নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমিয়ধারা

অিময়ধারা

আমি প্রগতিশীল মানুষ হিসাবে অমিয়ধারার মত বহমান থাকতে চাই সদা ।

অিময়ধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

...।।. ঠিক এক বছর আগে লেখা - - - ((আব্বাকে নিয়ে)) ...।।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১৬





এক চিলতে রোদ বারান্দায় শুয়ে আছে । গাছের ছায়া নেচে নেচে ছবি আঁকছে সেখানে । কাক ডাকছে আশেপাশে কোথাও । ঝুন ঝুন করে রিক্সা যাচ্ছে ।চারিদিক কোলাহল । সবখানে জীবনের বড় বেশী উপস্থিতি

জানান দিচ্ছে ।শুধু ঘরটার মধ্যে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা আর বেদনার নানা চিত্র । দীর্ঘশ্বাসেরা সারা ঘরের মধ্যে আনাগোনা করছে

কেননা বিছানায় শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধ ।

অথচ কিছুদিন আগেও তাকেও বৃদ্ধ বলা যেতনা । প্রৌঢ়ই মানানসই ছিল ।



মাত্র কয়েকদিন আগেও তিনি দেদারসে ঘুরে বেড়িয়েছেন ।

শহর, গ্রাম, ঢাকা - -সব খানেইতো একা একা বেড়িয়েছেন । পথে ঘাটে, জার্নিতে লোকজনের সাথে গল্প করেছেন । জমিয়ে খেলেছেন নাতি পুতিদের সাথে ।

অথচ ইদানিং তিনি অসুস্থ্য হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন ।তিন মাসেই শরীর আর শরীর নেই ,হাড্ডিসার ! একটা শীর্ন দেহ যা করুনা করে যেন প্রান বাঁচিয়ে রেখেছে ।

তার সৌম্য দর্শন চেহারাটা মাত্র ক’দিনেই আচেনা হয়ে গেছে । ক্রমশঃ বৃদ্ধতর হয়ে গেছেন তিনি ।



তিনি নিঃসাড় সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকেন । সারাদিন ।

উঠতে বসতে ভীষন কষ্ট হয় । একাও পারেন না ।

মাঝে মাঝে যন্ত্রনায় কুঁকড়ে গেলেও কাউকে কষ্টের কথা কিছু বলেন না পাছে তার জন্য অন্যরা কেউ কষ্ট পায়।

কষ্ট তিনি নিজের মধ্যেই চেপে রাখেন ।সারাজীবন যা তিনি করে এসেছেন ।



আবার দৃশ্যপট চেঞ্জ হয়ে যায় ।

আকাশটা অন্ধকার হয়ে আসে এবার । কোথা থেকে যেন রাশি রাশি মেঘ ভেসে আসছে ।

অযাচিত মেঘগুলো কাঁধে করে ভর সন্ধ্যা ডেকে এনেছে ।বাড়ির পাশের গাছ গুলোকে ধীরে ধীরে কালো ছায়ার মত লাগছে । পুকুরের জল স্থীর হয়ে আছে মাঝে মাঝে কিছু ঢেউ ছাড়া ।শিশুরাও যেনবা কোলাহল হটাৎ থামিয়ে দিয়েছে ।

মানুষটার দু নয়ন এবার সিলিং থেকে সরে এসে জানালার বাইরে স্থীর ।

কতই বা তার বয়স ।বাহাত্তর বা তিয়াত্তর ।

হাটাৎ নামা সন্ধ্যায় জানালার দিকে তাকিয়ে এবার তিনি মন খারাপ করেন শরীরের যন্ত্রনা আর আশংকায় ।



বড় যন্ত্রনা হল এই শুয়ে থাকা ।শুয়ে থেকে থেকে তার পিঠে তো ঘা হয়ে গেল ।তিনি ইদানিং পরনির্ভ্রর হয়ে পড়েছেন খুব । যা তিনি কোনকালেই ছিলেন না এতকাল সব কাজ একা করেই অভ্যস্ত তিনি ।

প্রয়োজনে অনেকদিন তিনি খুলনার বাসায় একা থেকেছেন, একা রান্না করেছেন ।

কোন সমস্যা হয়নি ।অথচ আজ তাকে সব কাজের জন্য সাহায্য নিতে হচ্ছে কারো । উঠতে , বসতে, খেতে -- সব কিছুতেই । এই পর মুখাপেক্ষীতা তার স্বভাব বিরুদ্ধ -

তার এই সত্তোরোর্ধ জীবনে তাকে আজ অসুখের কাছে আত্মসমর্পন করতে হচ্ছে । অথচ তার বড় ভাই কি চমৎকার গ্রামের বাড়িতে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন ।হিসাব মেলাতে কষ্ট হয় তার । সারাটি জীবন তিনি খুব ছঁকে ফেলে তিনি পার করছেন ।



চা না, সিগারেট না, পান তামাক কিছুনা

আড্ডা না , ইচ্ছৃংখলতা না , বেহিসাবী কিচ্ছু না উপরন্ত অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে পার করা তার জীবন ।

তারপরেও তার জীবনে কেন এই দুর্যোগ !

আল্লাহ কে তো নিয়মিতভাবে সেই ক্লাস সেভেন থেকেই নামাজের মাধ্যমে ডাকেন ।তার কাছে ফরিয়াদ করে আসছেন- আল্লাহ আমায় সুস্থ্য রেখো । সুস্থ্য রেখেই মৃত্যু দিও ।



জীবনে অবশ্য তার প্রাপ্তির অংশটা কম না । আলহামদুলিল্লাহ ।

সন্তানেরা তার মুখ উজ্জল করেছে ।নিজেও শুন্য থেকেই শহরে ঘরবাড়ি করেছেন , জমি করেছেন । সবখানেই প্রাপ্তির প্রশান্তি ।আর এর মধ্যে কিনা তার এই অসুস্থ্যতা ।

কি যে এক রোগ , একেবারে শেষ করে দিয়ে যাচ্ছে ! তিনি কি বাচঁবেন ? তার কি হয়েছে ? সে কথা সন্তানদের কাউকে জিজ্ঞাসা করতে মন চাইছে না ।উনার বিশ্বাস , যাই হোক তা সন্তানেরা ঠিকই চিকিৎসা করিয়ে ঠিক করে দেবে ।



তিনি বিছানায় কুন্ডলী পাকিয়ে ভাবেন এসব কথা ।সবই তো ঠিক মতোই চলছিল । ঈদে পার্বনে ছেলেরা-বৌমারা আর তাদের ছেলেমেয়েরা বাড়ি আসছে ।তাদের বাড়ি ‘চাতক নীড়’ হাসি-খুশিতে- চিৎকারে গমগম করছে । পাড়া প্রতিবেশীরা বেশ সমীহ করছে আর কেমন একটা দৃষ্টি দিয়ে দেখছে -আহা ! কি সুখের সংসার ।

বলছে – আপনারা কত স্বআর্থক ।



বাচ্চারা দাদাভাই, নানাভাই করে বাড়িটাকে একটা উৎসবের মধ্যে ফেলে দেয় ।

ছেলেমেয়ে, বৌমা-জামাই ইত্যাদিদের সাথে একটা মধুর সম্পর্কের রেশ যখন সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে তখনই তার এই অসুস্থ্যতা । তার এই জটিল রোগের উত্থান মেনে নেয়া যায় ??



তার লিভারে সমস্যা কেন হবে ? কোনদিন জন্ডিজই হয়নি তার । তাহলে ?

তিনি কি আর সুস্থ্য হতে পারবেন না ???



জীবনে কি তিনি আর অপলক সকাল দেখতে পারবেন না ?

তিনি কি কোনদিন আর শিশিরে পা ভিঁজিয়ে হাঁটতে পারবেন না ?

তিনি কি নাতি-পুতিদের হাত ধরে গ্রামের পথে হাঁটতে পারবেন না ? তাদের কি গল্প শোনাতে পারবেন না ?

ছেলে-মেয়েদের বাড়ি আগমনে এক মিলিত খুশিতে আর কি মিলতে পারবেন না ?

মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে আর কি দেখা হবে না ? - - --

- - - - - -- --- - - - - - এমন হাজার প্রশ্ন খুঁজে ফেরেন তিনি - -- -- -- -,



এমন হাজার প্রশ্ন খুঁজে খুঁজে একদিন নিজেই হারিয়ে গেলেন আমার হাতের উপর দিয়েই ।

গত বছর এই রোজার মাসে আমার পিতা আমাদের ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন।

গত একটা বছর তাঁর জন্য এক ভয়াবহ শূন্যতা কুরে কুরে খেয়েছে আমাকে, আমাদের । প্রতিটা দিন ।

বাসায় প্রবেশ করে বা বাসায় ঘুরতে ফিরতে আহসান মঞ্জিলে দাঁড়িয়ে তাঁর তোলা ছবি দেখি আর বুকের মধ্যে হু হু করে ওঠে কান্নার ঝড়। এ ঘটনা প্রতিদিনের ।



আব্বার মৃত্যুটা সত্যি মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে , হচ্ছে ।

চিন্তাই করতে পারিনা তিনি নেই অথচ তাঁকে ছাড়াই আমাদের চলতে হচ্ছে, চালিয়ে নিতে হচ্ছে ।

কি রূঢ় বাস্তবতা , তাইনা ?

মৃত্যু মানে একজনের প্রস্থান । তাতে সবাই একটু থমকে দাঁড়িয়ে থেকে আবার ফিরে যায় জীবনের উৎসবে ।

এমনি করে -- একদিন আমরাও এভাবে -- -- -

( রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস ছাগিরা )









মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮

শফিক আলম বলেছেন: জীবন থেমে যায়, তবুও থেমে থাকে না। আপনার কষ্টের সঙ্গে সহমর্মিতা জানিয়ে বলছি, এটাই তো জীবন। ঐ যে আপনি বলেছেন, এমনি করে -- একদিন আমরাও এভাবে -- -- । আর আল্লাহ্‌ তা'য়ালা যাকে যেভাবে চান, সেই ভাবেই উঠিয়ে নেন।
আল্লাহ্‌ আপনার আব্বাকে জান্নাতবাসী করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.