্রজাতির অনেক মাছ আজ বিলুপ্তির পথে চলে গেছে

শোল মাছঃ

শোল বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় মাছের মধ্যে অন্যতম। সুস্বাদু ও উপাদেয় এ মাছ দেশের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে অত্যন্ত লােভনীয়। শোল মাছ:সুস্বাদু এই মাছ মানব দেহের হাড় ও মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে, রুচিও বাড়ায়। ১০০ গ্রাম শোল মাছে আছে ৯৪ ক্যালরি, ১৬ দশমিক ২ গ্রাম প্রোটিন, ১৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ৯৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১ হাজার ৮০ মাইক্রোগ্রাম জিংক। পায়খানা কষায়, পিত্ত ও রক্তের জন্য খুবই উপকারী। দেশি শোল মাছের বৈশিষ্ট্য অতিরিক্ত শ্বাসনালি থাকায় পানি ছাড়াও বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। তাই মজা ও পচাপুকুর, ছােট ছােট ডােবা ইত্যাদি জলাশয়ের দূষিত পানিতেও শোল মাছের বেঁচে থাকতে কোনাে সমস্যা হয় না। ২/৩ কাঠার একটা পুকুর থেকে ১ টন পর্যন্ত মাছ উৎপাদন সম্ভব। পানি থেকে উত্তোলনের পর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার কারণে জীবন্ত শোল মাছ বাজারজাত করা সম্ভব। এই মাছের দামও বাজারের অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি। তবে বিদেশী মাছ চাষ বৃদ্ধির কারণে দিন দিন সুস্বাদু শোল মাছ হ্রাস পাচ্ছে। বরিশালের বিভিন্ন পাইকারী মৎস্য বাজারে প্রচুর পরিমানে এর কেনা বেচা হলেও বর্তমানে বিদেশী মাছ চাষ বৃদ্ধির কারণে দিন দিন সুস্বাদু শোল মাছ হ্রাস পাচ্ছে। আ

গজার মাছঃ

গজার মাছ শোলমাছ প্রজাতির একটি মাছ। মাছটি বিশালাকৃতির হয় বলে অনেকে খেতে চায় না। অনেকে একে রাক্ষুসে মাছও বলেন। একসময় বরিশালের বিল ও জলাসয়ে প্রচুর পরিমানে গজার মাছ পাওয়া গেলেও এর পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। এর একটি বড় কারন
হলো বাজারে এর চাহিদা কম বলে মাছ চাষিরা এর কৃত্রিম প্রজনন করতে আগ্রহী হন না। তবে দেশীয় এই মাছ্টি খেতে সুস্বাদু। এখনই উদ্যোগ না নিলে আমাদের এই দেশীয় প্রজাতির মাছটি জলাভূমিগুলো থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

টাকি মাছঃ

টাকি মাছ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় মাছ। এটি স্বাদু পানির মাছ, দেখতে শোল মাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ। এর মাথা অনেকটা সাপ এর মতো। দেহ লম্বাটে এবং আঁশযুক্ত। দেহের উপর কিছু ছিট ছিট ফোটা আছে। এদের মুখ কিছুটা বড় এবং ধারালো দাঁত রয়েছে। গবেষকরা কল্পনা করেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ হিমালয় অঞ্চলে (বর্তমান ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল) অন্তত ৫ কোটি বৎসর পূর্বে টাকি মাছের উৎপত্তি হয়। এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। এটি মিঠা পানির মাছ। সাধারণত নদী, খাল, বিল, পুকুর, এমনকি ডোবা নালাতেও পাওয়া যায়। তবে পুকুরেও সহজেই চাষ করা যায়। বরিশালের বিল পুকুরে অনেক প্রজাতির টাকি মাছ পাওয়া যায়। অনেকে এই মাছ ভর্তা করে খায়। ১০০ গ্রাম টাকি মাছে ১৭ দশমিক ১৮ গ্রাম প্রোটিন, ৭৫৭ মাইক্রোগ্রাম জিংক, ১ দশমিক ১৭ মিলিগ্রাম আয়রন ও ১৫৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে।

দেশী পুঁটিঃ

প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা সুস্বাদু মজাদার মাছ যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। বরিশালের বিভিন্ন নদনদী, খালবিল ও পুকুরে দেশী পুটি পাওয়া যায়। কড়কড়ে ভাজা পুটির মজাই আলাদা। তা ছাড়া বিভিন্ন তরকারী ও তরকারী ছাড়া রা্ন্না করা পুটিমাছের স্বাদ বরিশালবসীসহ সমগ্র দেশের মানুষের রসনা তৃপ্ত করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছে আছে ১০৬ ক্যালরি শক্তি। এর ১৮.১ গ্রাম প্রোটিন, ২.৪ গ্রাম চর্বি, ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। দাঁত ও হাড়ের গঠনে এটি সাহায্য করে।

তিত পুঁটি//কাঞ্চন পুঁটিঃ

দেশী পুটি মাছের দুটি প্রজাতি। স্বাদের বিচারে পুঁটি মাছকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।এর একটি দুটি হলো জাত পুঁটি অন্যটি তিত পুঁটি বা কাঞ্চন পুঁটি(স্বাদে কিছুটা তিতা) । তিত পুঁটি একটি স্বাদুপানির মাছ। এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। খাদ্যের বিচারে এর সর্বভূক। এরা শৈবাল, ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী, কাদা, বালি, প্রাণীর পচা অংশ, অন্যান্য মাছের ডিম্ব ইঁত্যাদি। এদের প্রজনন কাল গ্রীষ্ম । বর্ষাকালে বরিশালের নদী, খাল, বিল, পুকুরে এই মাছ প্রচুর পাওয়া যায়।

সরপুঁটিঃ

বর্তমানে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। তার মধ্যে একটি দেশি প্রজাতির সরপুঁটি বা সরনা পুটি। সরল পুঁটিও বলা হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম পুংটিয়াস সারানা।। সাদাটে বা রূপালী বর্ণের দেহ এ মাছটি, কানকোর উপরে সোনালী দাগ বিশিষ্ট এ মাছটির পাখনাসমূহ লালচে বা কমলা রংয়ের। অতি সুস্বাদু এই মাছটির পুষ্টিমানও বেশ ভালো। বরিশালের খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওড়সহ বিভিন্ন জলাশয়ে পূর্বে এ মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও বর্তমানে আর আগের মত পাওয়া যায় না। তবে আশার কথা সরকারি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে এই মাছের ডিম পোনা পাওয়া যায়। তাছাড়া বেসরকারি হ্যাচারিতেও সরপুঁটি মাছ আজকাল পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মাঝে অল্প পরিমানে বর্ষাকালে ধানেক্ষেতে বা পাটের ক্ষেতেও এদের পাওয়া যায়। দেশী সরপুঁটি অন্যান্য পুঁটি মাছের ন্যায় বর্ষা মরসুমে প্রজনন করে থাকে। এরা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে হালকা স্রোতযুক্ত জলে ডিম দিয়ে থাকে।

বেলে (বাইলা) মাছঃ

বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীতে আগে প্রচুর পরিমান বেলে মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে খুব অল্প সংখ্য বেলে মাছ দেখা যায়। তাই সুস্বাদূ এই মাছটির দাম খুবই চড়া। কজি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম হাকা হয়।

পাবদা মাছঃ

পাবদামাছের ঝোল পছন্দ করেন না এমন বাঙালী কম ই আছে। পাবদামাছ অত্যন্ত সুস্বাদু একটি মাছ। পাবদামাছ মূলত সর্বভুক বা Omnivore। খাদ্য হিসেবে এরা শৈবাল (Algae), গাছের শেকড়, প্রোটোজোয়া, ক্রাস্টেশীয় প্রাণী কিংবা অল্প পরিমানে বালি বা কাদামাটি ও গ্রহণ করে থাকে। তবে কখনো এদেরকে ছোট আকৃতির মাছ ও খেতে দেখা যায়। পাবদামাছ মানবদেহের জন্য বেশ উপকারী। চিকিৎসক রা পঙ্গুত্বের জন্য প্রায়শ ই এই মাছ খাওয়ার কথা বলে থাকেন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাবদামাছে ১৯.২% প্রোটিন, ২% ফ্যাট, ০.২ গ্রাম আয়রন, ৪০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ৭৯.৩% পানি থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মায়ানমারে পাবদামাছ দেখা যায়। এক সময় বরিশালের হাওড়-বাওড়, লেক, নদ-নদী তে প্রচুর পাবদামাছ দেখা যেতো। কিন্তু প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতা, হাওড় বাওড়, লেক সংখ্যা কমে যাওয়া তথা প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বিনষ্টি এই মাছটিকে আজ অতিবিপন্ন করে তুলেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের IUCN এর রিপোর্ট অনুযায়ী এই পাবদামাছের ও স্থান মিলেছে অতিবিপন্নের (Critically Endangered) তালিকায়! হয়ত কয়েক বছর পর আর দেখা মিলবে না পাবদামাছের। সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের উচিৎ সুস্বাদু এই মাছ চাষে আরো গুরুত্ব আরোপ করা।

টেংরা মাছঃ

দেশের খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুর-ডোবা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির টেংরা মাছ। এটি একটি বিপন্ন প্রজাতির মাছ। এই মাছ এখন তেমন একটা দেখা যায় না। সাধারণত নদী, হাওর ও বিলে এই মাছের বসবাস। এই মাছ বরিশালের বিভিন্ন বিলে ও পুকুরে পাওয়া যায়। টেংরা মাছ কফ ও পিত্ত কমায়, শরীরে বল বাড়ায়।

বুজুরি টেংরা মাছঃ

বুজুরি ট্যাংরা মাছ খুব সুস্বাদু একটি মাছ। এই মাছ মূলত নদী,খাল-বিলে পাওয়া যায়। বরিশােলেও এ্ই মাছ পাওয়া যায়। বুজুরি ট্যাংরা ভূনা, রান্না ও বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এর চাহিদা পূরন করতে ট্যাংরা মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ট্যাংরা মাছ খেলে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন হবে। এছাড়া রক্তশূন্যতার রোগীদের ট্যাংরা মাছ খাওয়া উচিত। ট্যাংরা মাছের প্রচুর উপকারিতা থাকায় বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। এ মাছে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। বুজুরি টেংরা কাঁটাসহ ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান।

বাতাসী ট্যাংরা মাছঃ

‘নট্রোপিস এথেরিনোইডস্’ বৈজ্ঞানিক নামের এই বাতাসী মাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং মিয়ানমারে সাধারণত পাওয়া যায়। সুস্বাদু এ মাছটি বর্তমানে বাজারে খুব কম দেখা মেলে। যদিও কদাচিত পাওয়া যায় তবে এর দাম অনেক বেশি। দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এবং চ্যাপ্টা দেহের এই মাছের উপরের চোয়াল নিচের চোয়ালের চেয়ে কিছুটা লম্বা। ‘প্রতি ১ শ’ গ্রাম খাবার উপযোগী বাতাসী মাছে পটাশিয়াম ৬ শ’ ১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪ শ’ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ২ শ’ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ১৪.৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩৩ মিলিগ্রাম ও ম্যাঙ্গানিজ ২ শ’ মিলি গ্রাম রয়েছে। যা অন্যান্য দেশি ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। এই মাছ জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সেইসাথে এই করোনাকালের বিজ্ঞানীরা বাতাসী মাছ খেতে পরামর্শ দিয়েছে।’ পরিবেশ বিপর্যয়সহ বিভিন্ন কারণে বাতাসী মাছ জলাশয়ে এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। দিনে দিনে মাছটি বিপন্নের তালিকায় চলে গেছে।

বাইন মাছঃ
বাইন মাছ একটি সুস্বাদু মাছ। বরিশালের নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা, পুকুর, দিঘি এবং প্লাবন ভূমিতে ছোট দেশিয় প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। বরিশালে কয়েক প্রকারের বাইন মাছ পাওযা যায় যেমন, বড় বাইন, তারা বাইন, তুলা বাইন ইত্যাদি। কালের পরিক্রমায় বিরূপ প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের অত্যাচার, জুলুমের ফলে আমাদের সমৃদ্ধ মৎস্য ভান্ডার এখন কিংবদন্তিতে রূপ নিতে যাচ্ছে। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে জলজ পরিবেশের বিপর্যয়, নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, ডুবন্ত জলজ উদ্ভিদ ও শ্যাওলা কমে যাওয়ার কারণেও এখন এ মাছটি বিলুপ্তির পথে। তারা বাইম বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল ও মায়ানমারে পাওয়া যায়।

রয়না/মেনি/ভেদা মাছঃ

বরিশালের প্রায় বিলুপ্ত ভেদা মাছ। এলাকাভেদে নয়ন তারা, কাটকই, মেনি বা রয়না নামে ডাকা হয়। মেনি মাছ অনেকটা কই মাছের মত দেখতে। এই মাছটি একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রচুর পরমিাণে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ভেদা মাছ Nandidae গোত্রের Perciformes বর্গের মিঠাপানির মাছ। ভেদা মাছের ইংরেজী নাম Gangetic leaffish, বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus। মাছটির দেহের রং কালচে সবুজ । দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা এবং দেহের দুপাশে হলুদ সবুঝাভ ডোরা থাকে। পাখনা সবুজাভ থেকে হলুদাভ বর্ণের হয়ে থাকে। দেহ টিনয়েড আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। এর লেজ গোলাকার এবং মুখ তুলনামূলকভাবে বড়। এরা প্রায় ২০ সে.মি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
খাল বিল, হাওড় বাওড় এবং নদীতে এরা বাস করে। এরা আবাসস্থলের তলদেশে কর্দমাক্ত পরিবেশে বসবাস করে। বর্ষাকালে প্লাবিত ধানক্ষেত বা পাটক্ষেতেও এদেরকে পাওয়া যায়। খাদ্যাভাসে এরা সাধারণত মাংশাসী ধরনের। এরা জলজ পোকামাকড়, পোকার লার্ভা, ছোট মাছ খেয়ে থাকে। এরা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন করে থাকে।

ফলি মাছঃ

বরিশােলের এক সমেযের ছোট চিতল খ্যাত ফলি মাছটি আর আগের মতো চোখেই পড়ে না। আমাদের প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘ফলি’মাছটি। স্থানীয় মাছের বাজারগুলোতেও থাকতো এ মাছটির প্রতুলতা। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাছটি প্রায় হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশে এ মাছটি অবস্থান ‘শংকটাপন্ন’। বাংলাদেশ এছাড়া পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও পাওয়া যায়। আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি এখনও সংকটাপন্ন প্রাণী হিসাবে চিহ্নিত। আবাসস্থল কমে যাওয়া, জল দূষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণই এই প্রজাতির অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি।তবে, মাছপ্রিয় বাঙালির মুখে এর স্বাদ লেগে আছে আজও। প্রাকৃতিতে ‘ফলি’ মাছকে দেখা না গেলেও সৌখিন মাছপ্রেমীদের অ্যাকুরিয়ামে অন্যান্য মাছের পাশাপাশি এই মাছটিকে সহজেই দেখা যায়।

খলশে মাছঃ

খলিসা বা খলসে বা চাটা (Trichogaster) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থানীয় মাছ। খলিশা মাছের দেহের উপরিভাগ সবুজাভ এবং দেহ ডোরাকাটা। এর বৈজ্ঞানিক নাম কলিসা ফ্যাসিয়েটাস (Colisa fasciatus), যা আমাদের দেশে খৈলশা, খলিশা, খৈইলা নামে পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবে এ প্রজাতি মূলত বাংলাদেশসহ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়। মিঠা পানির জলাশয়ে, বিশেষ করে পুকুর, নদী, ঝরনা, খাল, বিলে একসময় এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ধান ও সবজি চাষে কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগ, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে এর বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রজননও কমে যাচ্ছে। এর প্রাচুর্যও ব্যাপক হারে কমছে। খলিশা মাছ বরিশালসহ বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। গ্রামে-গঞ্জে যারা থাকেন তারা এই মাছ খুব ভালই চেনেন। তাই খাল-বিল বা ডোবায় জন্ম নেয় এই মাছ।

শিং মাছঃ

মিঠাপানির মৎস্যচাষের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদেশের আভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ বিদ্যমান। তনুমধ্যে শিং মাছ বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় মাছ। আগে প্রাকৃতিক ভাবেই শিং মাঝ দেশের নদী নালা পুকুরে পাওয়া গেলেও বর্তমানে শিং মাছ দেশের হারিয়ে যেতে বসা মাছের মধ্যে অন্যতম। বারিশালসহ দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়ে ভরপুর বিশাল জলরাশি সমৃদ্ধ এদেশে মাছচাষের অফুরান সম্ভাবনা বিদ্যমান। দেশী শিং মাছ সুস্বাদ, পুষ্টিকর ও কম চর্বিযুক্ত। আবার জীবিত অবস্থায় বিক্রি করা হয় বলে এর বাজার মূল্যও অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশী। অপূর্ব স্বাদ ও পুষ্টিগুণ। এই মাছে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানের পরিমাণ বেশি। তাই প্রাচীনকাল থেকেই রক্তশূন্যতার রোগীদের শিং মাছ খেতে বলা হয়। এটি হাড়ের ঘনত্বও বাড়ায়। ১০০ গ্রাম শিং মাছে ২২ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিন, ৬৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম আয়রন আছে। শুক্র, বল ও রক্ত বাড়ায়, রক্তহীন ও পউরানা রুগীদের জন্য ভাল খাবার। উচ্চ বাজারমূল্য এবং ব্যাপক চাহিদা বিবেচনা করলে এসব মাছ চাষ সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাগুর মাছঃ

মাগুর Clariidae গোত্রের এক প্রকার মিঠা পানির মাছ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীনতম মাছ। বরিশালসহ বাংলাদেশের সর্বত্র এই মাছ খাল, বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাওড়-এর তলদেশে বাস করে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলের অল্প লবণাক্ত পানিতে বাস করতে পারে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, ফিলিপাইন, হংকং, দক্ষিণ চীন এবং ইন্দোনেশিয়াতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই মাছের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ই মাছ কখনো কখনো ধান ক্ষেতের কর্দমাক্ত বাস করে। গ্রীষ্মকালে পানি শুকিয়ে গেলে, জলাশয়ের তলদেশের কাদায় বা গর্তের মধ্যেও বাস করে। এই মাছ মাটির উপর দিয়ে বুকের পাখনা ব্যবহার করে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলাচল করতে পারে। এই কারণে, পাশ্চাত্যে এই মাছকে walking catfish বলা হয়। এই মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে বাতাস থেকে শ্বাস নিতে পারে। শিং মাছের মতো এই মাছও সাধারণত রাক্ষুসে । এরা বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, মাছে পোনা, জলজ প্রাণীর শূককীট বা মূককীট, জলদ উদ্ভিদ, প্রোটোজোয়া, শামুক ঝিনুক, কাদা, বালি ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। এই মাছ কখনো কখনো ধান ক্ষেতের কর্দমাক্ত বাস করে। গ্রীষ্মকালে পানি শুকিয়ে গেলে, জলাশয়ের তলদেশের কাদায় বা গর্তের মধ্যেও বাস করে। শিং মাছের তুলনায় মাগুর মাছে আয়রন ও ক্যালসিয়াম একটু কম থাকে। ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে আছে ৮৬ ক্যালরি, ১৫ গ্রাম প্রোটিন, ২১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৯০ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম আয়রন।

কৈ মাছঃ

কৈ মাছ Anabantidae গোত্রের অন্তর্গত এক প্রকার সুস্বাদু মাছ। এটি মিঠা পানির মাছ। এর আকার ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গায়ের চামড়া মোটা ও কালচে তামাটে বর্ণের আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। পিঠের উপর পাখনা কাঁটাযুক্ত। এদের মাথা শক্ত ও ভোঁতা। এদের কানকে-তে কাঁটা থাকে। এই মাছ কখনো কখনো কানকে-তে ভর করে ডাঙায় বা গাছে উঠে পড়ে। সাধারণত নদী, খাল এবং বিল, পুকুর এবং যে কোনো ক্ষুদ্র জলাশয়ে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে পুকুরে এর চাষ করা হয়। বাংলাদেশে দুই ধরনের কৈ মাছ চাষ হয়। এই ধরন দুটি হলো- বাংলাদেশের স্থানীয় কই বা দেশী কৈ ও থাই কৈ। চাষের ক্ষেত্রে চাষীরা থাই কৈ-কে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। কারণ প্রতি চার মাসে থাই কৈ-এর বৃদ্ধি যেখানে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয় সেখানে দেশী কৈ-এর বৃদ্ধি হয় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম। কৈ মাছ শক্তি ও পিত্ত বাড়ায়, বায়ু কমায়।

চিংড়ি মাছঃ

রুচিশীল মাছের মধ্যে চিংড়ি অনেক কার্যকরী। স্বাদু জলের চিংড়ির গণ (Genus) প্যালিমন (Palaemon) এর বিভিন্ন প্রজাতিকে একত্রে চিংড়ি বলে। চিংড়ি একটি সন্ধিপদী (আর্থ্রোপোডা) প্রাণী। চিংড়ি মাছ নাকি পোকা তা নিয়েও অনেক মতাবাদ রয়েছে। চিংড়ি হলো আর্থ্রোপোডা পর্বের ম্যালাকোস্ট্রাকা ক্লাসের অমেরুদণ্ডী প্রানী। আর্থ্রোপোডা পর্বটি প্রাণিজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম পর্ব। চিংড়ির প্রতি দেহখণ্ডকে একজোড়া করে মোট উনিশ জোড়া উপাঙ্গ থাকে। পৃথিবী জুড়ে প্রায় সব ধরনের জলাশয়ে এরা বাস করে। বরিশালসহ বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গায় চিংড়ি পাওয়া যায়। এদেশে মোট ৫৬টি প্রজাতির চিংড়ি শনাক্ত করা হয়েছে এবং এগুলির মধ্যে ৩৭টি লবণাক্ত পানির, ১২টি কমলবণাক্ত পানির ও ৭টি স্বাদুপানির বাসিন্দা। বঙ্গোপসাগর, মোহনা ও স্বাদুপানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিংড়ি থাকায় বাংলাদেশকে চিংড়িসমৃদ্ধ দেশ বলা যায়। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে চিংড়ি একটি জনপ্রিয় খাদ্য। দেশে ও বিদেশে চিংড়ির ভালো বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যসমূহের মধ্যে চিংড়ি অন্যতম। এ থেকে প্রতি বছর আয় হয় বহু কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা এবং কতিপয় ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চিংড়ি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি করে। খুলনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় কয়েকটি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠেছে।এটি দেহের জন্য বেশ সহায়ক। রুচি, বল, শুক্র ও কফ বাড়ায়। শরীরের মেদ পিত্ত ও রক্ত দোষে খুবই উপকারী। এবং এটি শীত পিত্ত বা শরীরে এলার্জি বৃদ্ধি করে। তবে চিংড়ি চাষের ক্ষতিকর দিক হলো চিংড়ি চাষের কারনে বহুমুখী শস্যচাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। যে সব এলাকায় চিংড়ি চাষ হয় সে এলাকায় ধান ছাড়া অন্য শস্য, গবাদি পশুর খাদ্য, শাকসবজি ইত্যাদি বর্তমানে আর জন্মানো যাচ্ছে না। কাজেই চিংড়ি চাষের এলাকায় এসব ফসলের দারুণ অভাব দেখা দিয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এসবের দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

মলা মাছঃ

মলা মাছ এক প্রকার ছোটো আকারের মিঠা পানির মাছ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নদ-নদী, খাল-বিলে এই মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এই মাছ খাল, বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাওড়-এর পাওয়া যায়। বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন খাল বিলে এই মাছ পাওয়া যায়। দের দেহ প্রায় ১০-১৫ সেমি লম্বা হয়। দেহ দুই পাস থেকে চ্যাপ্টা ও লম্বাটে। পার্শ্বরেখা অসম্পূর্ণ। পিঠ উত্তলাকার। এদের গড়পড়তা ওজন ৫ গ্রাম। এই মাছে প্রচুর ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ থাকে। ভিটামিন-এ থাকার জন্য এই মাছ ছোটোদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী বিবেচিত হয়।

চান্দা মাছঃ

বাংলাদেশের লোনা ও স্বাদু উভয় পানিতে চান্দামাছ দেখা যায়। এই মাছ বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং ভারতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে এ মাছ প্রচুর পাওয়া যায়। স্বাদুপানির চান্দামাছ আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট, দেহে ছোট ছোট আঁশ থাকে। নদী, বিল, পুকুর, হাওর, বাঁওড়সহ প্রায় সব ধরনের জলাশয়ে এ মাছ হয়। বর্ষার মৌসুমে এরা ধানক্ষেত ও প্লাবন ভুমিতেও আসে। স্বাদুপানির তিন প্রজাতির চান্দামাছ হলো নামাচান্দা (Chanda nama), লালচান্দা (Pseudambassis ranga), ও কাঁটাচান্দা (P. baculis)। বাংলাদেশের লোনা ও স্বাদু উভয় পানিতে চান্দামাছ দেখা যায়। স্বাদুপানির চান্দামাছ আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট, দেহে ছোট ছোট অাঁশ থাকে। নদী, বিল, পুকুর, হাওর, বাঁওড়সহ প্রায় সব ধরনের জলাশয়ে এ মাছ হয়। বর্ষার মৌসুমে এরা ধানক্ষেত ও প্লাবন ভুমিতেও আসে। আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে এখনও আশংকাজনক বলে চিহ্নিত।

চেলা মাছঃ

চেলা একটি স্বাদুপানির মাছ। এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এবং ভারতে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। চেলা মাছের দু্ইটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় আমাদের অঞ্চেলে। এর একটি রূপালী চেলা অন্যটি ফুল চেলা। অন্যান্য দেশীয় মাছের তুলনায় ঢেলা মাছে প্রচুর খনিজ পদার্থ আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেলা মাছে ভিটামিন ‘এ’ ৯৩৭ আইইউ, ক্যালসিয়াম ১২৬০ মিলিগ্রাম এবং জিঙ্ক ১৩.৬০ শতাংশ, যা অন্যান্য দেশীয় মাছের তুলনায় অনেক বেশি। ভিটামিন এ শিশুদের রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে, ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়তা করে। তাছাড়া জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা করোনাকালীন খুবই উপযোগী। বিলুপ্তপ্রায় ঢেলা মাছ এখন বাজারে বিরল। একসময় দেশের নদ-নদী ও হাওর-বিলে প্রচুর পরিমাণে ঢেলা মাছ পাওয়া যেত। পরবর্তী সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন, অতি আহরণ ও জলাশয় সংকোচনের কারণে ঢেলা মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হয়ে যায় এবং এ মাছটি বিলুপ্তির তালিকায় চলে আসে। ফলে ঢেলামাছ এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য এবং উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি হয়।

কাচকি মাছঃ

কাচকি খুব ছোট প্রায় স্বচ্ছ মাছ, যা সচরাচর ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, প্রভৃতি দেশের নদ-নদী, খাল-বিলে সুলভ। সতেজ ও শুঁটকি মাছ হিসেবে এটি বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় খাবারের মাছ। বাংলাদেশের প্রায় সব নদীতেই এদের আধিক্য লক্ষ করার যায়। নদী ছাড়াও পুকুর, জলা এবং ছোট ঝর্ণাতে এদের দেখা মেলে। তবে এই মাছ পুকুরে পাওয়া গেলেও বানিজ্যিক ভাবে এর চাষ করা হয় না। কাচকি মাছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই বললেই চলে। মাছ খেতে হবে কাঁটাসহ এবং চিবিয়ে, তাতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কাচকি মাছে ১২.৭ গ্রাম প্রোটিন আছে। আছে ৩.৬ গ্রাম চর্বি, ৪৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ মিলিগ্রাম আয়রন। এই মাছ কোটারও ঝামেলা নেই, ধুয়ে বেছে খেয়ে নেওয়া যায়। কাচকি মাছের অসম্পৃক্ত চর্বি আপনার শরীরকে রক্ষা করতে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে। কাজেই কাচকি মাছ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। কাচকি মাছে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। কাঁটাসহ কাচকি মাছ ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। মানবদেহে দৈনিক প্রচুর ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে।
সূত্রঃ বরিশালপিডিয়া

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:০৪

স্প্যানকড বলেছেন: ইয়া মাবুদ! এত মাছ ! :) খাওয়াতে হবে কিন্তু ....

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

নিমন্ত্রণ রইলো বরিশালের মাছ খাবার জন্য।
সাথে পিঠা পুলিও থাকবে।
চিড়া দইও বাদ যাবেনা।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



ঢাকার তুলনায় আপনার এলাকায় ইলিশের দাম কেমন?

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

তুলনামূলকভাবে একটু সস্তা !!
তবে খুব বেশী কম না।ৎ
ডাকায় যে সাইজের কেজি
১৪/১৫০০, আমাদের
এলাকায় তা ১০০০/১২০০/=

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:৩০

কামাল১৮ বলেছেন: এসকল মাছ সকল জেলায় পাওয়া যায়।বরং বরিশালের ইলিশের চেয়ে পদ্মার ইলিশ প্রশিদ্য।আমার বরিশালের অনেক বন্ধু আছে যারা ঢাকায় থাকে ,তারা দেশে ( বরিশাল) গেলে বড় দেখে পাঙ্গাস বা বোয়াল মাছ আনতে বলে দিতাম।বড় মাছের প্রতি আমার আলাদা একটা লোভ আছে।বরিশালের বড় বোয়াল,আইড় বা পাঙ্গাস মাছের স্বাদ আমার কাছে একটু অন্য রকম লাগে।
অনেক কিছু জানার আছে পোষ্টে।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:০৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

জনাব বরিশােলেই পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায় ঢের !!
নদীর যেকোন মাছই বেশী স্বাদের হয়।
আমাদের নদ নদীতে ছোট মাছের
সাথে বড় সাইজের পাঙ্গাস
বোয়াল, আইড়, কালিবউস
পাওয়া যায়।

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:১৬

জুন বলেছেন: আমি তো জানতাম বরিশালের বিখ্যাত মাছ ভোল মাছ। আপনি দেখি বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলায় পাওয়া মাছের ইতিহাস লিখছেন যার মাঝে আমার অনেক অনেক প্রিয় মাছ রয়েছে যেমন কই, পাবদা, আইঢ়, বেলে এসব। আর আমাদের ঢাকাবাসীর কাছে পদ্মার ইলিশই ভালো লাগে।
তবে আপনার লেখায় অনেক মাছ এর কথা জানা হলো :)

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ জুন আপু মন্তব্য প্রদানের জন্য।
বাংলাদেশের সব জেলাতেই সব মাছ
পাওয়া যায় তবে পরিমানে কম বেশী হয়।
বরিশালের সব মাছের ঠিকুজি করতে গেলে
সময় ও ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাবে। বরিশালের
বুইচা মাছ, ভাটা মাছ, ধুইরা মাছের নাম শুনেছেন?

৫| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: আমাদের খুলনাতেও এইসব মাছ পাওয়া যায় এবং প্রায় সব মাছই সুস্বাদু । ভোল মাছ সমুদ্র মোহনায় পাওয়া যায় । সবচে বড় ১০০ কেজি ওজন । এই একটা মাছ বাবা খুব পছন্দ করতেন এবং মা এই মাছে গরম মশলা দিতেন । চরদুয়ানির ইলিশ বিখ্যাত গন্ধে , স্বাদে , আকারে । এযাবৎ কাল ওই রকম মাছ আর খাইনি ।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একসময় আমরাও খুলনা বিভাগের মানুষ ছিলাম।
খুলনা ও বরিশালের সাংস্কৃতি খুব একটা পার্থক্য
নাই। তা মাছে হোক কিংবা মানুষে !!

৬| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মেনি মাছ মাঝখানে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বোধহয় পরে কোত্থেকে আবার এসেছে। এখনো মাছটি খুব কম দেখা যায়। কোন মতে হাতের নীচে পড়লে মাছটি আর নড়ে না ধরা পড়ে যায়। ফলে এটি ধরা সবচে সহজ। আর সেজন্য ধরা পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বোধহয় । ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মাছটি এক কথায় অসাধারণ ।

গরু বাইম মাছ কি নেই আপনাদের এলাকায়। ওটা অনেক দামী মাছ। গরু বাইম মাছ ভুনা গরুর গোশত ভুনার মত সুস্বাদু ।

স্বাদের বিচারে ইলিশের পড়ে যে মাছের অবস্থান সেটি হলো নদী চিংড়ী। সত্যি অসাধারণ ।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

একসময় আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে
বয়ে যাওয়া বেলুয়া নদীতে গোসল করার
সময় পায়ের নীচে পড়তে ভ্যাদা মাছ।
বোকা টাইপের জন্যই হয়তো একে ভ্যাদা
বলে। র্চিংড়ি মাছ আমারও থুব পছন্দের মাছ।

৭| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সব কয়টা মাছ চিনতে পারছি।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সবকটা মাছ চিনতে পারার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দাদা।
এবার পালা সব কয়টা মাছের স্বাদ নেবার !! আসুন একবার
আমাদের বরিশালে সাপলার স্বর্গও দেথবেন আর মাছও খাবেন।

৮| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বি নিজের অঞ্চল বলে।

কিন্তু এসব মাছ তো বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই পাওয়া যায়।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

শুধু আমার নিজের অঞ্চল নয়
এটা আপনার শ্বশুরের ও তার
মেয়ের অঞ্চল!! তার মেয়ের
স্বামী বলে আপনারও কিছু ভাগ
আছে!!
আপনাদের অঞ্চলে যদি এসব
মাছের দেখা পান তা হলে মনে
করবেন বৈবাহিক সূত্রে তারা
বরিশাল থেকে আপনাদের এলাকায়
গেছে। যেমন আপনি বিক্রমপুর থেকে
বরিশাল আসেন !! বুঝা গেছে ব্যাপারটা =p~ !!

৯| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৫

রানার ব্লগ বলেছেন: কাজলি, বক থরিনা, ভাটা, তুলারডাটি মাছট বাদ গেছে

২৭ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সব যদি আমি নিয়ে যাই
আপনারা খাবেন কি ?
ওগুলো আপনাদের জন্য
রেখে দিয়েছি !! দুইশত
আড়াইি শত মাছ একসাথে
তুলে দেওয়া যায় নাকি সম্ভব !!
যেটুকু তুলে দিয়েছি তা নিয়ে
তুষ্ট থাকুন =p~ !!

১০| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:৪৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




বরিশালের বিভিন্ন জাতের মাছের ছবি, বিবরণ,
মাৎস ও মৎসজিবীদের পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ
লেখাটি ভাল লাগল ।
বরিশালের( বৃহত্তর বরিশাল সহ )দুটি মাছের
কথা মনে পড়ে এখনো ।
একটি হলো পোয়া মাছ ( নামে পোয়া হলেও সাইজে আনেক সময় বেশ বড়
হয়ে থাকে) । ভোলার লালমোহনে ধরা পড়া বড় সাইজের দুটি পোয়া মাছ
বাজারে বেশ সোরগুল তুলেছিল ।


এছাড়া আরেকটি নাম করা মাছ হলো তপসে মাছ ।


তপসে মাছ নিয়ে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের একটি কবিতা আমাদের সময়ে বাংলা পাঠ্য বই এ অন্তর্ভুক্ত ছিল ।
সুন্দর কবিতাটি পাঠ না করে কি যাওয়া যায় ।

তপসে মাছ
- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

কষিত-কনককান্তি কমনীয় কায়।
গালভরা গোঁফ-দাড়ি তপস্বীর প্রায়॥
মানুষের দৃশ্য নও বাস কর নীরে।
মোহন মণির প্রভা ননীর শরীরে॥
পাখি নও কিন্তু ধর মনোহর পাখা।
সমধুর মিষ্ট রস সব-অঙ্গে মাখা॥
একবার রসনায় যে পেয়েছে তার।
আর কিছু মুখে নাহি ভাল লাগে তার॥
দৃশ্য মাত্র সর্বগাত্র প্রফুল্লিত হয়।
সৌরভে আমোদ করে ত্রিভুবনময়॥
প্রাণে নাহি দেরি সয় কাঁটা আঁশ বাছা।
ইচ্ছা করে একেবারে গালে দিই কাঁচা॥
অপরূপ হেরে রূপ পুত্রশোক হরে।
মুখে দেওয়া দূরে থাক গন্ধে পেট ভরে॥
কুড়ি দরে কিনে লই দেখে তাজা তাজা।
টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকাতেলে ভাজা॥
না করে উদর যেই তোমায় গ্রহণ।
বৃথায় জীবন তার বৃথায় জীবন॥
নগরের লোক সব এই কয় মাস।
তোমার কৃপায় করে মহা সুখে বাস॥


অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

১১| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:১০

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: সরকারি চাকুরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যুরে যেতে হতো। বরিশাল শহরের একটি রেস্টুরেন্টে চিতল মাছ খেয়েছিলাম, যার স্বাদ আজওঅবধি ভুলতে পারিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.