নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প ; এগারোটি লাল গোলাপ এবং একটি ভালবাসার গল্প ।

০৩ রা জুন, ২০১৫ সকাল ৭:৪৪


এগারোটি লাল গোলাপ এবং একটি ভালবাসার গল্প ।


আমি তখন ছায়ানটের রবীন্দ্র সংগীত এর ছাত্রী ছিলাম। ও নাকি চুপি চুপি আমার সব গানের অনুষ্ঠান গুলো দেখত । যদিও এ বিষয় গুলো বিয়ের পর একটু একটু করে জেনেছিলাম। জীবনের সুন্দর সময় গুলো চোখের পলকে শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি কখনো ।
ও নাকি আমার উচু নাক আর নাকের সাদা ছোট ডায়ামণ্ড এর নাক ফুল টা পছন্দ করত।বলতো বাঙালি মেয়েদের এ সুন্দর ব্যাপারটআ ও কে খুব আকর্ষণ করতো । আর তাই নাকি আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগত। কাঁচের চুরির শব্দ নাকি ও কে খুব আন্দোলিত করতো । তাই বিয়ের পর প্রতি মাসে বেতন পেলেই আমার জন্য কাচের চুরি নিয়ে আসতো।
মেয়েদের গারো করে কাজল দেয়াটা ওর ভাল লাগা ছিল । সারাদিন কাজের শেষে আমার গভীর কাজল ছখ নাকি ওকে শান্তি দিতো ।
মেয়েদের গভীর কাজল চোখ নাকি ছেলেদের প্রশান্তময় রাখে ।
আমি ওর জন্য প্রতিদিন কাজল পরতাম। বিয়ের পর আমাদের প্রতিটি দিন ছিল ভালবাসার কবিতার মতো । সত্যিই আমার সে জীবন টা হয়তো স্বপ্ন কে ছাড়িয়া যায় ।
আমার পঙ্গু জীবনে একটা সপ্ন ছিল ।যে সপ্নের কাছে কোন দুঃখ ছিল না । ২০০১ এর ১৪ এপ্রিল রমনা দুর্ঘটনা তে আমি পঙ্গু হয়েছিলাম । নিজের জীবন টা কে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হতো ।পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে দুচিন্তা করতো ।আত্মীয় স্বজন এ সমাজ আমাকে অবহেলার দৃষ্টি তে দেখত ।
বিবাহিত বড় ভাইয়ের উপর সংসার টা টানাপোড়নে চলছিল । বাবা ছিল অবসর প্রাপ্ত । বড় অসহায় একজন মানুষ । আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে এবং আমার চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ বহন করতে হয় । কে এত সব করবে? মায়ের রাতে খুম হতোনা । চারপাশের লোকজন অনেক রকম কথা বলতো ।
আমার মন সব সময় খারাপ থাকতো ।আমি জীবনের নানা প্রশ্নের উত্তর খুজতে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম । আমার অসহায় জীবনের নানা অবাক্ত কথা গুলো আকাশে উড়িয়ে দিতাম । ওর ছোট বোন ছিল আমার আমার গানের ছাত্রী । ওই নাকি গান শিখতে আমার কাছে পাথিয়ে ছিল ।
ওর বোনের নাম অদিতি। ও তখন ক্লাস নাইন এর ছাত্রী ।অদিতি প্রতিদিন আমার ভাল লাগা মন্দ লাগা শুনত ।আর অদিতির কাছ থেকেই ও আমার খবর নিত ।
এভাবেই নিতি কথা গুলো বলছিল । আমি ও নিতি কে চিনি না । মাঝে মাঝে আমি আর আম্মা রামনা পার্কে বিকেলের হাওয়া খেতে বের হতাম। নিতি কে দেখতাম হুইল চেয়ার এ করে একটি জায়গায় বসে বসে কি যেন দেখত।

আমার আম্মা বলত দেখ কি সুন্দর একটা মেয়ে হুইল চেয়ার এ বসে আছে ।

মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমার ও কেমন যেন মায়া লাগত । একটা জানার আগ্রহ মনের মধ্যে তৈরি হল । একদিন বিকেলে মেয়েটির কাছে গেলাম । পরিচিত হলাম ।এমন করে মাঝে মাঝেই টুক টাক কথা হত । সমাজ, সংস্কৃতি ,দেশ নিয়ে তার অনেক পরাশুনা আছে । আমার ভাল লাগত । দুই একদিন রবিন্দ্র সঙ্গীত এ আনন্দময় হয়ে উঠতো আমদের বিকেলটা । সেদিনের বিকেলটাও এমনি ছিল । হুইল চেয়ার এ করে একটি মেয়ে এগিয়ে যেত আর আমি তার পাশে পাশে হাটতাম । রমনার সেই জায়গাটা তে এসে নিতি সেদিন নিজেকে প্রথম বারের মত প্রকাশ করল । আমি অবাক আর বিস্ময় নিয়ে নিতির বেঁচে থাকার গল্প শুনছিলাম । যে রমনার বটমূলে নিতির সুন্দর জীবনের পথ টা অন্ধকার দিকে বেকে গেছে সে জায়গাটা নিতি ভুলতে পারে না । এখানে এসেই জীবন কে খুঁজে ফিরে । নিতি বলে যেতে লাগলো ।
একটি সাধারন বিয়ের ঘটনার মতই দীপ্ত আমাদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাল । আমদের দুই পরিবারে কোন সমস্যা ছিল না । কিন্তু এ সমাজ দীপ্ত কে নানা ভাবে বিব্রত করত পঙ্গু স্ত্রী কে নিয়ে কেমন আছে এ সব বলে । সব কিছুকে তোয়াক্কা না করে দীপ্ত আমাকে সমান্তরাল ভালবেসে গেছে । আমার প্রতি দীপ্তর সীমাহীন ভালবাসার কাছে এ সমাজের সব অদ্ভুত প্রশ্ন আটকে গেছে । ও তথাকথিত সমাজের প্রচলিত ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিল । আমি আমার পঙ্গু জীবন কে ভূলে গিয়েছিলাম । অদ্ভুত ছিল ওড় ভালোবাসা ! ২০১১ এর এগার নভেম্বর রাত এগারোটা । পুরো পৃথিবী যেন এক সময়ে বাঁধা ।আমদের বিয়ের নয় বছর পূরণ হল ।ও আমাকে এগারটি লাল গোলাপ আর এগারো রঙের এগারো সেট কাঁচের চুড়ি উপহার দিয়ে অবাক করে দিল । আমার ছেলের বয়স তখন আট । আমি যেন ওর কাছে সব সময়ই নতুন ছিলাম ।ও নতুন নতুন ভাবে আমাকে ভালবাসা প্রকাশ করতো । কিন্তু জীবনের গল্পটা আবার পাল্টে গেলো । ২০১২ এর ২০ ফেব্রুয়ারি ।পরের দিন ভাষা দিবস একূশে ফেব্রুয়ারি । অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা । ও ব্যাংকে চাকুরী করতো । প্রতিদিনের মতো বাসায় ফিরছিল । একটা ট্রাক ওর গাড়ী চুরমার করে পালিয়ে গেলো । একটি পঙ্গু অসহায় মেয়ে সারা জীবনের জন্য আবার ও পঙ্গু হল । আমার বেঁচে থাকার জায়গাটা শূন্য হয়ে গেলো । আমাকে আড় কেউ কোন দিন এগারটা গোলাপ এণে দিবে না । রবীন্দ্র সংগীত শুনতে চাইবে না। নতুন করে বেচে থাকার স্বপ্ন দেখাবে না । কেঊ না ! নিতি কাণ্ণা জড়িত কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করলো ...বলতে পারেন যে জন্য আমি পা হারিয়ে ছিলাম ,যে দুর্ঘটনা আমার স্বামী কে কেড়ে নিলো আমরা কতো টুকু দায়ী ? কবে এ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা গূলো শেষ হবে ? নিতি কাঁদতে থাকল । ওর হাঊ মাঊ কান্নার শব্দ যেন আমার ভিতরটাকে ভেঙে দিচ্ছিল ।কয়েক ফোঁটা চোখের জল আমাকেও ভিজিয়ে দিল ।

নিতির প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই ।

তবে নিজ মা মাটি আর দেশ নিয়ে গভীর দুঃখ বোধ তৈরি হল । কখন যে নিতি হইল চেয়ার এ করে অনেক দূরে চলে গেছে টেরই পায়নি । আমি আর পিছন থেকে ওকে ডাকলাম না। তবে খুব ইচেছ করছিল একবার বলি আমিই আপনাকে প্রতিদিন এগারটা করে গোলাপ দিব ।
কারণ একজন মানুষ হিসাবে কিছু না করতে পারাটা ওকে ডাকতে দিল না ।

আমিও আর পিছনে তাকাতে পারলাম না ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার লেখনি বেশ সাবলীল। আশা করি অন্য ব্লগারদের লেখা পড়বেন, আলোচনায় অংশ নিবেন, নিজের মতামত ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।


অনেক শুভ কামনা রইল।

২| ১৭ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আমি ব্লগ বেশিদিন হয়নি শুরু করেছি । আলোচনায় অংশ গ্রহন এবং মতামত দিব । নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই লেখা লেখি । অনেক ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.